বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানঃ ইতিহাসের অদ্ভুত সাযুজ্য

লিখেছেন লিখেছেন আবদুহু ০২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:১৩:৩৬ বিকাল



বাংলাদেশে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আশংকা ও আশাবাদের শেষ নেই। গত কয়েকদিনের কিছু ঘটনার পর মনে হচ্ছে, স্বল্পমেয়াদে কি হতে যাচ্ছে তার তুলনায় বরং দীর্ঘমেয়াদে কি হতে পারে তা দেখার চেষ্টা করাটা এখন দরকারী। বাংলাদেশ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আরেকটা আফগানিস্তান হতে যাচ্ছে। তবে 'আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান' স্লোগানের ঐ আফগানিস্তান না। বরং বারবাক কারমালের আফগানিস্তান, যেখানে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব স্থিতিশীল রাখতে বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া হাত বাড়িয়ে দেয়, এবং দশ বছরের দখলদারিত্ব ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে।

প্রথম ঘটনা হলো অক্টোবরের মাঝামাঝি ছোট একটা নিউজ চোখে পড়েছিলো, একশ সদস্যের বাংলাদেশী যুবসমাজের একটা ডেলিগেশন বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে ভারত ভ্রমণ করছে। তবে বাংলাভাষী পত্রিকায় এ নিয়ে তেমন কোন খবর চোখে পড়েনি। অনেকটা নীরবে নিভৃতে ভারত গিয়ে একসপ্তাহ বন্ধুত্ব উদযাপন করে এসেছে বাংলাদেশী যুবক-যুবতীবৃন্দ। ভবিষ্যত নেতৃবৃন্দ। যাদের চিন্তাভাবনা, অভ্যাস ও বিভিন্ন কাজকর্মের রেকর্ড জমা হয়ে গিয়েছে র' এর আর্কাইভে।

ঐদিনই ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের একটা সেমিনার ছিলো। আফগান তাজিক বংশোদ্ভুত এক প্রফেসরের বক্তৃতা শুনতে গিয়ে 'ক্ষণে ক্ষণে চমকিত' হচ্ছিলাম। আফগানিস্তানের ইতিহাস ও বাংলাদেশের অদ্ভুত মিল দেখে না চমকে উপায় নেই। একপর্যায়ে তিনি যখন তারাকি-আমিন-কারমালের কমিউনিষ্ট শাসনের সময়কার কথা বলতে গিয়ে আফগান ইয়থ ডেলিগেশনের রাশিয়া সফর, পরিকল্পিত রাশিয়ান-কমিউনিষ্ট সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, এবং এমনকি তার নিজেরও কিশোর বয়সে গিয়ে রাশিয়াতে পড়ালেখার কথা বললেন, তখন আর অবাক হওয়ার শক্তিও আমার ছিলো না।



নূর মুহাম্মদ তারাকির সময় ৭৮ সালে আফগান-রাশিয়া একটা চুক্তি হয়। আফগান সরকার বিপদে পড়লে বন্ধু রাশিয়া তাকে সাহায্য করতে আসবে। ঐ চুক্তির জোরে ৭৯ এ আফগানিস্তানে রাশিয়ান সৈন্য ডেপ্লয় করা হয়। পরের দশ বছরের ঘটনা এখন ইতিহাস। এবং সফলভাবে আফগানিস্তান ধ্বংস করা সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশের এই ইয়থ ডেলিগেশন হচ্ছে ভারতের সেবাদাস ও সেবাদাসী রিক্রুটমেন্ট প্রসেসের অংশ। এবং শেখ হাসিনা যতই স্বপ্ন দেখুক, বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা কখনো হামিদ কারজাই হতে পারবে না। বরং ইতিহাসে তার পূর্বনির্ধারিত স্থান হলো বারবাক কারমালের সাথে। বাংলাদেশে কারজাই আসার এখনো কিছু সময় বাকি আছে। জয়ের হয়তো কিছু সম্ভাবনা আছে, অথবা শেখ পরিবারের অন্য কেউ।

আফগানিস্তানে পশতুন, তাজিক, হাজারা ট্রাইবগুলোর মাঝে যে বিভক্তি, ঠিক একইরকম গ্রেট ডিভাইড করা সম্ভবপর হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষের বানিয়ে তোলা ইস্যুতে। আপনি নৌকাবাজি করলে অথবা জয় বাংলার লোক হলে এই দেশ আপনার। অন্যথায় আপনি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক, পাকিস্তান চলে যান। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের মাথাব্যাথা, হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, পিলখানায় ভারতীয় সংশ্লিষ্টতা, সুবীর ভৌমিকের আর্তচিৎকার এইসব যেন অনিবার্য নিয়তি। এবং এই বাংলাদেশে হেকমতিয়ারের মতো উগ্রপন্থী পাক/সউদি এজেন্ট হয়ে জীবন দিয়ে দিতে আগ্রহী লোকেরও এখন অভাব নেই। সবচেয়ে বড় কথা, সবকিছু পরিস্কার হওয়ার পরও আমাদের কিছু করার নাই। আমরা আগুনে মুগ্ধ পতঙ্গের মতো নিয়তি নির্ধারিত পথেই হেঁটে যাবো।



আপনি রাজনীতিকে ঘৃণা করেন। আপনি আওয়ামী বিচার বাস্তবায়ন করে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে চান। নির্ভেজাল বাঙ্গালী। কারমালের সময় কাবুলের যুবসমাজ দেশ পূনর্গঠন এবং পাশা ও টেনিস খেলা নিয়ে মেতে ছিলো। আমরাও খেলা আর সিনেমা নিয়ে পর্যাপ্ত চিন্তিত। ছোট্ট একটা সমস্যা হলো আজকে আপনার যে দশ বছর বয়সী ছোট মেয়েটি নিষ্পাপ উচ্ছাস নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, আগামী দশ বছর পরে তাকেই গুর্খা অথবা মারাঠি রেজিমেন্টের ক্যাম্পে এই দেশপ্রেমের মূল্য চুকাতে হবে। এবং তখনও জাফর ইকবালের দল কলাম লিখে যাবে 'তোমরা যারা বাংলাদেশী নও'।

বিষয়: বিবিধ

২৩৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File