বিসিএস পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ মিলছে না ১৬৫ সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীর। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা বা জেলা প্রশাসকের গোপন প্রতিবেদন ‘সন্তোষজনক’ না হওয়ায় তাদের নিয়োগ আটকে আছে। অথচ তারা ফৌজদারি বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো তৎপরতায় যুক্ত নন। নিয়োগ পেতে তারা প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর আবেদনও করেছেন। চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৩৫তম বিসিএসে ৩২ জন, ৩৬তম বিসিএসে ৭২ জন এবং ৩৭তম বিসিএসে ৬১ জন প্রার্থী নিয়োগবঞ্চিত আছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পরিবারের সদস্য বা স্বজনদের কেউ কেউ বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিয়োগবঞ্চিতরা। তবে রাজনৈতিক পরিচয় চাকরিতে প্রবেশে বাধা নয় বলে জানান ওই কর্মকর্তারা।
ভুক্তভোগীরা জানান, ৩৬ বিসিএসে প্রথমে ১০২ জনের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা আপত্তি জানিয়েছিল। নিয়োগ পেতে তারা ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে ১০২ জন থেকে ৩০ জনকে নিয়োগ দিয়ে গেজেট জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৭২ জন এখনো নিয়োগবঞ্চিত। তাদের অনেকেরই আর সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স নেই। ৩৫তম ও ৩৭তম বিসিএসের নিয়োগবঞ্চিতদের অনেকেরই একই অবস্থা। কেউ কেউ অন্য চাকরি করলেও অপেক্ষায় রয়েছেন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের। অনেকেই অন্য কোনো চাকরিতে আবেদনই করেননি। তাদের বেশিরভাগই বর্তমানে বেকার।
নিয়োগবঞ্চিতদের অনেকে জানান, শিক্ষাজীবনে তারা সরাসরি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। অথচ পারিবারিক বা স্বজনদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ভুগতে হচ্ছে তাদের। হতাশাগ্রস্ত এসব তরুণ-তরুণী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বারবার ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৬তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও গেজেটভুক্ত হতে পারছেন না ৩৫তম বিসিএস কৃষি ক্যাডারে যোগদান করা একজন। তিনি ৩৫ তম বিসিএসে সব ধরনের ভেরিফিকেশনে কোয়ালিফাই হয়েই চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু ৩৬তম বিসিএসে ভেরিফিকেশনে কেন আটকে গেলেন তা বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আগের প্রতিবেদন সন্তোষজনক হলে ৩৬তম বিসিএসে এসে প্রতিবেদন কেন সন্তোষজনক হবে না। তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিতে জনপ্রশাসন সচিব বরাবর আবেদনও দিয়েছেন। তবু নিয়োগ পাচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন আমাদের সময়কে বলেন, চূড়ান্ত নিয়োগে আটকে যাওয়ার ঘটনা আগে ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে উত্তীর্ণদের অনেকের ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন ‘সন্তোষজনক’ না হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের নিয়োগ দিচ্ছে না। এটা একান্তই জনপ্রশাসনের বিষয়।
প্রশাসন বিষয়ক একাধিক বইয়ের লেখক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া কথা বলেছেন আমাদের সময়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফৌজদারি অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত না হলে উত্তীর্ণরা চাকরি পেতে পারেন। তারা যদি বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে তা হলেও আটকানোর সুযোগ নেই। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে এসব মেধাবী তরুণ-তরুণীকে নিয়োগ দেওয়া না হলে তা হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নিয়োগবঞ্চিতদের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এটা প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে। দেখা যাক, কী হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা ৩৬ ও ৩৭তম বিসিএস নিয়ে বিশেষ একটি সভা করেছি। দ্রুত এ সমস্যার একটা সমাধানে পৌঁছতে চাই। নিয়োগবঞ্চিতদের যদি নিয়োগ দেওয়া যায় সেটা দ্রুত করব। যদি সত্যিকারভাবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন নেতিবাচক আসে তা হলে আর কিছু করার নেই। তবে তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছি।
নবীন কর্মকর্তারা যদি সরকারবিরোধী হন তা হলে কর্মক্ষেত্রে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কী করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনে কর্মরত কারও সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করার সুযোগ নেই। তা হলে রাজনৈতিক বিবেচনায় কেন মেধাবী ছেলেমেয়েরা নিয়োগবঞ্চিত হচ্ছে এমন প্রশ্নে জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, প্রার্থীদের অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন