আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:১২:২৩ সন্ধ্যা



ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাস হৃদয়ে হাহাকারের প্রতিধ্বনি তুলছে অবিরাম। মানুষ কতোটা সইতে পারে? চোখের কান্না পানি হয়ে ঝরে বলে দৃশ্যমান। কিন্তু হৃদয়ের কান্না? রক্তক্ষরণ? কোন্ শব্দ/বাক্য/প্রতিক্রিয়া দিয়ে মাপা যায় এর গভীরতা? সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। সিরিয়ার তিন বছরের এক যুদ্ধাহত শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বললো- ‘আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!’ শিশুটির রক্তমাখা ছবিটির দিকে তাকালেই বুঝে নেওয়া যায় সে আল্লাহর কাছে কী বলবে।

সভ্যতার দ্বান্দ্বিক যুদ্ধ চলছে। এ দ্বন্দ্ব বিশ্বাসের, এ দ্বন্দ্ব আদর্শের। একটি আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করতে হয় আর একটি আদর্শ দিয়ে। জোরের যুক্তি দিয়ে নয়; যুক্তির জোর দিয়ে। ক্ষমতা, শক্তি, জোর দিয়ে আদর্শকে মোকাবেলা করতে গেলেই দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। সেই দ্বান্দ্বিক যুদ্ধে আদর্শবানরা কখনো কখনো পরাজিত হলেও তাদের বিশ্বাসের পরাজয় ঘটে না। বিশ্বাসী তো সে-ই, যে প্রয়োজনে জীবন দিয়েও প্রমাণ করতে পারে ‘আমার বিশ্বাসের প্রতি আমি অবিচল’। সিরিয়ান এই শিশুটি সভ্যতা, যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব, আদর্শ- এগুলো হয়তো পরিষ্কার করে বুঝতে পারেনি। কিন্তু তার ‘বিশ্বাস’ কতো প্রবল! ‘আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!’ সে নিশ্চিত সে আল্লাহর কাছে ফিরে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়; আল্লাহর কাছে সে নালিশ করবে! যারা তাকে মেরেছে, শুধুমাত্র বিশ্বাসী হওয়ার কারণে যারা তাকে রক্তাক্ত করেছে, যারা তার আদর্শকে আদর্শ দিয়ে প্রতিহত না করে বুলেট ছুড়ে মেরেছে, তাদের বিরুদ্ধে সে আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। এছাড়া আর কীইবা করার আছে ছোট্ট এই শিশুটির! পৃথিবীর কারো কাছে সে অভিযোগ করেনি। কারো কাছে সে তাকে মারার বিচার চায়নি। সে জানে এবং সবাইকে জানিয়ে দিয়ে গেল- এই আদর্শহীন একচোখা বিবেকহীন বিশ্বের কাছে বিশ্বাসীদের কিছু চাইতে নেই। এ এমনই এক বিশ্ব যেখানে মানবাধিকারের ডেফিনিশনই নির্মিত হয় কিছু মানুষকে ‘অমানুষ’ বিবেচনা করে। এ এমনই এক বিশ্ব যেখানে শক্তিধররা/ক্ষমতাবানরা যা বলবে তা-ই সত্য। পূর্বতিমুরের যোদ্ধারা হয় স্বাধীনতাকামী, আর আরাকানের, কাশ্মীরের যোদ্ধারা জঙ্গী কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদী। কালো-সাদা’র তফাত ঘোছাতে ম্যান্ডেলার ভূমিকা ইতিহাস হয়ে থাকবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু দেড় হাজার বছর আগে মুহাম্মদ (স) কালো বেলালকে প্রথম মুয়াজ্জিন বানিয়েছিলেন। বর্ণবাদ নিয়ে কোনো আলোচনায় এই উদাহরণ দিতে পারবেন না। দিলেই আপনি ‘ব্যাকডেটেড’ কিংবা মৌলবাদী/প্রতিক্রিয়াশীল। এমন একটি ন্যায়ভ্রষ্ট পৃথিবীর কাছে বিশ্বাসীদের কিছু চাওয়ার নেই। তাদের সমস্ত চাওয়া আল্লাহর কাছে।

বাংলাদেশেও বিশ্বাসের এই দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল। এখানেও আদর্শকে পরাজিত করার জন্য আরেকটি আদর্শের পরিবর্তে বেছে নেওয়া হয় বুলেট বোমা অস্ত্র। একজন বিশ্বাসী মানুষ প্রশ্নহীনভাবে মেনে চলতে চাইবে আসমানী বাণীকে। তার কাছে কুরআনকে বিশ্বাস করার মানে হলো কুরআন নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করা। কুরআনের বিধানসমূহ জানা এবং সেগুলো মেনে চলা। এখন কুরআন যদি সমাজ বদলের কথা বলে, কুরআন যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলে, তাহলে তো সেই কাজটিই তাকে করতে হবে। যদি কেই মনে করে কুরআন এগুলো বলেনি, তাকে সেটা প্রমাণ করতে হবে। আর যদি কেউ বলে, সমাজ বদলের জন্য কুরআনের চেয়েও ভালো কোনো রেসিপি তার কাছে আছে, তাহলে সে সেই আদর্শের দিকে মানুষকে ডাকবে। মানুষ যেটি মেনে নেয়। আদর্শের জবাব আদর্শ দিয়ে। কিন্তু দু:খজনক হলো, বাংলাদেশে আদর্শের এই উদারতা নেই। প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায়, জিহাদী বই উদ্ধার। এর মানে কী? জিহাদী বই কি কোনো নিষিদ্ধ বই? তাহলে সবার আগে তো কুরআন নিষিদ্ধ করতে হবে। কুরআনে শতাধিক জায়গায় জিহাদের কথা বলা হয়েছে। কোনো খ্রিষ্টান কিংবা হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে যদি নিজ ধর্মের কোনো বইসহ পাওয়া যায়, তাকে কি গ্রেফতার করা হবে?

মিডিয়া, সরকার, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এভাবে বিশ্বাসীদের উপর আঘাত হানছে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হওয়ার পরেও, শুধুমাত্র বিশ্বাসের কারণে, কোন সংগঠনকে বলা হচ্ছে জঙ্গী। তাহলে কী করা? ‘আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!’-এই হোক বিশ্বাসীদের শেষ আশ্রয়।

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলাম লেখক

তথ্যসূত্র কপিপেস্ট : মানবজমিন পত্রিকা থেকে নেওয়া

বিষয়: বিবিধ

২১৯৬ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

158386
০২ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : এই তিন বছরের বাচ্চার কাছে আমরা হেরেই গেলাম৷ আমাদের উচিৎ ওর বিশ্বাসের অনুসরণ করা৷
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১২
113084
আমরা মুক্তমনা লিখেছেন : দারুন একটা মন্তব্য করলেন ভাই
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২৩
113094
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমিও আপনাদের সাথে একমত
158387
০২ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
আবু আশফাক লিখেছেন : এই কান্নার শেষ কোথায়? একজন অবুঝ বনী আদমও বুঝতে পারছে আজকের বিশ্বের জালিমদের কাছে ফরিয়াদ করে কোনো লাভ নেই!
হায়রে পৃথিবী!!
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২৮
113100
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : প্রতিফোটা অশ্রুর বিনিময় হলেও আল্লাহ যেন , সারা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করে দেন এই দোয়া করি।
158390
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১২
আমরা মুক্তমনা লিখেছেন : শেখের পোলা লিখেছেন : এই তিন বছরের বাচ্চার কাছে আমরা হেরেই গেলাম৷ আমাদের উচিৎ ওর বিশ্বাসের অনুসরণ করা৷
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২৭
113099
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমি আপনার সাথে একমত
158392
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৭
বুড়া মিয়া লিখেছেন : সবাই-ই তো হয় প্রত্যক্ষ ভাবে নয়তো নিস্ক্রিয়তার কারণে ওর বিপক্ষে-ই ছিল, কে আর শুনবে?
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২৭
113098
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : কাউকে না কাউকে তার কথা শুনতেই হবে, আর যদি কেউ না শুনে তবে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ অবশ্যই শুনবেন।
158393
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৭
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : জালিমদের বিচার আল্লাহ তায়ালা করবেন।
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২৫
113097
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ আমরা সেই দিনে অপেক্ষায় রইলাম, যেদিন সব বিচারকের বিচারক মহান আল্লাহ বিচার করবেন।
158395
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২০
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : ও এই ছোট বয়সেই বুঝে গিয়েছে, এ পৃথিবীর অসহায় মানুষগুলোর কোন শক্তি নেই ওর জন্য কিছু করার। তাই সর্বশক্তিমানের কাছেই বিচার চেয়েছে। এর পরেও দুঃখ হয় যারা রক্তখেকো আসাদ, ইরান আর হিজবুল্লাহকে ইসলামের পতাকাবাহী বলে প্রচার করে। আর যারা এসব অসহায় মানুষের জন্য লড়াই করে তাদের নামে যৌনজিহাদের অপবাদ লাগায় আর তাদেরকে বলে সন্ত্রাসী।
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:২৪
113096
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমি এর আগে একটা ব্লগ পোস্ট করেছিলাম সেটা হলো মুসলমানদের মানবধিকার থাকতে নাই।
158410
০২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫৪
হতভাগা লিখেছেন : আল্লাহ সব কিছুই অবগত আছেন এবং এই পিচ্চির ফরিয়াদও আল্লাহ শুনছেন ।

কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে ওদের জন্য
158499
০৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৩৬
মোরশেদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
158514
০৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৩৫
অজানা পথিক লিখেছেন : এ বাচ্চার উক্তিটি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম নজির।
যেন আমাদের অসহায়ত্বের একমাত্র ভরসা আল্লাহ, সে কথাটাই আমাদের চেতনায় বারবার আঘাত করছে
১০
158704
০৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৬
ভিশু লিখেছেন : চমৎকার শেয়ার!
Praying Happy Good Luck Rose
১১
158928
০৪ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৪
ধ্রুব নীল লিখেছেন : শেখের পোলা লিখেছেন : এই তিন বছরের বাচ্চার কাছে আমরা হেরেই গেলাম৷ আমাদের উচিৎ ওর বিশ্বাসের অনুসরণ করা৷
১২
158963
০৪ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আল্লাহ মজলুমের কান্না শুনবেন ইনশা আল্লাহ
১৩
159287
০৫ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৩
সিকদারর লিখেছেন : আমাদের ঈমানী দুর্বলতার কারনে এই শিশু আল্লাহ কাছে বলে দেবে । আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কেয়ামতের মাঠে এই শিশু আল্লাহর কাছে জালিমদের বিরুদ্ধে বিচার চাইবে না সে বিচার চাইবে আমাদের মুসলমান নামের কাপুরুষদের বিরুদ্ধে । কেন আমরা অসহায় নারীও শিশুর আর্তনাদ শুনেও জেহাদ করিনি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File