রাফি রাজ
০১.০১.২০২১! অফিস শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। নতুন বছরের প্রথম দিন, সুতরাং স্বভাবতই নির্মল আনন্দের সুপ্রসন্ন বাতাস বইছে আমার হৃদয়ের মনিকোঠায়। কিন্তু পাঠক বিশ্বাস করুন, আমি ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি যে, কী বিশ্রী একটা ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছি আমি!
বাস থেকে নেমে পাঁচ- সাত মিনিট হাঁটলেই আমার বাসা। আমি হাঁটছি, আর মিনিট দুয়েক হাঁটলেই আমি পৌঁছে যাব, ঠিক এমন সময় সেখানে রাস্তায় কিছু মানুষের জটলা লক্ষ্য করলাম। কৌতূহল নিয়ে জটলার কাছে গিয়ে একজন ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে এখানে? উত্তরে তিনি যা বললেন তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি বললেন, এই বাসার দারোয়ান বাচ্চা একটা মেয়েকে গেটের ভেতরে টেনে নিয়ে গায়ের জামা- কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে।
উনার কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! বিষয়টা বিস্তারিত জানার জন্য আমি গেটের ভেতরে গেলাম। দেখি কয়েকজন লোক দারোয়ানকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। আমি আবার গেটের বাইরে আসলাম, আবারও জিজ্ঞেস করলাম সে বাচ্চাটা কোথায়! একজন ডাকলেন। বাচ্চাটা আমার কাছে আসলো দেখলাম, চার- পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে। মলিন আর শুকনা মুখ। চোখ দিয়ে তখনও পানি ঝরছে। গায়ে কিছু নেই শুধু একটি হাফপ্যান্ট পড়ে আছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে তোমার? সে বললো, ‘আমরা দুই-তিনজন মিলল্যা এহানে খেলতাছিলাম। ওই লোকটা আমার জামা ধইরা ভিতরে নিয়া যাইয়া আমার জামা টাইনা ছিঁড়া ফালাইছে।’
এক পর্যায়ে আমি দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, ‘‘ওরা এইহানে আইসা সব সময় বিরক্ত করে, সে কারণে। আমি ভয় দেহানের লাইগা ভিতরে টান দিছিলাম।’’
এরইমধ্যে ওই বাসার মালিক এসে উপস্থিত হয়। আমি ভিডিও করছিলাম দেখে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং উল্টাপাল্টা কথা বলে। সে দারোয়ানের পক্ষ নিয়ে, আমি ও ভিকটিমের মা-বাবাসহ উপস্থিত সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। একপর্যায়ে আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর সে কিছুটা স্বাভাবিক এবং শেষ পর্যন্ত বাচ্চার মা বাবা এবং আমার কাছে সরি বলে মাফ চাই।
প্রিয় পাঠক, এখানে যে ব্যাপারটা লক্ষণীয় তা হল, বাড়ির মালিক অভিযুক্ত দারোয়ানের পক্ষ নিয়ে ভিকটিমের মা-বাবা সহ উপস্থিত সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে সে একটা গুরুতর অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছে।
এখানে আমার প্রশ্ন হল, এই দারোয়ান আজ বাইরের একটি মেয়ে শিশুর সাথে এমন আচরণ করেছে, কাল ঐ বিল্ডিংয়ের কোন বাচ্চার সাথে বা বাড়িওয়ালার বাচ্চার সাথে যে এমন আচরণ করবে না এর কোনো নিশ্চয়তা আছে? আমরা কি অন্যায় কে প্রশ্রয় দিচ্ছি না? এই প্রশ্রয়ের মাধ্যমে আমরা কি অন্যায় কে আশ্রয় দিচ্ছি না?আর এমন প্রশ্রয়েই কিন্তু আশ্রয় পায় সকল অন্যায়। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে, পরিবারে সমাজে এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রে। সুতরাং এই হউক নতুন বছরের শপথনামা, আমরা কখনো কোনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবোনা
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন