পারিবারিক শিক্ষা কেউ-ই কাজে লাগাতে পারে না জীবনে ...

লিখেছেন লিখেছেন বুড়া মিয়া ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:১২:৩৬ রাত

ইদানীং আরও কিছু ব্যাপার ভেবে দেখলাম যে, সমষ্টিক ব্যাপারে সবসময়ই সমতার ভিত্তিতে বন্টন হওয়া উচিৎ এবং সেটাই যুক্তিসঙ্গত; পৃথিবীর সব মত এবং ধর্মের মানুষও এ সমতা একটা জায়গায় মেনে নেয়, আরেকটা জায়গায় মানতে টালবাহানা করে! যে জায়গায় মেনে নেয়, সেটা হয়তো মানতেই থাকবে আর না মানার জায়গায় হয়তো টালবাহানা চলতেই থাকবে।

বর্তমান পৃথিবীর সব মানুষেরই ব্যবস্থাপনার প্রথম পাঠশালা এবং কর্মক্ষেত্র তার পরিবার; সেখানে কেউ শ্রম দেয় কম কেউবা বেশি, কেউ ব্যবস্থাপক বা পিতা-মাতার চক্ষুশীতল করে কম, কেউবা বেশী; এরকমভাবে শুরু থেকেই পার্থক্য নিয়েই গড়ে উঠে মানুষ। কিন্তু, মানুষের এ আচার আচরণ বা যোগ্যতার পার্থক্যের কারণে এ্যাসোসিয়েশন বা পরিবারের এ্যাসেট এর অধিকার কারও কম বেশী হয় না!

ইব্রাহীম (আ.) এর ধর্মের বেশ কিছু আপডেট হয়েছে যুগে যুগে এবং সর্বশেষ আপডেট হয়েছে ইসলামিক রুলস দিয়ে, খ্রীষ্টান বা ইহুদীরা মানুক বা না মানুক। এখানে ছেলেদের জন্য এক রকম বন্টন পলিসি এবং মেয়েদের জন্য আরেকরকম। এছাড়াও অন্য ধর্ম যেমনঃ হিন্দুদের ক্ষেত্রে ছেলেদের সমান, মেয়েদের নাই এবং বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সমান। সব ধর্মের লোকেরাই যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করে, তবে ইসলামিক বন্টন রুলস-ই আসলে যৌক্তিক; কারণ সব ধর্মেই ছেলেদেরকে মেয়েদের উপরে প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে সৃষ্টি/প্রকৃতিগত যৌক্তিক কারণেই।

এই জায়গায় বা পারিবারিক-সংঘে কোন ধর্মের মানুষই কিন্তু বন্টন নিয়ে খুব একটা মারামারি বা দ্বিমত করে না, উন্মাদ বা পাগল ছাড়া! এখানে কেউ খায় কম কেউ বেশী, কেউ একটু আরাম প্রিয় কেউ কর্মঠ; এতে করে খরচ একেকজনের পেছনে একেক রকম হয়, তবে এ পার্থক্য সহনীয়ই হয়, সীমাহীন হয় না; যৌথ পরিশ্রমের ভিত্তিতে উপার্জিত পারিবারিক এ্যাসোসিয়েশনের এ্যাসেটের রাইটে কোন পার্থক্য হবে না যে যাই করুক না কেন।

এখানে এক ছেলে যদি বাবার ক্ষেত চাষ করে এবং আরেক ছেলে যদি বাবার গরু-ছাগল চড়ায় এবং মেয়েরা যদি ঘরে রান্না-বান্না এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় নিযুক্ত থাকে আর বাবা-মা যদি শুয়ে বসে থেকেও চাষাবাদ এবং গরু-ছাগল বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে স্বর্ণ-রৌপ্য বা জমিজমা ক্রয়/জমা করে, তবে সমতার ভিত্তিতেই সবার মধ্যে এগুলো বন্টন হবে, যার যেমন লেবার-কন্ট্রিবিউশনই থাক না কেন। এখানে দুইটা জিনিস দেখা যায়ঃ পারিবারিক এ্যাকুমুলেটেড এ্যাসেট-রিয়েল এষ্টেট, আর এই এ্যাসেট ব্যবহার করে সম্মিলিত পরিশ্রমের মাধ্যমে জেনারেট হচ্ছে ইনকাম; এই ইনকামের বিপরীতে খরচ হচ্ছে, ফুডিং, লজিং, ইত্যাদী; নেট ইনকাম যোগ হচ্ছে এ্যাসেটে।

এই যে সারাবিশ্বের পারিবারিক ম্যানেজমেন্ট, এটা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে - সমাজতান্ত্রিক না-কি ধনতান্ত্রিক উপায়ে? সব ধর্মেই বলতে গেলে সমাজতান্ত্রিক উপায়েই হচ্ছে, সামান্য কিছু পার্থক্য নিয়ে। এতে মনে হয় কারও দ্বিমত করার কোন যৌক্তিক কারণ থাকার কথাও না। পারিবারিক এগুলো কখনো ভাগ হয়, আবার কখনো হয় না; যেমন হিন্দু একান্নবর্তী পরিবারে ভাগযোগ করা হয় না, এবং অন্যান্য ধর্মেরও যৌথ পরিবারগুলোয় কেউ কোন সমস্যা সৃষ্টি না করলে, সাধারণত ভাগযোগ হয় না এ্যাসেট, তবে অধিকার সন্নিবেশিত থাকে সমাজতান্ত্রিক উপায়েই।

এখানে ছোটবেলায়ই সব মানুষ একই শিক্ষা পায়ঃ মৃত্যুর সাথে সাথে কারোই এ্যাসেট সাথে নিয়ে পরকালে চালান হওয়ার কোন রাস্তা নেই, কিন্তু সবার বৃহত্তর স্বার্থে একই পরিবেশে/বাড়ীতে সামান্য ভোগের পার্থক্য নিয়ে বড় হতে হয় এবং পরিচালনায় অবদান রাখতে হয়। একেকজনের ভোগটাও এমন, যা সৃষ্টিগতভাবেই প্রদত্তঃ যেমন বড়ভাই খেতে বসলে ১ কেজি খায় আর ছোটজন ৩ পোয়া, দুধ খেলে ছোটজন ৫ লিটার খায় আর বড়জন ১ লিটার, এটা দৈহিক চাহিদা; আর থাকার পরিবেশ সবার একই, কারও হয়তো খাটের জাযীম একটু মোটা অথবা পাতলা, এতোটুকুই পার্থক্য!

এই মানুষগুলাই যখন বড় হয় তখন এদের মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়, আগের যে দৈহিক চাহিদার ভিত্তিতে কম-বেশি কষ্ট গিলেছে তারা, এবার মানসিক রোগী হিসেবে তাদের দৈহিক চাহিদার সাথে সাথে মানসিক-চাহিদার জন্যও অনেক কিছু গিলতে হবে বলে তারা বুঝে থাকে! এই মানসিক রোগীগুলোই সাধারণত সমস্ত জায়গায় সবকিছু ভাঙ্গনের মূল এবং অবিচারের মূল! তাদের মানসিক রোগ এতটাই প্রকট যে গলা দিয়ে না ঢুকলেও বিভিন্ন কূটকৌশলে পাহাড় বানিয়ে আকড়ে ধরে থাকবো, অন্যদের উপর অত্যাচার করে!

পূর্বযুগে এই মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের কারণে সৃষ্ট দাস-দাসী দিয়ে রিয়েল-এষ্টেট এবং লাইভষ্টক ম্যানেজমেন্ট চলতো এবং তা থেকে সারপ্লাস উৎপাদনের মাধ্যমে এ্যাকুমুলেট হতে থাকতো, সবকিছুই থাকতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং দাস-দাসীরা থাকতো সেসব ব্যক্তি-এককের সহায়ক লাইভষ্টক হিসেবেই! তবে বর্তমানে এমন মানসিক ভারসাম্যহীনদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে চরমভাবে এবং পাগলে পাগল খুজে পেয়েছে আইনগত সিদ্ধি লাভ করতঃ অনেক মানসিক রোগী এখন নিজেদের সমস্ত এ্যাসেট একসঙ্গে করে ফেলে এবং যৌথমূলধনী/অংশীদারী এ্যাসোসিয়েশন গঠন করে শেয়ার হিসেবে নিজেদের মাঝে বন্টন করে, অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে একেক ক্লাসের এ্যাসেটগুলোতে এসবের কারও কারও ব্যক্তিগত অধিকারের ব্যাপারও থাকে।

জয়েন্ট-ষ্টক ব্যবহার করে তারা নিজেরা নিজেদের তেমন কোন উন্নতি যে করতে পারবে না, এই বুঝটা এই মানসিক-রোগীদেরও আছে, তাই অনেকেই তাদেরকে উন্মাদ বলতে দ্বিধাবোধ করে। তারা নিযুক্ত করে তাদের চাইতে একটু কম মাত্রার মানসিক ভারসাম্যহীনদের ম্যানেজমেন্ট হিসেবে, আর আগে থেকেই এদের মানসিক সমস্যার কারণে সৃষ্ট দাস-দাসীগুলো আজও নতুন নতুন দাস-দাসীর জন্ম দিয়ে যাচ্ছে এই জয়েন্ট-ষ্টকে ফুল-উন্মাদ মালিক এবং সেমি-উন্মাদ ম্যানেজমেন্টের গোলামী করে বেচে থেকে দায়-মুক্তির জন্য!

এই যে জয়েন্ট-ষ্টক অপারেশনের ফল, এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে সবার সম্মিলিত শ্রমের ফল, এককভাবে কারও শ্রম কন্ট্রিবিউশন আলাদা করার তেমন কোন উপায় নেই এবং সম্মিলিত শ্রম না থাকলে সে জয়েন্ট-ষ্টক থেকে খুব একটা রিটার্ণও আসার সম্ভাবনা কখোনোই নেই! এখানে কোন শ্রেণীই ফুল-উন্মাদ বা ক্যাপিটালিষ্টদের এ্যাসেট এর উপর অধিকারও দাবী করে না, কিন্তু এই এ্যাকুমুলেটেড এ্যসেট পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিচালনা করে যে ইনকাম জেনারেট হলো, সেটার কি হবে বলে অনেকে হৈ-চৈ করে। শৈশব-কৈশোরের পারিবারিক শিক্ষার পলিসিতে হবে ডিষ্ট্রিবিউশন, না-কি এ্যাসেট (ক্যাপিটাল) কন্ট্রিবিউশন রেশিওতে? যৌক্তিক যুক্তি কি বলে এ ব্যাপারে?

বয়স হলে পারিবারিক বা সামাজিক শিক্ষা বাদ দিয়ে ক্যাপিটালিষ্টদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে আমাদের জীবন পরিচালনায়? যদি তাই হয় তবে ক্যাপিটালিষ্টরা কেন তাদের উত্তরাধিকারদের সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্পত্তি বন্টন করে থাকে আজও? যেখানে সুবিধা যেমনে সেখানে তেমন নীতির কারণেই যুগে যুগে মানুষরা ক্যপিটালিষ্টদের মানুষ হিসেবে মনেই করে-নি, ওদের সাথে ডাষ্টবিনের কুকুরদের খুব একটা পার্থক্য নেই বলেই জেনেছেঃ ডাষ্টবিন ভর্তি আবর্জনা দিয়ে ১০০ কুকুরের পেট ভরার অবস্থা থাকলেও, ২ কুকুর সাধারণত মারামারি এবং ঘেউ ঘেউ না করে খেয়ে হজম করতে পারে না!

কোন সমাজেই কোনই দরিদ্র থাকবে না, এসব অসাধারণ পাগলা কুকুর বা ক্যাপিটালিষ্ট নিধন করলেঃ তবে এটা মনে হয় সম্ভব না কারণ, নরক বা দোযখ অপূর্ণ থেকে যাবে মনে হয় তাতে করে! সমাজে এই শ্রেণীর উন্মাদ কুকুরদের একমাত্র কন্ট্রিবিউশনঃ অবিচার!

এছাড়াও এর আগে এক পোষ্টে জয়েন্ট অপারেশনে যুদ্ধের ফল কিভাবে বন্টন হতো তাও জেনেছিলাম এবং ইহুদী-খ্রীষ্টানরাও একইভাবে লটারীর মাধ্যমে সেসব সমতার ভিত্তিতেই বন্টন করেছে বলে ইতিহাস রয়েছে, তবে তাদের জন্য জমি-জমা, পশু, গাছপালা ব্যতীত অন্য সব অর্জিত সম্পদ (সোনা-দানা), পুড়ে ফেলার বা কোরবানীর বিধান ছিলো।

এসব থেকে আমি যা বুঝেছি আমাদের সৃষ্টিকর্তা সবখানেই সমাজতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনার কথা বলেছেন এবং আজও তা পৃথিবীর প্রত্যেক ধর্মের মানুষের মধ্যেই পারিবারিকভাবেই লালিত হচ্ছে, যেখানে মানুষের শুরু, অর্থাৎ শুরুটা সবারই ভালো এবং যুক্তিসঙ্গতভাবেই হচ্ছে তবে শেষটা একেকজনের একেকরকম!

আমি নিজেও মনে হয় ক্যাপিটালিষ্টদের কাছাকাছি পর্যায়ের!

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

276195
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:১২
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : ধন্যবাদ , অনেক ধন্যবাদ
২০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৩৬
220159
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
276200
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০২:৩৯
তহুরা লিখেছেন :
২০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৩৭
220160
বুড়া মিয়া লিখেছেন : Happy
276206
২০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৪১
শেখের পোলা লিখেছেন : ভালই বলেছেন৷
২০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৭:৩৮
220161
বুড়া মিয়া লিখেছেন : বলে বলে বেশ ভালোই সময় পার হয়ে যাচ্ছে ইদানীং ...
276270
২০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইসলাম সমাজতন্ত্রের মত সবাইকে একই পরিমান দেয়না। প্রয়োজন অনুসারে দেয় যেন সকলের জিবনযাত্রার মানে সামঞ্জস্য থাকে।
২০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:৫০
220217
বুড়া মিয়া লিখেছেন : কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই সমান (যেমন উত্তরাধিকার ও দুই ক্রাইটেরিয়ায় গণিমত) এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে (সমান না, যেমন খাদ্য এবং থাকার বিছানার কথা বলা হয়েছে)। সমাজতন্ত্রও মনে হয় সমানের কথা বলে না, এটাও সমতার (যার যতটুকু লাগে, তবে পূজিবাদীদের যেমনে লাগে ওমনে হবে না) কথা বলে আমার যতদূর মনে হইছে।

এছাড়াও পরিচালনার জন্য কাজ ভাগ করে নিলে সেখানে বিভিন্ন রকমের যুক্তিসঙ্গত বন্টন হতে পারে। যাকাতের বন্টন শুধুই গরীবদের এবং অন্যান্য কিছু কাজে, গণীমতের ১/৫ গরীবদের জন্য, ইত্যাদী; মানে যুক্তিসঙ্গত সমতা আনার জন্য; সব মিলিয়ে মনে হয় এটা সমাজের ভালোর জন্য সমাজতান্ত্রিক জীবন-ব্যবস্থাইঃ ইউসুফ (আ.) এর রাষ্ট্র-পরিচালনা এইরকমই ছিলো, প্রোডাকশন ট্যাক্সও ছিলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File