বিএনপির জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতা ঢাকায় থাকেন। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রাজধানীতে। এমনকি উপজেলা কমিটির অনেক নেতাও ঢাকায় বসে এলাকার রাজনীতি পরিচালনা করেন। দলের এই ‘অস্বাভাবিক’ প্রথা এবার ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। ঢাকায় থাকেন এমন নেতাদের আর গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে না। এলাকায় থেকে রাজনীতি করেনÑ এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সম্প্রতি দলের নেতাদের বিশ্লেষণে তৃণমূলে সংগঠন দুর্বল হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বিএনপির ৮১ সাংগঠনিক জেলা কমিটির অধিকাংশ নেতা ঢাকায় থাকেন। কর্মসূচিভিত্তিক তারা এলাকায় যান। কেউ কেউ সপ্তাহে দু-একদিনের জন্য এলাকায় যান। অনেকে কয়েক মাসও এলাকায় যান না। ঢাকায় বসে কমিটি করেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, এবার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আগের মতো হচ্ছে না। অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনও একইভাবে হবে। তৃণমূলের কমিটি গঠনের ধরন এবার ভিন্ন রকমের হবে।
তিনি বলেন, কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে এখন থেকে নেতা নির্বাচিত হবেন। বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আহ্বায়ক কমিটিকে সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বেঁধে দেওয়া সময়ই আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ। এ সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন করতে না পারলে আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, তৃণমূলে এখন আর আগের মতো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। এলাকায় কর্মিসভা হয় না। যার কারণে আন্দোলনে দানা বাঁধে না। কর্মী সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। কর্মীভিত্তিক সাংগঠনিক কাঠামো হারিয়ে যাচ্ছে। দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিএনপির সমর্থক অগণিত কিন্তু কর্মী অনেক কম। অথচ এক সময় দলে অনেক কর্মী তৈরি হয়েছিল। তখন এলাকাভিত্তিক রাজনীতি হতো। জেলায় জেলায় সাংগঠনিক চর্চা হতো। নেতারা গ্রামে-গঞ্জে, পাড়ায়-মহল্লায় চষে বেড়াতেন। এখন সেই রকম নেতাও কমে গেছে।
এর কারণ হিসেবে ওই নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকার আধিপত্য ধরে রাখতে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকছেন। কেন্দ্রীয় পদের পাশাপাশি জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, এমনকি উপজেলা ও ইউনিয়ন পদ আঁকড়ে রাখছেন। কিন্তু তারা রাজনীতি করেন ঢাকায়। এলাকায় যান কালেভদ্রে। আগে এমনটি ছিল না। জেলা নেতারা জেলায় রাজনীতি করতেন। কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় থাকতেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘অস্বাভাবিক’ বিপর্যয়ের পর দলকে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডনে অবস্থান করলেও স্কাইপিতে তিনি সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা দিকনির্দেশনাও।
জানা গেছে, মাসখানেকের মধ্যে তৃণমূলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন বিভিন্ন জেলা ইউনিট সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমান কমিটির সফলতা ও ব্যর্থতার খোঁজ নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটিকে অবশ্যই সম্মেলনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আহ্বায়ক পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হতে পারবে না।
সম্প্রতি গঠিত হওয়া ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশÑ ড্যাব, অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশÑ অ্যাব এবং মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। কমিটির আহ্বায়করা পরবর্তী কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হতে পারবে না বলে তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে পুনর্গঠিত বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি ভেঙে পুনর্গঠন করেছেন তিনি।
জানা গেছে, আহ্বায়ক কমিটি করার আগে দলের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদককে (মৎস্যজীবী দলের জন্য মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রদলের জন্য ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক) নয়াপল্টনের কার্যালয়ে ডেকে আনা হচ্ছে। সেখানে দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তার আলোকে অঙ্গ, সহযোগী বা পেশাজীবী সংগঠনগুলোয় যদি বিবদমান গ্রুপ থাকে (দুই বা তিন গ্রুপের) তাদের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ক হিসেবে তিনি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর আহ্বায়ক কমিটির একটি তালিকা তৈরি করেন। সব পক্ষ রাজি হলে সেটি চূড়ান্ত করা হয়। তা না হলে দ্বিতীয়, প্রয়োজনে তৃতীয় দফায় বসে এ তালিকা করা হয়।
এ ব্যাপারে রিজভী আহমেদ বলেন, কাউকে কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। আগের কমিটির সব নেতা সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বায়ক কমিটি করেছেন। জেলা, উপজেলাসহ সব কমিটি গঠন একই প্রক্রিয়ায় হবে বলে জানান তিনি। চলতি বছরের ১৯ মার্চ বর্তমান কমিটির ৩ বছর পূর্ণ হবে। এর পর সপ্তম কাউন্সিল করতে হবে। কাউন্সিলের চিন্তা মাথায় রেখে পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন