গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুটি মসজিদে নামাজ আদায়কালে বন্দুকধারীর হামলায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এ হামলাকে ‘দেশটির ইতিহাসে অন্যতম কালো দিন’ বলে অভিহিত করেছেন। সন্ত্রাসী এ হামলায় সমগ্র বিশ্বে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
এ ঘটনায় বিশ্ববাসীর সঙ্গে আমরাও শোকাভিভূত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ এসব সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই আমরা নৈরাজ্যকর কোনো না কোনো খবর মিডিয়ার সুবাদে পেয়ে থাকি। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হল জঙ্গিবাদ।
উগ্রপন্থায় সংঘবদ্ধভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার নামই জঙ্গিবাদ। মূলত যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের কোনো ধর্ম নেই। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের যে অপ্রতিরোধ্য বিস্তার ঘটছে, তাতে এটি সর্বাপেক্ষা বড় ‘আতঙ্কে’ পরিণত হয়েছে।
এ সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্বশান্তি ও ইসলামের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কারণ বিশ্বের কোথাও কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলে তৎক্ষণাৎ কোনো পর্যবেক্ষণ ছাড়াই মুসলমানদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে; কিংবা নির্লজ্জভাবে কিছু মুসলিম নামধারী জঙ্গি সংগঠন হীন স্বার্থসিদ্ধির জন্য এর দায় স্বীকারও করছে।
ফলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয় বিশেষত পশ্চিমা মিডিয়ায় এ বিবৃতি বারবার উচ্চারিত হচ্ছে- ‘সব মুসলমানই সন্ত্রাসী নয়, তবে সব সন্ত্রাসীই মুসলমান।’ অথচ ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে সন্ত্রাসের দূরতম সম্পর্কও নেই।
আমেরিকায় এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৫টি সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে। এর অধিকাংশ সংঘটিত হয়েছে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের দ্বারা। তাই বলে কি আমরা বলব, সব সন্ত্রাসীই খ্রিস্টান বা ইহুদি? অবশ্যই না।
কিছু মিডিয়া জিহাদকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলারও অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ‘ইসলামের নামে সন্ত্রাস’ সৃষ্টি ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের সুদূরপ্রসারী চক্রান্তেরই ফসল। কোরআনের কিছু আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদের নামে সন্ত্রাস বৈধ করার অপচেষ্টা করছে তারা। বিশেষত আধুনিক তরুণ, যাদের অধিকাংশই ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের মধ্যে ইসলামের বিকৃত ধারণা দিয়ে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করছে।
অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের উত্তম আদর্শে মুগ্ধ হয়েই যুগে যুগে মানুষ ইসলামে আকৃষ্ট হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফের ময়দানে অমুসলিমদের নির্যাতনে রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তাদের প্রত্যাঘাত করার কথা ভাবেননি।
ইসলাম প্রচারের পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ হল- ‘আপনি আপনার পালনকর্তার পথের দিকে আহ্বান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশগুলোর দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করুন’ (সূরা নাহল, আয়াত : ১২৫)। এমন উন্নত আদর্শ থাকা সত্ত্বেও ধর্মের নামে অনেকে সন্ত্রাসী কার্জক্রমে জড়িয়ে পড়ে আর বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। আমাদের দেখতে হবে, এসব সন্ত্রাসী সংগঠন কিভাবে গড়ে উঠল, কিভাবে এত শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং তাদেরকে কারা দাঁড় করিয়েছে এবং এর পেছনে মূল কারণ কী?
এই যে সমগ্র বিশ্বে ধর্মের নামে নজিরবিহীন সহিংসতা, তা শুধু ইসলাম নয়; বরং কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কাউকে ধর্মের সুশীতল ছায়ার বেহেশতি বাতাসের স্বাদ উপভোগ করানো যায় না।
নৈরাজ্যের মাধ্যমে কেবল বিশৃঙ্খলাই দেখা দিতে পারে, শান্তি নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই ধর্মের শান্তিময় শিক্ষার বাস্তবায়ন। বিশ্বনিয়ন্ত্রণকর্তা সব সময়ই মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করে থাকেন। প্রকৃত শান্তির ধারক ও বাহক কখনও সমাজের ও দেশের অশান্তির কারণ হতে পারে না।
এসব নৈরাজ্যকারীদের জন্য সমগ্র বিশ্বই আজ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি নৈতিকভাবে চরম অধঃপতনে নিপতিত। তাই সন্ত্রাসী যেই হোক, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ইসলামী গবেষক ও কলাম লেখক
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন