নানা উদ্যোগ ও বিশেষ সুবিধা দেয়ার পরও খেলাপি ঋণের হার কমানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে যে পরিমাণে খেলাপি ঋণ রয়েছে তা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে।
মূলত গত বছরের পুনঃতফসিল সুবিধা দেয়ায় প্রথমবারের মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় এবার সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। তবে পুনঃতফসিল সুবিধা এখনও চলমান রয়েছে।
এক বছর আগে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার সময়ই আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়তে দেবেন না তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বাড়তে থাকে। তখন একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।
গত ৬ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমলেও তা আশানুরূপ নয়। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা।
আর ২০১৮ সাল শেষে যেখানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, ২০১৯ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে ভুটান ও আফগানিস্তান, যাদের খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯ ও ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাই খারাপ। গত ছয় মাসে অবস্থা খারাপ হয়েছে। দেশগুলোর আর্থিক খাত এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। যে কারণে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তাদের আস্থা কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগ ও বিনিয়োগ কমছে।
বিশ্বব্যাংকের ধারণা, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে ঝুঁকি আরও বাড়বে। ঝুঁকির মূল কারণগুলো হচ্ছে- আর্থিক খাতের দুরবস্থা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংস্কারের ধীরগতি। ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা কমে এলেও তা যদি আবারও বাড়ে, তাহলে এই অঞ্চলের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন