ভারতীয়দের কাছ থেকে বাংলাদেশী রাজনীতিকদের অনেক কিছু শেখার আছে !

লিখেছেন লিখেছেন ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন ১৭ মে, ২০১৪, ১০:৪০:২১ রাত



আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশ ভারতের ১৬তম জাতীয় নির্বাচণের ফলাফলে বিজেপি নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের এখন দ্বারপ্রান্তে। কংগ্রেস শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে।এমনকি দলটি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাবার যোগ্যতা পর্যন্ত হারিয়েছে। অথচ ১৯৪৭ সালের পর অধিকাংশ সময় কংগ্রেস রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। জওয়াহের লাল নেহেরু ছিলেন স্বাধীনতার পর প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে কংগ্রেস সভানেত্রী ইন্দিরা গান্ধীও দীর্ঘ দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৪ ও ১৫তম নির্বাচনেও কংগ্রেস সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। একটা ব্যাপার বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, ১৬তম নির্বাচনের বেসরকারী ফলাফল ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দিত করেন এবং জনগণের রায়কে সম্মান জানিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ও দায়ভার স্বীকার করে নেন। এই যে সুস্থধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি তা আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার হিসেবে ভারতকে আরো এগিয়ে নেবে। নিম্নের বিষয়গুলো আমাদের রাজনীতিকদের ভেবে দেখা দরকার।

১. এক তরফা অথবা যেনতেন প্রকারের একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেনি

২. কংগ্রেস বা কোন দল একবারের জন্যও ১শত ২১কোটি জনঅধ্যুষিত ৩২লাখ ২৭হাজার ৫৯০ কি.মি আয়তনের ভারতে নির্বাচনে ‘সুক্ষ্ম’ বা ‘ব্যাপক’ ভোট কারচুপির অভিযোগ করেনি।

৩. ক্ষমতাসীন কংগ্রেস বা বিরোধী শিবির দলীয় সশস্ত্র ক্যাডার ও পেটুয়া বাহিনী দিয়ে ২৮টি অঙ্গরাজ্যের ভোট কেন্দ্র দখল করেনি।

৪. ভারতীয় নির্বাচন কমিশন মেরুদন্ডহীন ও সরকারী দলের আজ্ঞাবহ না হওয়ায় প্রতিদ্বন্ধী সব দলের অস্থাভাজন ছিল। ৫৪৩টি আসনের নির্বাচন এপ্রিলের ৭ থেকে মে মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত মোট ৯টিধাপে অনুষ্ঠিত হয়। ৩৬দিন পর্যন্ত ব্যালট বক্সগুলো নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ছিল। ১৬মে এক সাথে গণনা শুরু হয়। সরকারী দল কংগ্রেস অথবা আঞ্চলিক কোন শক্তিশালী দল ব্যালট বক্স দখলে নিয়ে ফলাফল পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি।

৫. ভারতের ৭০ বছরের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক দিনের জন্যও সেনাবাহিনী বন্ধুকের নল দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেনি। অথচ ভারত বহু ভাষাভাষী ও বহু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশ।

৬. ভারতে কোন রাজনৈতিক দলের স্টুডেন্ট ফ্রন্ট নেই। কোমলমতি ছাত্রদের রাজনীতিতে ঠেনে তাদের ভবিষ্যত নষ্ট করাকে রাজনীতিকগণ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেন। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দিনের পর দিন বন্ধ থাকে না। ভারতে ভাড়াটে ছাত্র নেই।

৭. ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের অধীন ২৪টি হাইকোর্ট ক্ষমতাসীন সরকার বা দলের ইচ্ছা অনুযায়ী রায় প্রদান করে না। রায় প্রদানের ক্ষেত্রে বিচারকগণ মোটামুটি স্বাধীন। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে।

৮. বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি কোনঠাসা আর ভারতে আর এস এস এস সমর্থিত কট্টর হিন্দু মৌলবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায়।

এই কথা আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, ভারত কোনক্রমেই নরওয়ে অথবা ফিনল্যান্ড নয়। ধর্ষণ, দুর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ভারতীয় সমাজেও বিদ্যমান। অনেক সময় তা উদ্বেগজনক পর্যায়েও পৌঁছে। মাঝে মধ্যে সুশাসনের অভাবও পরিলক্ষিত হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারতের পুরনো সংস্কৃতি। ২০০২সালে নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী থাকাকালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২হাজার মুসলমান প্রাণ হারান। তারপরও ক্ষমতার পালাবদল ও নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ। রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলের নেতাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করার নযির খুব বেশী নেই।

একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সাদৃশ্য আছে। তা হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন, পুলিশের নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড। ১৯৮৭ সালের টাডা আইন (Terrorist and Disruptive Activities, Prevention, Act)ও ১৯৯৯ সালের MCOCA আইনের অপব্যবহার আঁতকে উঠার মত। জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই।

In its report on human rights in India during 2010, Human Rights Watch stated India had "significant human rights problems" They identified lack of accountability for security forces and impunity for abusive policing including "police brutality, extrajudicial killings, and torture" as major problems. In 2011, Margaret Sekaggya, the U.N. Special Rapporteur on the situation of human rights defenders, expressed concern that she found human rights workers and their families who "have been killed, tortured, ill-treated, disappeared, threatened, arbitrarily arrested and detained, falsely charged and under surveillance because of their legitimate work in upholding human rights and fundamental freedoms. (• World Report 2011: India. Human Rights Watch. 2011. pp. 1–5.; • "India’s human rights defenders need better protection, says UN expert". UN News Center (United Nations). 21 January 2011. Retrieved 13 February 2011.)

ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচন, ফলাফল ও ফলাফল পরবর্তী আচরণ ও সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশেী রাজনীতিকদের শেখার অনেক কিছু আছে। সাধারণ জনগণকে জিম্মি রেখে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আর কতদিন বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করবেন পালাক্রমে? ৫৪ ধারা ও বিশেষ ক্ষমতা আইন কার স্বার্থে? ৪৪ বছরে বারবার ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে কেউ এসব কালো আইন রদ করেননি। নিজের দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আর কত মানুষকে মরতে হবে? এ জিজ্ঞাসা আমার, আপনার এবং সবার। একথা আমাদের মনে রাখতে হবে সূর্য চিরকাল মধ্যগগনে থাকে না। সময়ের আবর্তে অস্ত যায়। রাত গভীর হয়, নতুন সূর্য উঠে। আমরা নবীন প্রভাতের অপেক্ষায় থাকবো।

বিষয়: বিবিধ

১১৬১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

222826
১৭ মে ২০১৪ রাত ১০:৪৫
কাজী যুবাইর মাহমুদ লিখেছেন : বাংলাদেশ মৃতু্যর পথে...
১৭ মে ২০১৪ রাত ১০:৫০
170140
ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন লিখেছেন : আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রিয়দেশকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাই। ধন্যবাদ।
222827
১৭ মে ২০১৪ রাত ১০:৫২
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো; অনেক ধন্যবাদ।
আরেকটা জিনিসও শেখার আছে, ভারতের নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগ কোন এমপি মন্ত্রীর তোয়াক্কা করে না; আর বাংলাদেশে..............
১৭ মে ২০১৪ রাত ১১:০৩
170142
ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন লিখেছেন : একদম ঠিক। ধন্যবাদ রইল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File