ঢাবি থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করা মায়ের শেষ আশ্রয়স্থল বৃদ্ধাশ্রম

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ২১ মে, ২০১৫, ১১:০৩:০৫ সকাল



শিরোনাম দেখেই হয়তো বুঝে গেছেন মানুষের বিবেকবোধ, দায়িত্ব কতটা নোংরা হয়ে যাচ্ছে। মহীয়সী এই মা’য়ের অনুরোধেই তার ছেলে এবং স্বামীর নাম রিপোর্টটিতে লেখা হয়নি। মহীয়সী সেই মায়ের নাম মিরা চৌধুরী। বয়স ৬০ ছুঁইছুঁই। জন্ম রাজধানীর পুরাণ ঢাকার মালিটোনায়। ১৯৮৩ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশ সেরা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঠ চুকিয়ে মিরা চৌধুরী কর্মজীবন শুরু করেন খুলনা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে। এরপর মিরা চৌধুরী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে কাছের প্রিয় বন্ধু ও সহপাঠীর সাথে। পরবর্তীতে পেশাগত জীবনে তিনি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আই এল ও) এর ডিরেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সেই মিরা চৌধুরী ঠিকানা এখন রাজধানীর আগারগাঁও এ অবস্থিত প্রবীণ নিবাসের ৪১৫ নাম্বার রুম। সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ দিয়ে একমাত্র সন্তান অপূর্ব হাসান চৌধুরীকে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে সুদূর আমেরিকাতে পাঠিয়েছেন। হয়তো ভেবেছিলেন সন্তানের পড়াশুনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই জীবনের বাকিটা সময় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটাবেন তিনি। সন্তান বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর মিরা চৌধুরী তার স্বামীকে চিরতরে হারান। নিজের সম্বল বলতে রাজধানীর বাংলামটরের দিলু রোডে ছয় তালা একটি বাড়ি ছিল যেটা ২ কোটি টাকায় বিক্রি করে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পুরো টাকাটাই তার ছেলের উদ্দেশ্যে ব্যয় করেন মিরা চৌধুরি ভেবেছিলেন, জীবনের শেষ সময়ে অসহায় মাতার সহায় হবে তার আদরের নাড়ি ছেড়া ধন একমা্ত্র ছেলে। কিন্তু বিধি-বাম। এই মহীয়সী নারীর শেষ আশ্রয়স্থল এখন প্রবীণ নিবাসেই। শেষ জীবনে পেনশনে পাওয়া সামান্য কিছু টাকা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে পরে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছেন এই বৃদ্ধা। শেষ জীবনে এসে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা প্রসঙ্গে মিরা চৌধুরির কাছে জানতে চাইলে তিনি হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, অনেক ইচ্ছা ছিল শেষ জীবনে এসে আরাম আয়েসে জীবনটা পার করে দেব, নাতি-নাতনি নিয়ে হইহুল্লোড়ে মেতে থাকবো, কিন্তু সেটা আর হলো না, আমি এই চার দেয়ালের মাঝে একাকিত্বে দিন অতিবাহিত করি। তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে কোন দিন একটা হারাম টাকাও আমার ঘরে তুলিনি এমনকি সন্তানের জন্যও খরচা করিনি কিন্তু উপরওয়ালা বোধ হয় এটাই আমার কপালে লিখেছিলেন তাই মেনে নিয়েছি। তবে খোদা যেন আমার মত কারও ভাগ্যে এমটা না লেখেন, একথা বলতে বলতে মিরা চৌধুরীর দু’চোয়াল বেয়ে জল গড়িয়ে আসে। একাকি কিভাবে দিন অতিবাহিত করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি সেই সাথে পেপার পত্রিকাসহ কিছু বই আছে সেগুলো পড়ি তাছাড়া স্বামীর ছবি বুকে জড়িয়ে স্মৃতিচারণ করি। একথা বলতে বলতে মিরা চৌধুরির চারপাশটা যেন আরও ভারি হয়ে ওঠে।

আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জনাব আশরাফুল ইসলাম মাসুম বলেন, ওনার জীবন ইতিহাস বড়ই নির্মম। উনি প্রায় চার বছর যাবত এই আশ্রমে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু দায়িত্ব পালন করা দরকার ততটুকু করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। মাঝেমাঝে ওনার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে থাকি।

জীবনের শেষ মুহূর্তেও ছেলে এবং আত্মীয়-স্বজনের জন্য ভালোবাসার কোনো কমতি নেই এই বৃদ্ধা মার। তাইতো ছেলে ও স্বজনদের সম্পর্কে বেশি কিছু জানাতে চাননি। হয়তো ছেলের সম্মান হানি হতে পারে এমন কিছু ভেবেই।

জন্মের পর থেকে তিল তিল করে যে সন্তানকে লালন করেছেন, স্বজনদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করেছেন তার চারপাশের মানুষদের কাছে সেই বৃদ্ধা মা এখন তাদের বোঝা! জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে সেটা হয়তো পূর্বে কোনভাবেই আঁচ করতে পারেননি বয়সের ভারে নুয়ে পড়া অসহায় মা মিরা চৌধুরী।

এসব অসহায় মায়েদের জীবনের মিল খুঁজে খুঁজে পাওয়া যায় শিল্পী নচিকেতার সেই চিরচেনা সুরে…

ছেলে আমার মস্ত মানুষ মস্ত অফিসার

মস্ত ফ্লাটে যায় না দেখা এপার ওপার

নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি

সবচে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি

ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম

আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।


সূত্র: বিডি টোয়েন্টিফোর লাইভClick this link

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

321537
২১ মে ২০১৫ সকাল ১১:১৬
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে।
এখানে কিন্তু শুধুমাত্র ছেলের দোষ দেবনা আমি। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত বানানো হয়েছে কিন্তু মানুষ বানানো হয়নি অর্থাৎ আল্লাহকে চেনানো হয়নি। এটাই প্রগতির ‍দুর্গতি।
২৪ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৪
263281
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আপনার সাথে ১০০% সহমত।
321541
২১ মে ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
বুসিফেলাস লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের হেদায়াত দিন
২৪ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
263282
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমিন!
321548
২১ মে ২০১৫ সকাল ১১:৫৮
নাছির বিন ইব্রাহীম লিখেছেন : আমেরিকা পাঠানোর আগে ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষার অভাব ছিলো বলেই আজ দশা, মায়ের জন্য ভালোবাসা ও দোয়া রইলো। ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য।
২৪ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
263283
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ!
321561
২১ মে ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ভাইয়া!
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে।
এখানে কিন্তু শুধুমাত্র ছেলের দোষ দেবনা আমি। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত বানানো হয়েছে কিন্তু মানুষ বানানো হয়নি অর্থাৎ আল্লাহকে চেনানো হয়নি। এটাই প্রগতির ‍দুর্গতি।
ভাইয়ার সাথে সহমত।
২৪ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
263284
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমিও সহমত।
321649
২১ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১১
শেখের পোলা লিখেছেন : ধর্মীও শিক্ষার অভাবকে অস্বীকার করবনা,তার পরও বলব অনেক অশিক্ষীত দুস্থ গরীব,যার ধর্মীয় শিক্ষাও নাই তিনিও বৃদ্ধামাকে এমন অবহেলা করেন না৷ ধিক অমন শিক্ষীত পুত্রধনকে৷ আল্লাহ এ সব দুঃস্থ মায়েদের ধৈর্য দিক৷
২৪ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৬
263285
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুক।
321656
২১ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক পয়সা খরচ করে ছেলেকে শিক্ষা দিয়েছেন শুধু নৈতিকতা ছাড়া বাকিগুলি। এটা তার প্রাপ্য বলেই আমি মনে করি।
২৪ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৬
263286
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আপনার সাথে আমিও একমত।
321691
২১ মে ২০১৫ রাত ০৯:১৬
পললব লিখেছেন : ছেলেকে শিক্ষিত করেছেন কিন্তু সুশিক্ষিত করেননি! সঠিক মনে করতে পারছিনা সম্ভবত ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যতই মহাপন্ডিত হোও না কেন কোরান হাদিসের জ্ঞান না থাকলে তুমি একটা গর্দভ!
২৪ মে ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৭
263287
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আপনার সাথে সহমত!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File