প্রথম মুসলিম কে ?

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ০২:২৫:৫০ রাত

রসূল(সাঃ) পুরো সমাজের অবস্থা,মানুষের নানান সব আচরণ এবং নানামুখী অসামঞ্জস্যতা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং প্রতিকার ভাবতে থাকেন। সমমনা মানুষদের সাথে সেসব নিয়ে কথাও বলেন, কিছু কাজও করেন, কিন্তু তিনি নবুয়্যত পাওয়ার কয়েক বছর পূর্বে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নেন। নির্জনতা তার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে। একাকী ভাবতে থাকেন।

উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রসূল(সাঃ)এর প্রতি প্রথম ওহী শুরু হয়েছিলো ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের মাধ্যমে। সে সময় তিনি যা স্বপ্ন দেখতেন তা সকালের আলোর মতই সত্য ও সুস্পষ্ট হত।(এটি আল কুরআন নয়, বরং আল কুরআন পাওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাকে নানান বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ আভাস দিতেন বা তথ্য দিতেন। এটি ছিলো স্পষ্ট ইলহাম) এরপর নির্জনতা তার কাছে প্রিয় হয়ে উঠলো। তিনি হেরা গুহায় চলে যেতেন এবং পরিবার পরিজনের কাছে আসার পূর্বে সেখানে লাগাতারভাবে কয়েকদিন পর্যন্ত অবস্থান করে "তাহাননুছ" করতেন। তাহাননুছ মানে হল বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদত করা।( আল্লাহ তাকে বিশেষ ইঙ্গিতের মাধ্যমে সে বিষয়ে নসিয়ৎ করেছিলেন)

সে সময় তিনি(সাঃ) কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। খাবার শেষ হলে তিনি মা খাদীজার কাছে ফিরে আসতেন এবং অনুরূপ খাবার নিয়ে যেতেন হেরা গুহায়। শেষে হেরা গুহায় থাকা অবস্থায় তার কাছে সত্য বাণী এসে পৌছলো। এক আগন্তুক(জিবরাঈল আঃ) তার কাছে এসে বললেন, আপনি পড়ুন ! রসূল(সাঃ) বললেন, আমি পড়তে পারিনা। তিনি তাকে আলিঙ্গন করলেন খুব জোরে। রসূল(সাঃ) বলেন- আমি প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর আগন্তুক ছেড়ে দিয়ে বললেন, আপনি পড়ুন ! আমি বললাম, আমি পড়তে পারিনা। এরপর তিনি আমাকে তৃতীয়বার ধরে প্রচন্ড জোরে আলিঙ্গন করে বললেন,

"পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ করো, আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত,যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না। "(-সূরা আলাক) এরপর রসূল(সাঃ) আয়াতগুলো নিয়ে বাড়িতে ফিরলেন। এ সময় তার কাধের পেশী ভয়ে থরথর করে কাঁপছিলো। খাদিজার(রাঃ) কাছে পৌঁছেই তিনি বললেন , আমাকে বস্ত্রাবৃত করো,আমাকে বস্ত্রাবৃত করো। খাদিজা(রাঃ) সাথেসাথেই তাকে বস্ত্রাবৃত করলেন। এরপর তার ভয় কিছুটা দূর হলে তিনি ভীত বিহবলভাবে বললেন, খাদীজা, আমার এ কি হল ! আমি আমার নিজের জীবন সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। এরপর তিনি(সাঃ) খাদীজাকে(সাঃ) পুরো বিষয় অবগত করলেন। সবকিছু শুনে খাদীজা(রাঃ) বললেন:

'কখনই নয়, আপনি বরং সুসংবাদ গ্রহন করুন। আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে লাঞ্চিত করবেন না। আপনি আত্মীয়দের খোঁজ খবর নেন। আপনি সত্য কথা বলেন,সহায়হীন লোকদের বোঝা লাঘব করে দেন। আপনি নি:স্ব লোকদের উপার্জন করে দেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন। হকের পথে থাকা বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করেন।'

(মা খাদীজার উপরোক্ত কথাগুলো অন্তত দুবার পড়ার অনুরোধ করছি। এর ভেতর কিছু বিশাল মেসেজ আছে মানুষের জন্যে)

এরপর খাদীজা(রাঃ) তার চাচাত ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে নিয়ে যান। তিনি জাহেলী যুগে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। তিনি আরবী ভাষায় কিতাব লিখতেন। সে সময় তিনি বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আরবী ভাষায় ইঞ্জিল কিতাবের কিছু কিছু অনুবাদ করে লিখতেন। খাদীজা তাকে বললেন, হে আমার চাচাত ভাই, আপনার ভাতিজা কি বলে একটু শুনুন। ওয়ারাকা বললেন, হে ভাতিজা, কি হয়েছে তোমার ? রসূল(সাঃ) যা দেখেছিলেন সবই সবিস্তারে বললেন। সব কথা শুনে ওয়ারাকা বললেন, 'ইনিই সেই ফেরেশতা যাকে মূসার(আঃ) কাছে পাঠানো হয়েছিলো। আহ সেই সময় যদি আমি যুবক থাকতাম,,আহ সেই সময় যদি আমি জীবিত থাকতাম , যখন তোমার স্বজাতি তোমাকে বের করে দেবে ! ' রসূল(সাঃ) বললেন, সত্যিই কি তারা আমাকে বের করে দেবে ? ওয়ারাকা বললেন, হ্যা তারা তোমাকে বের করে দেবে। তুমি যে দাওয়াত নিয়ে এসেছো,সেই দাওয়াত যারাই নিয়ে এসেছে,তাদেরকেই কষ্ট দেওয়া হয়েছে। তোমার নুবয়্যতকালে আমি জিবীত থাকলে তোমাকে প্রবল ও সর্বতভাবে সাহায্য করতাম। এরপর ওয়ারাকা অধিক দিন বাঁচেননি, অল্প কদিনের ভেতর তিনি মরা গেলেন। এরপর একটা দীর্ঘ সময়ের জন্যে ওহী বন্ধ থাকে আর রসূল(সাঃ) সাংঘাতিকভাবে চিন্তিত ও হতাশ হয়ে পড়েন।

(বুখারী ৪৫৯৩,মুসলিম ১৮৭৮,তিরমিযী,নাসায়ী,দারেমী,আহমাদ)

বি:দ্র: ওয়ারাকা বিন নওফেল জাহেলী যুগের সত্যবাদী মানুষ ছিলেন এবং কিতাবের জ্ঞানে সবচেয়ে অভিজ্ঞ একজন ছিলেন। ঐতিহাসিকগণ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন কে প্রথম ইসলাম গ্রহন করেছে। অনেকে তার নাম বলেছেন, আবার অনেকে মা খাদীজার পর তাকে দ্বিতীয় মুসলিম বলেছেন। অনেকে বলেছেন মহিলাদের ভেতর প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী খাদিজা,বাচ্চাদের ভেতর আলী(রাঃ) অথবা জায়েদ(রাঃ),বুড়োদের ভেতর ওয়ারাকা,পুরুষদের ভেতর আবু বকর(রাঃ)। তবে ওয়ারাকার ব্যাপারে অন্য হাদীসে এসেছে যে রসূল(সাঃ) তাকে জান্নাতে দেখেছেন। আর উক্ত ঘটনার সপ্তাহ খানেকের ভেতর তিনি মারা যান।

বিষয়: বিবিধ

৫৩৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386796
২০ জানুয়ারি ২০২০ সকাল ০৬:৩০
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ জনাব।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File