নভেল করোনা ভাইরাসে প্রভাবে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। সংক্রমন ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও তৈরি হয়েছে অঘোষিত লকডাউন।
মহামারি ঝুঁকি এড়াতে গৃহবন্দী থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সমাজের সব বিত্তের মানুষরা বিপাকে পড়লেও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে।
দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এমন অবস্থায় খুলনার জনপ্রতিনিধি, বিত্তবানরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। তবে অনেকে কর্মের চেয়ে প্রচারণাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে লোক মুখে চাউর রয়েছে।
তবে আশার কথা হলো, এমন অবস্থায় দেশের কিছু মানবিক মানুষের মধ্যে মানবিকতা জাগ্রত হয়েছে। তারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা প্রদানে এগিয়ে এসেছে। করছে ত্রাণ বিতরণ। ত্রাণ গ্রহীতাদের জন্য কোনো কোনো সংগঠন রাস্তার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানতে ৩ ফুট দূরত্বে বৃত্ত আঁকছে। যেখানে গ্রহীতারা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ত্রাণ পাওয়ার আশায়। শুরু হয় ত্রাণ বিতরণ আর তখনই বাধে জটলা।
একজন গ্রহীতাকে ৮ থেকে ১০ জন দাতা ত্রাণ বিতরণ করেন। সেই সাথে চলে ফটো সেশন। যা দেখে মনে হবে, মানবিক মানুষগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণের থেকে ফটো সেশনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেউ কেউ ত্রাণ বিতরণের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারও করছে।
বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, নিজেরা দান করে অন্যকে উৎসাহী করতে তারা ফেসবুকে ছবি আপলোড করছেন। এতে লোকের সম্মান হানি হতে পারে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি তাদের কাছ থেকে।
তবে অনেক সংগঠন বা ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকে গোপনে ত্রাণ বিতরণ করছেন। তারা বলেছেন, এই সময়ে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে খাদ্য সহায়তা নিতে নারাজ। অনেকে উপায় না পেয়ে সহায়তা গ্রহণ করছে। আমরা যদি তাদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করি তাহলে তাদের অসম্মান করা হবে।
খুলনার রূপসা উপজেলার আমেনা বেগম নামের এক নারী জানান, ত্রাণ আনতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের এলাকার এক হোটেল মালিক সেখানে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ত্রাণ নিতে গেলে সবাইকে মুখ ঘুরিয়ে ছবি তুলছে দেখে সেই হোটেল মালিক কাকা আস্তে আস্তে মাথা নিচু করে চলে গেছে। আমাগে মানুষ চেনে না। তাই সমস্যা নেই। কিন্তু এখন অনেক ভালো মানুষেরও সমস্যা হচ্ছে। তারা কি করবে।
আল হেরা জামে মসজিদের ইমাম মুফতি রিয়াদুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর রাস্তায় দান একটি মহৎ কাজ। মানুষের কল্যাণে করা দানগুলোকেই আল্লাহর রাস্তায় দান হিসেবে গণ্য করা হয়। দরিদ্র মানুষের উপকারে যে দান হয় তা অতুলনীয়। তবে দানের পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। মানুষকে দেখানো বা নিজের প্রচারের জন্য কোনো দানের মূল্য নেই আল্লাহর দরবারে। তবে মানুষকে দানে উৎসাহিত করতে প্রচার করে দান করা যেতে পারে। গোপনে দান করা হলে তার মর্যাদা অনেক বেশি, যেখানে বর্তমানে বেশিরভাগ দানেই দেখা যাচ্ছে আত্মপ্রচারই মূল উদ্দেশ্য। তবে যে দান লোক দেখানোর জন্য করা হয় বা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়, তা সৎ দান নয়।
নাগরিক সমাজ খুলনার মহাসচিব ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. বাবুল হাওলাদার জানান, কর্মহীনদের সহায়তার নামে অনেকে তাদের সাথে তামাশা করছে। গ্রহীতাদের জন্য কেউ কেউ বৃত্ত আঁকছে কিন্তু সেই দাতারা সহায়তা দেওয়ার সময় হুমড়ি খাচ্ছে ফটো সেশনের জন্য। সেখানে সামাজিক দূরত্ব নেই। যে সহায়তা নিচ্ছে তাকে অনেকসময় কোনোরকম দেখা যাচ্ছে। আর সবাই দাতা। সকলের মনে রাখতে হবে, আজ আমরা যাদেকে দিচ্ছি তারা ভিক্ষুক নয়। তারা পরিস্থিতির শিকার।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন