বিশ্বের সেরা মূল্যবান মসলা জাফরান উৎপাদনে সম্প্রতি সফলতা লাভ করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের(শেকৃবি) একদল গবেষক।
গবেষকদলের প্রধান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন জানান, তাঁরাই দেশের মাটিতে প্রথম সফলভাবে জাফরান উৎপাদন করেছেন। জাফরান, যার ইংরেজি নাম স্যাফরন। এর আরো একটি নাম কুমকুম। জাফরান উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ক্রোকাস স্যাটিভাস (Crocus sativus)। অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায় জাফরানকে বাণিজ্যিক অঙ্গনে বলা হয় লাল সোনা (Red gold)।
ড. জামাল জানান পুর্ব পশ্চিমকে জানান, কাশ্মীর ও ইরানি জাফরান বিশ্ববিখ্যাত। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় স্পেনে বাণিজ্যিকভাবে। দেশটি বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ জাফরান রপ্তানি করে থাকে। এ ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর ও চীনে জাফরান চাষ হয়। এই উদ্ভিদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কোন বীজ হয় না।
বিস্ময়ের ব্যাপার যে, এর ফুল হয় অথচ বীজ হয় না। আর এই জন্ম প্রক্রিয়ার জন্যই এরা এত মূল্যবান। বংশ বিস্তারের জন্য এরা মানুষের সাহায্যের উপর নির্ভর করে। চার বছর পর পর একটি জাফরান উদ্ভিদের মূলে টিউবার তথা বালব সৃষ্টি হয়। বালবের অন্য নাম ক্রোম।
অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা খুব সাবধানে এই বালব সংগ্রহ করে তা রোপন করেন যা থেকে পরবর্তী সময়ে নতুন জাফরান উদ্ভিদের জন্ম হয়। এ গাছ লম্বায় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার হয়। বাল্ব লাগানোর পর প্রায় ৩ মাসের মাথায় ফুল আসে। একটি গাছ পরপর তিন থেকে চার বছর ফুল দেয়। জাফরান চাষ ব্যয়বহুল ও অত্যন্ত ধৈর্য্যের কাজ বিধায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ এর চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এক যুগ আগে দেশের ৯টি বিএডিসি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্র ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, গাজিপুরের কাশিমপুর, বান্দরবান, রংপুর, পাবনা, লামা, জামালপুর এবং খুলনার দৌলতপুর জাফরান এর পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ শুরু হয়। এক যুগ হয়ে গেলেও উপযুক্ত পদক্ষেপের অভাব ও উদাসীনতার কারনে জাফরানের বিস্তার ঘটানো সম্ভব হয়নি।
১ কেজি জাফরানের গড় দাম বাংলাদেশী মূদ্রায় প্রায় ৩ লাখ টাকা। ৪৫০ গ্রাম জাফরান তৈরির জন্য প্রায় ৭৫ হাজার ফুল প্রয়োজন। জাফরান যেমন অর্থকরী একটি মসলা তেমনি এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। দেশের বিলাসবহুল রেষ্টুরেন্টগুলোতে এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৩৬-৪০ কেজি জাফরান আমদানি করা হয়। যার অধিকাংশই রেষ্টুরেন্টের জন্য।
প্রসঙ্গত, স্মৃতি শক্তি ও চিন্তা শক্তি বৃদ্ধিতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী। এটি দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও অন্য অনেক শারীরিক সমস্যা নির্মূলে ঔষধি হিসেবে কাজ করে থাকে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আসল জাফরানের নাম করে নকল জাফরান বিক্রি করে আসছে। কুসুম নামের ফুলের পাপড়ি দিয়ে নকল জাফরান তৈরি করা হয়। কুসুম ফুল থেকে তৈরি গুড়ার রঙ লাল টকটকে হওয়ার কারণে নকল আর আসল জাফরানের পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। জাফরান কেনার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বাড়ির আঙিনায়, সবজি বাগানে বা ছাদে বা কিছু সংখ্যক জাফরান গাছ লাগিয়ে নিজেই উৎপাদন করতে পারলে সবচেয়ে ভাল।
উল্লেখ্য, আমাদের বাংলাদেশে যে আবহাওয়া তা জাফরান চাষের জন্য অনুকূল বলে মনে করেন কৃষিবিদগণ। সারাদেশে যাতে জাফরান চাষ করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বল জানান গবেষকগণ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন