মহাসেন এবং তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কিছু কথা ও আবহাওয়ার বিপদ সংকেতের এর অর্থ

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ১৫ মে, ২০১৩, ০৯:০৭:৪০ রাত



যেভাবে এলো ”মহাসেন” নামটি:

তৃতীয় শতকে শ্রীলংকার শাসক ছিলেন রাজা 'মহাসেন'। তার নামানুসারেই জাতিসংঘের এশিয়া- প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপে এ ঝড়টির নামকরণ করে। তথ্য সংরক্ষণ ও বোঝানোর সুবিধার জন্য আগে থেকেই এ ঝড়ের নাম ঠিক করে রাখা হয়। যেমন, বঙ্গোপসাগরে পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে 'ফাইলিন'।

দূর্যোগের নামকরণ যেভাবে হয়ে আসছে:

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ নিয়ে কৌতূহল সবারই। বর্তমানে সহজ নামকরণ করা হয় ঘূর্ণিঝড়ের। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নামগুলোর বেশির ভাগই নারীদের নামে। যেমন রিটা, ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর, রেশমী,বিজলী। আমেরিকায় যে প্রলয়ঙ্করী ঝড় আঘাত হেনেছে, সেই স্যান্ডির নামও নারীর। আগে শুধু নারীদের নামে ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হলেও ১৯৭৯ সাল থেকে পুরুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বর্তমান তালিকায় সমানভাবে পর্যায়ক্রমে মহিলা ও পুরুষের নাম রয়েছে। ঝড় যেহেতু মৃত্যু ও ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, তাই কোনো নাম দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না।

নামকরণের ভিত্তিসমূহ:

অতীতে ঝড়ের নামকরণ করা হতো অক্ষাংশ- দ্রাঘিমাংশের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এটি প্রকাশের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। যেমন ৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৭২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ঝড়টি এখন বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে-এটি বলার চেয়ে 'ঘূর্ণিঝড় মহাসেন ধেয়ে আসছে' বলা অনেক সহজ।বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটিই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে। উত্তর ভারতীয় মহাসগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে থাকে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ।

দূর্যোগের নামগুলো আগে থেকেই ঠিক করা থাকে:

বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা এবং ওমানের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্যানেল হচ্ছে এস্কেপে। ২০০০ সালে স্কেপের প্রস্তাবানুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি নাম জমা নেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার জন্য। এখান থেকেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয়। গোটা বিশ্বে প্রতিবছর যত ঘূর্ণিঝড় হয়, সেটা হিসেবে রাখার জন্য নামকরণের একটা পদ্ধতি আছে। সেটা হয় ইংরেজি বর্ণনা ক্রমে। অর্থাৎ কোন বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নাম ইংরেজি বর্ণমালার দিয়ে হবে। তারপর পরেরটি দিয়ে এই রকম। এর মধ্যে আবার আরব সাগর, বঙ্গোপসাগরীয় এলাকার দেশগুলোতে যখন কোন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে তখন নামকরণ করার সুযোগ পাবে সেই এলাকার দেশগুলো। সেই সুযোগও আসবে দেশের ইংরেজি বানানের বর্ণনাক্রমে। যেমন বাংলাদেশ আগে, তারপর ভারত , তারপর মালদ্বীপ, তারপর মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড এভাবে। তারাই নামকরণ করেছে। যেমন পাকিস্তান করেছিল লায়লা তার আগের বছরের বছরের ঘূর্ণিঝড় 'আইলা' নামকরণ করেছিল মালদ্বীপ। আগামী ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা আছে। মহাসেনের পর আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন। তারপর পর্যায়ক্রমে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম হলো হেলেন, লহর, মাদী, নানাউক, হুদহুদ, নিলুফার, প্রিয়া, কোমেন, চপলা, মেঘ, ভালি,কায়নত্দ, নাদা, ভরদাহ, সামা, মোরা, অক্ষি, সাগর, বাজু, দায়ে, লুবান, তিতলি, দাস,ফেথাই, ফণী, বায়ু, হিকা, কায়ের, মহা, বুলবুল, সোবা ও আমপান।

আবহাওয়ার বিপদ সংকেতের এর অর্থ জেনে নিন :

১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত :- এর অর্থ বঙ্গোপসাগরের কোন একটা অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং সেখানে ঝড় সৃষ্টি হতে পারে৷(একটি লাল পতাকা )

২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত :- সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে৷

৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত :- এর অর্থ বন্দর দমকা হাওয়ার সম্মুখীন ৷ (দুইটি লাল পতাকা)

৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত :- এর অর্থ বন্দর ঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে, তবে বিপদের আশঙ্কা এমন নয় যে চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷

৫ নম্বর বিপদ সংকেত :- এর অর্থ হচ্ছে অল্প বা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (মংলা বন্দরের বেলায় পূর্ব দিক দিয়ে)৷

৬ নম্বর বিপদ সংকেত :- এর অর্থ হচ্ছে অল্প বা মাঝারী ধরনের ঝড় হবে এবং আবহাওয়া দুযোগপূর্ণ থাকবে৷ ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ (মংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে)৷

৭নং বিপদ সংকেত :- এর অর্থ অল্প অথবা মাঝারী ধরনের ঘূর্ণিঝড় হবে এবং এজন্য আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ (তিনটি লাল পতাকা)

৮ নং মহাবিপদ সংকেত :- এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হবে এবং বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (মংলা বন্দরের বেলায় পূর্ব দিক দিয়ে)৷

৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত :- এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে৷ ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে (মংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে)৷

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত :- এর অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঘূর্ণিঝড়টির বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷

১১ নম্বর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সংকেত :- এর অর্থ ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সাথে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে এবং স্থানীয় অধিকর্তার বিবেচনায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।

পরিশিষ্ট:

দেশের ইতিহাসে সর্বশেষ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় 'আইলা' উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল ২০০৯ সালের ২৫ মে। ভারত মহাসাগর থেকে সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেন মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা। 'আইলা' শব্দের অর্থ ডলফিন। ২০০৮ সালের ৩ মে উত্তর ভারত মহাসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল 'নার্গিস'। এটি আঘাত হেনেছিল প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার উপকূলে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে 'সিডর'। আবহাওয়াবিদরা জানান, ভয়াবহতার দিক থেকে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের বৈশিষ্ট্য প্রায় একই।তবে স্থানীয়ভাবে ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন সাইক্লোন বলা হয় ভারত মহাসগরীয় অঞ্চল থেকে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড়গুলোকে। প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় টাইফুন। আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকার ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বলা হয় হারিকেন।

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন এবার আঘাত হানতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে খেপুপাড়া-টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর-পূর্বে, বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হবার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।ঘূর্ণিঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসেরও আশংকা করা হচ্ছে। তবে তারা বলছে ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ পরিবর্তন করে আরও উত্তর দিকে সরে যাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটা হলে এই ঝড় বার্মার দিকে যেতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই উপকূলের জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানাচ্ছে, স্থলে আঘাত হানার সময় এই ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ প্রতিঘন্টায় ১৩০ কি.মি: পর্যন্ত হতে পারে।

আমি নিজেও উইকিপিডিয়া ঘেটে আতঙ্কিত হবার মত কিছু তথ্য পেলাম! বিগত সময়গুলোতে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ তাতে প্রাণহানী এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি দুটোই আঁতকে ওঠার মত।

বিগত সময়গুলোতে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ তাতে প্রাণহানী এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

1. বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রায় ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘূর্ণিঝড়ে এত বেশী লোক আর কখনো মারা যায় নি।

2. বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল রাতে বাংলাদেশে-র দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচচ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘন্টা)। ঘূর্ণিঝড় এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট ৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে আনুমানিক ১৩৮,০০০ জন মানুষ নিহত এবং প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়।

3. ঘূর্ণিঝড় সিডর (অতি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় সিড্র, ইংরেজিতে Very Severe Cyclonic Storm Sidr) হচ্ছে ২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরে এলাকায় সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড়। ২০০৭ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এটি ৪র্থ নামকৃত ঘূর্ণিঝড়।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সকাল বেলা পর্যন্ত বাতাসের বেগ ছিল ঘন্টায় ২৬০ কিমি/ঘণ্টা এবং ৩০৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে দমকা হাওয়া বইছিলো। একারণে সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী একে ক্যাটেগরি-৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আখ্যা দেয়া হয়। নভেম্বর ১৮ তারিখ রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারী ভাবে ২,২১৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনাকে জাতীয় দূর্যোগ বলে ঘোষণা করেছে।

4. ঘূর্ণিঝড় আইলা হলো ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়টি জন্ম নেয় ২১ মে তারিখে, ভারতের কলকাতা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার (৫৯০ মাইল) দক্ষিণে। ঘুর্ণিঝড়টি আঘাত হানে ২৫ মে তারিখে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে।

২১ মে ২০০৯ তারিখে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় আইলার এবং উপকূলভাগে আঘাত হানে ২৫ মে তারিখে। এর ব্যাস ছিলো প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটার বেশি। সিডরের মতোই আইলা প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় নিয়ে উপকূল অতিক্রম করে, তবে পরে বাতাসের বেগ ৮০-১০০ কিলোমিটার হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি, সিডরের তুলনায় তুলনামূলক কম হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আইলা পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আইলার প্রভাবে নিঝুম দ্বীপ এলাকার সকল পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। খুলনা ও সাতক্ষীরায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়েছে। ফলে তলিয়ে যায় খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ৭৬ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি এবং ৩৬২ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ধ্বসে পড়ে।

ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর পর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ নিম্নরূপ:

প্রায় ২,০০,০০০ একর কৃষিজমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায় (৯৭ হাজার একরের আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়) কাজ হারায় ৭৩,০০০ কৃষক ও কৃষি-মজুর আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পানীয় জলের উৎস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় জলোচ্ছাস ও লোনা পানির প্রভাবে, গবাদি পশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ গরু ও ১,৫০০ ছাগল মারা যায় ঘূর্ণিঝড়ের কয়েক মাস পর থেকে এলাকাগুলোয় গাছপালা মরতে শুরু করে ও বিরানভূমিতে পরিণত হয় কমপক্ষে ৩,০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় (২,৪৩,০০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়) পর পর দুই মৌসুম কৃষিকাজ না হওয়ায় প্রায় ৮,০০,০০০টন খাদ্যঘাটতি সৃষ্টি হয়। খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রাণ হারান ১৯৩ জন মানুষ।

ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দাকোপের ঢাকী নদীর তীর ও বাঁধ ভেঙ্গে তার বিস্তার বেড়েছে দক্ষিণে। এর ফলে ছোট জালিয়াখালি নামক গ্রামটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে, ফলশ্রুতিতে পাল্টে গেছে কামারখোলা ইউনিয়নের মানচিত্র। জালিয়খালি গ্রামের ৮০টি পরিবারের প্রায় ৫০০ জন মানুষ এখন উদ্বাস্তু (প্রেক্ষিত মে ২০১১)। উদ্বাস্তু এসব মানুষের কিছু অংশ (৬৩টি পরিবার) বাঁধের টিকে থাকা অংশে ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। উদ্বাস্তুদের অনেকের কাচা ঘরের পাশাপাশি কারও কারও একতলা পাকা ভবনও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

এখন শুধু পরম করূণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এত বড় জাতীয় দুর্যোগ থেকে আমাদেরকে এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষ গুলোকে ও তাদের সহায় সম্পদকে রক্ষা করুন।

বিষয়: বিবিধ

৩০৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File