ব্যাংকে নয়-ছয় কার্যকর এবং কালো টাকার বিনিয়োগ ঠেকাতে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের পর এবার কমানো হচ্ছে কেনার সর্বোচ্চ সীমাও। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের ১১টি প্রকল্প রয়েছে। আগের নীতিমালা অনুসারে একজন নাগরিকের ৬টি স্কিমের সর্বোচ্চ সীমা অনুসারে একক নামে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ ছিল। অনলাইন সিস্টেম চালুর পর এখন একটি সমন্বিত নীতিমালা করা হচ্ছে।
নতুন নীতিমালায় একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। তবে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা এর চেয়ে আরও ৫০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের ১১টি স্কিম রয়েছে। ৪টি সঞ্চয়পত্র হচ্ছে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র।
সঞ্চয়বন্ড রয়েছে ৪টি। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউ-এস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউ-এস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের রয়েছে ৩টি স্কিম- সাধারণ হিসাব, মেয়াদি হিসাব ও ডাকজীবন বীমা। সঞ্চয়বন্ডগুলো ছাড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক ৬টি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। আর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা কিনতে পারেন ৭ ধরনের সঞ্চয়পত্র। এগুলোর একক সর্বোচ্চ সীমা ৩০ লাখ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি প্রকল্প অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। আগে কার নামে কী সঞ্চয়পত্র আছে তা জানা যেত না। এখন অনলাইনে ডেটাবেজ করা হচ্ছে। ফলে সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে ডেটাবেজে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য ধরা পড়ছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে করশনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমাদান, জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি উৎসে কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এই সীমার বাইরে রাখা হয়েছে।
এখন সর্বোচ্চ সীমাও কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। ১১টি সঞ্চয়পত্র পৃথকভাবে কিনলেও এই সীমা প্রযোজ্য। অনলাইন সিস্টেমের কারণে এর বেশি পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ থাকবে না। তবে পেনশনার হলে একক ব্যক্তি ১ কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে।
সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরে মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব সামছুন্নাহার বেগম বলেন, সঞ্চয়পত্র স্কিমগুলো চালু করা হয়েছে সামাজিক সুরক্ষার জন্য। যাদের কোটি কোটি টাকা আছে তাদের এই সুরক্ষার প্রয়োজন নেই। কাজে অক্ষম নাগরিকরা এখানে টাকা রেখে যেন ভালো আয় করতে পারেন এজন্য স্কিমগুলো চালু করা হয়েছে। এজন্য স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে এই সীমা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে শৃঙ্খলা আনতে সমন্বিত নীতিমালা করা হচ্ছে। বর্তমানে একেকটি প্রকল্পের জন্য আলাদা নীতিমালা রয়েছে। এখন অনলাইন পদ্ধতি চালু করার ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যাগুলো দূর করতে নীতিমালা করা হচ্ছে। এজন্য গঠিত কমিটি কাজ করছে।
সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাকঘর, সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি ও সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা ওই কমিটিতে রয়েছেন। গতকালও এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপকহারে কমে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৭ হাজার কোটি টাকা। ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) নিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। তাই বাজেট সংশোধন করে এটি ১২ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিরা ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ জন্য ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমানতের সুদহার কমিয়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সরকারি সংস্থাগুলোর আমানত সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে বেসরকারি ব্যাংকের রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের দুটি স্কিমের সুদহার কমিয়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদহারও কমানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্র সুদহার কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্র জানায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন