মেশিনে ১০০ টাকার নোট ঢুকিয়ে গন্তব্যস্থল ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্লিক করতেই বেরিয়ে এলো রেলের টিকিট। টিকিটের মূল্যবাবদ ৬৪ টাকা কেটে রেখে ৩৬ টাকা ফেরত পেলাম।
এবার টিকিট নিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় গেটে লালবাতি জ্বলছিল। টিকিটটি ছোঁয়াতেই সবুজ বাতি জ্বলে উঠে। ভেতরে প্রবেশ করতেই দিক নির্দেশক চিহ্ন গন্তব্যস্থলের ট্রেনটি তৃতীয় তলা প্ল্যাটফর্ম বি থেকে ছাড়ার নির্দেশনা দেখতে পেলাম। এক্সেলেটর সিঁড়িতে চেপে স্টেশনে দাঁড়াতেই ট্রেন আসলো।
অফিস টাইম হওয়ায় বেশ ভিড়। যাত্রীরা একদিকে নামছে, অন্যদিক দিয়ে উঠছে। ভেতরে কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে। দ্রুতগতিতে ট্রেন ছুটে চলেছে। সামনের যে স্টেশনে ট্রেনটি থামবে সে স্টেশনের নাম বলা হচ্ছে।
হঠাৎ ঝিমুতে তন্দ্রা কেটে গেল। তাকিয়ে দেখি থাইল্যান্ডের ব্যাংককের স্কাইট্রেনটি দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে গন্তব্যে। তন্দ্রাকালীন সময়েই কানে আসছিল বিভিন্ন স্টেশনে পৌঁছার আগে সে স্টেশনটির নাম মাইকে ঘোষণার। অবচেতন মনেই দিবাস্বপ্ন দেখছিলাম একদিন আমাদের দেশেও এমনই আধুনিক স্কাইট্রেনে চেপে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাব। যানজটের কারণে কর্মস্থলে পৌঁছাতে দেরি হবে না, কালোবাজারি হবে না টিকিট আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছাবে।
গত সপ্তাহে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব)-এর উদ্যোগে একদল গণমাধ্যমকর্মী থাইল্যান্ডের ব্যাংকক সফরকালে সে দেশের স্কাইট্রেনের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি চোখে পড়ে। ২০০৪ সালে সস্ত্রীক থাইল্যান্ড সফরকালে স্কাইট্রেনের সঙ্গে পরিচিত হলেও ১৫ বছর পর সে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও আধুনিককায়ন চোখ পড়ল। হাজার হাজার মানুষ দ্রুতগতির ট্রেনে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে। প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝেও কোনো হৈ চৈ নেই। সিনিয়র সিটিজেনদের দেখে জুনিয়ররা সিট ছেড়ে দিয়ে সন্মান দেখাচ্ছে।
আপাতত স্কাইট্রেন না হলেও আমাদের মেট্রোরেলের কাজ চলছে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে তা চালু হবে।
জানা গেছে, ঢাকা ঘিরে স্কাইট্রেন তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার। এ বিষয়ে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের যৌথ কোম্পানি। ঢাকার মধ্যে ৮০ কিলোমিটার স্কাইট্রেন নির্মাণ করতে প্রস্তাব দিয়েছে এই কোম্পানি। মাত্র দুই বছরে সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক স্কাইট্রেন নির্মাণ করবে তারা। আর এতে মেট্রোরেলের চেয়ে কম খরচ এবং অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের প্রস্তাবে।
সেদিন হয়তো দূরে নয়, দ্রুতগতির স্কাইট্রেনে চেপে আমরাও ঢাকা শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাব।
চলবে…
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন