করোনা মোকাবেলার জন্য গত ২৬ শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। ৩০ শে মে এর পর এই ছুটি আর বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এই ছুটি বাড়ানো না হলেও যেগুলো অতিসংক্রমিত এলাকা, সেই অতিসংক্রমিত এলাকাগুলোকে লকডাউন করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে অতিসংক্রমিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করবে সেই এলাকাগুলোকে লকডাউন করা হবে। আর এটা করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি জোনিং ম্যাপ করবে বলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল। কিন্তু ১ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত কোন জোনিং ম্যাপ দিতে পারেনি এবং কোন কোন এলাকাগুলো অতি সংক্রমিত সেটাও বলতে পারেনি।
যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪৭ টি এলাকাকে অতিসংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং সেই এলাকাগুলোকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন করা হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে বাস্তবে তা দেখা যায়নি। বরং পূর্ব রাজাবাজারকে পরীক্ষামূলক লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছিল এবং এখন ওয়ারীকে পরীক্ষামূলক লকডাউন করা হয়েছে।
কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকা মহানগরীতে যেগুলো অতিসংক্রমিত এলাকা সেই এলাকাগুলোকে বাদ দিয়ে ওয়ারীকে পরীক্ষামূলক লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। কেন এটা করা হয়েছে এই ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যাও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকার সবথেকে বেশি সংক্রমিত এলাকা এখন মিরপুর। যেখানে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৫ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল মিরপুরের টোলারবাগে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মিরপুর যদি সবথেকে বেশি সংক্রমিত এলাকা হয় তাহলে মিরপুরকে কেন লকডাউনের আওতায় আনা হয়নি? আইইডিসিআর-এর তথ্যানুযায়ী ঢাকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমিত এলাকা হচ্ছে উত্তরা। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭১৬ জন। অথচ এখন পর্যন্ত উত্তরা লকডাউনের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এরপর সর্বোচ্চ সংক্রমিত এলাকা হচ্ছে মোহাম্মদপুর। গতকালকের হিসেব অনুযায়ী সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৬ জন। সেখানেও লকডাউন দেওয়ার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পাঁচশর উপরে আক্রান্ত আছে এরকম সাতটি এলাকার মধ্যে আরও রয়েছে মহাখালী, যাত্রাবাড়ি, মুগদা এবং ধানমন্ডি। অথচ এই এলাকাগুলো লকডাউন হবে কিনা সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোন সুস্পষ্ট ঘোষণা এখন পর্যন্ত দিতে পারেনি। কিসের ভিত্তিতে লকডাউন দেওয়া হলেও সে ব্যাপারেও কোন ব্যাখ্যা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এরকম ছোট-ছোট এলাকাভিত্তিক লকডাউন কোন কাজে দিবেনা, বরং বৃহত্তর এলাকা জুড়ে লকডাউন না দিলে তা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জোনভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লকডাউনের পদ্ধতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই লকডাউন কিসের ভিত্তিতে করা হচ্ছে সেটা এক বড় প্রশ্ন এবং এখানে তথ্য জালিয়াতির অভিযোগও উঠেছে। কারণ বাংলাদেশে যদি সবথেকে বেশি সংক্রমিত এলাকা মিরপুর হয় তাহলে ওয়ারী কেন লকডাউনের আওতায় আসবে?
গতকালকের হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, সংক্রমণের দিক থেকে যে এলাকাগুলো সবথেকে বেশি আক্রান্ত সেই এলাকাগুলোর প্রথম দিকের কোথাও ওয়ারীর অবস্থান নেই। অথচ সংক্রমণ বেশি যে এলাকায় সেই এলাকাগুলোতে মানুষজন অবাধে চলাফেরা করছে। এইরকম বাস্তবতায় লকডাউন করার বিজ্ঞানভিত্তিক কোন পদ্ধতি আছে কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ প্রথম পরীক্ষামূলক লকডাউন করা হয়েছিল পূর্ব রাজাবাজারে, সেই রাজাবাজারে রোগী আছে ২৩৭ জন এবং ওয়ারীতে করোনা শনাক্ত ব্যক্তি আছে ১৭৩ জন। ঢাকা শহরে সবথেকে বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোর তালিকায় ওয়ারির অবস্থান ২০ তম। কাজেই কিসের ভিত্তিতে এই এলাকাগুলো বাছাই করা হচ্ছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলে লকডাউন অর্থহীন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন