ধূমপান বন্ধে গণআন্দোলন প্রয়োজন
29 November 2018, Thursday
আমি চিরদিনই ধূমপান (বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি) নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাস্তবতা হলো, ধূমপান বহুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এ দেশে। যখন রাস্তা দিয়ে যাই, যেদিকে তাকাই- দেখি, লোকেরা সিগারেট খাচ্ছে। যুবক-বুড়ো, দাড়িছাড়া-দাড়িওয়ালা, বিত্তশালী-সাধারণ মানুষ নির্বিমেষে অনেকেই সিগারেট খাচ্ছে। তরকারি বিক্রেতা, রিকশাওয়ালা, হকার- সব শ্রেণীর লোক সিগারেট খাচ্ছে।
ধূমপানের পেছনে অপচয়ের ফলে দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। ফলে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। তদুপরি সবার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। নানা ধরনের মারাত্মক অসুখ হচ্ছে। এসবের কারণে এমনকি, অনেকে নিঃস্ব হচ্ছে।
এ রকম অবস্থায় ধারণা করা যায়, এ ব্যাপারে যুগের শ্রেষ্ঠ আলেমরা কথা বলেছেন। যেমন, আমরা ড. আবদুল্লাহ ইউসুফ আল কারজাবির মত পাচ্ছি। তিনি সিগারেট ধূমপানকে হারাম বলেছেন। তিনি বলেছেন, আগের যুগে সিগারেট ও ধূমপানের ক্ষতি কত যে ব্যাপক তা জানা ছিল না। তাই তারা এ ব্যাপারে হারামের ফতোয়া দেননি। কিন্তু এখন এর ক্ষতি পুরোপুরি জানা হয়ে গেছে, তাই সিগারেট পানকে হারামই বলতে হবে।’
এরপর আমরা এ ব্যাপারে আল-আজহারে পড়াশোনা করা একজন আলেমের সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি আমাকে জানান, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মরক্কো, তুরস্ক এবং বিভিন্ন আরব দেশের আলেমরা ধূমপানকে হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। যেসব খ্যাতিমান আলেম এটাকে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- ১. দারুল ইফতা, কায়রো; ২. শায়খ আরেফি, সৌদি আরব; ৩. শায়খ হাসমান, মিসর; ৪. শায়খ আলী গুমা, সাবেক গ্রান্ড মুফতি, মিসর; ৫। শায়খ হাসান ইয়াকুব, মিসর; ৬. ওমর আবদুল কাফি, মিসর; ৭. ড. ইউসুফ আল কারজাবি, কাতার; ৮. গ্রান্ড মুফতি, ব্রুনাই।
মিসরে ধূমপান নিষিদ্ধ করে অনেক আগেই আইন করা হয়েছে। অন্যান্য আরব দেশেও ধূমপানের জন্য জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
তাদের দলিল হচ্ছে- কুরআনের নিম্নে উল্লিখিত আয়াতগুলোর তাৎপর্য-
১. ‘তিনি পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন, অপবিত্র নাপাক জিনিস হারাম করেছেন।’ (সূরা আরাফ : ১৫৭)। ২. ‘তোমরা নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিও না।’ (সূরা বাকারা : ১৯৫)। ৩. ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না।’ (সূরা নিসা : ২৯)। ৪. ‘তোমরা অপচয় করো না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৭)।
আল কুরআনের আরো অন্তত ১০-১২টি আয়াত ও অনেক হাদিসের আলোকে শ্রেষ্ঠ আলেমরা এই ফতোয়া দিয়েছেন। এ ফতোয়া একই জাতীয় অন্যান্য পণ্যের ব্যাপারেও প্রযোজ্য। এখন আমাদের দায়িত্ব জনগণকে এসব খ্যাতনামা আলেমদের ফতোয়া জানিয়ে দেয়া। এ ব্যাপারে মসজিদের ইমাম, সব আলেম ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। দেশের সব এনজিও, রাজনৈতিক দল ও সব ছাত্রসংগঠনের দায়িত্ব এ ব্যাপারে প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও শহরে আন্দোলন গড়ে তোলা। সরকারের উচিত আইন করে সিগারেট উৎপাদন, বিক্রি ও আমদানি নিষিদ্ধ করা।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন