গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ‘ভিসি বাহিনী’ এবং বহিরাগত সন্ত্রসীরা এ হামলা চালিয়েছে। ৪০-৫০ জনের একটি দল তাদের ওপর রামদা, হকিস্টিক এবং লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় ২০ জন আহত হয়। এ সময় ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ধানক্ষেত দিয়ে পালিয়ে যান।
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিশারিজ দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর মাথা ইট দিয়ে ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ফিশারিজ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গোপালগঞ্জের নবীনবাগ এলাকার মেসে থাকি। সেখান থেকে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলাম। পথে গোবরা সোবাহবান সড়কে আমাদের ওপর উপাচার্যের লোকজন লাঠি, রামদাসহ দেশি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদের ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। প্রাণভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ধানক্ষেত দিয়ে পালিয়ে যান।
এর আগে বেলা ১১টা পর্যন্ত হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের হতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের একটাই দাবি ভিসির অপসারণ। টানা চার দিন আন্দোলন এবং তিন দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে তাদের।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে যুক্ত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
ভিসি খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল রোববার থেকে ১১ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুর উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই আদেশে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা।
গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান টুটুল বলেন, আমার ইউনিয়নের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটা আইন আছে। সেখানে যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা প্রক্টরিয়াল বডি দেখবে। এখানে কেন বহিরাগতরা বা ভিসির লোক এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করবে? হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, আজ শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা করা হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশে করা হয়েছে। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারিনি। আমি আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি, তাই নৈতিক জায়গা থেকে পদত্যাগ করেছি।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর কে বা কারা হামলা করেছে, তা আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে লেখার জেরে ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। উপাচার্য বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জোর আন্দোলন গড়ে তোলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন