প্রচারবিমুখ এক কিংবদন্তী ইতিহাসবিদের প্রস্তান। ড. মাহফুজ পারভেজ

লিখেছেন লিখেছেন গেঁও বাংলাদেশী ১৫ জুন, ২০১৫, ১১:০২:২৫ রাত



কর্ম-কীর্তি-ব্যক্তিত্বে সমুজ্জ্বল তথাপি প্রচারবিমুখ-ইতিহাসবিদ প্রফেসর ড. ইনাম-উল-হক (১৯৪১-২০১৫) গত ৬ই জুন চির বিদায় নিয়েছেন। সাত দশক বিস্তৃত জীবনকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এই কৃতী সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপনা-গবেষণা এবং কুষ্টিয়াস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস পর্ষদ, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন বিদ্যায়নতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিলেন তিনি। নানাভাবে জড়িত ছিলেন এই নতুন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গেও। চট্টগ্রামের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের সংগ্রামেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ এবং নাগরিক ঐক্যমঞ্চের তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে প্রবলভাবে সম্পৃক্ত ও সক্রিয় ছিলেন। বহুমাত্রিক সামাজিক-রাজনৈতিক ও সিভিল সোসাইটি আন্দোলনের তৎপরতার মধ্যেও তিনি প্রণয়ন করেছেন বহু গ্রন্থ। তার মৃত্যু চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের মৌলিক ইতিহাসচর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি হলেও তার কর্মসমূহ তাকে অনিবার্যভাবে স্মরণীয় করে রাখবে। এবং সামাজিক-নাগরিক আন্দোলনে তার গৌরবময় অবদান উত্তর-প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎসস্বরূপ বিবেচিত হবে। ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হকের ইতিহাস অন্বেষার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলার ও ভারতের মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগ্রামশীলতার নানা প্রপঞ্চ। এই ভূখণ্ডে মুসলিম জাতিসত্ত্বার আধুনিক বিকাশকে তিনি অনুধান করেছেন সুদীর্ঘ সামাজিক ও আদর্শিক আন্দোলন-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে। মুসলিম ইতিহাসের নানা কালপর্ব ও ঘটনাপর্বকে তিনি ঐপনিবেশিকবাদী-একদেশদর্শী বিবরণ ও ক্ষুদ্রস্বার্থমুখী নেতিবাচক বিশ্লেষণের কৃষ্ণ কালিমালিপ্ত অধ্যায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। নানা ঐতিহাসিক তথ্য ও উপাত্তের নিরিখে তার হাতে রচিত উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বাধীনতার ইতিহাস বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত এবং ইতিহাস পরিষদ কর্তৃক পুরস্কৃত। অসংখ্য মুদ্রণ ও সংস্করণের মাধ্যমে তার গ্রন্থটি ইতিহাসের শিক্ষার্থীদের কাছে নিত্যপাঠ্যে পরিণত হয়েছে। তার গবেষণা সিদ্ধান্ত পড়লে জানা যায়, মুসলমানদের চলমান মুক্তি সংগ্রাম ইতিহাসের আকস্মিক বিষয় নয়; বরং ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার জীবন্ত বহিঃপ্রকাশ। ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হকের ইতিহাস অন্বেষার আরেক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উপমহাদেশের মুসলিম রাষ্ট্রকাঠামো, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আইডেনটিটি ফরমেশন ও কালচারাল ক্রিস্টালাইজেশনের শেকড় সন্ধান। এই কাজে তিনি যথার্থভাবেই মুঘল ইতিহাস কাঠামো ও মুঘল ব্যক্তিত্বের গভীরে অভিনিবেশ করেছেন। বাংলা ভাষায় সম্রাট বাবর এবং সম্রাট আওরঙ্গজেবের ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক জীবনীকাররূপে তিনি উল্লেখযোগ্য। আরব ভূখণ্ড থেকে সূদূরের বাংলা-ভারতে ইসলামী রাজনীতির বুনন প্রক্রিয়া তিনি উদ্ধার করেছেন দুই মহান মুঘলের জীবনের ছায়াবলম্বনে। এই গবেষণায় তাকে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিতে হয়েছে। কেননা, স্যার যদুনাথ সরকার প্রমুখ এবং অনেক ইংরেজ ঐতিহাসিক বর্ণাঢ্য মুঘল রাজনৈতিক ঐতিহ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িকতার সুপরিকল্পিত প্রলেপ দিয়ে রেখেছেন। ড. হককে দরিয়ার ঈগলের মতো মূল ঘটনার গভীরে ডুব দিয়ে উদ্ধার করতে হয়েছে প্রকৃত ঐতিহাসিক সত্যের মণি-মুক্তা। তার সৃজনশীল ইতিহাস-গবেষণায় উন্মোচিত হয়েছে মধ্যএশীয় ইসলামী ঐতিহ্যের ভারতীয় রূপান্তরের ইতিকথা এবং বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক জীবনে সেই রূপান্তরের ইতিবৃত্ত। অন্যভাবে বললে, উপমহাদেশের মুসলমানদের ঐতিহাসিক কার্যক্রমের উৎসমুখ থেকে মোহনা পর্যন্ত তিনি পরিভ্রমণ করেছেন ঔপনিবেশিক দখলদারদের অবলোকনের পর্দা বিদীর্ণ করে। আজকের রাজনৈতিক যৌক্তিকতা ও গতিপথের একটি ইতিহাসনিষ্ঠ ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব তার গবেষণার ভেতর দিয়ে। উপমহাদেশের মুসলিম রাজনীতির কাঠামোটি ক্রমে ক্রমে কিভাবে নির্মিত হয়েছে, সেটা তিনি মুঘল থেকে বাংলাদেশের সময়কালে বিশ্লেষণ করেছেন। উপমহাদেশের ইসলামী গতিশীলতা আর মুসলিম জাতিসত্ত্বার স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রাম যে আমদানি করা বিদেশী হুজুগ নয়, বরং একান্তই দেশজ মৃত্তিকা সংলগ্ন গণসংগ্রাম, সেটা তিনি বাবর থেকে হাজী শরীয়তুল্লাহ হয়ে তীতুমীরকে স্পর্শ করে আজকের রাজনীতি পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত করেছেন। উপমহাদেশের মুসলিম রাজনীতি ও রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ ও পরিপুষ্টিসহ সামগ্রিক ইতিহাসের গতিশীলতা অনুধাবনের জন্য ড. হকের ইতিহাস-গবেষণা বর্তমানের মতোই ভাবিকালেও অবশ্য পাঠ্য হয়ে থাকবে। তার ইতিহাস অন্বেষা প্রজন্ম পরম্পরার ইতিহাসবিদদের অনুপ্রেরণার অনিঃশেষ উৎস। ড. আহমদ হাসান দানী থেকে ড. আবদুল করিম হয়ে প্রসারিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিকদের বিদ্যাবংশের উজ্জ্বল রত্ন ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক তার নমস্য গুরুকুলের জ্যোতি-মহিমা ও বিদ্যাবলয়কেই প্রসারিত করেছেন স্বকীয় মেধায়, মননশীলতায়, সৃজনধারায়। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চায় সমকালের কৃতবিদদের সঙ্গে সমুচ্চারিত তার নাম ও কীর্তি। ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হকের নিরবচ্ছিন্ন-মহত্তম ইতিহাস অন্বেষার উজ্জ্বল স্বীকৃতি ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য গ্রন্থ, গবেষণা, ছাত্র ও পাঠকের মধ্যে।

পেশাগত জীবনের বাইরে ড. হক যাপন করেছেন শুচিস্নিগ্ধ-পবিত্র জীবন। ইসলামের শাশ্বত জীবনাচারের অনুসরণে তিনি নিজেকে ঋদ্ধ ও পরিপূর্ণ করেছেন প্রতিনিয়ত। ইসলামকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন দার্শনিকতায় এবং ব্যবহারিক জীবন বিশ্বাসে। তার পিতা ছিলেন একজন বিশিষ্ট পীর। সুফিবাদের মরমী ভাবধারা ও শরিয়তের শুদ্ধচারিতার মেলবন্ধনে এক চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। দিনে ও রাত্রে গভীর তপস্যা, আরাধনা ও নিবেদনের মাধ্যমে সর্বক্ষণ স্রষ্টার ইবাদতের আনন্দ লাভই ছিল তার জীবনে পরম কাম্য। ব্যক্তিগতভাবে এই প্রবন্ধ লেখক একদা তার সঙ্গে এক ধর্মীয় ভ্রমণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বেশ কিছুদিন অবস্থানকালে তার অন্তর্গত জীবনের আলোকময় প্রভা লক্ষ্য করেন। তিনি ছিলেন এক আদর্শ ও মহত্ত্বময় সাত্ত্বিক-জীবনের অধিকারী। পারিবারিক জীবনে দুঃসহ বেদনার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। যুবক পুত্রের মৃত্যু, দুই কন্যার জীবনাবসানের বিচ্ছেদ বেদনা তাকে গোপনে সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তিনি কখনোই মুখে কষ্টের ছাপ আঁকেন নি। অমলিন হাসিতে ঢেকে রেখেছেন তাপিত জীবনের যন্ত্রণা। এমন কি, বহু বিপন্ন ও পীড়িত জনকেও তিনি দিয়েছেন আশা, সাহস ও বরাভয়। উচ্চশিক্ষা ও সুনিয়ন্ত্রিত জীবনের পথে বহু বেপথুর জন্য তিনি ছিলেন পথপ্রদর্শক। মৃত্যুর পরেও তিনি নিঃশেষ আলোকবর্তিকার মতো ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠ পথ দেখাতে থাকবেন অনাগত প্রজন্মকে। বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চার পরম্পরায় কর্ম-কীর্তি-ব্যক্তিত্বে অপরিহার্যরূপে সমুজ্জ্বল থাকবেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক।

সূত্র

বিষয়: বিবিধ

১৩২৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326018
১৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:০৬
আবূসামীহা লিখেছেন : জানতাম না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
১৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:১৪
268237
গেঁও বাংলাদেশী লিখেছেন : Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
326026
১৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:১৬
নীলাঞ্জনা লিখেছেন : ৭১ এর রাজাকার না তো??
১৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:২৫
268243
গেঁও বাংলাদেশী লিখেছেন : Time Out Time Out Time Out Time Out Time Out Time Out Time Out Time Out Time Out
326040
১৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:৩১
আবু জারীর লিখেছেন : ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
১৬ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:০৩
268319
গেঁও বাংলাদেশী লিখেছেন : Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
326048
১৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।
উনার অনেক অবদান আমাদের চোখের আড়ালে রয়ে গিয়েছে। বিএনসিসির একজন শির্ষ অফিসার ও ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর দায়িত্বে থাকার সময় তিনি তৎকালিন ইউওটিসির সরঞ্জামগুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু ভারতে আশ্রয় নেননি বলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু তার ছাত্ররাই তাকে উদ্ধার করে যারা ছিল মুক্তিযদ্ধের প্রত্যক্ষ সৈনিক।
১৬ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:০৮
268322
গেঁও বাংলাদেশী লিখেছেন : আপনার কাছ থেকে আর কিছু জানলাম।
ধন্যবাদ আপনার জন্য।
Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
১৬ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:২০
268457
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইতর মন্তব্যটি মুছে দিলে ভাল হয়।
১৬ জুন ২০১৫ রাত ০৯:২৯
268530
গেঁও বাংলাদেশী লিখেছেন : দিলাম
326073
১৬ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৭
নারী লিখেছেন : অনেক কিছুই জানলাম। ধন্যবাদ।
১৬ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:০৮
268321
গেঁও বাংলাদেশী লিখেছেন : ভালো থাকবেন।
Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose Rose Rose Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
326234
১৬ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৩৩
আফরা লিখেছেন : নাম তো গেঁও বাংলাদেশী পোষ্ট তো দিয়েছেন পোষ্ট তো দিয়েছেন শহরে বাংলাদেশীর মত ।

অনেক অজানাকে জানা হল অনেক ধন্যবাদ তার জন্য ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File