সরকার হটাতে ‘আরও কিছুদিন অপেক্ষা’ করতে হবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, রাজপথে আন্দোলনে গণবিস্ফোরণ ঘটবে।
মঙ্গলবার ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে এক স্মরণসভায় তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন আর কতদিন। এতদিন তো সহ্য করেছি। আমাদের আরও কিছুদিন সহ্য করতে হবে। কিন্তু সময় আসবে। এমন একটি সময় আসবে যখন এ দেশের এই জালেম সরকারকে উৎখাত করার জন্য বা অপসারণ করার জন্য গণবিস্ফোরণ ঘটবে বলে আমি মনে করি।’
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে বলে আমি মনে করি না। সুতরাং এর অবসান একমাত্র হতে পারে রাজপথে। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, প্যারোলের মাধ্যমে নয়। এই মুক্তি আমাদের আনতে হবে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণে এই স্মরণসভা হয়। জোটের নেতাকর্মী এ সময় কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার, আবদুল হালিম, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, এনপিপির অ্যাডাভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির মাহমুদ খান, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, এনডিপির আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার যত শিগগিরই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়, ততই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমরা দাবি করব যে, অবিলম্বে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত, একটি সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০ দলীয় জোটসহ আরও বৃহত্তর ঐক্যজোট সৃষ্টি করতে হবে বাংলাদেশে। সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের আন্দোলন শক্তিশালী করতে হবে, যাতে করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারি।’
মওদুদ বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থা হয়েছে তাতে মনে হয় না যে, দেশে কোনো সরকার আছে। এই সরকারের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নেই। আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেরা গত ১০ বছর যাবৎ ছাত্রলীগ-যুবলীগের নিপীড়নে তাদের তাণ্ডবলীলায় দেশের মানুষ জর্জরিত হয়েছে। আগে শুনতাম এরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে। এবার যেটা প্রকাশ পেল যেটা আগে আমরা জানতাম না যে, ৮৬ কোটি টাকা নিয়ে টেন্ডারবাজি করবে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা- এটা বাংলাদেশের মানুষ হতবাক হয়েছে। যুবলীগের নেতারা টেন্ডারবাজি, ক্যাসিনোবাজি করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বিদেশে টাকা পাচার করেছেন।‘
তিনি বলেন, ‘আবরার ফাহাদ শহীদ হয়েছে, সে চলে গেছে, জান্নাতবাসী হবে। সে একটা জিনিস প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশে ভিন্নমত যদি অবলম্বন করা হয় তাকে হত্যা পর্যন্ত করতে তারা কার্পণ্য করে না। এই যে মনোভাব, এই যে মাইন্ড সেটটা এটা হল ফ্যাসিস্ট মনোভাব। সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, শুধু বুয়েটে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রত্যেকটি হলে ৫-৬টা করে টর্চার সেল আছে। এটা তো আগে আমরা জানতাম না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ রকম টর্চার সেল আছে। আবরার হত্যাকাণ্ড যদি না ঘটত তাহলে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভবপর হতো না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন