বিপ্লবী কবি কাজী নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালের দড়িরামপুর থেকে আনন্দভরা মন নিয়ে সখীপুরের পথে ছিলাম। ত্রিশাল ছাড়ার আগে রশিদ চেয়ারম্যানের ভাই দলীয় অসুস্থ কর্মী ওয়াহাব মিঞাকে দেখতে গিয়েছিলাম। বিশাল বিত্তের মালিক তারা। চার ভাইয়ের রাজপ্রাসাদের মতো চমৎকার বাড়িঘর। কিন্তু দেখার কেউ নেই। বউ গেছেন কানাডায় মেয়ের কাছে, ওয়াহাব মিঞা একা।অন্য ভাইদেরও একই অবস্থা। ভাবতে ভাবতে আসছিলাম। শরীরটা তেমন ভালো ছিল না। নজরুল একাডেমিতে নরম বিছানার কারণে রাতে ঘুম হয়নি। তাই শরীর ম্যাজম্যাজ করছিল। সখীপুর ফিরে বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের সঙ্গে দু-চার কথা বলে বেশ হাসিখুশি টাঙ্গাইলের পথ ধরেছিলাম। হঠাৎই স্ত্রীর ফোনে সব এলোমেলো হয়ে যায়। আমাদের বড় দুলাভাই এ কে এম শহীদুল হক তখনই মারা গেছেন। তার শরীর খারাপের কথা খুব একটা শুনিনি। বয়স হয়েছিল ৮০-৮২ বছর। কাউকে তেমন কষ্ট দিতেন না।
কিছু মানুষ থাকে চিররোগী, আবার কিছু মানুষ পরম আমুদে, অন্যকে বিব্রত করেন না, কষ্ট দেন না, মহানন্দে ভরিয়ে রাখেন। এ কে এম শহীদুল হক ছিলেন তেমনই একজন।৮-১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। সবাইকে রসুনের কোয়ার মতো বেঁধে রাখতেন। টাঙ্গাইল গিয়ে যখন তার প্রাণহীন মুখ দেখছিলাম মৃত বলে মনে হয়নি। মনে হচ্ছিল নিত্যদিনের মতো শুয়ে আছেন। ইমু শিয়রে বসে আকুল হয়ে কাঁদছিল। যাওয়ার সময় হয়তো সবাই কাঁদে। মৃত্যু আর কান্না এক সুতোয় বাঁধা। তীব্র শীতের মধ্যে রাত ৯টায় বিবেকানন্দ স্কুলমাঠে নামাজে জানাজা হয়েছে। একজন মানুষের জন্য কতটা আকর্ষণ থাকলে তার প্রায় সব ভাইবোনসহ উল্লেখ করার মতো প্রচুর লোক হাজির হয় জানাজা নামাজে তার প্রমাণ তিনি।
জানাজা নামাজ শেষে যখন লাশ গোরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন কেন যেন বার বার মনে হচ্ছিল সবার জন্যই এই শেষ যাত্রা।মেয়েটা ২ তারিখ লন্ডনে যাবে তাই ৩০ জানুয়ারি ঢাকা ফিরেছিলাম। ভালো লাগছিল না। একজন মানুষ যিনি সারা জীবন হাসিখুশি চলেছেন। নাসরীনের সঙ্গে আমার বিয়ে নিয়ে কত কিছু হয়েছে। বীরউত্তম জিয়াউর রহমানের আমলে শাহ আজিজ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করায় স্বাধীনতার পর দালাল আইনে বন্দী। ’৭২-এর ফেব্রুয়ারি বা মার্চের ঘটনা। যে বাড়িতে শাহ আজিজুর রহমান ভাড়া থাকতেন সেই বাড়িতে আমি আর কে এম ওবায়দুর রহমান গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তার পরিবারকে আশ্বস্ত করতে। প্রতি মাসে বাড়িভাড়া ও মাসোয়ারা পৌঁছে দিয়ে আসতাম। কখনো বঙ্গবন্ধু দিতেন, কখনো লজ্জায় তাকে কিছু না বলে নিজেই দিয়ে আসতাম।
মাঝে মাঝে নেতা ও পিতা জিজ্ঞাসা করতেন, আজিজ ভাইয়ের বাড়িতে নিয়মিত টাকাপয়সা পৌঁছে দিস তো? তাকে জি বা হ্যাঁ ছাড়া কিছু বলা জানতাম না। তাই বলতাম। কী ভাগ্য! সেই শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী থাকতে আমার সঙ্গে যার বিয়ের কথা সেই নাসরীনের পাসপোর্ট সিজ করা হয়েছিল।একবারও ভাবেননি স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাদের প্রতি মাসে বাড়িভাড়া ও মাসোয়ারা দিয়ে এসেছি। যে আগস্টে বঙ্গবন্ধু মারা গেছেন সেই আগস্টের ২ বা ৩ তারিখেও টাকা দিয়ে এসেছিলাম। অথচ আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট সিজ করতে তিনি তার দুর্দিনের কথা একবারও ভাবেননি। এটাই জীবন, এটাই সমাজ। ঘটনাটি ঘটেছিল জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে।
যে কারণে নাসরীনের সঙ্গে বিয়ে চার বছর পিছিয়ে যায়। আদৌ বিয়ে হতো কিনা জানি না। সংসার বাঁধা যেত কিনা জানি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের বিয়ে হয়েছে, ছেলেমেয়ে এসেছে। বলতে গেলে ভালোই আছি। বিশেষ করে কুশিমণি আলো করে ঘরে এসে আমার সংসারের সমস্ত গ্লানি, দুঃখ-বেদনা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে দিয়েছে।আর এই জীবন বা সংসার গঠনে এ কে এম শহীদুল হকের ছিল বেশ বড় ভূমিকা। ভদ্রলোক আমাকে ভালোবাসতেন, আদরযত্ন-সম্মান করতেন। কারণ স্বাধীনতা আমায় বদলে দিয়েছে, স্বাধীনতা আমায় কক্ষচ্যুত করেছে, স্বাধীনতা আমায় দেশ ও দেশবাসীকে চিনতে জানতে বুঝতে শিখিয়েছে। মানুষ জন্মে, জন্মের পরে মারা যায় এটা চিরন্তন নিয়ম। সব জীবকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়।
কিন্তু এই স্বল্প জীবনে জন্ম-মৃত্যুর মাঝে মানুষের জন্য স্রষ্টার সৃষ্টির জন্য যে কোনো দায়িত্ব আছে তা খুব একটা বুঝতাম না, যদি না স্বাধীনতা পেতাম। দেশের জন্য মানুষের জন্য কতটা কী করেছি বা করতে পেরেছি কখনো ভালোভাবে হিসাব মেলাতে পারিনি। কিন্তু বাড়িঘর ও স্কুল পালানো বাঁধনহারা মানুষকে সাধারণ মানুষ এত ভালোবাসতে পারে, দোয়া করতে পারে, দেশ তার একজন সেবককে এত সম্মান-মর্যাদা দিতে পারে আমার জানা ছিল না। আমার জীবনে স্বাধীনতা যেমন ছাপ ফেলেছে, সংসার জীবনে শহীদুল হকের ভূমিকা তেমন। মানব জীবনে জন্ম-মৃত্যুর মাঝে বিয়ে। ছেলেবেলায় আমার কাছে বিয়ের তেমন গুরুত্ব ছিল না।স্বাধীনতার পর প্রচণ্ড কর্মব্যস্ততার মাঝে কার বিয়েতে যেন বঙ্গবন্ধুকে দেখেছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি এই বিয়েতে? তিনি আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলেছিলেন, ‘কাদের! বিয়ে কোনো যেনতেন ব্যাপার নয়। বিয়ে একটা মারাত্মক জিনিস। মানুষের জন্মের পরে বিয়ে নবজন্ম।
জানিস, ভালো বিয়ে না হলে রাজপুত্রও ফকির-মিসকিনের চেয়ে অধম হয় আবার অনেক কাঙ্গাল বিয়ে করে রাজ্যের সুখ-আনন্দ-ধন সবকিছু পায়।’ কথাটি ইন্দিরা গান্ধীর কাছেও শুনেছিলাম। তাই মানব জীবনে বিয়ে যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এখন তিলে তিলে তা উপলব্ধি করি। সেজন্য শহীদুল হকের মৃত্যু আমাদের বেশ নাড়া দিয়েছে। ২ তারিখ আমার বড় মেয়ে কুঁড়ি লন্ডনে গেছে। ছেলেমেয়েরা টাঙ্গাইলে গিয়েছিল শহীদুল হকের কুলখানিতে। এয়ারপোর্ট থেকে কুঁড়ি যখন লন্ডনের পথে আর দীপ-কুশি, ওদের মা টাঙ্গাইল চলে গেল তখন বুকটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।বাড়িতে এসে কিছুই ভালো লাগছিল না। শুয়েবসে টেলিভিশন দেখে কোনো কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। এদিক-ওদিক যেদিকেই যাচ্ছিলাম বুকটা হু হু করছিল। একে তো একজন মানুষের মৃত্যু ব্যথাতুর করে রেখেছিল, তার ওপর সন্তান-সন্ততি সবাই একত্রে বাইরে যাওয়ায় কেমন যেন একটা শূন্যতা চেপে বসেছিল।
ছেলেমেয়েদের জন্য এতটা অভাব খুব একটা বুঝতে পারিনি। সবাইকে ছেড়ে দূরে খুব একটা বেশি যাই না, ফোনে সবসময় যোগাযোগ থাকে। তার পরও এখানে ওখানে গেলে বাচ্চাদের মুখ দেখার ইচ্ছা হলেই ছুটে আসি। সকালে টাঙ্গাইল থেকে নাটোরে গিয়ে গভীর রাতে ঢাকায় ফেরা আমার কাছে কোনো নতুন কিছু নয়। সে তো হয় আমি বাইরে গেলে। কিন্তু আমি বাড়িতে অথচ ছেলেমেয়ে কেউ নেই এ যেন এক অসহ্য যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণাই ভোগ করেছি সেদিন।কদিন আগে পুরান ঢাকায় ধুপখোলা মাঠের পাশে সাঈদ খোকন কমিউনিটি সেন্টারে এক বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ বেতারের এ এম আজিজুল হাকিম দুলুর ছেলের বিয়েতে। চার-পাঁচ জনসহ নিজে এসে দাওয়াত করেছিলেন।
কথা দিয়েছিলাম তার ছেলের বিয়েতে যাব। আমারও আগ্রহ ছিল সেখানে আমার প্রিয় কর্মী টিটুর বাড়ি। তার সঙ্গে দেখা সে এক উপরি পাওনা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মীজানুর রহমান, ফতেহ লোহানীর ভাই কামাল লোহানী, সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম বসে ছিলেন, যারা একসময় কচিকাঁচা করতেন। এখন শিশু সংগঠন নেই, কোনো সাহিত্য সংগঠন নেই। শিশুদের ভালো কিছু শেখার, জানার, বোঝার সুযোগ নেই। বাড়িতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে তারা সারা দিন। আর কেউ যদি ভাবেন ওসব থেকে জোর করে শিশুসমাজকে সরিয়ে দেবেন তাহলে ভুল।আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারের মোহ থেকে সরাতে হলে ওসবের চেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসের সৃষ্টি করতে হবে। শিশুদের জোর করে কোনো কিছু করানো যাবে না। আগেকার দিনে বাড়ির মুরব্বিরা বাচ্চাদের নিয়ে যখন নানান গল্প করতেন সেগুলো তাদের মনে গেঁথে যেত।
এখন সেই বড়রা দাদা-দাদি, নানা-নানী, মাঐ-তাঐ তারা কই? কেউ কেউ যদি অভিশপ্ত বয়সী জীবন পান তারা তো কোনো বাড়ির হর্তাকর্ত্রী হয়ে থাকেন না। তাদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। তাই বাচ্চাদের অবলম্বন ল্যাপটপ-মোবাইল। কোথায় তারা পাবে দাদা-দাদি, নানা-নানী, মামা-চাচি-খালা-ফুফু। আমাদের সমাজ তো ভেঙে গেছে। আমাদের সমাজের কোথাও মায়া-মমতা-শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা নেই। এ রকম ক্ষয়িষ্ণু সমাজেও পুরান ঢাকায় দুলুর ছেলে মো. আজিজুল হাকিম (প্রকাশ) ও নুসরাত ইয়াসমিনের (রুম্পা) বিয়েতে বেশ ভালো লেগেছে। পাত্রী যে সে কেউ নয়, বিসিএস পাস করা পুলিশের এএসপি। মেয়েটিকে বলে এসেছি, মা গো! সবাইকে গ্রেফতারের ধান্ধায় থেকো না। মায়া-মমতা-ভালোবাসা দিয়ে শ্বশুরবাড়ি ভরিয়ে রেখো। সমাজকেও শুধু ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করার মতলবে থেকো না।
পৃথিবীকে কেউ ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করতে পারেনি। সমাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য ন্যায়, সত্য ও ভালোবাসার প্রয়োজন। যতটা পারো ভূমিকা রেখো। ফিরছিলাম প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে। রাত তখন ১১টা। তীব্র শীতের মধ্যে কিছু শিক্ষক, অন্যদিকে কমিউনিটি ক্লিনিকের লোকজন তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় পড়ে ছিল। কী দেশে বাস করি! আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চলছে। মদিনা সনদের অন্তর্নিহিত মর্মই হচ্ছে ইসলামী জাহানের একটি কুকুর যদি না খেয়ে থাকে তার জন্য খলিফা দায়ী। আর কত শিক্ষক-কর্মচারী রাস্তায় পড়ে আছেন অনশনে আছেন সেজন্য কেউ দায়ী নয়, কেউ চিন্তাও করে না। প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের পক্ষে একজন মানুষ যে গিয়ে শুনবেন তাদের দুঃখ-কষ্ট কী, শোনার মানুষ কেউ নেই। কেমন যেন বলার মানুষে দেশ ছেয়ে গেছে, কেউ কিছু শুনতে চান না। বড় কষ্ট হয়।
এ দেশের জন্য সবকিছু বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম, এ দেশের নেতা এবং পিতার জন্য যৌবন জড়িয়ে কাঙ্গাল হলাম। আগে কখনো এমন প্রশ্ন মনে আসত না, এখন কেন যেন মাঝেমধ্যে প্রশ্নগুলো কোথা থেকে জেগে ওঠে, খুঁজে পেতে পাই না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই প্রশ্নগুলো জাগে। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উতালা হয়ে যাই। কিন্তু কোথায় পাব। সমাজে অনেক মানুষ আছে, অনেক বড় বড় মানুষ। কিন্তু আমার মনের এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার মতো তেমন কাউকে পাই না। বেগম সুফিয়া কামাল, ড. নীলিমা ইব্রাহীম আরও কেউ কেউ যদি থাকতেন হয়তো তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে কিছু না কিছু পেতাম। বোস প্রফেসর আবদুল মতিন, ভাইস চ্যান্সেলর মুজাফ্ফর আহমেদ, আবু সাঈদ চৌধুরী এদের মতো কেউ থাকলেও হয়তো উত্তর খোঁজা যেত। কিন্তু আজ কে আছে দেশের কষ্ট, মানুষের কষ্ট খোঁজার। সব তো দলকানা, ক্ষমতার দাস!
সপ্তাহটার বড় উল্লেখযোগ্য আলোচনা রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি খরচে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর পুণ্যভূমি সিলেটে জনসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু। ভাটিবাংলার প্রিয় সন্তান আবদুল হামিদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি মনোনীত হওয়া এক অভাবনীয় ব্যাপার। যে দেশে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হওয়া যায় না, সেই দেশে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত, সেই সংসদের ভোটে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।
গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে করতে আমরা আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছি। রাষ্ট্রীয় কোনো উচ্চপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এখন লোক পাওয়া যায় না। গণতন্ত্রের বলিহারি! এটা গণতন্ত্রের স্বর্ণযুগ, না পতনের যুগ চিন্তা করার বিষয়। আগামী দিনে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে, দশম জাতীয় সংসদ বৈধ, না অবৈধ ছিল। সেই সংসদের ফসল দ্বিতীয়বারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কি বৈধ না অবৈধ ছিলেন? কথাগুলো যদিও এখন কোনো স্থান পাবে না। কিন্তু ৫০ বছর পর আলোড়িত হবে এবং ইতিহাসের পাতায় সত্যটা স্থান করে নেবে। সেদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার মনোনয়নের কথা জানিয়েছেন। ব্যাপারটা তো অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো। মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আগেই জিজ্ঞাসা করা উচিত, তিনি দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হতে ইচ্ছুক কিনা। তা করা হয়নি। কর্তার ইচ্ছা কর্মের মতো প্রথমে কয়েকজনের নাম আলোচনা করে তাকে অপমান-অপদস্থ করে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করে মনোনয়ন।
আবার শুনছি তার মনোনয়নপত্র দাখিল করতে রাষ্ট্রপতি নাকি নির্বাচন কমিশনে যাবেন। আর এমন গণতন্ত্র দেখাতে যাওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে তিনি কখনো যেতে পারেন না।যেতে হলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। তা না করে নির্বাচন কমিশনে গেলে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করবেন। তাই বেশি গণতন্ত্র দেখাতে গিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সর্বনাশ করবেন না— এমনটাই আশা করি। অবশ্যই তার মনোনয়নপত্র প্রস্তাবক-সমর্থকরা নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন। নির্বাচন কমিশন বিধিমতো ব্যবস্থা নেবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই বলে তাকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করবে, এজন্য আর অন্য কোনো ছলাকলা করার প্রয়োজন পড়ে না।
প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শক্তি। কিছু দিন হলো বিচারব্যবস্থাকে ঘুণে আক্রমণ করেছে। কীভাবে ভিতর থেকে কুটি কুটি করে কেটে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। বিচারব্যবস্থাটা যদি স্বাধীন শক্ত মেরুদণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে থাকত, কেউ তার কালো হাত প্রসারিত না করত তাহলে বড় স্বস্তি পেতাম। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে যে ন্যক্কারজনক পরিস্থিতিতে বিদায় হতে হয়েছে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সেদিকটি খেয়াল রেখে যদি বিচারব্যবস্থায় সাবলীল গতি আনতে পারেন তাহলে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবেন। দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি তাকে সাদর অভিবাদন জানাই। পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে ন্যায় ও সত্যের পথে চলার শক্তি দিন।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই— এটা অবশ্যই সত্য। আবার এও সত্য বড় ছোটর কোনো ব্যবধান না থাকলে অশান্তির সৃষ্টি হয়। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে অমত করছি না। কিন্তু অস্থায়ী প্রধান বিচারপতির পদত্যাগকেও ফালতু বা অসম্মান করতে পারি না। মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ সম্মান, আত্মমর্যাদা। আত্মমর্যাদাবোধ হারিয়ে ফেললে মানুষের কিছুই থাকে না। সে কাজটি সাবেক অস্থায়ী বিচারপতি করেছেন বলে তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম
লেখক : রাজনীতিক।
purboposchim
পাঠক মন্তব্য
Excellent, read it in one breath,but all r frustrating, Isn,t there any Hope for our country Where is Isha Khan, Raj Bollov, we need them now, Rmember Sk.saadi said-Now I/We fell from the mouth of one Tiger to the mouth of another Tiger. Unfortunately we r in same condition what we fought for Independence. WHen we,ll b independent again?
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন