শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি এবার ‘অনুপ্রবেশকারী’দের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পথে আওয়ামী লীগ। শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছে মূলতঃ পদ বাগিয়ে নিয়ে, দলের নাম ভাঙিয়ে বা ক্ষমতাসীন দলের দাপট দেখিয়ে যারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। আর দলে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে অন্য দল থেকে এসে পদ-পদবী নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। তবে রাজনীতি সচেতন মানুষেরা মনে করেন, অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগে যদি অভিযান চালানো হয় তার পরিণতিও চলমান শুদ্ধি অভিযানের মতো প্রচারসর্বস্ব কিছু হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তারা বলেছেন, শুদ্ধি অভিযানে সম্রাট, সেলিম প্রধান, লোকমান ভূঁইয়া আর খালেদ মাহমুদ বাদে উল্লেখযোগ্য কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সিটি করপোরেশনের তিনজন কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, একজন কাউন্সিলরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী যুবলীগের ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা আবু কাওছার, পংকজ দেবনাথকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাও সরিয়ে দেয়া হয়েছে যখন তারা মেয়াদের চে’ আড়াই-তিন গুণ বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছেন তখন এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের পদ ছাড়ার মাত্র কয়েকদিন আগে। অনেকেই মনে করেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানের পর সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের হাতে যে কার্ড ছিল তা হচ্ছে এই অনুপ্রবেশ কার্ড। তারা এখন এই কার্ড নিয়েই হয়তো খেলায় মেতে উঠবে।
কেন অনুপ্রবেশকারী ইস্যু?
সব সময়ই ক্ষমতাসীন দল মানেই যেন মধুর চাক। তাই দলের ভেতরকার মৌমাছিরা তো বটেই অনেক সময় এদিক-সেদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি ঠাঁই নেয় ক্ষমতাসীন দলে। কখনো কখনো দলে নতুন ঘাঁটিগাড়া ব্যক্তিরা প্রভাব-প্রতিপত্তিতে ছাড়িয়ে যান দলের আসল, ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদেরও। আওয়ামী লীগের চিত্রটা অবশ্য কিছুটা বিপরীত। দলটির ‘ড্যাশিং’ নেতাদের কারণে দলের নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীরাই যেখানে সামনে এগোতে হিমশিম খান সেখানে বহিরাগত আর অনুপ্রবেশকারীরা আর কত দূর যেতে পারেন? তারপরও নানা কারণে আর নানাভাবে দলে জায়গা করে নেয়া ব্যক্তিদের সব সময়ই সন্দেহ, অবিশ^াসের চোখে দেখা হয়। দলটিতে নতুন আসারা খুব একটা যুঁত কখনোই করতে পারেন না। তারপরও ছিটেফোঁটা যেটুকু প্রভাব তারা বিস্তার করেন তাও সহ্য করতে পারেন না আওয়ামী লীগের ‘নিজস্ব’ নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী মনে করেন, আওয়ামী লীগের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হলে দলের সঙ্গে মিশে যেতে হয় যেটা অন্য দল থেকে আসা ব্যক্তিরা কখনোই পারেন না, তাই আওয়ামী লীগে ঢুকেও শেষ পর্যন্ত তারা পুরোপুরি আওয়ামী লীগের হয়ে উঠতে পারেন না, এদেরকেই বলা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী।
অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা
এক সময় আওয়ামী লীগে খুব আলোচিত একটি শব্দ ছিল ‘হাইব্রিড’। এবার নতুন করে যে শব্দটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা হলো ‘অনুপ্রবেশকারী’। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। জেলা থেকে শুরু করে প্রতিটি সম্মেলনে এ তালিকা ধরে অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বাদ দেয়া হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনে বিতর্কিতদের যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য তারা সতর্ক আছেন। ওবায়দুল কাদের জানান, দলীয়ভাবে এবং গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করেছেন দলীয় সভাপতি। ওই তালিকায় যাদের নাম আছে তারা যাতে আবারও অনুপ্রবেশ করতে না পারেন সে জন্য সংগঠনের সম্মেলনের ক্ষেত্রে তালিকা দেখেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুপ্রবেশকারীদের যে তালিকা হয়েছে তাতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতার সংখ্যাই বেশি। অনুপ্রবেশকারীদের যে তালিকা করা হয়েছে তাতে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং ভুল বোঝাবুঝি দেখা দিয়েছে। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন- অনুপ্রবেশকারী বলতে আসলে কাদের বোঝানো হয়েছে? অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে? নেয়া হলে তা কি? তাও জানেন না আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। এ তালিকা করা নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারাও কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। তাদেরকে ফোন করে তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা জানতে চাইছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেয়ার পরও যদি অনুপ্রবেশকারী হতে হয় তাহলে তা মান-সম্মানের বিষয়। তারা বলেন, আগের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, পদ-পদবী পাওয়ার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা তো থাকতেই পারে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পদ পাওয়া তো দূরের কথা মান-সম্মান ধরে রাখাই কঠিন বিষয় হয়ে উঠেছে। দলের নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন অন্য দলের রাজনীতির সাথে একমত হতে পারছেন না এমন ব্যক্তিরা যদি নীতিগত কারণেই আওয়ামী লীগে যোগ দেন তাহলে তাদেরকে কী অনুপ্রবেশকারী বলা যাবে? তারা বলেন, আসলে স্থানীয় পর্যায়ে দল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে আর ক্ষমতার কামড়াকামড়ির জন্যই তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী বিষয়টাকে সামনে আনা হয়েছে।
অবশ্য এ ধরণের একটি তালিকা হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা। তারা মনে করেন, দলে ঢুকেই অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন বাগিয়ে নিচ্ছেন, এটা আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতারা মানতে পারেন না। এই ধরণের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে যাতে দল ব্যবস্থা নেয় সেজন্য চাপ অব্যাহত রাখবেন তারা।
অনুপ্রবেশ করালো কারা?
অনেকেরই প্রশ্ন- দলে যারা অনুপ্রবেশ করেছেন বলা হচ্ছে, তারা তো গায়েবি নাজিল হননি, কারো না কারো হাত ধরেই দলে তাদের জায়গা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে অনুপ্রবেশ ঘটেছে মূলত: দলে আধিপত্য ধরে রাখার কৌশল থেকেই। স্থানীয় পর্যায়ে সংসদ সদস্যদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে ঠাঁই পেয়েছেন অনেকে। নিজ গ্রুপকে শক্তিশালী করতেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমপিরা এ কাজ করেছেন। আবার দেখা গেছে, কোন এলাকায় এমপির পাশাপাশি জেলা বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী নেতারাও দলে ঠাঁই দিয়েছেন অন্য দলের নেতাদের এমনকি বহিষ্কৃত বা দলত্যাগীদেরও। তাদের আওয়ামী লীগে যোগদানও কোন গোপনীয় বিষয় নয়। তারা মঞ্চে উঠে সংসদ সদস্য বা নেতার হাতে ফুল দিয়ে দলে ভিড়েছেন।
অবশ্য অনুপ্রবেশকারী প্রশ্নে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারবেন তা নিয়েও অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ অতীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে বহু নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা নির্বাচন করেছেন। আবার অনেক এমপি, প্রতিমন্ত্রী এমনকি মন্ত্রীও দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে নিজের পছন্দের বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতাতে কাজ করেছেন। বস্তুত: এ বছরের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অনেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছিলেন বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বার বার বলা হয়েছে। ১৭৭ জন প্রার্থীসহ ৩শ’ জনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, ওই ব্যক্তিদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য, যদি এভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের একেবারে নিঃশর্ত ক্ষমাই করে দেয়া হবে তাহলে এত হাঁকডাকের কি কোন প্রয়োজন ছিল? তারা মনে করেন, এতে দলের ভেতরে বিদ্রোহ, শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো ঘটনা বাড়তে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা অবশ্য এ আশংকার বিষয়টি তাদের মাথায় রেখেছেন। তাদের অবস্থান হচ্ছে, ক্ষমা পেলেই তারা পার পেয়ে গেছেন এমনটা নয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায় কোন না কোনভাবে তাদের মেটাতেই হবে। জানা গেছে, এটি শুধু চিন্তা-ভাবনার পর্যায়েই যে রয়েছে তা নয়, আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন এ দলের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে অনুপ্রবেশকারীদের চাপে রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত ব্যক্তিরা যাতে দলের কোন পর্যায়ে কোনো পদ না পান তা নিশ্চিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রবেশ-অনুপ্রবেশ
রাজনীতিতে দলবদল নতুন বা অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়। একদলের নেতা বা কর্মীরা আরেক দলে বিভিন্ন সময়ই আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়ে থাকেন। সাধারণত: নির্বাচনের আগে দল-বদলের খেলাটা জমে ওঠে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে নাম লেখান। শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই নয়, ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেয়ার একটা প্রবণতা বরাবর সব সময়ই দেখা যায়। তবে ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতার দখল ধরে রেখেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। বলা যায় আওয়ামী লীগের ‘সুসময়ের’ দশক পার হয়েছে, যুগের দিকে যাচ্ছে তাদের ‘সুসময়’। তাই এ সময়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। সাধারণ মানুষ, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তো যোগ দিয়েছেনই, একই সাথে এ দলের ছায়াতলে জায়গা করে নিয়েছেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও। এদের মধ্যেই কাউকে কাউকে চিহ্নিত করা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের বেশির ভাগই বিতর্কিত কর্মকা-ে যুক্ত ও দলের বদনাম সৃষ্টি করছেন। দল টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে এই সুযোগটা তারা নিয়েছেন, দলেরও কেউ এই সুযোগটা করে দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিলে দল আরো শক্তিশালী হবে।
কৃষকলীগে নতুন নেতৃত্ব
আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সগঠনগুলোর মধ্যে সবার আগে কাউন্সিল হয় কৃষক লীগের। ৬ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কাউন্সিল অধিবেশন বসে। ওই অধিবেশন শেষে কৃষক লীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাপতি হতে ইচ্ছুক ছিলেন দলের ১৩ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আগ্রহী ছিলেন ১১জন নেতা। পরে প্রার্থীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সভাপতি করা হয় সমীর চন্দ্র চন্দকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে। কৃষক লীগের মেয়াদ তিন বছর। অবশ্য বিদায়ী কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে প্রায় আট বছর। বিদায়ী কমিটির বিরুদ্ধে জেলা, থানা এমনকি ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। বলা হচ্ছে, নতুন সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদককে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য। নতুন সভাপতি সমীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ছাত্রলীগের বিশ^বিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ ছিলেন। আর সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য, তিনিও কৃষক লীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
স্বচ্ছ ভাবমূর্তির খোঁজে আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্বে কারা আসবেন? খুব নাটকীয় কিছু না হলে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শেখ হাসিনাই থাকছেন এমনটা ধরে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তো বটেই দেশের সাধারণ মানুষও। তবে এমন গুঞ্জনও রয়েছে, পার্টির নেতৃত্ব সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাতেও ছেড়ে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, দলের একেবারে শীর্ষ নেতৃত্বে না আনা হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্যদিয়েই অভিষেক হতে পারে পুতুলের আর তা হতে পারে আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমেই।
পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ওবায়দুল কাদেরকে এই পদে দেখতে চান এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়। তবে শারীরিক অবস্থা, মন্ত্রণালয়ের চাপসহ নানা কারণে ওবায়দুল কাদেরকে এ পদে নাও দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসতে পারে। এ পদে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। দলের তার গ্রহণযোগ্যতাও অপেক্ষাকৃত ভাল। তবে এ পদের জন্য আরো কয়েকজন দাবিদার রয়েছেন। বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে নিয়েও দলের একাংশের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। দৌঁড়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যাপারে এখনই হাল ছাড়তে রাজি নন তার সমর্থকরা। তারা আন্দোলনের মাঠে নানকের সাহসী ভূমিকার কথার পাশাপাশি বিগত সংসদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী না হওয়ার কথাও প্রচার করে নানকের পক্ষে সমর্থন ও সহানুভুতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। বর্তমান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর পক্ষেও দলের একটি শক্তিশালী অংশ সক্রিয় বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর মূল নেতৃত্বসহ বিভিন্ন পদে কারা আসবেন তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা এখন আওয়ামী লীগের অন্দরমহলে এবং বাইরে। এক সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য ছিল রাজপথের আন্দোলন, সংগ্রামে কার কতটা অবদান বা ভূমিকা ছিল। এর সাথে যুক্ত হতো দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি। একই সাথে দলের শীর্ষ নেতাদের আশির্বাদের বিষয়টি তাদের নেতৃত্বের পথকে প্রসারিত করতো। কিন্তু গত ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দখল আওয়ামী লীগের হাতে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে যে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময় পাড়ি দিতে হয় তাও করতে হচ্ছে না দলটির নেতাদের। পাতানো নির্বাচনের সাজানো ফলাফলেই ক্ষমতা ধরে রাখছে তারা। শুধু জাতীয় নির্বাচনই নয়, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের ফলও অনেকটা পূর্ব নির্ধারিত, তাই আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাদের ক্ষেত্রেই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম বা সাংগঠনিক দক্ষতার বিষয়টি এখন একেবারেই গৌণ। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, দলে এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে নেতৃত্ব পাওয়ার বিষয়টি এখন পুরোপুরিই নির্ভর করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি অন্য পর্যায়ের নেতাদের আস্থা আর আনুগত্যের ওপর।
আওয়ামী লীগ এবার খুব জোরেসোরে বলছে, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের দলের নেতৃত্বে আনা হবে। তবে বিশ্লেষকরা এ বিষয়টাকে ‘সোনার পাথর বাটি’ অর্থাৎ অসম্ভব বিষয় বলে মনে করেন। তাদের মতে, আওয়ামী লীগে আর যাই হোক ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির নেতা খুঁেজ পাওয়া একটু দুরূহই হবে। কেউ কেউ সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, বর্তমান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম, বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন, এছাহাক আলী খান পান্না, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম সামনে আনার চেষ্টা করেন। তবে দল ও রাজনীতিতে তাদের প্রভাব কতটা? আওয়ামী লীগের মতো একটি দল বা এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা শুধু কঠিনই নয়, অনেকটা পর্বত ডিঙানোর মতো বিষয় বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকেই এটা স্বীকার করেন যে, আর যাই হোক হুট করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা খুঁেজ হয়তো লাভ হবে না, চলনসই তবে সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, দলের নেতা-কর্মীদের ওপর প্রভাব আছে, উপরমহলে ভাল যোগাযোগ আছে এমন ব্যক্তিদেরই হয়তো শেষাবধি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে দেখা যাবে।
যুবলীগের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাষ
বর্তমানে আওয়ামী লীগের যে অঙ্গসংগঠনটি নিয়ে সবচে’ বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তা হচ্ছে যুবলীগ। ক্যাসিনো ঝড়ে সংগঠনটি টালমাটাল। আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কাউন্সিল হবে। কাউন্সিল আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামকে। যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ, আরেক ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম। এছাড়াও সভাপতি হিসেবে যাদের নাম উঠে আসছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, যুবলীগের নেতা আতাউর রহমান ও বেলাল হোসাইন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের কথা শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন, মহিউদ্দিন আহমেদ মহী, মন্জুর আলম শাহীন, সুব্রত পাল, বদিউল আলম, ফারুক হাসান তুহিন, বাহাদুর বেপারী। এদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ঢকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। যুবলীগের একাধিক নেতা বলেছেন, সংগঠনে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে বের করে আনতে প্রধান দুই পদে অবশ্যই এমন নেতাদের আনতে হবে, যাদের সাংগঠনিক দক্ষতার বিষয়টি পরীক্ষিত।
শুদ্ধি অভিযানের চমক কী শেষ?
১৮ সেপ্টেম্বর ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছিল সরকার। সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে রাজধানীতে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে অভিযানের সূচনা। এরপর গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের প্রবাবশালী নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ঠিকাদার জিকে শামীম, যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমান, অনলাইন ক্যাসিনোর আয়োজক সেলিম প্রধানকে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকা উত্তরের কাউন্সিলর রাজীব, হাবিব এবং দক্ষিণের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে। পলাতক আছেন দক্ষিণের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদসহ বেশ কয়েকজন। সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও নূরুন্নবী শাওনের দিকে। এরইমধ্যে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার, রাজধানীর কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেন ও সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের অন্ততঃ ৩০ জন কাউন্সিলরের নামও আলোচিত হচ্ছে চাঁদাবাজি দখলবাজিসহ নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে। এবারের শুদ্ধি অভিযানে সরকারের ‘টার্গেট’ ৫০০ জন এমন একটি আলোচনা থাকলেও সে আলোচনা মিইয়ে এসেছে আর অভিযান এখন পুরো স্থবির। গত ১৫ দিনে ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কেউ গ্রেফতার হয়নি।
কপাল খোলার অপেক্ষায় মধ্যমসারির নেতারা
অভিযান শুরুর পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের যেসব নেতা গা ঢাকা দিয়েছিলেন তারা এখন আবার বের হতে শুরু করেছেন। তারা নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কাউন্সিলের কার্যক্রম তদারকি করছেন, তারা নিজেরাও কাঙ্খিত পদ পাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন। কয়েকদিন আগেও আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর প্রধান কার্যালয় এবং ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে নেতা-কর্মীরা খুব একটা আসতেন না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আবার বদলাতে শুরু করেছে। এখন দিন-রাত সব সময়ই নেতা-কর্মীদের আনাগোনা এই দুই স্থানেই। মহানগরীর মাঝারি পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা বিপাকে থাকায় এবার কপাল খুলতে পারে তাদের। তারা এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনছেন কৃষক লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথা। এসব নেতা মনে করেন, যদি দেশে কোন অভিযান চলমান না থাকতো তাহলে এ দু’জনের কেউই হয়তো এ পদে আসতে পারতেন না, পরিস্থিতিই তাদেরকে সংগঠনের শীর্ষ পদে নিয়ে এসেছে। আবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান দুই নেতা মোল্লা আবু কাওছার ও পংকজ দেবনাথের পক্ষে কোনভাবেই আর এই সংগঠনে ফেরা সম্ভব হবে না, কেন না দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ও অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। যুবলীগের অবস্থা আরো শোচনীয়। চেয়ারম্যান ওমর ফারুক পদ হারিয়ে সে¦চ্ছায় কার্যত ঘরেই দিন কাটাচ্ছেন। আবার এই সংগঠনের নেতৃত্বের জন্য বয়সসীমাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ৫৫ বছর বয়সসীমার কারণে বিগত কমিটির অনেক শীর্ষ নেতার পক্ষেই আর যুবলীগের সাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে যুবলীগে দেখা যেতে পারে তৃতীয় কাতারে থাকা নেতাদের।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে দেখা যেতে পারে সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহকে। এ পদের জন্য দলের নানা পর্যায়ে আর যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তাদের মধ্যে আছেন মতিউর রহমান মতি, মঈনউদ্দিন মঈন, গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। তবে সাচ্চু সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে দেখা যেতে পারে। এ পদে অন্য দাবিদারদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা ও খায়রুল হাসান জুয়েল।
আগামী ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাউন্সিল, ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কাউন্সিল হবে। আর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল হবে ২০-২১ ডিসেম্বর।
কোন পথে আওয়ামী লীগ?
বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। এই তিনবারই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। এমনিতেই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সব সময় এবং সবকিছুতেই ঝুঁেক থাকেন শেখ হাসিনার দিকে। দলীয় কোন সিদ্ধান্তের জন্য তৃণমূল পর্যায়ের একজন নেতা থেকে শুরু করে দলের নীতি নির্ধারকরাও তাকিয়ে থাকেন শেখ হাসিনার মুখের দিকে। এবার এ নির্ভরতা আরো অনেক বেড়েছে। তাই আগ বাড়িয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া, সিদ্ধান্ত দেয়া বা পরামর্শ দেয়ার দিকে যাচ্ছেন না কেউই।
আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা জানিয়েছেন, দলে ক্ষমতার ভারসাম্য ও দায়িত্বে সমতা বণ্টনের অভিপ্রায় থেকেই ‘সভাপতিম-লী’ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। ‘সভাপতিম-লী বা ‘প্রেসিডিয়াম’ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পরিষদ। এক সময় এই পরিষদ সব ধরণের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিলেও ১/১১ এর পরে সভাপতিম-লীর একদল সদস্যের আচরণ, কার্যক্রম ও অবস্থানের কারণে এই ফোরামের ওপর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা অনেকটা কমে যায়। এক সময় দলের প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হিসেবে বিবেচিত হতেন এমন বেশ কয়েকজন নেতা বাদ পড়েন। তাদের শূন্যস্থানগুলোতে জায়গা দেয়া হয় এমন ব্যক্তিদের যাদের আসলে ‘জাতীয়’ নেতার তকমা দেয়ার সুযোগ নেই। এভাবেই কমে গেছে প্রেসিডিয়ামের গুরুত্ব।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সব ধরণের সিদ্ধান্ত আর কার্যক্রমের জন্য তাকিয়ে থাকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ আসলে কোনদিকে যাচ্ছে বা কোন পথ ধরে এগোচ্ছে তা নিয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা আছেন ধোঁয়াশার মধ্যে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, দলের সভাপতির হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে। তিনি সফলভাবে সবকিছু করতে পারছেন বলেই তার ওপর নির্ভরশীলতার মাত্রা বাড়ছে, তবে এর অন্য একটি দিকও আছে। শেখ হাসিনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন এমন নেতা এখন আওয়ামী লীগে খুব একটা নেই, পদ নেয়ার মতো নেতার অভাব নেই দলে কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার মতো নেতার বড় অভাব, সেই অভাব কাটানোর জন্যই হয়তো খুব দ্রুত কাউন্সিল করে দলে ও অঙ্গসংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে।
(সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজে ১১ নভেম্বর ২০১৯ প্রকাশিত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন