অধ্যাপক জাফর ইকবালও বিজ্ঞানী, তেলাপোকাও পাখী (প্রমান দেখুন)

লিখেছেন লিখেছেন উসামা ইউসুফ ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:১৫:৪৯ দুপুর

বিজ্ঞানে জাফর ইকবালের দৌড় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা সত্ত্বেও কখনো কিছু লিখিনি। পেশাগত দিক দিয়ে তিনি একজন academic। একজন academic-কে হেয় করাটা অরুচিকর। তারপরেও দুয়েকটি কথা বলতে চাচ্ছি। এর কারন দেশজুড়ে তার লক্ষ ভক্ত। তার লেখার ভক্ত যে কেউ হতে পারেন। তবে এই ভক্তি, যতদূর বুঝি, কারো কারো কাছে , "বিজ্ঞানী" জাফর ইকবাল অথবা "জাতির বিবেক" জাফর ইকবাল হিসেবে। এখানে আপত্তি আছে। ভুল ধারনা নিয়ে ভক্তি বা অভক্তি দুটিই পরিত্যাজ্য। নিচে Shafquat Rabbee Anik-এর পোস্ট থেকে কিছুটা তুলে ধরলাম। এর বাইরেও অনেক কিছু বলার আছে। বলতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে পারি জাফর সাহেবের চেয়ে academically unproductive আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক এমনকি বাংলাদেশেও খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না।

অনেকে অবশ্য Caltech বা Bell lab-এর কথা তুলতে পারেন। ক'জনের জানা আছে, শাহজালালে আসার আগে জাফর সাহেব Bell lab-এ member of technical staff পদে কর্মরত ছিলেন? একজন Ph.D. degree নিয়ে member of technical staff !!! বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, অথবা বিজ্ঞানের মাপকাঠি সম্পর্কে যাদের তেমন কোন ধারনা নেই তাঁরা এই পোস্টটি পড়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। জাফর ইকবালের science fiction-কে যারা বিজ্ঞান ভাবেন তাঁদেরও সময় নষ্ট হওয়ার আশংকা করছি।

"প্রায় বছর খানেক আগে জাফর স্যারের রিসার্চের দৌড় কতদূর তা নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন খুব অবাক হয়ে বুঝতে পেরেছিলাম জাফর স্যার আন্তর্জাতিক তো দুরের কথা, দেশীয় কোন জার্নালেও তেমন উল্লেখ করার মতো কোন রিসার্চ পাবলিকেশন করেননি ১৯৯২-২০১২ সালের মধ্যে। স্যারের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় পেইজ থেকে স্যারের গবেষনার যে তালিকা আছে তাতে দেখা যায় তিনি ১৯৯২-২০১২ এই ২০ বছরে সিলেট থেকে প্রকাশিত একটা জার্নালের বাইরে আর কোথাও কিছু পাবলিশ করেননি। ৯২ এর পরে স্যারের গবেষনার কাজ সংখ্যায় খুবই অপ্রতুল। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত যে জার্নালে স্যারের কিছু লেখা এসেছে, সেই জার্নালের এডিটর আবার জাফর স্যার নিজেই।তবে নিজের এডিট করা জার্নালেও স্যার বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা ছাপিয়েছেন সাকুল্যে ৪-৫টি, তাও দীর্ঘ ২০ বছরে। স্যারের নিজের পেইজ থেকে রিসার্চের তালিকা দেয়া হলো।

http://www.sust.edu/department/eee/index.php/en/faculty/88-dr-muhammed-zafar-iqbal

বলা বাহুল্য, স্যারের ১৯৯২ সালের আগে বেশ কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক একাডেমিক লেখা রয়েছে।তবে নব্বই এর দশকের শুরুর দিকে জাফর স্যার আমেরিকায় বিজ্ঞান গবেষনার ঝামেলাপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত চলে আসেন। তখন থেকে তিনি সাদা মানুষ তৈরির কারখানা, ভারতের বন্ধু-সভা, এবং চেতনা ব্যবসায় ফুলটাইম মনোনিবেশ করেন।

যে কেউ http://www.jstor.org , http://www.pubmed.com/ এবং http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/ -- ইত্যাদি রিসার্চ ডাটাবেজ ঘেটে স্যারের কোন সাম্প্রতিক পাবলিকেশন খুঁজে পাবেন না। উপরোক্ত সাইটগুলি কি জিনিস যারা জানেন না, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, এই ডাটাবেজে যদি আপনার পাবলিকেশন খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে মোটামোটি ভাবে নিশ্চিত হতে পারেন আপনার রিসার্চ আন্তর্জাতিক ভাবে সীকৃত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। স্যারের উইকিপিডিয়া পেইজ http://en.wikipedia.org/wiki/Muhammed_Zafar_Iqbal এও উল্লেখযোগ্য কোন সাম্প্রতিক রিসার্চের খবর নেই।

এক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হবে, কয়েক বছর আগে একটি সংস্থা বাংলাদেশে বিজ্ঞান বিষয়ে একাডেমিক অবদান রাখার জন্যে ড: জাফর স্যারকে পুরস্কার দিতে চেয়েছিল। পুরস্কারের ক্যান্ডিডেট যাচাই বাছাই করার সময় সংস্থাটি জানতে চেয়েছিল জাফর স্যারের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল পাবলিকেশন কতোদূর কি আছে। সেই কমিটিতে ছিলেন এমন একজন আমাকে জানিয়েছেন যে, স্যারের বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার উদাহরণ হিসেবে কে-বা কাহারা নাকি একগাদা শিশুতোষ বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর তালিকা পাঠিয়েছিল। বলাই বাহুল্য বিজ্ঞান বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের পাবলিকেশন পাওয়া না যাওয়ায় জাফর স্যারকে একাডেমিক পুরুস্কার দেবার ব্যাপারে সে সংস্থা তখন আর এগুতে পারেনি।

আমার গতকালকের স্ট্যাটাসের কমেন্টস সেকশনে একজন ছোট ভাইকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম যে সে যদি গত ২০ বছরে জাফর স্যারের একটি পাবলিকেশন বেড় করতে পারে যা কোন একটা আন্তর্জাতিক জার্নালে বের হয়েছে, তাহলে আমি আমার স্টাটাসটি তুলে নেব। কেননা স্টেটাসে আমি অভিযোগ করেছিলাম যে শিক্ষকতা কিংবা গবেষণা করা এই জাফর স্যারের মেইন বিজনেস না। খুব ইন্টারেষ্টিং ভাবে গতকাল জাফর স্যারের একজন ভক্ত স্যারের প্রকাশিত একটা লেখা খুঁজে বের করেছেন যা "সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং" এ পাবলিশ করা হয়েছে ২০১২ সালের মে মাসে । আমার চ্যালেঞ্জ-এ আমি জার্নালের কোয়ালিটি নিয়ে কোন কন্ডিশন দেইনি। অর্থাৎ ভুয়া জার্নাল হলেও মেনে নিবো এমন আভাস দিয়েছিলাম। একারণে এই লেখাটি আবিষ্কার হয়ে যাওয়ায়, নির্দিধায় মেনে নিচ্ছি যে আমি টেকনিকালি হেরে গেছি আমার দেয়া বাজিতে। কেননা আমি বলেছিলাম যে ২০ বছরে মাত্র একটা লেখা পাওয়া গেলেই চলবে। ২০ বছরে স্যারের ঠিক একটা "আন্তর্জাতিক" লেখাই পাওয়া গেছে!

২০ বছর সাধনা করে জাফর স্যার যে একটি মাত্র "আন্তর্জাতিক" জার্নালে লিখেছেন তার ওয়েব সাইট ও এডিটর এর নাম-পরিচয় নিচে লিঙ্কে দেয়া হলো। জানা গেল যুক্তরাস্ট্রের "ওল্ড ডমিনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের" জনৈক আহমেদ কে নুর এই সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান জার্নালের এডিটর! আনা কয়ালাস্কা নামক জনৈকা ভদ্রমহিলা, যিনি পোল্যান্ডের "রকলাও ইউনিভার্সিটিতে" কাজ করেন, তিনি হচ্ছেন ম্যানেজিং এডিটর। জার্নালটির কোন "ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর" নেই, যা কিনা জার্নালের গুরুত্বের একক হিসেবে পরিচিত। সাইটেশন নেই বললেই চলে। যারা এটা প্রকাশ করেন, সেই কোম্পানির ওয়েব সাইটে গিয়ে জানা গেল শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং না, তাদের কোম্পানি জ্ঞান বিজ্ঞানের খুব কম ডিসিপ্লিন বাকি আছে যার উপর জার্নাল প্রকাশ করেন না। অনেকগুলোই "অনলাইন" জার্নাল, যার কোন প্রিন্ট কপি নাই।

জার্নাল কোম্পানিটির লিংক: http://versita.com/serial/ceje/#tabs-editorial

যাই হোক, জাফর স্যার চেতনা বাণিজ্য করার নানা ব্যস্ততার মাঝে , সুদীর্ঘ ২০ বছর পরে "সেন্ট্রাল ইউরোপের" একটি অনলাইন জার্নালে যেহুতু বিজ্ঞান বিষয়ে একটা পেপার লিখেছেন, একারণে বলতে হবে আমি আমার দেয়া বাজিতে টেকনিকালি হেরে গিয়েছি। একারণে বাজির শর্ত অনুসারে আমার আগের দেয়া স্টেটাসটি তুলে নিলাম।

মানী লোকের সম্মান হানি করে কথা বলা আমার স্টাইল না। জাফর স্যারকে কটু কথা বলে যাদের দু:খ দিয়েছি, তাদের কাছে আবার ক্ষমা চেয়ে নিলাম। তবে খুব মজা লেগেছে যখন দেখেছি দেশের যাবতীয় মানুষের নাম বিক্রিতকারী, ড: ইউনুসের অপমানকারী, কাদের সিদ্দিকিকে অপমানকারী--শাহাবাগির দল আমার হাতে তাদের প্রাণ প্রিয় জাফর স্যারের অপমান কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না।

ফ্যানাটিকদের একটা বড় বৈশিস্ট হলো তারা নিজেদের কখনো আয়্নায় দেখে না।

নভেম্বর ২৭, ২০১৩"

[লেখাটি প্রফেসর সালেহ হাসান নাকিব(PhD, Cambridge University)এর। যদিও ব্লগে অন্যের লেখা কপি করা উচিৎ নয়, তার পরেও জাফর ইকবাল কে নিয়ে যেসব তরুনরা বাড়াবাড়ি করে থাকেন তাদেরকে জাফর ইকবালএর প্রকৃত স্বরূপ জানানোর জন্য লেখাটি শেয়ার করলাম। এই ব্লগের সম্মানিত মডারাটরকে লেখাটি পাবলিশ করার জন্য অনুরোধ করছি।]

বিষয়: বিবিধ

২০৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File