ইঁদুর তাড়াল প্রেসিডেন্টকে
25 August 2017, Friday
ইঁদুর তাড়াল প্রেসিডেন্টকে। প্রেসিডেন্ট তাঁর দপ্তর ছাড়তে বাধ্য হলেন। ঘটনা ঘটেছে নাইজেরিয়ায়। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট পরিচিত সিংহ রাষ্ট্রপতি হিসেবে। লায়ন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাঁকে তাঁর অফিস ছাড়তে বাধ্য করেছে ইঁদুরেরা। প্রেসিডেন্টের নাম মুহাম্মাদু বুহারি।
তিনি চিকিৎসার জন্য তিন মাস ছিলেন বিলেতে। ফিরে এসে দেখেন, তাঁর প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে ইঁদুর ব্যাপক অন্তর্ঘাত চালিয়েছে। অফিসের বহু আসবাব ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নষ্ট করে ফেলেছে ইঁদুরেরা। কাজেই বুহারি আর ওই অফিসে বসতেই পারবেন না, বসে কাজ করতে পারবেন না। করা সম্ভব নয়।
লায়ন প্রেসিডেন্ট তাই কাজ করবেন তাঁর নিজের বাসভবনেই। অসুবিধা হবে না। বাসভবনেও অফিস চালানোর মতো সুযোগ-সুবিধা আছে। এ নিয়ে সেখানকার জনগণ নাকি দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ বলছে, এমনকি ইঁদুরও চায় না, প্রেসিডেন্ট ফিরে আসুন। আরেক দল বলছে, ইঁদুর তো আসবাব কাটতেই পারে। এ নিয়ে এত কথার কী আছে। তাঁরা প্রেসিডেন্টের সুস্বাস্থ্য কামনা করছেন।
আর বিরোধী দল বলছে, প্রেসিডেন্টের হয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার। সরকার অস্বীকার করছে। আবার বলছেও না আসলে রোগটা কী। এই নিয়েও কথাবার্তা।
ইঁদুর বাংলাদেশেও এখন সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিচ্ছে। আমাদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ইঁদুরে খেয়ে ফেলছে। এই কথা শুনে কলাম লেখকেরা হাসেন। তাঁরা বলেন, বাঁধ ইঁদুরে খায়, নাকি মানুষে খায়!
দুটোই সত্য। ইঁদুর আসলেই বাঁধ ফুটো করে ফেলে। তখন পানি বাড়লেই ওই বাঁধ ভেঙে যায়, সহজেই। আবার মানুষও বাঁধ খায়। আর ইঁদুর প্রচুর পরিমাণে ধানও খেয়ে ফেলে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, এশিয়ায় উৎপাদিত ধানের ৫ থেকে ১০ ভাগ যায় ইঁদুরের পেটে। কাজেই ইঁদুর যে বিপজ্জনক, তাকে নিয়ে হাসি-মশকরা করার কিছু নেই, তা আমরা বুঝি।
ইঁদুর আর সিংহকে নিয়ে প্রচলিত কৌতুকটি আগে বলে নিই।
সিংহের বিয়ে। ইঁদুর খুব লাফাচ্ছে। বনের রাজার বিয়ে। আমাকে যেতে হবে। বনের রাজার বিয়ে। আমি যে কী পরে যাই। একটা কাঠবিড়ালি বলল, ও ইঁদুর, সিংহের বিয়ে, আর তুই ইঁদুর লাফাচ্ছিস কেন?
ইঁদুর বলল, ভাই, আমিও তো সিংহই ছিলাম। বিয়ের পরই না ইঁদুর হয়ে গেলাম।
আর আমাদের ছোটবেলায় যে গল্পটা ছোট ক্লাসে পাঠ্য ছিল, সেটার কথা কি আপনাদের মনে আছে?
এক ছিল সিংহ। আরেক ছিল ইঁদুর।
একদিন সিংহ তার গুহায় ঘুমোচ্ছে। একটা ইঁদুর খেলতে খেলতে সিংহের গায়ে উঠে পড়ল। সিংহের ঘুম ভেঙে গেল। সে ইঁদুরটাকে ধরে বলল, দেব নাকি একটা থাবা বসিয়ে।
ইঁদুর বলল, তা তো আপনি দিতেই পারেন। কিন্তু সেটা রাজার যোগ্য কাজ হয় না। আপনি কেন ইঁদুর মারতে যাবেন। বরং হুজুর দয়ার সাগর, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনার এই উপকারের কথা মনে রাখব। একদিন শোধ করে দেব।
সিংহ হাসল। ওরে ইঁদুর, তুই কী করে আমার উপকার করবি।
কিন্তু সিংহটা ছিল সত্যিকারের রাজা। সে ইঁদুরকে ছেড়েই দিল।
একদিন শিকারির জালে আটকা পড়ল সিংহ। ছুটে এল সেই ইঁদুর। হুজুর, ভাববেন না। আমার আছে ধারালো দাঁত। আমি এক্ষুনি জাল কেটে দিচ্ছি।
ইঁদুর মুক্ত করল সিংহকে। উপদেশ: ছোট বলে কাউকে অবহেলা করতে নেই।
ইঁদুর নিয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পটা আমরা সবাই জানি।
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। হ্যামিলন শহরে খুব ইঁদুরের উৎপাত হলো। সবখানে শুধু ইঁদুর আর ইঁদুর। আর ইঁদুরগুলো
এত নাদুসনুদুস যে ইঁদুর দেখলে বিড়াল ভয়ে পালায়।
তখন এল এক বাঁশিওয়ালা। সে নগরপিতাকে বলল, আমি বাঁশি বাজিয়ে সব ইঁদুর নিয়ে চলে যাব। আমাকে কী দেবেন?
নগর কর্তৃপক্ষ তাকে অনেক অনেক পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। বাঁশিওয়ালা বাঁশি বাজিয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলতে লাগল। পেছনে পেছনে ছুটতে লাগল সব ইঁদুর। সে চলে গেল সমুদ্রে। সব ইঁদুর ভেসে গেল সাগরে।
ফিরে এসে সে বলল, আমাকে প্রাপ্য পুরস্কার দিন। শহরের মেয়র তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা গেলেন ভুলে।
এরপর বাঁশিওয়ালা আবারও নামল পথে। বাঁশিতে ফুঁ দিল। সব শিশু তার পিছু নিল। সব শিশু নিয়ে বাঁশিওয়ালা অদৃশ্য হয়ে গেল। শিশুরা আর ফিরল না। তিনটি শিশু শুধু রক্ষা পেয়েছিল। একটা শিশুর পা ভালো ছিল না, সে পিছিয়ে পড়েছিল। একটা শিশু কানে শুনত না, সে বাঁশিওয়ালার পিছু নেয়নি। আরেকটা শিশু চোখে দেখতে পেত না, সে তাই সবার পিছু নিতে পারেনি।
এই গল্প আমাদের কী শেখায়?
আমাদের কর্তৃপক্ষ আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়, কার্যোদ্ধারের পর তা ভুলে যায়। ফলে আমাদের ভুগতে হয়। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন কর্তারা, সাজা পায় সর্বসাধারণ। বড়রা করেন ভুল, মাশুল গুনতে হয় ছোটদের।
দুই. এখন আমাদের ধ্বংসের কিনারে, কিংবা অজানা গন্তব্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক ভোলানিয়া বাঁশির সুর। আমরা বাঁচতে পারব, যদি আমরা একটু কম জোরে হাঁটি, কিংবা যদি আমরা সেই বাঁশির সুর কানে না তুলি, কিংবা যদি এই গড্ডলপ্রবাহটা চোখে না দেখি। আমি কি কিছু বোঝাতে পারলাম?
এইবার শেষ কৌতুকটা বলব।
একদিন রাজা যাচ্ছিলেন রাজবিহারে, রাজসিক ভঙ্গিতে। হাতির পিঠে চড়ে। ঢোল-ডঙ্কা বাজিয়ে। সামনে ঘোড়া। পেছনে সৈন্য। সৈন্য দলে বিড়ালও আছে।
একটা ইঁদুর ছুটে গেল সেখানে। চিৎকার করে বলল, ওরে হাতি, খুব যে ভাব দেখাচ্ছিস, তোর কী আছে, যা আমার নেই। আমারও চারটা পা, বড় বড় দুটো কান, বড় একটা লেজ...
রাজবহরের বিড়াল শুনল সেই কথা। তারপর যা হওয়ার তা-ই হলো।
অতিরিক্ত কথা ও কাজ বিপদ ডেকে আনে।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
উৎসঃ prothom-alo
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন