অনেক গুলো ইস্যু সামনে। লেখালেখি ও খবরের পেছনে দৌড়ানো ছিল আমার কাজ। চাকুরিটাই ছিল খবরের পেছনে দৌড়ানো। ১৯৯৫ সালে শুরু করেছিলাম। নিরন্তর চলেছে ২০১২ সাল পর্যন্ত। লন্ডনে এসেছি ২০১২ সালে ১৮ ডিসেম্বর। তারপরও লেখালেখিতে আছি। এখন আর লেখালেখি বা খবরের পেছনে দৌড়ানোটা চাকুরি নয়। একেবারেই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো যাকে বোঝায়। গতকালও এক বন্ধুকে বলেছিলাম জোকারবার্ক ফেইসবুক আবিস্কার না করলে এবং ওয়েবসাইটে লেখালেখির সুযোগ না থাকলে হয়ত: আমি পাগল হয়ে যেতাম। মনের জ্বালা মিঠাতে পারতাম না তখন। ফেইসবুক এবং ওয়েবসাইট লেখালেখির সুযোগটা এখনো বহাল রেখেছে। এতেই শোকরিয়া। কেউ পড়ুক , বা না পড়ুক, কথা গুলো আমলে নিক, বা না নিক, আমি লিখে যাচ্ছি।
এবার আসা যাক মূল আলোচনায়। প্রায় বছর দেড়েক আগে লিখেছিলাম জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট ও ২১ আগষ্ট মামলা হবে আগামী নির্বাচনে রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। আজো কিছু আগাম কথা বলতে চাচ্ছি। যদিও আমি গণক বা জ্যোতিষি নই। তারপরও রাজনৈতিক চরিত্রটা বিশ্লেষণ করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন সূত্রে জতটুকু জানায় যায়। সবকিছু মিলিয়ে যতটুক আঁচ করতে পারি ততটুকুই আমার বলা। এতে কেউ মনে কষ্ট পেলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
জিয়া অরফানেজ গত ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাগারে। প্রথমে তাঁকে রাখা হয়েছে ৪৮ ঘন্টা সাধারণ কয়েদী হিসাবে। পরবর্তীতে ডিভিশন মিলেছে। এরচেয়ে অপমান আর কি করা লাগে। শেখ হাসিনার মনের ঝাল যত রকমে মিঠানো লাগে সবই প্রয়োগ করছেন। কারাগারে সাধারণ কয়েদী হিসাবে রেখেছেন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। বয়োবৃদ্ধা একজন মহিলা। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী। জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ প্রতিটি নির্বাচনে। তারপরও বিচারের নামে তাঁর সাথে চলছে তামাশা। আদালত থেকে নির্দেশ আসতে হয়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁকে ডিভিশন দেওয়া হউক। এর আগে কারা কতৃপক্ষ তাঁকে চিনতে পারেননি তিনি যে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ডিভিশনটা তাঁর প্রাপ্য। তিনি যে ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য আসামী সেটা বুঝতে কোর্টের আদেশ লেগেছে।
বিচারের পর রায়ের সার্টিফায়েড কপি লাগে জামিনের আবেদনে। সেটা দিতেও অপেক্ষায় রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। জামিনের আবেদনের পর বলা হল মূল মামলার নথি লাগবে। সেটা পৌছাতেও লাগল ১৬ দিন। আর কি দেখাবে শেখ হাসিনা! সেই চিন্তা থেকেই আজকের লেখা।
নথি আসার পর শেষ পর্যন্ত জামিন হয়েছে। কিন্তু, মুক্তি মিলেনি। ২ ঘন্টার মাথায় আরেক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু। তবে এ মামলাটার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল গত বছরে অক্টোবরে। তখন তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গ্রেফতারি পরোয়না জারির পরই দেশে ফিরেন দ্রততার সাথে।
২০১৫ সালের আন্দোলনে একটি বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ হয়েছিল। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় এ ঘটনায় বাসের ৮যাত্রী নিহত হন। এমামলায় চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ। চার্জশীটের পরই আসামীদের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। বেগম খালেদা জিয়া এই মামলায় হুকুমের আসামী।
১৮ অক্টোর তিনি দেশে ফিরেন এ মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে। তবে সরকার এটা তামিল করেনি। পরোয়ানা প্রয়োগ হয়নি। অত্যন্ত ভদ্র এবং সৌজন্যতা দেখিয়েছে এতে। তবে পরোয়না বহাল রেখে সরকার তাঁর লাইনে অগ্রসর হয়েছে। সরকারের টার্গেট ভিন্ন। গ্রেফতার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা নয়। সরকার চায় তাঁকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে। তাঁকে মাইনাস করতে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারীর পর কিছুদিন বাতাসে ছিল টু মাইনাস থিওরি। এবার ওয়ান মাইনাসের প্রক্রিয়া চলছে। তাই যা করার দরকার সেটাই করছে। টার্গেট অনুযায়ী জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলায় তাঁকে ৫ বছরের দন্ড দিয়েছে। দন্ড দিয়ে কারাগারে নেওয়া হয় তাঁকে। এতে বিদেশীদেরও সরকারের পক্ষ থেকে বলা যাচ্ছে আদালত দন্ড দিয়েছে। সুতরাং এখানে সরকারের কিছুই করার নেই। বিচারের আগে গ্রেফতারি পরোয়না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে আটক করা হয়নি। বিচারে দন্ড হওয়ার পরই কেবল রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশ গুলোতেও তাই হয়। রায়ের দন্ডের আগে কাউকে কারাভোগ করতে হয় না। রায়ে দন্ড হলেই কেবল কারাভোগের প্রশ্ন আসে। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়! পশ্চিমা দুনিয়া এতেই ঠান্ডা।
কারা বসা আছেন উচ্চ আদালতে:
এখান তাঁকে জামিনের জন্য লড়তে হচ্ছে উচ্চ আদালতে। এই উচ্চ আদালতের পরিস্থিতিটাও এখানে একটু বলে রাখা দরকার। সরকারের চিন্তার বাইরে কিছু করলে সুপিমকোর্টের পরিস্থিতি কি দাড়ায়, সেটার বড় উদাহরণ হচ্ছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আগা গোড়াই আওয়ামী লীগের মানুষ। তারপরও তাঁকে ন্যুনতম ছাড় দেয়া হয়নি। শুধু চাকুরি থেকে বিদায় নয়, দেশ ছাড়া করা হয়েছে। তাকে দেশছাড়া করা ও চাকুরি থেকে বিদায়ের আগে অনেক কথাই শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সবই ফানুস হয়ে গেছে সরকারি খেলায়। কাজের কাজ না করে শুধু ফাঁকাবুলি আওড়ালে যা হয়, তাই দেখা গেছে সিনহার বেলায়। বিএনপি পন্থি কয়েকজন আইনজীবীর কথায় মনে হতো সুরেন্দ্র কুমার তাদের কথায় উঠেন আর বসেন। তারাই সুরেন্দ্র কুমারকে পরিচালিত করছেন। কই, জাতি তো দেখল ভিন্ন দৃশ্য। কেউ কেউ তখন কাল্পনিক স্বপ্নেপ্রাপ্ত রায়ের খবরও ছড়িয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব করে কি লাভ হয়! না ক্ষতি হয়! এর হিসাব কষেছেন কি কেউ? নাকি কাল্পনিক স্বপ্নে বানানো ঘটনা ছড়িয়ে সাময়িক বিনোদন হয়! ক্ষমতার চেয়ার দেখা যায়! এই বিনোদনে লাভই বা কি!
সিনহার বিদায়ের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বানানো হয়েছিল আবদুল ওয়াহাব মিঞাকে। তিনিও আওয়ামী লীগের ঘরের লোক। তাঁরপরও ভার উঠিয়ে তাঁকে প্রধান বিচারপতি করা হয়নি। কারন কিছু রায়ে তিনি ভিন্নমত দিয়েছেন। সরকারের চিন্তার বাইরে জুডিশিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী এবং আবদুল কাদের মোল্লার আপিলের রায়। সরকারের চিন্তার বাইরে জুডিশিয়াল মাইন্ড থাকবে আবার প্রধান বিচারপতি হবে! এটা মানায় না। এই দুইটা একসাথে চলতে পারেনা শেখ হাসিনার শাসনামলে। তাই আবদুল ওয়াহাব মিঞার ভাগ্যে জুটেনি ভারহীন প্রধান বিচারপতির লকব। তাঁকে সুপারসিড করে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে বানানো হয়েছি প্রধান বিচারপতি। এতে মনের ক্ষোভে আবদুল ওয়াহাব মিঞা পদত্যাগ করেছেন। তাতে কারো কিছু আসে যায়!
সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয় কি! তিনিও আগাগোড়াই আওয়ামী পন্থি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসেই প্রথম ধাপে যাদের ডেপুটি ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল বানানো হয়, তাদের একজন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিচারিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রথম পছন্দের তালিকার লোক তিনি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের চাকুরিতে বিশ্বস্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তারপর তাঁকে বানানো হল হাইকোর্ট বিভাগের অস্থায়ী বিচারপতি। আওয়ামী আমলেই তাঁর চাকুরি স্থায়ী হয় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি পদে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে নেওয়া হয় আপিল বিভাগে। এখানে তাঁকে নিয়োগ দিতেও হাইকোর্ট বিভাগের অন্তত ২জনকে সুপারসিড করতে হয়েছিল। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি সৈয়দ দস্তগীর হোসেনকে সুপারসিড করে তাঁকে নেওয়া হয় আপিল বিভাগে। এবার তাঁকে প্রধান বিচারপতি বানানো হয়েছে আবদুল ওয়াহাব মিঞাকে সুপারসিড করে। আওয়ামী লীগের আস্থা ও বিশ্বস্থতার প্রতীক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
আপিল বিভাগে অন্য যারা রয়েছেন তারা সকলেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি। একেবারে প্রথম ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত এরা সবাই। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া বিচারেও নানা রাজনৈতিক ইস্যুতে তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। যেমন, মির্জা হোসেইন হায়দারের কথাই ধরা যাক। হাইকোর্ট বিভাগে থাকা কালীন তাঁর আদালতেই রীট আবেদন করা হয়েছিল সংসদে ১৫৪ আসনে অনির্বাচিতদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। তিনি সেটা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। রুল ইস্যু না করেই যাকে বলা হয় সামারিলি রিজেক্ট। আপিল বিভাগে যে চারজন বিচারপতি বর্তমানে রয়েছেন তারা সকলেই মির্জা হোসেইন হায়দারের মত আওয়ামী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তাই প্রত্যেকের কাসুন্দি টেনে পাঠকের বিরক্তি ঘটাতে চাই না।
হাইকোর্ট বিভাগের তালিকায় দীর্ঘ দিন থেকে এক নম্বারে সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন। তিনিও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিয়োগ পেয়েছিলেন অস্থায়ী বিচারপতি হিসাবে। আওয়ামী লীগের আমলেই তাঁকে স্থায়ী বিচারপতি হিসাবেও নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিচারে তিনি আওয়ামী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তাই বারবার সুপারসিড হচ্ছেন তিনি। তাঁকে সুপারসিড করে অনেক জুনিয়রদের আপিল বিভাগে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের ভাগ্যে আপিল বিভাগ জুটবে কি না সন্দেহ। বয়সের হিসাবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। অথচ আপিল বিভাগে ১১জন বিচারপতির পদ রয়েছে। ১১ জনের জায়গায় বর্তমানে চলছে মাত্র ৪ জন দিয়ে। সরকার এখানে একটু বেকায়দায়। সৈয়দ দস্তগীর হোসেন ছাড়া সিনিয়র ২৩জন হলেন ২০০১ সালের চার দলীয় জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া। এখন আপিল বিভাগে আরো আওয়ামীকরণ করতে হলে ২৪জনকে সুপারসিড করতে হবে। এই ২৪ জনের পর ৫৮জন রয়েছেন, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর। এছাড়া মাত্র ২জন রয়েছেন ফখরুদ্দিনের আমলে নিয়োগ দেওয়া।
২০০১ সালে চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পাওয়া ২৩ জনের কারো এখতিয়ারে ক্রিমিনাল আপিল শুনার সুযোগ রাখা হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত মামলায় আপিল শুনানীর এখতিয়ার হচ্ছে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহিনের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে। এই দুই বেঞ্চের বাইরে দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত আপিল শুনানীর জন্য যাওয়ার সুযোগ আপাতত নেই।
ইনায়েতুর রহিমের পরিচয় হল, তিনি ছিলেন বাকশাল সমর্থক ছাত্র লীগের সভাপতি। বিচারপতি হওয়ার আগে আওয়ামী প্যানেল থেকে সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে সম্পাদক পদে ইলেকশন করেছিলেন। ২০০৬ সালের ২৯ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টে তান্ডবে নেতৃত্বে দিতে দেখা গেছিল তাঁকে। তাঁর পিতা আবদুর রহিম ছিলেন দিনাজপুর থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তাঁর ভাই ইকবালুর রহিম বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। এছাড়া তিনিও ছাত্র লীগের সভাপতি ছিলেন।
ওবায়দুল হাসানের পরিচয় হচ্ছে তিনি বাকশাল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর ভাই বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সচিব। তাঁর পিতাও ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত আপিল শুনানীর এখতিয়ারে থাকা দুই বিচারপতি হলেন খাটি আওয়ামী ব্লাড থেকে তৈরি।
চিহ্নিত এবং পরীক্ষিত এই দুই বিচারপতির এখতিয়ারে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত আপিল শুনানী করা। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানীর জন্য আবেদন করা হয়েছিল ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চে। তিনি জামিন মঞ্জুর করতে নথির জন্য ১৬দিন অপেক্ষা করেছেন। নথি পেপারবুক হিসাবে তৈরির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন চার মাসের মধ্যে। এখন সরকার ও সুপ্রিমকোর্ট রেজিষ্ট্রার দফরের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে, কত দ্রুত তৈরি হবে পেপারবুক।
সরকারের টার্গেট:
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী সরকারের টার্গেট হচ্ছে দ্রততম সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করা। এই আপিল নিষ্পত্তি করে দন্ড চুড়ান্ত করা গেলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন তিনি। যদিও দন্ড বহাল রেখে আপিল ঝুলন্ত থাকলেও নির্বাচনে অযোগ্য হয়। তারপরও যাতে কোন তরফে প্রশ্ন উঠতে না পারে এটাই হচ্ছে সরকারের টার্গেট।
হাইকোর্ট বিভাগে সরকার যাবে দন্ড বাড়ানোর আবেদন নিয়ে। যুক্তি হবে সহযোগি আসামীদের কারাদন্ড ১০ বছর। প্রধান আসামীর কারাদন্ড ৫ বছর। এটা ন্যায় বিচার হতে পারে না। জেলাজজ আদালত ন্যায় বিচার করেনি। হাইকোর্টে তখন সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন ন্যায় বিচার চাইবে। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা চাইবে খালাস। সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ে বেশি সময় দেওয়া হবে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের। যাতে প্রশ্ন না উঠে বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
রায়টা হতে পারে একেবারে চমৎকার ভাবে। সরকারের আবেদন নাকচ। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনও নাকচ। এপর্যন্ত ঘোষনার পর সবাই মূহুর্তের জন্য হয়ত: খুশিতে বাকবাকুম হবেন। পরের প্যারায়ই বলা হতে পারে আসামীর বয়স, সামাজিক মর্যদার কথা বিবেচনা করে দন্ড আরো দুই বছর কমানো হল। অথাৎ দন্ড ৩ বছর বহাল করা হল। এমন কোন দৃশ্য মঞ্চস্থ হলে তখন কি হবে। এই চিন্তা কি কারো মাথায় আছে! এতে সরকারের টার্গেট পুরণ হবে, ন্যায় বিচারের নামে সুন্দর তামাশাও মঞ্চায়িত হবে সুপ্রিমকোর্টে। তখন ইলেকশন কমিশন ফতোয়া দিবে উচ্চ আদালতে চুড়ান্ত দন্ড পাওয়া ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
লেখক: দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত।
অলিউল্লাহ নোমান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন