অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

লিখেছেন লিখেছেন অবুঝ চিন্তাশীল ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ১০:১৭:০৮ রাত

ইসরাইলেররাজধানীর নাম জেরুজালেম।

বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রই ইসরাইলকে স্বাধীনরাষ্ট্রহিসেবে স্বীকৃতি দেয় না।ইসরাইলেররাষ্ট্রীয় ভাষা হিব্রু ও আরবি। ২০ বর্গ কিলোমিটারের এই রাষ্ট্রটির অধিকাংশ জনগোষ্ঠীই

ইহুদীধর্মাবলম্বী। ইসরাইল রাষ্ট্রটির জন্ম ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ, বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কৌশলে ইসরাইল রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মাঝখানে ইসরাইল একটি জ্বলন্ত সমস্যার নাম। আসুন এখন জানা যাক কিভাবে বহুল আলোচিত এই ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। 

১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মুসলমান শাসকদের অদূরদর্শিতা

এবং ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রের কারণে তুরস্কে মুসলিম খিলাফত ভেঙ্গেযায়।

ব্রিটিশ বাহিনী ১৯১৭ সালে ইরাক, সিনাই উপত্যকা, ফিলিস্তিন ওপবিত্র জেরুজালেম দখল করে নেয়। ব্রিটিশরা প্রথম ফিলিস্তিনে পদার্পণ করে

ফিলিস্তিন জয়কারী মুসলিম বীর সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবীর মাযার শরীফ এ গিয়ে তার মাযারে পদাঘাত করে উচ্চস্বরে বলতে থাকে

“হে সালাহ উদ্দিন  উঠে দেখ আমরা তোর সিরিয়া জয় করে এসেছি

”। প্রথমবিশ্বযুদ্ধে তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর প্যালেস্টাইন বা

ফিলিস্তিন সহ বেশিরভাগ আরব এলাকা চলে যায় ইংল্যান্ড

ও ফ্রান্সের দখলে। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর

তৎকালীন ব্রিটিশ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমসবালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনি

ভূখণ্ডে একটিইহুদীরাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। কিন্তু

ব্রিটিশরা চাইনি ইহুদীদের ইউরোপে জায়গা দিয়ে জঞ্জাল সৃষ্টি করতে।কারণ তারা জানতো ইহুদীরা ঐতিহ্যগতভাবেই শয়তান। ইহুদীদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্রের চিন্তা শুরু হলে

পৃথিবীর কোন দেশ তাদের ভূখণ্ডে ইহুদীদের বসাতে রাজী হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত

বেলফোর ঘোষণা অনুযায়ী ফিলিস্তিন এলাকায় ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রে

গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইহুদীদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল

হওয়ার পর বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করতে

শুরু করে। দুর্বল শক্তির কারণে প্রথম পর্যায় থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরাষ্ট্রসমূহ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আগমনকে বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়। ইহুদীরা ফিলিস্তিন আসা শুরু করলে

১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা কয়েক

হাজারে উন্নীত হয়। কিন্তু ১৯১৪ সালেপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮

সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা

বৃদ্ধি পেয়ে ২০ হাজারে উন্নীত হয়। এরপর শুরু হয় বিশ্ব ইহুদীদের একত্রিত করার কাজ। মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ, তাদের শক্তি খর্ব, তাদের মাঝে অনৈক্য স্থাপন ও মুসলমানদের দমনের উদ্দেশ্যকে সাম

নে রেখে প্রকাশ্যেইহুদীঅভিবাসীদের ধরে এনে ফিলিস্তিনে জড়ো করা

র কাজ শুরু করা হয়। ফলে ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের সংখ্যা

বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ হাজারে পৌঁছে যায়। ধীরে ধীরে ইসরাইল ইহুদীদের জন্য

নিরপরাধ ও স্বাধীন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠার ফলে সেখানে ইহুদীর সংখ্যা দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে থাকে।

১৯৩১ সালে ইহুদীদের সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ

৮০ হাজারে পৌঁছায় এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়।

১৯১৮ সালে ব্রিটেনের সহযোগিতায়ইসরাইলেরগুপ্তইহুদীবাহিনী"হাগানাহ"গঠিত হয়। এ

বাহিনী ইহুদীবাদীদের অবৈধরাষ্ট্রতৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন

করতে থাকে। প্রথম পর্যায়ে ফিলিস্তিনী জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদীদের সহায়তা করা হাগানাহ

বাহিনীর দায়িত্ব হলেও পরবর্তীকালে

তারা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত

হয়। ফিলিস্তিনী জনগণের বাড়িঘর ও ক্ষেতখামার দখল করে তাদেরকে ফিলিস্তিন

থেকে বিতাড়িত করা এবং বাজার ও রাস্তাঘাটসহ জনসমাবেশ স্থলে বোমা বিস্ফোরণ

ঘটিয়ে ফিলিস্তিনীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ছিল হাগানাহ বাহিনীর প্রধান কাজ। মুসলমানদের প্রথম

কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন

ভূখণ্ডটি একটি স্বাধীন ও একচ্ছত্র মুসলমানদের এলাকা হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী

ভূখণ্ডকে

দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ইহুদীদের

ক্রীড়নকে পরিণত হয়ে মার্কিন ও ব্রিটেনের চক্রান্তকে সফল করার উদ্দেশ্যে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের

বিরোধিতাকে তোয়াক্কা না করে ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত

করার প্রস্তাব পাশ করে। এই প্রস্তাব অনুসারে জাতিসংঘ মুসলমানদের প্রাণের

মাতৃভূমির মাত্র ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের প্রদান করে এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি

জোর করে ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়েদেয়। এভাবে ফিলিস্তিনের ভূমিকে জোর পূর্বক দখল করে গঠন করা হয় নতুনইহুদীরাষ্ট্রইসরাইল। ১৯৪৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছোট রাষ্ট্রগুলোকে

চাপ দিতে থাকে জাতিসংঘেইহুদীরাষ্ট্র

ইসরাইলেরপক্ষে ভোট দেয়ার জন্য। মার্কিনদের প্রবল চাপ ও মুস

লমানদের দুর্বলতার সুযোগে আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েলকে জাতিসংঘ ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা প্রদান করে।

স্বাধীনতা লাভ করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সাহায্যে ইসরাইল অস্ত্র-

শস্ত্র ও শক্তিতে পরাক্রমশালী হয়ে উঠে। যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভূমি দখল করে ইসরাইলরাষ্ট্রগঠিত হয়েছিল সেই ফিলিস্তিনকে

পরাধীন করে ফিলিস্তিনের বাকি ভূমিগুলোকেও দখলের পায়তারা করতে থাকে ইসরাইল। বিনা অপরাধে, বিনা উস্কানিতে ফিলিস্তিনের

নিরীহ মানুষদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানো শুরু করে ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশগুল

ো মার্কিনীদের সেবা দাসে পরিণত হওয়ায় তারা ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে খুব বেশী আন্দোলন

মুখর হতে ব্যর্থ হয়। অধিকাংশ মুসলিম দেশ ইসরাইলকে ঘৃণা করলেও অনেক মুসলিমরাষ্ট্রইসরাইলকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়। ইসরাইলকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রট

ি ছিল মিশর।

ফিলিস্তিনি ভূমি জোর করে দখল করে ইসরাইলরাষ্ট্রগঠন করার পর থেকে ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করে চলেছে।

বিষয়: বিবিধ

৬৩৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File