‘আমাদের মতামতে কি এসে যায়? কি আর হবে? কয়দিন ফেসবুকে লেখালেখি হবে!!!এইতো।’
বুঝে নিতে কষ্ট হয়না একদম হতাশ মিজ. শামীমা ইয়াসমিন। নিজের মনের ক্ষোভ ফেসবুকে এভাবেই ঝাড়তে থাকেন। খবর বিবিসির।
পুরনো ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৭৮জন নিহত হবার পর বিবিসি বাংলার ফেসবুকে জানতে চাওয়া হয়েছিল এই ধরনের আগুনের ঘটনা রোধে আপনাদের মতামত কী?
তিনি আরো লিখছেন, ‘এসব দূর্ঘটনা প্রতিকারের সুযোগ অনেক আছে। কিন্তু একটা দূর্ঘটনা ঘটলে তখন কিছুদিন খুব সরব থাকেন সবাই!! হেন করবো, তেন করবো!! ব্যস ঐ পর্যন্তই।’
এমনকি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে কিছু আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমেই ‘যে জীবনের মূল্য নির্ধারিত হবে টাকায়’ তা নিয়েও এক ধরনের হতাশা ব্যক্ত করছেন তিনি।
অন্যদিকে মি. নয়ন কুমার কমেন্ট করেছেন, ‘মন্তব্য করে কোন লাভ আছে কি? তাই কোন মন্তব্য নেই। তদন্ত কমিটি হবে (তাও আবার উচ্চ পর্যায়ের!), তদন্ত হবে। কিন্তু প্রকাশ হবে না,ফলাফল শূণ্য’।
শুধু শামীমা, নয়ন কিংবা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ নয়, তাদের মত অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন এরকম দুর্ঘটনার তদন্ত ও তারপরে কার্যকরী ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয় বলে।
তবে এসব হতাশার সাথে বেশ ক্ষোভও ছিল অধিকাংশ মন্তব্যকারীর। তাদের ক্ষোভ মূলত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস এবং পুরনো ঢাকার মানুষদের প্রতি।
‘যারা দেখভালের দায়িত্বে আছেন তারা নিজেরাই যেন এই সমস্ত অভিশাপের মূলহোতা,’ এমনটাই মনে করছেন সোহানুর রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী।
তিনি বলছেন, ‘যেখানে অগ্নিকান্ড হয়েছে প্রথম অবস্থায় যেখানে দমকলের গাড়ি পযর্ন্ত ঢুকানো সম্ভব হয়নি, ভাবুন একবার এমন একটা নগরী এই হলো আমাদের আবাসন ব্যবস্থা।’
ঠিক একই ধারণা পোষণ করেন মনজুর আলম নামে আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী।
তিনি লিখেছন, ‘পুরান ঢাকায় অনেক এলাকায় ফায়ার সার্ভিস চলাচলের জন্য রোড ও নেই, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এটা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন,রাজউক এদের কাজ কি? মানুষের জীবন মালের নিরাপত্তা দিতে না পারলে, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ কি?’
তবে তিনি নিজেও আবার প্রশ্ন করছেন: বিড়ালের গলায় ঘন্টা কে বাঁধবে?
অনেকে আবার ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদেরও প্রতিও অভিযোগ করছেন যে কেন তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার কাজ শেষ করতে পারলেন না।
তবু মন্তব্যকারীরা নিজেরাই নিজেদের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরও দিয়েছেন।
যেমন মো. হৃদয় সরকার বিজয় সরকারের এমন অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাসেল।
তিনি লিখেছেন: ‘আপনি বোধহয় পুরান ঢাকায় যাননি কখনো। যেখানে দুইটা রিকশা পাশাপাশি চলতে পারে না রাস্তা সরু বলে।ফায়ার সার্ভিস কে দোষ দেয়াটা বোকামি।’
তবে স্থানীয় মানুষদেরও প্রতিও আঙ্গুল তুলছেন অনেক মন্তব্যকারী।
‘আসুন সবাই মিলে সরকারের উপর সকল দোষ চাপিয়ে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি! কেননা সকল কাজ তো শুধু সরকার করবে!’ বলছিলেন মাসুদ আলম।
কিছুটা অনুযোগের ভঙ্গিতেই তিনি লিখেন, জনগণ শুধু নিয়ম ভঙ্গ করবে, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রাখবেনা, ভবন তৈরির সময় এক ফুট জায়গা ছাড়বেনা, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী ঢুকার জায়গা রাখবেনা, কেমিক্যাল নীতিমালা মানবেনা.....সব সরকারে দোষ!!’
তবে হ্যাঁ মি. আলম কিন্তু হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে ভুলেননি।
এদিকে সরাসরি পুরনো ঢাকার বাড়িওয়ালাদেরও দোষারোপ করছেন আব্দুস সামাদ রানা।
‘যতদিন পর্যন্ত বাড়িওয়ালাদের উচ্চাভিলাষী ভাড়া চিন্তা থেকে,নিজেদের মুক্ত করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত, স্বাভাবিক জীবন তথা ধ্বংসলীলা রোধ সম্ভবপর না,’ লিখেন তিনি।
আগুনের দুর্ঘটনা রোধে ৪ সুপারিশ
ফেসবুকের মন্তব্যে যেসব সুপারিশ এসেছে তা প্রায় একই রকম।
১. আবাসিক ভবনে গুদাম-কারখানা নয়:
‘চকবাজারকে খাবারের জন্যই বিখ্যাত রাখা উচিত কেমিক্যাল এর জন্য না’ -বেশ ব্যাঙ্গ করেই লিখেছেন শাহ সাজ্জাদ হোসেন।
তার মতো অনেকেই আবাসিক এলাকা ও গুদাম বা রাসায়নিক কারখানা ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা নগরকে প্রক্রিয়াকে খুবই পরিকল্পনামাফিক করে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
যেমন আব্দুল আলীম নামে ফেসবুকে মন্তব্যকারী সুস্পষ্ট বক্তব্য: ‘হাজারীবাগ ট্যানারী শিল্পের মতো পুরান ঢাকার সকল কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের গোডাউন এবং দোকান ঢাকার বাহিরে স্থানান্তর করতে হবে’।
২. অগ্নি প্রতিরোধে সচেনতা:
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জনসচেতনা সৃষ্টির কথা উল্লেখ করছেন অনেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি, কারখানা, অফিস-আদালতে যেন পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে সেটিও তারা বলছেন।
বিশেষ করে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম ও আগুন লাগলে করণীয় কী সে বিষয়ে সবার জ্ঞান থাকা জরুরী বলে মন্তব্যকারীরা মনে করছেন।
৩. পুরনো ঢাকার সংস্কার:
অনেকে আবার পুরনো ঢাকা এলাকার সংস্কারও চেয়েছেন।
রবিউল ইসলাম নামে একজনের মন্তব্য এরকম: ‘আমি মনে করি পুরানো ঢাকা ভেঙে নতুন করে করা হোক।’
এছাড়া ওই এলাকায় রাস্তার দৈর্ঘ্য বাড়ানোসহ, প্রতিটি ভবনের দূরুত্ব ১০-১৫ ফুট এবং সবোর্চ্চ ১০ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করছেন আজিজুর রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী।
৪. আইনের কঠোর প্রয়োগ
বাংলাদেশে ভবন নির্মাণসহ নিরাপত্তা বিষয়ক যেসব নিয়মকানুন বা আইন আছে তার কঠোর এবং কার্যকারী প্রয়োগ চান ফেসবুকে মন্তব্যকারীদের অনেকে। অনেকের অভিযোগ, এসব ক্ষেত্রে নানারকম দুর্নীতির কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি আমলে নেয়া হয়না প্রশসানের পক্ষ থেকে।
তাই দাওদুল সজিব নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন: ‘আইনের মাধ্যমে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত’।
গত ১০ বছরে কী পরিমাণ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে?
গত ১০ বছরে অগ্নিকাণ্ড হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন