আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়/মোছ আঁখি, দুয়ার খোল, দাও বিদায়/
অন্ধকারে এসেছিলাম, থাকতে আঁধার যাই চলে;/ ক্ষণেক ভালোবেসেছিলে, চিরকালের ‘নাই’ হলে
কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত গান দিয়েই আজকের লেখাটি শুরু করতে চাই। সত্যি বলতে কি, একজন ভাবুক হওয়ার মতো বিলাসী সময় আমার হাতে নেই। তার পরেও মাঝে মধ্যে ভাবুক হয়ে পড়তে হয়। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালের ঘটনাগুলো এই মনটিকে উথাল-পাতাল করে দিয়েছে।
কিছু দিন আগে টিভির সামনে কান্নাভেজা চোখ দেখলাম কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, নিজামী ও মীর কাসেম আলীর পত্নীদের। আর এখন টিভি ক্যামেরার সামনে চোখের জল দেখছি সিনহা পত্নীর। ব্যাক গ্রাউন্ডে যেন বাজছে কবি নজরুলের এই গান।
যারা এই ফ্রাংকেনস্টাইন তৈরি করছেন তাদের বউয়ের চোখের জল কিংবা পানি দেখতে সম্ভবত বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। এই বিশ্ব জগতের অতি সামান্যই মানুষের নলেজে এসেছে। সেই জানা বিশ্বজগতের বিশালত্বের তুলনায় একটি অতি অতি ক্ষুদ্র গ্রহ এই পৃথিবী। সেই পৃথিবীর অতি ক্ষুদ্র একটি রাষ্ট্র, বাংলাদেশ। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান বিচারপতির মতো পদ তো আছেই- এমনকি একটি থানার কর্তাব্যক্তি হয়ে আমরা আমাদের এই ক্ষুদ্রত্বকে ভুলে যাই।
মহাকালের তুলনায় আমাদের ৭০-৮০ বছরের এই জীবন অতি সামান্য। তার মধ্যে যতটুকু সময় ক্ষমতার সাথে হানিমুন হয়, তার ব্যাপ্তি আরো কম। মধুর রাতটি যাপনের পর সব সময় আফসোস হয়, কেমনে পোহাল এই মধুর রজনী! ক্ষণেক সময়ের সেই ঝিলিকে ক্ষণস্থায়ী এই দেহ নিয়ে বাহাদুর সেজে মনে করি, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকেও উল্টে দিতে পারি। অথচ সামান্য একটি মাছি কিংবা ক্ষুদ্র এক ক্যান্সার কোষ আমাদের পুরো স্বপ্ন ও ঔদ্ধত্যকে ক্ষণেকেই মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। মাঝে মধ্যে লেখালেখি বন্ধ করে শুধু ভাবতেই ভালো লাগে। পাঠকদের প্রতি কমিটমেন্ট থেকে মাঝে মধ্যে লিখতে বসি, যদিও লেখার মধ্যে সব ভাবনা ফুটিয়ে তোলা যায় না। আমরা ক্ষুদ্র সামর্থ্যরে ঘটনা নিজের মতো করে ঘটাতে চাই। কিন্তু ওপর থেকে কে যেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেই সত্তাটির প্রতি মাথা নুইয়ে দেই।
প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকার নিজের ভূমিকা যতই খোলাসা করার চেষ্টা করছে- জনমনে ততই নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। এক বিতর্ক ঢাকতে গিয়ে সরকার অন্য এক নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে।
নৈতিকতার মানদণ্ডে তিন ধরনের মানুষ সমাজে রয়েছে। এক. নৈতিক। দুই. অনৈতিক। তিন. আধানৈতিক, আধা-অনৈতিক। প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষের খুব একটা সমস্যা হয় না। বিপদে পড়ে তৃতীয়পর্যায়ের মানুষ। বিচারপতি এস কে সিনহার বিপদটি সম্ভবত এই তৃতীয় কিছিমের। জীবনের শেষ দিকে একজন যুধিষ্ঠিরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও বিচারপতি এস কে সিনহার আগের জাহেরি এবং বাতেনি কাজকর্ম মনে হয়, খুব স্বচ্ছ ছিল না। আল্লাহ হয়তো এই কথা সরকারের মুখ দিয়েই বলাচ্ছেন। তার আগেকার জাহেরি কাজকর্ম (যাকে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ বলে দেশের অনেকেই দাবি করেন) সম্পর্কে জনগণ মোটামুটি অবহিত ছিলেন। সর্বশেষ, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন মহামান্য প্রেসিডেন্টের বরাতে একজন সিটিং প্রধান বিচারপতির বাতেনি ১১টি কর্ম জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিয়েছে। এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা দুনিয়ায়ও বিরল।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এই বিবৃতি এখন রয়েছে সুপ্রিম কোর্টেরই ওয়েবসাইটে। এতে প্রধান বিচারপতি সিনহার বিলি করা বিবৃতিটিকে বিভ্রান্তিমূলক বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মূলত দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে এস কে সিনহার সেই বিবৃতিতে অসন্তুষ্ট হয়েই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এই অভিনব উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগসংবলিত কিছু তথ্য’ রয়েছে দেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের কাছে। একজন বিচারপতি তো বটেই, একজন সাধারণ মানুষের জন্যও এই অভিযোগগুলো ভয়াবহ। এর ‘দালিলিক তথ্যাদি’ মহামান্য প্রেসিডেন্ট হস্তান্তর করেছেন আপিল বিভাগের অন্য পাঁচজন বিচারপতির কাছে।
তথ্যগুলো এসেছে রাষ্ট্রের একদম সর্বোচ্চ ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো সরাসরি এসব বিষয় রাষ্ট্রপতির গোচরে এনেছেন বলে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তা অন্যান্য বিচারকের গোচরে এনেছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা এই বিবৃতিটির সত্যতা যাচাই করার জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার দফতরের একজন কর্মকর্তা এমন একটি বিবৃতির কথা জানিয়েছেন। তবে যে পাঁচজন বিচারপতির নাম তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের বক্তব্য জানা বিবিসির পক্ষে সম্ভব হয়নি।
সরকার এস কে সিনহাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিলেও তার স্ত্রীকে আটকে দিয়েছিল। বিদেশে গিয়ে যেন আবার বেশি মুখ খুলে না ফেলেন কিংবা নতুন কোনো বোমা না ফাটান, তজ্জন্যই বোধ হয় সরকারের আয়ত্তে এই রিমোট কন্ট্রোলটি রেখে দেয়া হয়। কিন্তু এটা নিয়ে বিরূপ সমালোচনা শুরু হলে তার স্ত্রীকে আবারও বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সব কিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা এমন এক নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা যখন মানুষ নিজের ‘বউকেও মা ডেকে বসে’। তারপরেও দাবি করে, আমি একদম ঠিক আছি।
বিচারপতি খায়রুল হক এবং বিচারপতি এস কে সিনহাকে দিয়ে আওয়ামী লীগ কী কী অনৈতিক কাজ করিয়েছে, বিচারব্যবস্থাকে কিভাবে বিপন্ন করেছে- তা সচেতন মহলের সবাই সম্যক অবগত। বিচারপতি খায়রুল হক শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুগত থাকায় ‘গুডিবয়’ হিসেবেই বিদায় নিয়েছেন।
তাদের সময়েই আদালতের গেট থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে সাক্ষী অপহরণ করে সেই সাক্ষীকে দেশের সীমান্তের ওপারে পাঠানো হয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়ে জন্ম হয়নি, এমন মানুষকেও প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আলোক বিজ্ঞানের সব নিয়ম অগ্রাহ্য করে কয়েক মাইল দূর থেকে ‘ঘটনা দেখে’ তার সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের অনেক প্রশ্নবোধক সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে এবং তা কার্যকরও করা হয়েছে অবিলম্বে। তাদের সময়েই মধ্যযুগীয় কায়দায় লিনচিং মবের (কথিত জনতার মঞ্চ) সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য যুগে এরকম কিছু গ্রুপ একত্র হয়ে দাবি তুলত, হ্যাং হিম, ওকে ফাঁসি দাও। সেই দাবি অনুযায়ী আইন সংশোধন করে যাবজ্জীবন শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। তখন বিচারপতিদের মধ্যকার স্কাইপ সংলাপে উঠে এসেছে, ‘আপনি তিনটারে ঝুলাইয়া দেন, তারপর আপনারে অ্যাপিলেট ডিভিশনে নিয়া আসি।’ এই কিছিমে তিনটারে ঝুলাইয়া যারা অ্যাপিলেট ডিভিশনে আসেন, তারা দেশের বিচারব্যবস্থাকে ঝোলাবেন না তার কী নিশ্চয়তা আছে?
বিচারব্যবস্থা হলো একটি সমাজকে টিকিয়ে রাখার সর্বশেষ রক্ষাকবচ। আমাদের লোভ, আমাদের আক্রোশ, আমাদের ভীতি সেটাকেও ধ্বংস করতে চলেছে। এই সত্য কথাগুলো বলার মতো বিবেকবান অথবা সাহসী মানুষ এ দেশে কমে গেছে। এই নির্মোহ সত্য বললে কারো ‘রাজাকার’ হওয়ার ভয় ছিল, কারো ‘নিরপেক্ষতা খোয়ানো’র ভয় ছিল। অনেকেই সব জায়গায় সত্য বলে এই জায়গায় এসে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাতেন।
এর ফলে দেশের বিচারব্যবস্থার কোলেটারাল ড্যামেজ সংঘটিত হয়ে গেছে- এগুলো উপলব্ধির মতো প্রজ্ঞা কেউ দেখাতে পারেনি। ২০১৩ সালে শাহবাগ উন্মাদনার সময়ে দৈনিক আমার দেশ-এ আমার একটি কলাম ছাপা হয়েছিল। শিরোনাম ছিল, তাহরির স্কয়ার যা ভেঙেছে শাহবাগ স্কয়ার তা-ই জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে। সেই লেখার কিছু বিশেষ অংশ এখানে তুলে ধরছি। ‘শাহবাগ স্কয়ারে একটা তাহরির স্কয়ার হয়েছে জেনে অতি খুশি হয়েছিলাম। তারুণ্যের ধর্মই হলো ভয় ও শঙ্কাহীন থাকা। তারুণ্যের ধর্মই হলো সব অত্যাচার, উৎপীড়ন, অনাচার, কুপমণ্ডুকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। কিন্তু হতাশ হয়েছি এই তারুণ্যের সেই খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি দেখে। চল্লিশ বছরের আগের মানবতাবিরোধী অপরাধ এই তারুণ্যকে স্পর্শ করেছে, এটা অবশ্যই আনন্দের। তবে বর্তমানের দিকে শাহবাগের এই তারুণ্য বড্ড বেশি উদাসীন।
এ দেশের কোনো সরকারের আমলনামাটিই পরিষ্কার নয়। তার পরেও বর্তমান সরকারের আমলনামা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাজিকর, টেন্ডারবাজ, দখলবাজ, চাপাতি লীগ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আর এরা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে।
শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর হাহাকার এই তারুণ্যের কানে পৌঁছায়নি। হলমার্ক এই দেশটির ব্যাংকিং-ব্যবস্থাকে তছনছ করে ছেড়েছে, সেই ক্রোধ শাহবাগ স্কয়ারের এই তারুণ্যকে স্পর্শ করেনি। পদ্মা সেতুতে আবুল নামক ইঁদুরেরা পুরো জাতির ভাগ্যের শিকাটি ছিঁড়ে ফেলেছে, সেই হতাশা এই তারুণ্যকে ছুঁতে পারেনি। কুইক রেন্টাল এ জাতির গলায় যে ফাঁস লাগিয়েছে, সেই কষ্ট এই তারুণ্যকে নাড়া দিতে পারেনি। সাগর-রুনির ট্র্যাজেডি এই তারুণ্যের দ্রোহে একটুও দোলা লাগাতে পারেনি। গুম ও খুনের কারণে শত শত নারী ও শিশুর কান্না বাতাসে ভাসছে, তারুণ্যের কানে সেই আহাজারিগুলো পৌঁছতে পারেনি।
কাজেই প্রশ্ন, এরা কি সেই তারুণ্য, নাকি তারুণ্যের বেশে সেই জরা বার্ধক্য, যারা ভিন্ন মতাবলম্বীর উদ্দেশ্যে বলে, ‘বিচার-টিচার আবার কী, এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেই হয়।’ বার্ধক্যপীড়িত মন্ত্রীদের উচ্চারণের সাথে এই তারুণ্যের উচ্চারণ দাড়ি-কমাসহ মিলে গেছে। সেই জরা-বার্ধক্যের প্রভাব কাটিয়ে এই তারুণ্য মূল যুদ্ধাপরাধী ইয়াহিয়া, ভুট্টো, নিয়াজী, টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলীদের নামগুলো উচ্চারণ করতে পারছে না। পারছে না পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি সামনে আনতে। টক দইওয়ালা গল্পের মতো হানিফ ও সাজেদা চৌধুরীকে সামান্য বিব্রত করা ছাড়া এই তারুণ্য সরকারকে বিব্রত করার জন্য একটা কাজও করছে না, বরং এসব ঢেকে ফেলার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের আবেগটি ব্যবহার করছে।
শাহবাগ স্কয়ার সবচেয়ে মুশকিলে ফেলেছে সম্ভবত বিএনপিকে। সরকারের এই রাজনৈতিক কৌশল বা তীরটির মূল টার্গেট বিএনপি। তবে যে শক্তি দিয়ে বিএনপিকে আঘাত করতে চাচ্ছে, সেই শক্তি দিয়েই সরকারকে কাবু করা সম্ভব। কাজেই চুপ না থেকে বিএনপির নৈতিক অবস্থানটি পরিষ্কার করতে হবে। এ কারণে আঠারো দল কিংবা জনগণ কারো সামনেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না। কারণ বিএনপির নৈতিক অবস্থানের পক্ষেই আছে আন্তর্জাতিক মহল ও মানব প্রজ্ঞার অবস্থান।
১৯৭৩ সালের কোলাবেরটর বা দালাল আইনে যে ২৮ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, আজকের অভিযুক্তদের একজনও সেই তালিকায় ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তখনকার চিফ প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার এই দাবিকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। ডিজিটাল এই যুগে বিশ্ববাসীকে অন্ধকারে রাখার সুযোগ নেই। সরকার যাকে ‘বহির্বিশ্বের চাপ’ বলছে, তা মূলত আন্তর্জাতিক মহলের যথাযথ উদ্বেগ।
মাইকেল ক্রস নামক এক ব্রিটিশ নিউজ এডিটর লিখেছেন, Beyond the obvious point that any miscarriage of justice involving the death penalty should be a matter of concern, the Dhaka tribunal raises two issues. One is the abuse of the term ‘international’ which should be reserved for war crimes proceedings under genuinely international jurisdiction. The other is the potential for political over-spill. Jamaat-e-Islami is a political force in some parts of UK, and while I have little sympathy with its members I would not like them to be handed a victim card to play.
অর্থাৎ স্পষ্টতই ন্যায়বিচারের কোনোরূপ স্খলন হেতু যদি কোনো মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য দারুণ উদ্বেগের কারণ হবে। ঢাকার ট্রাইব্যুনালটি দুটি প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। প্রথমটি হলো ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটির অপব্যবহার। কারণ এই পরিভাষাটি শুধু আন্তর্জাতিক জুরিসডিকশনের তদারকিতে অনুষ্ঠিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্যই সংরক্ষিত থাকা উচিত। অন্যটি হলো, সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাজ্যের কোনো কোনো অংশে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদের সদস্যদের প্রতি আমার খুব সামান্যই সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু এরা কারো হাতে অবিচারের শিকার হোক তা আমি চাই না।
মাইকেল ক্রস তার সেই নিবন্ধে নুরেমবার্গ বিচারের প্রধান প্রসিকিউটর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতি রবার্ট জ্যাকসনের একটি উদ্ধৃতি টেনেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের আগে আগে রবার্ট জ্যাকসন বলেছিলেন, It would be better to shoot Nazi leaders out of hand than pervert the process of law by setting up a sham court. তিনি আরো বলেছেন- You must put no man on trial under the forms of judicial proceedings if you are not willing to see him freed if not proven guilty.
অর্থাৎ ‘প্রহসনের আদালতে বিচারের পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিকৃত বা কলঙ্কিত করার চেয়ে অভিযুক্তদের কোনো বিচার ছাড়া গুলি করে মেরে ফেলাই উত্তম’। আর ‘অপরাধ প্রমাণিত না হলে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে যদি প্রস্তুত না থাকে, তবে কাউকে বিচারের আওতায় এনো না।’
বিচারব্যবস্থার কোলেটারেল ড্যামেজটি সম্পর্কে বিশ্বের অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আমাদের অনেক আগেই সাবধান করে দিয়েছিলেন। নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ঝুঁকি নিয়ে সেই কথাগুলো জাতিকে লিখে জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেসব অরণ্যে রোদন ছাড়া কিছু হয়নি। জাতির ভবিষ্যৎ দেখার মতো কিছু প্রাজ্ঞ ও সাহসী মানুষের প্রয়োজন ছিল; কিন্তু তা আমরা পাইনি। বরং যে দুয়েকজন জাতিকে সতর্ক করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন তাদের প্রতি Shoot the messenger আচরণ প্রদর্শন করেছি। যে খারাপ সংবাদটি বহন করেছিল, তাদেরকেই গুলি করেছি। অর্থাৎ যে শুভ বোধটি জাতির জন্য এই সতর্কবাণী বহন করে এনেছিল তাদের মুখ স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সার্বিক বিচারব্যবস্থার কোলেটারেল ড্যামেজ আমাদের অনুভবে ধরা পড়লেও অসহায় বোধ করেছি। আজ সেই ড্যামেজের প্রভাবটি আরো স্পষ্ট। যুদ্ধাপরাধের বিচার নেহায়েত একটি বিচারিক প্রক্রিয়া হলেও এর পেছনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কাজ করেছিল। কিন্তু এটি করতে গিয়ে কোলেটারেল ড্যামেজটির কথা কেউ ভেবে দেখেনি। এর পেছনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বুলি আওড়ালেও তার প্রভাব কারো চোখে পড়েনি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কয়েকজনকে ফাঁসি দেয়ার পরে এ দেশে আইনের শাসন আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে বলে কেউ দাবি করতে পারবে না। বরং আইনের শাসনের কী দুর্দশা হয়েছে, তা বিচারপতি এস কে সিনহার পরিণতিই সবার চোখের সামনে তুলে ধরে। এখন একটি সত্য কথা বলে স্বয়ং দেশের প্রধান বিচারপতি চরম বিপদে পড়ে গেছেন। প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থার অন্যদের কথা সহজেই অনুমেয়। জনমনে শঙ্কা, এ দেশে যেই সত্য কথা বলবে, তাকেই ‘সিনহা থেরাপি’ দেয়া হবে। জানি না তার পরিণতি বাকিদের সতর্ক করবে কি না।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন