অলিউল্লাহ নোমান
নতুন পাঠ্যক্রম জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিরোধী শুধু নয়, ঈমান এবং আক্বিদা বিরোধী। প্রথম দিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু এই পাঠ্যক্রমের পক্ষে সাফাই গেয়ে বক্তব্য রাখছিলেন। শক্তভাবেই ডিফেন্ড করার চেষ্টায় ছিলেন ঈমান ও আক্বিদা বিরোধী পাঠ্যকে। তাঁর বয়ান ছিল, সরকারকে বিতর্কিত করতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে পাঠ্যপুস্তকের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। তাঁর ভাষায় পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ-প্রচার চলানো হচ্ছে। চিলে কান নিয়ে গেছে বলে সবাই চিলের পেছনে দৌড়াবে কি না, এরকম বহু যুক্তি দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে মুদ্রিত বইয়ের পক্ষেই বক্তব্য রাখছিলেন দীপু মনি। এমন যুক্তির পর হঠাৎ করেই আবার ইউটার্ন নিয়েছেন তিনি। ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, কিছু ভুল হয়ে গেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক অধিদফতর (এনসিটিবি) মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা মানেন নি। বেশ ভাল কথা। দুই দিন আগে ডিফেন্ড করে বক্তব্য দিলেন। হঠাৎ করেই ইউটার্ন নিয়ে দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা করলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, এনসিটিবিতে যারা চাকুরি করেন তাদের ঘাড়ের উপর কয়টা মাথা! এই চাকুরীজীবীরা মন্ত্রণালয়ের কথা অমান্য করে জাতীয় ঐতিহ্যের অবমাননাকর ও দেশের মানুষের ধর্মীয় আক্বিদা-বিশ্বাসের পরিপন্থী বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করবে! দীপু মনির দাবি অনুযায়ী যারা ভুল করেছেন, তাদের একজনকেও কি এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে?
ষষ্ঠ শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ নং পৃষ্ঠা
বলা হয়েছে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। একটি তদন্ত কমিটি ভুল খুঁজবে। আরেকটি তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করবে এই ভুলে সাথে কারা জড়িত। বাংলাদেশে বহু ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এইসব তদন্ত কমিটি হচ্ছে লোক দেখানো। ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়া বা উত্তেজনা প্রশমনের উত্তম অপকৌশল হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠন করা। দীপু মনির কি জানা নেই কারা বই ছাপানোর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কারা বই গুলো লিখেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন। তদন্ত কমিটি লাগবে কেন? যারা বই গুলো লেখা ও সম্পাদনার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিলেই তো হয়।
ঈমান-আক্বিদা বিরোধী তথ্য এবং ভুল ইতিহাসে ভরা বই গুলো তো ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পৌঁছে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বই গুলো কি প্রত্যাহার করা হবে? দীপু মনি কিন্তু পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, এই বছর বই গুলো নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে। তিনি কিন্তু বলেন নি, যেসব বই নিয়ে আপত্তি উঠেছে সে গুলো প্রত্যাহার করা হবে। পাঠদান করা হবে না। সূক্ষ্ম একটি অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলে।
এই গেল পাঠ্যপুস্তক নিয়ে দীপু মনিদের অপকৌশলের কিছু বর্ণনা। প্রথম লাইনে শুরু করেছিলাম, পাঠ্য বইয়ে ঈমান-আক্বিদা বিরোধী বিষয় নিয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইটির ১১৪ এবং ১১৫ নম্বর পৃষ্ঠার দিকে একটু নজির দিতে চাই। ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠার শিরোনাম হচ্ছে-‘খুঁজে দেখি মানুষ বিবর্তনের ইতিহাস’। শুরুতেই বলা হয়েছে-“খুশি আপা: চলো আমরা খুঁজে দেখি মানুষ কোথা থেকে এলো। শরু থেকেই মানুষ এই রকম থাকেনি। বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ বর্তমানের রূপে আসা।”
খুবই কৌশলের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের এবিষয়ে খুঁজে দেখতে বলা হয়েছে। এখানে বানর রূপি প্রাণীর বিবর্তনের কাল্পনিক ছবি দিয়ে দেখানো হয়েছে ধীরে ধীরে এই প্রাণী বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষে রূপ নিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা ঈমান ও আক্বিদা বিরোধী হবে কেন?
আসুন দেখি কেন, ঈমান ও আক্বিদা বিরোধী। মুসলমানদের প্রথম বিশ্বাস আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি। তারপরই আল্লাহর রাসূল (সা:)-এর ওপর নাজিল হওয়া পবিত্র কোরআনকে বিশ্বাস করতে হবে। পবিত্র কোরআনের সুরা বাক্বারায় আল্লাহ পরিষ্কার করেই বলেছেন, প্রথম আদমকে (আ:) কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল। আদমকে (আ:) তৈরির আগে ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহ কি বলেছিলেন। ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, দুনিয়া আল্লাহ প্রতিনিধি পাঠাতে চান। ফেরেশতারা তখন বলেছিলেন, আমরাই তো আপনার আনুগত্য এবং এবাদত-বন্দেগী করছি। দুনিয়ায় মানুষ তৈরি করলে তারা ঝগড়া ফ্যাসাদ করবে। আল্লাহ তখন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। আদমকে (আ) তৈরি করার পর ফেরেশতাদের বলা হয়েছিল সেজদা করার জন্য। একমাত্র ইবলিশ ছাড়া সবাই সেজদা করেছিলেন। এবং আদমকে আল্লাহ সবকিছু শিখিয়েছিলেন। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি পবিত্র কোরআনে আরো বহু জায়গায় বর্ণিত রয়েছে।
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে বলা হয়েছে আশরাফুল মাখলুক্বাত। অর্থাৎ সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সেরা জীব হলেন মানুষ। এছাড়া কোরআন শরীফের একাধিক জায়গায় বলা হয়েছে আদম আ:-এর মাধ্যমেই দুনিয়ায় মানুষের বংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবং পবিত্র কোরআনের একাধিক জায়গায় মানুষকে বনি আদম বা আদমের সন্তান বলা হয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, দীপু মনিরা পাঠ্য পুস্তকে শিশুদের যা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা কি পবিত্র কোরআনের সরাসরি বিরোধীতা করা নয়? শিশু মনে তারা মানুষের বিবর্তনের কাল্পনিক ইতিহাস ঢুকানোর অপচেষ্টার মাধ্যমে মূলত কোরআনের বিরোধীতা শেখাচ্ছেন। যাতে একটি শিশু জীবনের শুরুতেই সংশয় তৈরি হয় আসলেই কি মানুষ বানর থেকে বিবর্তন হয়েছে, নাকি আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তৈরি করেছেন। পবিত্র কোরআনে যেখানে মানুষ সৃষ্টির পুরো রহস্য বর্ণনা করা আছে, মানুষকে আশরাফুল মাখলুক্বাত বলা হয়েছে। যেখানে দীপু মনিরা মানুষকে পশু থেকে বিবর্তনের কাল্পনিক চিত্র শিখিয়ে কার স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছেন?
দীপু মনির পূর্ব পুরুষ বানর হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের পূর্ব পুরুষ বারণ বা পশু নয়। সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করছেন এই পৃথিবীতে। পবিত্র কোরআনের কোন একটি আয়াত বা নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করা মানেই আল্লাহর বিধানকে চ্যালেঞ্জ করা।
শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গত ১৪ বছর ধরে নানা পাঠ্য পুস্তকে পরিবর্তনের নামে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে মানুষের ঈমান ও আক্বিদা নষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দীপু মনি হামেশাই পাঠ্য পুস্তক আধুনিকায়নের নামে পরিবর্তন ও বিবর্তনের কথা বলেন। তাঁর এই পরিবর্তন ও বিবর্তন হচ্ছে শিশুদের হাতে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিবর্তে ভারতের ইতিহাস ও ঐতিহ্য শেখানো। সুতরাং তদন্ত কমিটির নামে কাল ক্ষেপণ নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিরোধী বই গুলোকে প্রথমে সরিয়ে নিতে হবে। এই পাঠ্যপুস্তক রচনা, সম্পাদনা ও পৃষ্ঠপোষকতার সাথে জড়িতদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তির জন্য দাবী উঠতে হবে অভিভাবক ও সচেতন মানুষদের পক্ষ থেকে।
লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক, আমার দেশ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন