দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনো-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। এধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অথচ দেশে কিংবা দেশের বাইরে আত্মগোপনে আছেন- তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে। এবার হাইপ্রোফাইল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও দলের পদ-পদবিতে থেকে বিভিন্ন সময় যারা দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়েছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করছে দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে দুদকের তালিকায় উঠে আসা ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ একাধিক মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত সেলের এক পরিচালককে এ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও তথ্যপ্রমাণাদির ভিত্তিতে মামলা দায়েরের তাগিদ দিয়েছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।
ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও তাদের সহায়তাকারী হিসেবে দুদকের তালিকায় প্রাথমিক তালিকায় ৪৩ জনের নাম উঠে আসার পরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সংস্থাটি।
দুদকের করা প্রাথমিক তালিকায় আছেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মোল্লা আবু কাওসার, হুইপ ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, টেন্ডার কিং জি কে শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কৃষক লীগের শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান আনিস, আরমান, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন চৌধুরী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, রাজিব, হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, জি কে শামীমের হিসাবরক্ষক যুবলীগের সোহেল, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও আবদুল হাই এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব মুহম্মদ দিলোয়ার বখত গণমাধ্যমকে জানান, তারা প্রাথমিকভাবে ৪৩ জনের তালিকা করেছে। যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলা দায়ের করা হবে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তারা গত ৫ বছরে ব্যাংকে কি পরিমাণ লেনদের করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সেই তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। পাশাপাশি এনবিআর, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, রিহ্যাবসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরেও এই ৪৩ জনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সরকার দলের অনেকের বিরদ্ধে এরইমধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। এ তালিকাভুক্ত নথিতে আছেন- নরসিংদীর সাবেক ও বর্তমান দুই সংসদ সদস্য, রাজধানীর মিরপুরের আলোচিত এক সাংসদ, খুলনার সাবেক এক সাংসদ, পিরোজপুর ও বরগুনার সাবেক দুই সাংসদ, মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর ছেলে।
উল্লিখিত ব্যক্তিদের নাম মালয়েশিয়ার সেকেন্ডহোমের তালিকায়ও আছে। এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের তালিকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ অনেকের নাম আছে। শিগগিরই আরও বেশ কয়েকজন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গত সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তারা ‘গডফাদার’ ‘গ্র্যান্ডফাদার’ যেই হোক না কেন কোনও ছাড় পাবে না। অনুসন্ধান কিংবা তদন্তে কাউকে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হবে না। দুর্নীতি দুর্নীতিই। আইন সবার জন্য সমান।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন