রোহিঙ্গা ইস্যু ও মানবিকতার দাবি
06 September 2017, Wednesday
কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুটির একটি রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয়েছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কার্যত রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রস্ত গ্রামবাসীরা ইতস্তত-বিক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি করার সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম গুলিবর্ষণের শিকার হয়েছে। নারীদের ওপর ধর্ষণযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অনেককেই খুব কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞে কতজন প্রাণ হারিয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে জাতিসংঘ যেসব ত্রাণ শিবির খুলেছিল সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। নির্যাতন-নিপীড়নের বিভীষিকার ফলে এসব ত্রাণ শিবির চালু রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। স্যাটেলাইট চিত্রে জ্বলন্ত রোহিঙ্গা গ্রামগুলো চিহ্নিত হয়েছে। সেখানে বিভীষিকাময় গণহত্যা চলছে এ ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই। প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। বেসরকারি হিসাবে ইতিমধ্যে দুই লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির বাধা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের সব রকম সুযোগই ব্যবহার করছে। তাদেরই বা আর কী করার সুযোগ আছে। প্রাণরক্ষার তাগিদে অনেক সময় মানুষ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও পিছ পা হয় না। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ডে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। এদের পেটে ভাত নেই, যে বস্ত্রে তারা বেরিয়ে পড়েছিল সেটাই একমাত্র ভরসা। গৃহহীন এই মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ছে এবং বৃষ্টিতে ভিজছে। রোগবালাইতে তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। অনেক রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ নাফ নদী ও সমুদ্র উপকূলে ভেসে উঠছে। এই বেদনাদায়ক চিত্র বাংলাদেশের মিডিয়াতে প্রতিফলিত হয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিশেষ করে আলজাজিরা, সিএনএন ও বিবিসিতেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে। রোহিঙ্গারা যে ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, অত্যাচার, নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন সেটা এক মানবিক ট্র্যাজেডি এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বৈ আর কিছু নয়। রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশেই আসছে না, তাদের অনেকেই ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াতেও আশ্রয় নিয়েছে। এদের দূরবস্থা দেখে এসব দেশের জনমনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করতে চায় না মিয়ানমার। ফলে নিজ দেশে তারা পরবাসীর মতো জীবনযাপন করছে। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। তারা হয়ে পড়েছে এস্টেটলেস পিপল, অর্থাৎ রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠীর জীবন যে কত দুর্বিষহ হতে পারে রোহিঙ্গারা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। রাষ্ট্রের নাগরিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা পায়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পায় এবং সর্বোপরি পায় রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার। রাষ্ট্রের নাগরিকরা সংবিধান প্রদত্ত সব অধিকার ভোগ করার দাবিদার। তবে একথাও সত্য, অনেক সময় রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকলেও অনেক নাগরিক নির্যাতন-নিপীড়ন এবং ভেদ-বৈষম্যের শিকার হন। এই চিত্র আদর্শ রাষ্ট্রীয় নাগরিকের চিত্র নয়। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকদের সমস্যাটিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। তদসত্ত্বেও নাগরিকত্বহীন রোহিঙ্গারা খুব সামান্যই আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। মানুষের কথা ও কাজে যে কত ব্যবধান এটা তার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত। আমরা আশা করব জাতিসংঘসহ পৃথিবীর সব সভ্য দেশ রোহিঙ্গা নিপীড়ন থেকে মিয়ানমার সরকারকে নিবৃত্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অনেকে মনে করছেন সে আশাও বৃথা। আইনের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইন সবচেয়ে দুর্বল। কারণ আন্তর্জাতিক আইন কে প্রয়োগ করবে, কারা প্রয়োগ করবে সে ব্যাপারে স্পষ্টতা নেই। সর্বোপরি পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয় স্বার্থের আলোকেই অবস্থান গ্রহণ করে। মিয়ানমার একটি সম্পদশালী দেশ। গত দু’দশকে মিয়ানমার রক্ষণশীল বিচ্ছিন্নতার নীতি থেকে ক্রমে দূরে সরে মুক্তদ্বার নীতি গ্রহণ করেছে। এর ফলে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ কীভাবে অন্য দেশের স্বার্থে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারেও তৎপরতা বেশ জোরদার। এসব কারণে কোনো দেশই মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে উৎসাহী নয়। মিয়ানমারে জাতিগত বিদ্রোহ বহু বছর ধরে চলছে। ছয়-সাতটি জাতিগোষ্ঠী এই বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত। রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার স্বার্থেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সে দেশের ওপর লৌহ কঠিন নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছে। এক অর্থে মিয়ানমার একটি সিকিউরিটি এস্টেট। সে দেশে অং সান কন্যা অং সান সু চি দীর্ঘকাল ধরে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য তার এ লড়াইয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে বরিত হয়েছেন। শান্তির অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃত হওয়া সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের যে অশান্তি চলছে তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও তিনি উচ্চারণ করতে নারাজ। এ ব্যাপারে তিনি সামরিক চক্রের সহযোগী। কারণ তার সরকার সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়। তাকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে। তার কাছে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব মানবিকতার চেয়ে অনেক বড়। মিয়ানমারের সমগ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় অতি ক্ষুদ্র রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী তার কাছে ছুড়ে ফেলার মতো এক টুকরো বাজে কাগজ ছাড়া আর কিছু নয়। এটাই বোধকরি রাজনীতির ধর্ম। রাজনীতির নামে অধর্মাচারণ যেমন পরিত্যাজ্য, তেমনি ধর্মের নামে সংকীর্ণ রাজনীতিও একইভাবে পরিত্যাজ্য। রাজনীতি প্রায়শই ক্ষমতার অন্ধ মোহে পর্যবসিত হয়। একজন নোবেল বিজয়ীও সেই মোহের কাছে পরাস্ত হতে পারেন। সুতরাং অং সান সু চির কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করা যায় না।
মিয়ানমার সরকারের প্রতিপাদ্য হল রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নয়। সাধারণভাবে নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয় জন্মসূত্রে এবং ঐতিহাসিক সূত্রে। উভয়বিধ বিবেচনায় রোহিঙ্গারা অবশ্যই মিয়ানমারের নাগরিক। ড. মুহম্মদ এনামুল হক তার মুসলিম বাংলাসাহিত্য গ্রন্থে লিখেছেন, “মুঘল আমলে মুসলিম বাংলাসাহিত্যের প্রচার ও প্রসার সম্বন্ধে পূর্ব অধ্যায়ে যৎকিঞ্চিৎ আলোচিত হইয়াছে। এই সময়ে মুঘল-সাম্রাজ্যের বাইরে অবস্থিত দুটি স্বাধীন প্রত্যন্ত প্রাদেশিক রাজ্যেও মুসলিম বাংলাসাহিত্যের বিশেষ চর্চা হয়। এ দুইটি রাজ্যের নাম ‘রোসাঙ্গ’ ও ‘ত্রিপুরা’। রাজ্য দুইটি মুঘল আমলের শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা বজায় রাখলেও, মুঘল যুগের সাংস্কৃতিক প্রভাবে ভরপুর ছিল। এ দুই রাজ্যে এখানকার মতো তখনও বাংলাভাষী মুসলমানের সংখ্যা ছিল অনেক। কতকটা যুগধর্মের প্রভাবে এবং কতকটা বাংলাভাষী মুসলমানের সংখ্যাধিক্যে রাজ্য দুইটিতে বাংলা ভাষার প্রভাব বদ্ধমূল হইয়া যায়। ...মুঘলেরা বাংলা-দেশে বাংলা-সাহিত্য-চর্চার জন্য সাক্ষাৎভাবে যাহা করেন নাই, ‘রোসাঙ্গ’ ও ‘ত্রিপুরা’ রাজগণ তাহা করিয়াছিল। ...আধুনিক ‘আরাকানের’ প্রাচীন নাম ‘রোসাং’ বা ‘রোসাঙ্গ’। আরাকানীরা ইহাকে ‘রখইং তংগী’ বা ‘রাক্ষস-ভূমি’ নামে অভিহিত করে। ইহা সংস্কৃত ‘রক্ষ-তুঙ্গ’ বা ‘রাক্ষসদের উচ্চ-মঞ্চ’ কথার অপভ্রংশ বলিয়া মনে হয়। ‘রক্ষ শব্দ বাংলায় ‘রক্খ’ রূপে উচ্চারিত হয়। বাংলা উচ্চারণে এই ভঙ্গি প্রাকৃত-ভাবাপন্ন। ‘বাংলা টং’ বা ‘টঙ্গি’ সংস্কৃত ‘তুঙ্গ’ শব্দের অপভ্রংশ বলিয়া মনে হয়। ‘টং’ শব্দ অনার্য হওয়াও বিচিত্র নহে। আরাকানী ‘ইং’ এবং ‘ঈ’ প্রত্যয় যোগ ‘রখইং’ ‘তইংগী’ সংস্কৃত ‘রক্ষতুঙ্গ’ হইতে উৎপন্ন বলিয়া মনে করার পক্ষে ভাষাতাত্ত্বিক যুক্তি আছে। এই ‘রখইং’ শব্দের ইংরেজি অপভ্রংশ ‘আরাকান’। মুঘল আমলে আরাকান-রাজ্যের সীমা নির্ণয় কঠিন। সময়ে সময়ে হাত বদলাইলেও চট্টগ্রামের অধিকাংশ স্থান, বিশেষ করিয়া কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-তীরবর্তী ভূভাগ, মুঘল-যুগের শেষ দিক পর্যন্ত রোসাঙ্গ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সমগ্র চট্টগ্রামে এখনও যে ‘মঘী’ ‘সন’ প্রচলিত, তাহাই প্রমাণ করিয়া দিতেছে যে, চট্টগ্রামে আরাকানী প্রভাব কত গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী। এই চট্টগ্রাম হইতেই আরাকানে বাংলা-ভাষার প্রভাব ছড়াইয়া পড়ে। এখনও আরাকানী মুসলমানেরা বাংলা ও বর্মী এই দুই ভাষায় সমান পারদর্শী। আমরা ‘আরাকান রাজসভায় বাংলা-সাহিত্য’ নামক পুস্তকে দেখাইয়াছি যে, রোসাঙ্গ-রাজ ‘মহতৈং চন্দ’ (Mahatoing Tsandaya) (৭৮৮-৮১০ খ্রিঃ) বা মহৎ-চন্দ্র যখন রাজত্ব করিতে ছিলেন তখন হইতেই রোসাঙ্গে আরবি বণিক সম্প্রদায় স্থায়ীভাবে বসবাস করিয়া আসিতে ছিলেন। ইহাদের দ্বারাও রোসাঙ্গে খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতাব্দী হইতে ইসলাম প্রচারিত হইতে থাকে। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়া হইতেই ভাগ্যচক্রে রোসাঙ্গ-রাজগণ মুসলিম প্রভাবকে সানন্দে বরণ করিয়া লইতে বাধ্য হন। ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে রোসাঙ্গ-দেশ গৌড়ের করদ রাজ্য রূপেও আপন অস্তিত্ব বজায় রাখে। (পৃষ্ঠা-২৩৩-২৩৫)।” এসব ঐতিহাসিক তথ্য থেকে এটি অত্যন্ত পরিষ্কার যে, রোসাঙ্গ তথা রোসাঙ্গবাসী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগেও পৃথক সত্তা বজায় রেখে চলছিল এবং বর্মী ভাষায় তাদের পারদর্শিতা মিয়ানমারের বৃহত্তর সত্তার অংশ বলেই প্রমাণিত হয়। সুতরাং কোন যুক্তিতে মিয়ানমার সরকার এদের ঐতিহাসিক নাগরিকত্ব অস্বীকার করতে পারে। ড. এনামুল হকের লেখা ছাড়াও বহু ইতিহাসবিদের লেখায় রোহিঙ্গাদের বর্মী সত্তা প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি ইতিহাসের এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরতে পারে না? বলতে পারে না রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমার সরকারের অবস্থান ভ্রান্ত? কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটিও সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে। শক্তিশালী ও কার্যকরী যুক্তির মুখে মিয়ানমার সরকার কতদিন জেদ বজায় রাখতে পারবে। বাংলাদেশ তো বলছে না, রোসাঙ্গ ভূমি তথা রাখাইনও আরাকান ভূ-খণ্ড বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের অংশ। তাহলে সমস্যাটি কোথায়?
কিছু কিছু পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে বিঘিœত করছে। তাদের এই দাবি একেবারে অমূলক নয়। তবে লাখ লাখ অভিবাসীর মধ্যে কিছু সমাজবিরোধী লোক, এমনকি কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও তৎপর থাকতে পারে। বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গাদের সঠিক পরিচয়পত্র দিয়ে এবং তাদের পৃথক করে রাখার একটি প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে চিহ্নিত করে রাখলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সমস্যা অনেকটাই নিরসন হবে। কেউ কেউ বলছেন, এত লোককে ভরণ-পোষণের আর্থিক সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। কথাটি সত্য। তবে এদের ভরণ-পোষণের ৯০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি দায়িত্ব টঘঐঈজ বহন করে থাকে। অতি সম্প্রতি তারা এ ব্যাপারে বর্ধিত উৎসাহ দেখাচ্ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও বিষয়টি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে বোঝা যায়, যেসব রাষ্ট্র এখনও মিয়ানমার সরকারের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতিশীল তারাও অনেকটা বিব্রত বোধ করছেন।
আসলে আমাদের সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কী করবে সে ব্যাপারে দোদুল্যমান। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রস্তাবটি এনেছিল ব্রিটেন। এর আগের বছর প্রস্তাব এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ সুবর্ণ সুযোগকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ সাহসী কূটনীতির সূচনা ঘটাতে পারে। সমস্যাটি নিছক ধর্মীয় নয়। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্যে ৪০০-এরও অধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী এসেছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী সোচ্চার ও কড়া অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন। তবে এই অবস্থানে যাওয়ার আগে চীন ও ভারতে দুটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে একটি পুস্তিকা প্রণয়ন করতে পারে এবং এটি সব সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রেরণ করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান বোঝানোর জন্য একটি চৌকস আন্তর্জাতকি মিডিয়া দলকেও পরিস্থিতি সরেজমিন দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারে। মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশ সীমা একাধিকবার লঙ্ঘন করেছে। বাংলাদেশের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ পরিস্থিতিতে যা কিছু করা যুক্তিসংগত, সঠিক, শোভন, সেসব কিছুই করত হবে। বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে মধ্যে বসবাস করতে চায়। তার মানে এই নয়, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের আগ্রাসী মনোভাবের কাছে মাথানত করবে।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন