মুন্সীগঞ্জ, যশোর, শেরপুর, কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরে জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট থাকায় ‘করোনা সন্দেহে’ শিশুসহ অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন।
আজ সোমবার সকালে ও রোববার রাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোহরাব হোসেন নামে ১২ বছরের এক শিশু মারা গেছে।
আজ সোমবার ভোরে উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মনাইরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহত শিশু সোহরাব ওই গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাসলিমা আক্তার জানান, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় শিশু সোহরাব। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় আসার পথে অ্যাম্বুলেন্সে সে মারা যায়।
এদিকে, শিশু মৃত্যুর খবরে উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রামে প্রতিবেশীদের মাঝে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, শিশু সোহরাবের বাড়ির পাশে বেশ কয়েকজন বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এর মধ্যে ওই শিশুর মৃত্যু নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
যশোর: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের জন্য নির্মিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। ১২ বছর বয়সী কন্যাশিশুটিকে তার অভিভাবকরা রোববার বিকেল সাড়ে ৪ টায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, ভর্তির সময় তার শারীরিক অবস্থার উপসর্গ দেখে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
আজ সোমবার সকালে আইইডিসিআরের স্থানীয় প্রতিনিধিদের তার নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল।
এদিকে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর আইইডিসিআরের প্রতিনিধিরা উপসর্গ শুনে বলেছেন সে করোনো আক্রান্ত ছিল না। তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
যশোর করোনা ভাইরাস বিষয়ক চিকিৎসক কমিটির প্রধান গৌতম আচার্য বলেন, তাকে করোনা সন্দেহে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল এবং যেহেতু করোনা সন্দেহ ছিল সে কারণে আইইডিসিআরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, আইইডিসিআর ওই শিশুর লক্ষণ শুনে বলেছে সে করোনা আক্রান্ত ছিল না। তারা লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে বলেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ শহরের পূর্ব নতুনপাড়ায় ৫৫ বছর বয়সী এক নারীর কাশি ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয়েছে।
আজ সোমবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার মৃত্যুর পর এলাকায় উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। মৃত নারীর স্বামীকে করোনা পরীক্ষার জন্য সিলেটে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও রোগীর স্বজনরা জানান, সুনামগঞ্জ শহরের পূর্ব নতুনপাড়ায় এক নারী উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। কয়েকদিন ধরে তিনি সর্দি-কাশিতেও ভুগছিলেন। সোমবার ভোরে পরিবারের লোকজন তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ওখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের জানিয়েছেন হাসপাতালে পৌঁছার আগেই ওই নারী মারা গেছেন।
সিভিল সার্জন ডা. শামছুদ্দিন জানান, মৃতের স্বামী জানিয়েছেন, তার স্ত্রী অতি উচ্চ রক্তচাপের রোগী এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামীকে করোনায় আক্রান্ত কি-না তা পরীক্ষা করতে সিলেটে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
মৃত নারীর দাফন সম্পন্ন হওয়ায় তার কোনো পরীক্ষা করা যায়নি বলে জানান সিভিল সার্জন।
শেরপুর: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামে জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে তিন দিন ভোগার পর মারা গেছেন এক ব্যক্তি। রোববার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়।
তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ওই বাড়িসহ আশেপাশের ১০ বাড়ি ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
এছাড়া ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আজ সোমবার নমুনা সংগ্রহের পর ওই ব্যক্তির দাফন ও জানাজা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফ।
ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গত তিন দিন আগে ওই ব্যক্তি জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে নালিতাবাড়ীর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও আরিফুর রহমান। ভালুকায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা যায়।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ সোমবার সকাল ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম সকাল সাড়ে ৯টায় গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ব্যক্তি তিন দিন ধরে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করানো ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হবে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, আজ সকাল ৭টার দিকে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ সময় চিকিৎসকেরা দেখতে পান, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি (৪০) পেশায় ইজিবাইকচালক ছিলেন। শহরের চৌড়হাস এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত শুক্রবার তাঁর সর্দি দেখা দেয়। এরপর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। আজ সকালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আরএমও তাপস কুমার সরকার বলেন, ইজিবাইকচালকের পরিবারে কোনো বিদেশি নেই বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু ইজিবাইক চালানোর সময় করোনা ভাইরাসের বাহক কারও সংস্পর্শে যেতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে। এরপর লাশ সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কয়েকজনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়িতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে পুলিশসহ পাঠানো হয়েছে। নমুনার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িটি লকডাউন করা থাকবে।
দিনাজপুর: দিনাজপুরের বিরামপুরে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে মো. ফরহাদ হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
আজ সোমবার ভোরে উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের তপসী গ্রামে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় মৃত ব্যক্তির বাড়ির চার সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়।
মৃত ফরহাদ হোসেন তপসী গ্রামের মৃত হানিফ উদ্দিনের ছেলে।
জোতবানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, ফরহাদ হোসেন কুমিল্লায় কৃষি শ্রমিকের কাজ করতেন। তিনি কুমিল্লায় যে বাড়িতে কাজ করতেন সেই বাড়ির মালিক সৌদি প্রবাসী।
সম্প্রতি বাড়ির মালিক সৌদি থেকে দেশে আসেন। এরপর কুমিল্লার প্রশাসন সৌদি প্রবাসীর ওই বাড়ির সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেন।
এ সময় গত ১০/১২ দিন আগে ফরহাদ হোসেন জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা থেকে পালিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন।
এছাড়া ফরহাদ হোসেন জন্ডিসেও আক্রান্ত হন। কিন্তু ফরহাদ হোসেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না গিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাতে থাকেন।
সোমবার ভোরে ফরহাদ হোসেন মারা যান। ফরহাদ হোসেন মারা যাবার পর ওই পাড়ায় যাতে কোনো লোক ঢুকতে বা বের হতে না পারে সে জন্য গ্রাম পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. সোলায়মান হোসেন মেহেদী জানান, মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাড়ির সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন