সারা দেশে বজ্রপাতে নারীসহ অন্তত ১১ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বৃষ্টিপাতের সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রপাতে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুরের নগরকান্দা, সালথা ও আলফাডাঙ্গায় ৪ জন, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ৩ জন নিহত ও দু'জন আহত হয়েছেন। মানিকগঞ্জের ঘিওর, পটুয়াখালীর গলাচিপা ও মাগুরায় ৩ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন।
নগরকান্দা (ফরিদপুর): ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার তালমা ইউনিয়নের দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের কৃষক ইমরান বেপারী (২২) বজ্রপাতে মারা গেছেন। তিনি ওই গ্রামের পাচু বেপারীর ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তালমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তৈয়াবুর রহমান জানান, ইমরান গ্রামের সাইদুল মেম্বারের বাড়ির পাশে নদীর ঘাটে পাট ধোয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ওই সময় বজ্রপাত ঘটলে ইমরান নিহত হন।
এদিকে সালথায় বজ্রপাতে মারা গেছেন মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর স্ত্রী হাসি বেগম (৪৫)। তিনি এ সময় রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। ঘরের ওপর বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া দুপুরে বজ্রপাতে মারা গেছেন সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বাতা গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল মাতুব্বর (৪৭)।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইয়াদ আলী জানান, সৌদি প্রবাসী বিল্লাল তার ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশে জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। তবে তার ছেলে অক্ষত রয়েছে।
আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর): পাট কাটার সময় বজ্রপাতে মো. হাফিজ শরিফ (৩৫) নামে এক শ্রমিক মারা গেছেন। বিকেলে আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের দিগনগর গ্রামের ক্ষেতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাফিজ সালথার বাহিরদিয়া গ্রামের সিরাজ শরিফের ছেলে। দিনমজুর হিসেবে দিগনগর গ্রামে পাখি মোল্লার বাড়িতে কাজ করতেন তিনি।
সারিয়াকান্দি (বগুড়া): বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ডাকাতমারা চরে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে আমিরুল ইসলাম (৪০) ও তার স্ত্রী ফাইমা বেগম ঘটনাস্থলে নিহত হন।
এ সময় তাদের পাঁচটি গরুও মারা যায়। একই সময় সদর ইউনিয়নের নিজবাটিয়া চরের তাহসিন মিয়ার ছেলে সুমন (৩২) পাট ধোয়ার সময় বজ্রপাতে আহত হন। তাকে সারিয়াকান্দি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া নিজামউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া খাতুন (১৫) স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে আহত হয়। তানিয়া দেবডাঙ্গা গ্রামের মোমিন প্রামাণিকের মেয়ে। অন্যদিকে, সারিয়াকান্দির ধাপ গ্রামের তবিবর ফকিরের ছেলে সুমন কালীতলা গ্রোয়েন বাঁধে চায়ের দোকানে বজ্রপাতে আহত হয়। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে চিকিৎসাধীন বলে জানান সারিয়াকান্দি থানার ওসি আল আমিন।
মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মৌহালী গ্রামে বজ্রপাতে মঙ্গল চন্দ্র সরকার (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত মঙ্গল সরকারের ছেলে কার্তিক জানান, দুপুরে জমিতে কাজ শেষে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে গোসল করতে যান তার বাবা। এ সময় বজ্রপাতে তার বাবা গুরুতর আহত হন। তাকে ঘিওর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মাগুরা: মাগুরা সদরের নলদাহ এলাকায় বজ্রপাতে অলিপ বিশ্বাস (৩২) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। নিহত অলিপ নলদাহ গ্রামের অরুণ বিশ্বাসের ছেলে।
পরিবারের লোকজন জানান, অলিপ দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করছিলেন। এ সময় তার ওপর বজ্রপাত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গলাচিপা (পটুয়াখালী): গলাচিপায় বজ্রপাতে মো. মতিউর রহমান (৬৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
গলাচিপা থানার ওসি মো. আখতার মোর্শেদ জানান, উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের মধ্য হরিদেবপুর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান নিজের জমিতে ধানের চারা রোপণ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মতিউর মারা যান।
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): নাসিরনগরে বজ্রপাতে আব্দুল্লাহ (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি চাতলপাড় ধানতলিয়া গ্রামের ঘোনাপাড়ার বাসিন্দা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হক জানান, বাড়ির পাশের বাজারে বসে সন্ধ্যায় চা পান করছিলেন আব্দুল্লাহ। এ সময় ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে তিনি বাড়ি ফেরার জন্য দোকান থেকে বের হন। পথে বজ্রপাতে আহত হন তিনি। উদ্ধার করে চাতলপাড় কমিউনিটি ক্লিনিকে নেয়ার পথেই তিনি মারা যান।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন