আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে (বিটিআরসি) এক হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। এই এক হাজার কোটি টাকা বিটিআরসির পাওনা দাবির পরিমাণ যখন চূড়ান্ত হবে তখন তার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় বিটিআরসি কার্যালয়ে এক হাজার কোটি টাকার পে অর্ডার নিয়ে যান গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত। এ সময় তাঁর সঙ্গে গ্রামীণফোনের কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন। বিটিআরসির পক্ষে এই টাকা গ্রহণ করেন সংস্থার চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক।
নিরীক্ষার মাধ্যমে পাওনা হিসেবে বিটিআরসি গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দাবি করে আসছে। এর বেশির ভাগই মূল দাবীকৃত টাকার ওপর আরোপিত বিলম্ব ফি। গ্রামীণফোন বলে আসছে যে এ দাবি সঠিক নয়। বিষয়টি এখন আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
আরেক মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটার কাছে নিরীক্ষা পাওনা হিসেবে বিটিআরসির দাবি ৮৬৭ কোটি টাকা। গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট রবিকে বিটিআরসির বকেয়া পাওনা দাবির মধ্যে ১৩৮ কোটি টাকা পাঁচ মাসের সমান কিস্তিতে পরিশোধের নির্দেশ দেন। এর প্রথম কিস্তি হিসেবে রবি গত ১৪ জানুয়ারি বিটিআরসির কাছে ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা দেয়। রবিও বলে আসছে, তারা বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির সঙ্গে একমত নয়।
গ্রামীণফোন টাকা জমা দেওয়ার পর পরই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তাঁর ফেসবুক পাতায় লেখেন, ‘সুখবরটা পেলামই, গ্রামীণফোন এক হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে।’
মন্ত্রী এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রামীণফোন আদালতের নির্দেশ মান্য করেছে এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আদালত যে নির্দেশ দেবেন গ্রামীণফোন তা মানবে।’
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হকও টাকা জমা দেওয়ার জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানান।
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে হোসেন সাদাত বলেন, ‘গ্রামীণফোন বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গ্রামীণফোন তার আইনগত অবস্থানের কোনো প্রকার ব্যত্যয় ছাড়াই মহামান্য অ্যাপিলেট ডিভিশনের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ (রবিবার) বিটিআরসির কাছে সমন্বয়যোগ্য এক হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্রামীণফোন তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলতে চায়, এটি একটি বিরোধপূর্ণ অডিট এবং গ্রামীণফোন আদালত অথবা আদালতের বাইরে এই অডিটের গঠনমূলক সমাধান করতে চায়। অডিট বিরোধ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গ্রামীণফোন আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং প্রতিষ্ঠানটি আশা করে, ব্যাবসায়িক পরিবেশ খুব দ্রুত স্বাভাবিক হবে—যার মাধ্যমে গ্রামীণফোন গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে পারবে।’
গ্রামীণফোন গত শুক্রবারই গণমাধ্যমকে রবিবার (গতকাল) বিটিআরসির কাছে এক হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলে, ‘গ্রামীণফোন বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি, মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং এ কম্পানির ওপর বিটিআরসির চাপ থেকে আদালতের সুরক্ষা নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে যেতে চায়।’
ওই দিন গ্রামীণফোন আরো বলে, ‘বিটিআরসি গ্রামীণফোনের কার্যক্রমের ওপর নানা ধরনের বাধা প্রয়োগ করেছে। এর মধ্যে অনাপত্তিপত্র না দেওয়া, লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ, গ্রামীণফোনের নম্বর সিরিজ রিসাইকেল করতে না দেওয়া এবং কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের হুমকিও রয়েছে। এসব কারণে ভোক্তারা তাঁদের ওপর আস্থা হারিয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ সোমবারের মধ্যে গ্রামীণফোনকে বিটিআরসির তহবিলে এক হাজার কোটি টাকা জমা দিতে নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগ প্রথমে দুই হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ২৪ নভেম্বর দেওয়া ওই আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে গ্রামীণফোনের করা রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ এক হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়ার আদেশ দেন। রিভিউ আবেদনে গ্রামীণফোন ৫৭৫ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে, যা তারা এক বছরে সমান ১২টি কিস্তিতে পরিশোধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব আমলে নেননি আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের সর্বশেষ আদেশের আগে গ্রামীণফোন ১০০ কোটি টাকা জমা দিতে গেলে বিটিআরসি তা গ্রহণ করেনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন