মাসকাওয়াথ আহসান:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সৈনিকরা সহমতাচার্যদের কাছ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের ৪-৬ শতাংশ কর দাবি করে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহমতাচার্য ছাত্র সৈনিকদের কর আদায়ের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে ৩৪ জন ছাত্রত্ব হারিয়ে ফেলা ছাত্র সৈনিকের ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে বিনা লিখিত পরীক্ষায় তাদের ‘মাস্টার্স অফ ট্যাক্স’ প্রোগ্রামে ভর্তির চিরকুট দেন।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এই ভর্তি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হলে; ডিনাচার্য অবাক হন। বিড় বিড় করে বলেন, এই প্রতিভাবান ছাত্র সৈনিকদের কর আদায়ের যে দক্ষতা; তাতে এদের কর বিভাগের পরিদর্শক পদে বিনা পরীক্ষায় নিয়োগ দেয়া উচিত। সেখানে সামান্য মাস্টার্স অফ ট্যাক্স প্রোগ্রামে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে এতো কথা কেন বাবারা!
আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহমতাচার্য এই ছাত্র সৈনিকদের দাবি করা ৪-৬ শতাংশ প্রকল্প কর না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সততা ভবনে।
সাধারণ মানুষ ছাত্র সৈনিকদের প্রকল্পের টাকা-ভাগাভাগির প্রতিদিনের আলোচনায় বিরক্ত হয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখছি জুয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
এমন সময় সততা মহলের নির্দেশে এলিটফোর্সের মহানায়কেরা শহরের কয়েকটি ক্যাসিনো বা জুয়ার আখড়ায় হানা দেয়।
ক্ষমতাসীন দলের যুব সৈনিকরা ধরা পড়ে যায়। সাধারণ মানুষ খুব ঘন ঘন বিস্মিত হবার এক অপার গুণ নিয়ে জন্মেছে। সুতরাং তারা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।
সাধারণ মানুষের জ্ঞান জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে সক্রিয় হয় সরকারি সেবক জনতা বা সসেজ।
–ক্যাসিনো হইতেছে জুয়ার আখড়া। তবে এইখানে কথা থাইকা যায়; আমাদের সততা পার্টির লোকেরা কক্ষণো এইসব জুয়া-টুয়ার নামই শুনে নাই। জুয়া শব্দটা আসছে জিয়া থিকা। সুতরাং যারা জুয়ার আড্ডা বসাইছে; তারা কেউ পোকিত সরকারি সৈনিক নয়। এরা জিয়ার দল থিকা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী।
ধর্মের ম্যানেজাররা ডুকরে কেঁদে ওঠে, জুয়া অত্যন্ত হারাম; এর চাইতে সরকারি খাসজমি লাভে অনেক আরাম।
এলিট ফোর্সের মহানায়কেরা যে যুব সৈনিকদের গ্রেফতার করে; তারা এলিট ফোর্সের উন্নয়ন প্রকল্পে ঠিকাদারি করেছে; এমন খবর আসতে থাকে। অতীতে তাদেরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া’ যুব সৈনিকদের বক্তৃতা দেয়ার ও উচ্চকর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রগলভ হবার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়া সাগরে ভাসতে থাকে।
যুবসৈনিকদের হিটলারের আদলে খোলা টর্চার সেল দেখে বিস্মিত এলিট ফোর্স প্রশ্ন করে, টর্চার সেল কী জিনিস!
সততা মহলের প্রধান যুব সৈনিক প্রশ্ন তোলেন, এতোগুলি ক্যাসিনো নাকের ডগায় চলতেছে; এতোদিন সবাই কী আঙুল চুষতেছিলেন!
সাধারণ মানুষ আলোচনা করে, আঙুল তো চুষতেই হয়; তাইলে ভেজা আঙুলে টেকাটুকা গুনতে সুবিধা হয়।
–উন্নয়নের ধকলে সবাই যেইভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে; তাতে আঙুল না চুষলে কলাগাছগুলি বড় হইয়া টেকাটুকা গুনায় প্রবলেম দিতে পারে।
সততা মহল প্রধান যুব সৈনিককে কড়কে দিলে তিনি সুর পালটে বলেন, সাবধান হইয়া যাও যুব সৈনিকরা; পতন হইলে বউ ছাড়া কেউ পাশে থাকবে না। আর বইলা রাখি গোল-আলু সাইজের যেই লোকটা ধরা পড়ছে; সে যুব সৈনিক নয়। গুমগঞ্জের সততা পার্টির লোক।
একটি ক্যাসিনোর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান একজন বাম-পন্থী। তিনি সততা জোটে যোগ দিয়ে হজ্জ করেছেন। ইদানিং ছিটকে গেছেন ক্ষমতার অক্ষ রেখা থেকে। সরকারি সেবক জনতা (সসেজ) তাকে নিয়ে আলোচনা করে জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করে, সততার সৈনিকেরা নিষ্কলুষ; তাদের ভুলাইয়া-ভালাইয়া নষ্ট করছে এইসব ভ্রষ্ট বামেরা।
এদিকে ক্যাসিনোতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আবেগ প্রবণ হয়ে আশাবাদি জনতা বুক থাবড়ে উল্লাস করে, এইবার এইবার খুকু চোখ খুললো। চারিদিকে সততার আলোর খৈ। ওরে কেউ আমারে ধর। এতো সততা রাখি কই! চক্ষু ফাইটা আনন্দের পানির জোয়ার নামছে গো।
ধরা-পড়া যুব সৈনিকদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে অত্যন্ত সৎ সাংসদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম; যারা ঠিকাদার যুব সৈনিকদের কাছে নিয়মিত মোটা অংকের চাঁদা নিয়েছেন।
অনেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সংসদটাই সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো। পাঁচ বছরে সম্পদ একশোগুণ বৃদ্ধির স্বয়ংক্রিয় মেশিন।
ক্যাসিনোতে ধরা পড়া দশ-বারো কোটি টাকা গুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এলিট ফোর্সের লোকেরা।
অনেকেই প্রশ্ন তোলে, এতো ইজি কাজে ক্লান্ত হয়ে গেলে হবে! শেয়ার বাজার, ব্যাংক, উন্নয়ন প্রকল্প থিকা মাইরা বিদেশে উড়াইয়া দেয়া হাজার-হাজার কোটি টাকা গুনবেন ক্যামনে! আঙুল চুষেন, আঙুল ভিজাইয়া রাখেন; টেকা-টুকা গুনতে সুবিধা হবে।
লেখক: ব্লগার ও প্রবাসী সাংবাদিক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন