ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। ভর্তুকি বাড়িয়ে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিতরণের পরিধি বাড়ানো দরকার বলে মত দেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
মূল্যস্ফীতি থাকলেও অনেক দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আমরাও এমন আশা করতে পারি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরেও তেলের দাম কমেছে। শুধু বেড়েই চলেছে এমনটি নয়।
জাগো নিউজ: রমজানের শুরুতেই বাজার পরিস্থিতি বেসামাল। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে হাহাকার। সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা পর্যবেক্ষণ করছেন নিশ্চয়?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: সাধারণ মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে, এটি বুঝতে পারার জন্য আসলে বোদ্ধা হতে হয় না। সবচেয়ে বড় বিপদের কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ অনিশ্চিত জীবনমান নিয়ে বেঁচে আছে। এই পরিস্থিতি একটা সমাজের সহনীয় অবস্থা নয়। আজ যে পরিস্থিতিতে আছি, কাল সম্পর্কেও সম্মুখ ধারণা রাখতে হবে। কিন্তু কেউ সঠিক ধারণা নিয়ে ঘুমাতে যেতে পারছে না।
সব কিছুর দাম বাড়লো পরম্পরায় এবং দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। রোজার মধ্যে দাম আরও অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। মিডিয়ার খবরের পাশাপাশি বাজারে গেলেই সব পরিষ্কার। কোনো কিছুই যেন নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যার মতো দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
জাগো নিউজ: করণীয় কী?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: সরকারের মনিটরিং সেল আছে। এজেন্সি রয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার কথা। এখানে বড় দুবর্লতা আছে। আমরা সঠিক উপায়ে মনিটরিং করতে পারছি না। পণ্যের পরিবহন ব্যয় কেন বাড়ে, তা নিয়ে শত শত প্রতিবেদন আছে। যারা ব্যবস্থা নেবে তারাই এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষ আর ভরসা পাবে কোথায়! সড়কে ব্যবস্থা নিলেই পণ্যের দাম অনেকটা স্বাভাবিক হবে।
আবার মনিটরিংয়ের নামে বেশি কড়াকড়ি করলেও সমস্যা। বাজারে পণ্যই মিলবে না তখন। আসলে আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা ভুলে গেছি। মনিটরিং সেলের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। তাদের দায়বদ্ধতা বোঝাতে হবে।
সরকার দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিচ্ছে ঠিক। যেমন স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি ব্যবস্থা চালু করেছে। মানুষ কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারছে বটে।
জাগো নিউজ: এ ব্যবস্থাও অপ্রতুল কি না?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: অবশ্যই অপ্রতুল। দেখতে হবে কত শতাংশ মানুষ স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে পারছে। সবাই আবার লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে আসে না। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা করা দরকার। এ নিয়ে সরকার আরও গবেষণা করতে পারে। স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির পরিধি বাড়ানো জরুরি।
তবে টিসিবি ব্যবস্থারও সীমাবদ্ধতা আছে, এটি মনে রাখতে হবে। এটি একটি ভর্তুকি ব্যবস্থা। ভর্তুকি বাড়ালে বাজেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জাগো নিউজ: করোনা পরিস্থিতি, যুদ্ধ অবস্থাকে দায়ী করছে সরকার। এটি কতটুকু প্রাসঙ্গিক এখন?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। করোনা এবং যুদ্ধ একটি বিপর্যয় সময় তৈরি করেছে। গোটা পৃথিবীই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে।
সবচেয়ে বড় বিপদের কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ অনিশ্চিত জীবনমান নিয়ে বেঁচে আছে। এই পরিস্থিতি একটা সমাজের সহনীয় অবস্থা নয়। আজ যে পরিস্থিতিতে আছি, কাল সম্পর্কেও সম্মুখ ধারণা রাখতে হবে। কিন্তু কেউ সঠিক ধারণা নিয়ে ঘুমাতে যেতে পারছে না।
তবে এ-ও মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর অবস্থা অনেক ভালো হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ আমরা করছি না। একই অজুহাত তো আপনি দিনের পর দিন দিতে পারেন না। মূল্যস্ফীতি থাকলেও অনেক দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আমরাও এমন আশা করতে পারি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরেও তেলের দাম কমেছে। শুধু বেড়েই চলেছে এমনটি নয়।
তবে হ্যাঁ, ডলারের দাম বাড়ার কারণে অনেক আমদানি ব্যয় বাড়ছে। আমাদের তো বহু পণ্য আমদানি করতে হয়। সেই তুলনায় তো রপ্তানি বাড়াতে পারিনি। এক পোশাকখাত ছাড়া আর কোনো খাতের তো উন্নয়ন হয়নি।
জাগো নিউজ: মনিটরিং সেলের কথা বলছিলেন। দাম নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে তারা ব্যর্থ কি না?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: ব্যর্থ কি না তা বলবো না। তবে নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়নি, তা সহজেই বলা যায়। দেখানোর চেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে এ অবস্থা হওয়ার কথা নয়। সরকার তো সামাজিক বেষ্টনী তৈরি করার চেষ্টা করছে। নানা ধরনের ভাতা দিচ্ছে। কিন্তু অধিক সংখ্যক মানুষকে সেবার আওতায় আনা তো দায়িত্ব প্রশাসনের। এখানে ঘাটতি আছে।
জাগো নিউজ: মধ্যবিত্তের জন্য কী বলবেন?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: আসলে এ পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তের জন্য কিছুই করার নেই। মধ্যবিত্তই বড় বিপদে আছে। তারা কষ্টের কথা সহজে বলতেও পারছে না।
জাগো নিউজ: এই শ্রেণি ভেঙে পড়লে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: মধ্যবিত্ত শ্রেণি সহজেই ভেঙে পড়বে, তা মনে করি না। কারণ তারা লড়াই করেই এ জায়গায় এসেছে। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি কিছুটা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসতে পারে। এতে খুব হেরফের হবে তা-ও মনে করছি না।
জাগো নিউজ: মানুষের জন্য সামনে কী দেখছেন?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: সামনের দিনে কঠিন পরিস্থিতি আসতে পারে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে তো মানুষ বসবাস করছেই। এ চ্যালেঞ্জের কথা প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। সামগ্রিকভাবে মোকাবিলা করতে পারলে সংকটের উত্তরণ ঘটবে বলে মনে করি।
সায়েম সাবু
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন