ডিসি অফিসে দুর্দান্ত প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াতেন অফিস সহকারী (পিয়ন) সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। তার প্রভাবে সব সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকতেন তটস্থ। শুধু কর্মচারীরা নন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও থোরাই কেয়ার করতেন এই সুন্দরী।
চাকরি হারানোর শঙ্কায় প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না কেউ। ডিসি আহমেদ কবীর ওএসডি হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা সাধনার নানা বিষয়ে সরব হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রতিবেদককে বলেন, সাধনা ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে দেখা করেন। তার মোহনীয় রুপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন ডিসি। উন্নয়ন মেলা চলাকালীন তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে সেটি আরও ঘনিষ্ট হয়।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা নিজে এবং তার দুই আত্মীয়- রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন।
ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাধনা অফিস সহায়ক পদে যোগদান করার পরই জেলা প্রশাসকের অফিসে নতুন করে সাজসজ্জা করা হয়। খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্র আনা হয়। সেখানেই তারা অন্তরঙ্গ হতেন। অফিস চলাকালীন মেলামেশা অবাধ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয় লাল ও সবুজ বাতি। মেলামেশা চলাকালে লালবাতি জ্বলে উঠতো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো বিশ্বস্ত পিয়ন।
এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাক্ষাৎ প্রার্থীরা। শেষে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতেন তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি। সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার পরেই শুরু হতো দাপ্তরিক কার্যক্রম।
ডিসি অফিসে গুঞ্জন রয়েছে, ছায়া ডিসি সাধনার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে বদলি, নিয়োগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে সাধনাকে ম্যানেজ করতো সুবিধাভোগীরা। সবার মাঝেই ছায়া ডিসি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন পিয়ন সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা।
কে এই সাধনা?
সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার জন্ম জামালপুর শহরের পাথালিয়া গ্রামে। মা ফেলানী বেগম। বাবা অহিজুদ্দিন। তার পেশা ছিল ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া। সাধনার জন্মের সময় অহিজুদ্দিনের ঘরে দেখা দেয় অভাব। অভাবের তাড়নায় সাধনার বয়স যখন সাত দিন, তখন দত্তক দেন মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী গ্রামের নিঃসন্তান খাজু মিয়া ও নাছিমা আক্তার দম্পতির কাছে।
তাদের লালন-পালনে বেড়ে ওঠা সাধনার লেখাপড়া চলাকালীন বিয়ে হয় একই উপজেলার জোনাইল গ্রামের বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারী জাহিদুল ইসলামের সাথে। তাদের ঘরে পূর্ণ নামে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
২০০৯ সালে আকস্মিকভাবে মারা যান তার স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পরে তার পালক বাবা-মায়ের সাথে জামালপুর শহরের বগাবাইদ গ্রামে বসবাস শুরু করেন। পরে টাঙ্গাইলের এক পুলিশ কনস্টেবলের সাথে পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন সাধনা। তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ও বাড়তি স্বাধীনতার কারণে টিকেনি সে বিয়ে।
দ্বিতীয় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর সাধনা ঘরেই দোকান দিয়ে বিক্রি করতেন দেশি-বিদেশি প্রসাধনী। সেই ব্যবসাতেও টিকতে না পেরে শুরু করে হস্তশিল্পের ব্যবসা। ২০১৮ সালের উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নিয়েই ডিসি আহমেদ কবীরের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন