উন্নয়নের সংজ্ঞা কী? এক কথায় উন্নয়নের গ্রহণীয়, সুনির্দিষ্ট ও সর্বজনীন কোনও সংজ্ঞা নেই। তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, কোনও দেশ বা সমাজে যদি মুক্ত অথর্নীতির কাঠামো বিরাজমান থাকে তবে ওই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। উন্নয়ন খুব জটিল একটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়। মনোবিজ্ঞানীরা আবার মানুষের মন-মানসিকতার উন্নতিকেই উন্নয়ন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা তথ্য-প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রসার সাধনকে উন্নয়ন হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। নৃ-বিজ্ঞানীরা সমাজ-সংস্কৃতির উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তবে সাধারণভাবে, উন্নয়নকে কোনও নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও সবশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ‘গণতন্ত্রের’ চেয়ে ‘উন্নয়ন’ শব্দটিকেই অধিকক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। এবং মানুষকে ‘গণতন্ত্রমুখিতার’ পরিবর্তে ‘উন্নয়নমুখি’ ভাবধারায় মনোযোগী করতে ব্যতিব্যস্ততা দেখাচ্ছে। বলা হচ্ছে আগে ‘উন্নয়ন’ পরে ‘গণতন্ত্র’।
টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনায় করতে গিয়ে এই মহাজোট সরকারের ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় নানা কর্মকাণ্ড যেমন আছে বিপরীতে সমালোচনাও কম নেই। সঙ্গতি-অসঙ্গতি আর প্রহসন-উন্নয়নের হিসাব কষতে বসলে গেল ১০ বছরের রোজনামচা হয়তো আরও দীর্ঘতরই হবে।
২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বার রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহন করে আওয়ামী লীগ। ৫ বছর রাষ্ট্রশাসনের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আছে দলটি। তবে দলীয় সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। পরবর্তীতে সেই নির্বাচনকে বিরোধীদলগুলো ‘একতরফা’ বলে আখ্যা দেয়। যে নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করে মহাজোট। টানা তৃতীয়বার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করে ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে দলটি।
২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে ১০ বছরে সরকারের ইতিবাচক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছে দেশের শীর্ষ ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডি। এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে থাকছে সরকারের শিল্প খাত, শিক্ষা খাত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত এবং নারী ক্ষমতায়ন খাত।
১. শিল্প খাত
* সরকারের গত টানা দুই মেয়াদে বার্ষিক ৫ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ মে. টন গ্রানুলার ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শাহজালাল ফার্টিলাইজার স্থাপন। শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি বিসিআইসি-এর নিকট হস্তান্তর। দেশে কৃষকদের কাছে স্বল্পমূল্যে ও দ্রুততম সময়ে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে;
* দুই মেয়াদে ১০ বছরে দেশে সারের কোনও সংকট দেখা দেয়নি। দেশের কৃষক ও জনগণের কাছে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে;
* রাজধানীর হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ট্যানারি শিল্পসমূকে একটি পরিবেশবান্ধব স্থানে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলাধীন কান্দিবৈলারপুর, চন্দ্রনারায়ণপুর ও চর আলগী মৌজায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে ২০০ একর জমিতে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন শেষ পর্যায়ে;
* সাভার চামড়া শিল্পনগরীর বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজ সম্পন্ন। ইতোমধ্যে ১১৫টি ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। নির্মাণাধীন ঈঊঞচ এবং ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের ২১টি অংশের সিভিল কাজের প্রায় সমাপ্ত। ৪টি মডিউলে পরীক্ষামূলকভাবে বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে। এখানে শিল্প-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে;
* বর্তমান সরকারের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে পবিত্র রমজান মাসসহ সারাবছর দেশে চাল, ডাল, তেল, চিনি, ছোলাসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রয়েছে;
* দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সকল পণ্যের মজুত রয়েছে; কোনো পণ্য সংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই। পণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। সরকার দক্ষতার সাথে পণ্যের আমদানি-রপ্তানিনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করে চলছে;
* ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি ছিল ১৪.১১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৯৯টি দেশে ৭৪৪টি পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩৬.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার;
দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ১০.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৭-১৮ সালে সেই রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩০.৬১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারের বিশেষ উদ্যোগে এখন তৈরি পোশাক কারখানায় নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছে। দেশে বর্তমানে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ গড়ে উঠছে;
* বিগত জোট সরকারের আমল থেকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিজেএমসি’র ৫টি জুট মিল যথা: খালিশপুর জুট মিলস লি., জাতীয় জুট মিলস লি., দৌলতপুর জুট মিলস লি., কর্ণফুলী জুট মিলস লি. এবং ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি চালু করা হয়েছে। এই জুট মিলগুলো পুনরায় চালুর মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার জনবলের কর্মসংস্থান করা হয়েছে;
* বর্তমান সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্ধ মিল চালু করা, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ী করা, শ্রমিকদের মজুরি স্কেল ২০১০ বাস্তবায়ন করার ফলে মিলসমূহে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৯-১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে;
* ২০০৭ সালের চাকরিচ্যুত ৩ হাজার ২৬ শ্রমিককে পুনঃনিয়োগ ও ৮ হাজার ৬৬৫ জন বদলি শ্রমিককে স্থায়ী করা হয়েছে। দৈনিকভিত্তিক প্রায় ২১ হাজার ৭০০ জনকে বদলি শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২. শিক্ষা খাত
* নতুন ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে দক্ষ, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উদ্ভাসিত ও আলোকিত নাগরিক এবং সুশিক্ষিত ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন। বর্তমানে ধাপে ধাপে এর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষা আইন প্রণয়ন;
* ১০ বছরে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ী, দাখিল, দাখিল (ভোকেশনাল) ও এসএসসি (ভোকেশনাল) স্তরের সর্বমোট ২৬০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ২৯০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮-এর জানুয়ারির প্রথম দিন ৪ কোটি ৪২ লাখ ৪ হাজার ১৯৭ শিক্ষার্থী ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ কপি নতুন বই বিতরণ;
* ২০১৭ সালে সরকার ৫টি নৃ-গোষ্ঠীর ভাষায় ৭৭ লাখ ২৮২টি বই ছাপিয়ে বিতরণ। ২০১৮ সালে পার্বত্য তিন জেলায় আদিবাসীদের মধ্যে পাঠ্যবই বিতরণ। ২০১৮ সালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি পাঠ্যপুস্তক ও পঠন-পাঠন সামগ্রী মুদ্রণ করা হয়;
* ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রথমবারের মতো ৯ হাজার ৭০৩ কপি ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ;
* ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায় পর্যন্ত মোট প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ ৩৪ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থীর (ছাত্র-৬৯,৯৪,০৯২, ছাত্রী-১,৮৫,৪০,০৫৯) মধ্যে ৪৬১৫.৫৪ (৪ হাজার ৬১৫ দশমিক ৫৪ কোটি) টাকা উপবৃত্তিসহ আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে;
* মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মেধাবৃত্তির আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৪২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৮৪ কোটি ৪১ লাখ ১১ হাজার ৮০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে;
* স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের লক্ষে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে এবং এই ট্রাস্ট ফান্ডে সরকার ১ হাজার কোটি টাকা সীড মানি প্রদান। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই ফান্ড হতে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের ১ লাখ ২৯ হাজার ৮১০ ছাত্রীকে ৭২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উপবৃত্তি হিসেবে প্রদান;
* মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে;
* এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলসহ শিক্ষক নিয়োগ ও নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছে। মোবাইল ফোনের এসএমএস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ই-মেইলের মাধ্যমেও এই ফল অতিদ্রুত প্রকাশ করা হচ্ছে;
* ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষার ফরম ফিলআপ অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া মোবাইল ফোনের এসএমএস’র মাধ্যমে অনলাইনে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে;
* ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ হতে ১১০০ শ্রেণিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে;
* পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সন প্রবর্তন করা হয়েছে;
* দেশের প্রাথমিক স্তরের ৩৩টি, মাধ্যমিক স্তরের ৪৯টি, মাদ্রাসা শিক্ষার ৭৫টি এবং কারিগরি শিক্ষার ৩২টি পাঠ্যপুস্তক আকর্ষণীয় ও সহজে ব্যবহারযোগ্য ‘ই-বুক’-এ কনভার্ট করে (www.ebook.gov.bd) ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে;
* ইতোমধ্যে প্রায় ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ১৩৬ শিক্ষককে কম্পিউটার, ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান;
* উচ্চ শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদের ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে এবং ৫০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’ এবং ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’ স্থাপনের আইন গত ১৭ জুলাই ২০১৬ মহান জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয়েছে;
শিক্ষার্থীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ (১৫ খ-) ৩৪ হাজার ৬৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছে;
* সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে তাদের আর্থিক সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ বেতন পাচ্ছেন ১০০ শতাংশ;
* এ পর্যন্ত বেসরকারি বিদ্যালয় ১ হাজার ১৯টি, বেসরকারি কলেজ ১৬৫টি এবং বেসরকারি মাদ্রাসা ৩১০টি, অর্থাৎ ১ হাজার ৪৯৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও-ভুক্ত করা হয়েছে;
এ পর্যন্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৯ হাজার ৬১ জন এবং বেসরকারি মাদ্রাসার ৩৯ হাজার ৩২৪ জন, অর্থাৎ সর্বমোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৪ শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিও-ভুক্ত করা হয়েছে;
* সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে সহকারী শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীতকরণের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ৯৮৮ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে;
* সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা প্রদান। এবং চাকরি আট বছর পূর্তিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে (মোট পদের ৫০ শতাংশ) ৩ হাজার ৮৮২টি পদ প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদায় উন্নীত;
* যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই, সেসব উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ সরকারিকরণের কাজ চলছে। বিভিন্ন উপজেলায় ২৮৫টি কলেজ সরকারিকরণের জন্য অর্থ বিভাগের সম্মতি পাওয়া গেছে। ২৮৩টি কলেজের ফববফ ড়ভ মরভঃং স্বাক্ষর করা হয়েছে। ৩৯টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। ৩১৬টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। আরও ১৯টি প্রক্রিয়াধীন আছে;
* কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমকে ডিজিটাইজড করা হয়েছে;
* ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট/সমমানের প্রতিষ্ঠানে নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে ও গ্রুপ বৃদ্ধি করা হয়েছে;
* মাদ্রাসা শিক্ষা স্তরে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৩১৯(৫২)টি মডেল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।
৩. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
* বর্তমান সরকারের প্রথম দুই মেয়াদে সারা দেশে ৮০৪টি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং ১ হাজার ১৩টি বিদ্যুৎবিহীন ইউনিয়নে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে;
* একটি সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে;
* বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৯০১টি ল্যাব স্থাপন করে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে;
* শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলিজ পার্ক, যশোর; জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, ঢাকা; বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, গাজীপুর; সিলেট ইকেকট্রনিক্স সিটি, সিলেট ও দেশের ৭টি স্থানে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার করা হয়েছে;
* ১৩টি বেসরকারি আইটি প্রতিষ্ঠানকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব আইসিটি বিভাগকে একটি ডিজিটাল ফরেনিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে;
* মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ২০০৮ সালের ৪.৬ কোটি হতে বৃদ্ধি পেয়ে জুন ২০১৮ পর্যন্ত ১৫.০৯ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এ-সময়ে বাংলাদেশে টেলিডেনসিটি ৯২.৬৭ শতাংশ, যা ২০০৮ সালে ছিল ৩৪.৫ শতাংশ;
* ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ২০০৮ সালের মাত্র ৪০ লাখ হতে বৃদ্ধি পেয়ে জুন ২০১৮ পর্যন্ত ৮ কোটি ২ লাখে উন্নীত হয়েছে। জুন ২০১৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইন্টারনেট ডেনসিটি-৫৩.৬৫ শতাংশ, যা ২০০৮ সালে ২.৬৭ শতাংশ ছিল;
* ২০০৮ সালে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭.৫ জিবিপিএস, যা বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি একটি মাত্র সাবমেরিন ক্যাবলের (ঝঊঅ-গঊ-ডঊ-৪) মাধ্যমে সরবরাহ করত। বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার ৬৭৩ জিবিপিএস ছাড়িয়েছে;
* মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে দশম;
বর্তমানে দৈনিক আন্তর্জাতিক কল ৬ কোটি ৭৬ লাখ মিনিট;
* বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অনুমোদিত কলরেট সর্বনিম্ন ০.৪৫ টাকা হতে সর্বোচ্চ ২.০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ড পালস চালু করায় মোবাইল গ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যে কথা বলতে পারছে। ১৯৯৫ সালে প্রতি মিনিট কলচার্জ ছিল ১৩ টাকা। মে ২০১৮ থেকে অফনেট ও অননেটের অভিন্ন কলরেট সর্বনিম্ন ০.৪৫ টাকা চালু করা হয়েছে। আগে অননেট ০.২৫ টাকা এবং অফনেট ০.৬০ টাকা নির্ধারিত ছিল;
* বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ, উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র গাজীপুর ও সজীব ওয়াজেদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র বেতবুনিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে সফলজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
৪. নারীর ক্ষমতায়ন
* সরকার দুই মেয়াদে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে রোল মডেল। এর স্বীকৃতি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইউএন উইমেন ‘প্লানেট ৫০:৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড-২০১৬’ প্রদান করা হয়। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইউনেস্কোর ‘পিস ট্রি’ পুরস্কার পান। এবং এ বছর এপ্রিল মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল ইউমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ এ ভূষিত হন;
* বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশে ইতিহাসে জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো নারী স্পিকার নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি এছাড়া সংসদ নেতা, উপনেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ দুজন পূর্ণ মন্ত্রী এবং তিনজন প্রতিমন্ত্রীসহ মোট পাঁচজন নারী মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন;
* জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে;
* বর্তমানে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য ২১ জন। সংরক্ষিত আসনসহ বর্তমানে জাতীয় সংসদে সর্বমোট ৭১ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন;
* ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে;
* উপজেলা পরিষদে একটি করে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের জন্য ৩টি করে সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে;
* বর্তমানে মোট ৪ হাজার ৫৪০টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। সেই হিসাবে সংরক্ষিত আসনে সর্বমোট ১৩ হাজার ৬২০ নারী সদস্য রয়েছেন;
* বর্তমানে সচিব পদে ৭ জন নারী এবং ৭৮ জন নারী অতিরিক্ত সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন;
* বর্তমান সরকার সর্বপ্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে একজন নারী অধ্যাপককে নিয়োগ প্রদান করেছে;
* আওয়ামী লীগ সরকার সর্বপ্রথম সচিব পদে নারীকে নিয়োগ প্রদান করেছে। দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম একজন নারী মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি পদে একজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী প্রো-ভিসি নিয়োগ;
* আওয়ামী লীগ সরকার সর্বপ্রথম রাষ্ট্রদূত, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নারী বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে নারী নিয়োগ করেছে;
* প্রথমবারের নারী ‘নির্বাচন কমিশনার’ হিসেবে একজন নারীকে নিয়োগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদেও ইতোপূর্বে একজন নারী দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়নের বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান হচ্ছে;
* তথ্য আপা : তথ্য আপা প্রকল্পের ১৩টি উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে আয়োজিত উঠান বৈঠকসমূহে নারী নির্যাতনের শিকার মহিলাদের বিভিন্ন আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য তথ্যসেবা দেয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া তথ্যকেন্দ্রে এসে মহিলারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তথ্যসেবা পেয়ে থাকেন। ১ কোটি মহিলাকে তথ্যসেবা প্রদানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন