খাদিজার(রাঃ) সাথে বিয়ে

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৭:৩৮:০৭ সকাল

হযরত খাদীজা(রাঃ) এর বড় বোনের নাম হালা। তার ছিলো বিশাল ভেড়ার পাল। তিনি পয়সার বিনিময়ে দুজন রাখাল রেখেছিলেন এর একজন ছিলেন ২০/২২ বছরের মুহাম্মদ(সাঃ),এবং আরেক যুবক। একটি সময় বা সিজনের জন্যে তখন রাখাল নিয়োগ হত। সে সময় পার হলে রাখালরা তাদের মজুরী পেত। যখন মজুরী নেওয়া সময় উপস্থিত হল, তখন রসূল(সাঃ) অপর যুবককে বললেন, আমি উনার কাছে যেতে পারব না, আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে, উনি মহিলা মানুষ,বরং তুমি যাও এবং আমার মজুরীটাও নিয়ে এসো। যুবকটি সেটাই করে এবং হালার কাছে মজুরী চাইলে হালা জানতে চায় অপরজন কোথায় ? যুবক বলে, সে প্রচন্ড লাজুক যার কারনে আমাকে পাঠিয়েছে মজুরী নিতে। হারঅ উভয়ের মজুরী প্রদান করে। হালা যুবক মুহাম্মদের(সাঃ) খুব প্রশংসা করে তার বোনের কাছে যে, আমি এমন উত্তম অভিজাত,চরিত্রের মানুষ দেখিনি কখনও যার ভেতর লজ্জাবোধ প্রবল,যার চরিত্রে সততা,আমানতদারীত্ব প্রবল। সকল ভালোগুন রয়েছে তার ভেতর। অত্যন্ত পরিশ্রমী,কর্তব্যপরায়ন যুবক সে। মহিলাদের সাথে কথা বললে দৃষ্টি অবনত করে । খুবই আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক যুবক। বেশ কয়েকবার হালা তার বোন খাদীজার সামনে প্রশংসা করেছে। এর পরই খাদীজা মুহাম্মদ(সাঃ)এর বিষয়ে ভাবতে থাকেন। তাছাড়া সমাজের অন্য লোকেদের মুখেও তার বিষয়ে উত্তম কিছু শোনা যেত সচরাচর।

খাদীজার প্রথম বিয়ে হয়েছিলো যার সাথে তার থেকে উনার একটি পুত্র সন্তান ছিলো। লোকটি সম্পদ রেখে মারা যায়। খাদীজার দ্বিতীয় বিয়ে হয় একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির সাথে, যার বিশাল ব্যবসা ছিলো কিন্তু এই স্বামীর থেকে কোনো সন্তান আসেনি আর এই স্বামীর কোনো ভাই-বোনও ছিলোনা এবং তিনি বিশাল সম্পদ রেখে মারা যান। পুরো সম্পদ চলে আসে খাদীজার হাতে। তিনি ছিলেন মহিলাদের ভেতর সবচেয়ে ধনী। তার বিশাল ব্যবসা পরিচালনার জন্যে তিনি আদর্শ লোকদেরকে ব্যবসায়ে নির্দিষ্ট শেয়ার দিয়ে ইয়েমেন,সিরিয়াতে পাঠাতেন। হজ্জ মৌসুমে বাইরের দেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য এনে বিক্রী করা হত মক্কায়। হজ্জের পরপরই হত উকাজ মেলা। সেটা ছিলো একটি আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা। সেখানেও পণ্য বিক্রী করে প্রচুর মুনাফা হত। এভাবেই চলছিলো। মহিলা হওয়ার কারনে তিনি এতদূর ভ্রমন করতে পারতেন না,আর অন্য লোকেরা ব্যবসায়ের সঠিক হিসাব দিতনা,ফলে তার লাভের একটা অংশ চলে যেত।

ফলে হালার মুখ থেকে মুহাম্মদ(সাঃ)এর ব্যপক প্রশংসা মুনে এবং সমাজের অন্যদের থেকে তার প্রশংসা শুনে খাদীজা সিদ্ধান্ত নেয় যে তিনি তার ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব এই যুবককে প্রদান করবেন,যদিও তার ব্যবসায়ে অভিজ্ঞতা ছিলোনা। কিন্তু খাদীজা মনে করছিলেন এই যুবক পারবে আর সততা আমানতদারীত্বের কারনে তার উপকারই হবে।

খাদীজার এই প্রস্তাবের পর মুহাম্মদ(সাঃ)তার চাচা আবু তালীবকে বলেন বিষয়টা। আবু তালিব তাকে এই সুযোগটি গ্রহন করতে বলেন। আর খাদীজা তাকে পুরো লভ্যাংশের অর্ধেক প্রদান করবেন জানান। খাদীজা লাভের এত বড় অংশ কখনই পূর্বে কাওকে দেননি। রসূল(সাঃ) ব্যবসা পরিচালনায় সিরিয়ার বসরায় গমন করেন এবং ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় পূর্বের তুলনায় তিনি ৩গুন, অথবা অনেকের মতে আরও বেশী মুনাফা করেন। আল্লাহর ভবিষ্যত রসূল হিসেবে ব্যপক বরকত হয় তার। এটা খাদীজার কাছে ছিলো একটা বিশ্ময়। এই সফরে খাদীজার মায়সারাহ নামক একটা দাসীকেও পাঠান। সেই দাী ফিরে এসে যুবক মুহাম্মদের মহা প্রশংসা করে। এবং কোনো কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনা করেছেন, মায়সারাহ দেখেছেন আকাশে এক খন্ড মেঘ মুহাম্মদকে(সাঃ) ছায়া দিয়ে রেখেছে। মুহাম্মদ(সাঃ) এই ব্যবসা থেকে বড় অংকের লভ্যাংশ পান। আর খাদীজা এবার মুহাম্মদকে বিয়ে চিন্তা করতে থাকেন।

এরপর খাদীজা তার সিনিয়র বান্ধবী অথবা নাফিসা নামক অন্য একজন বয়ষ্কা দাসীকে পাঠান মুহাম্মদের(সাঃ)কাছে। সেই মহিলা বলেন, আপনি কেন বিয়ে করছেন না ? তখন মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন , কে আমাকে বিয়ে করবে ! আমার তো অর্থনৈতিকভাবে তেমন সক্ষমতা নেই। তখন মহিলা বলেন, আচ্ছা কেমন হয় যদি খাদীজা আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব করেন ? জবাবে মুহাম্মদ(সাঃ)বলেন, খাদীজা কেন আমাকে বিয়ে করতে চান ? উক্ত মহিলা তখন খাদীজার পক্ষ থেকে প্রস্তাব করেন। জবাবে রসূল(সাঃ) বলেন, আমি আমার চাচা আবু তালীবের সাথে পরামর্শ করে আপনাকে জানাবো। আবু তালীব এই প্রস্তাবে খুব খুশী হন এবং তার মত প্রদান করেন।

বিয়ের দিন আবু তালিব উভয় পরিবারের সম্মানীত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, আমার ভাতিজার মত এত অভিজাত,এত সম্মানিত,এত দয়ালু,এত সৎ,নিষ্ঠাবান,পরোপকারী,আমানতদার,এত উৎকৃষ্ট পুরুষ এই মক্কায় আর কেউ নেই। আমি আপনাদের মেয়েকে ১২ উকিয়ার বিনিময়ে(১২ রৌপ্য মুদ্রা) বিয়ের প্রস্তাব করছি।......অত:পর বিয়ে হয়ে গেল। একটি ভোজের আয়োজন করা হয়।......এরপর একটি ইতিহাস তৈরী হয়।

রসূল(সাঃ) যৌবনের শুরুতে মেষ চরাতেন এবং এর বিনিময়ে অল্প কিছু মুদ্রা পেতেন। বহু বছর পর মা আয়েশা(রাঃ)কে তিনি এটা বললে আয়েশা(রাঃ) বিশ্ময় প্রকাশ করে বলেন, আপনি মেষ চরিয়েছেন ? জবাবে রসূল(সাঃ)বলেন 'কোন নবী তা চরাননি ?(প্রত্যেক নবীই তাদের জীবনে মেষ চরিয়েছেন।) ঐতিহাসিকরা বলেন, রাখালরা পশু চরানোর ভেতর দিয়ে পশুর আচরন বুঝতে পারে। একেক পশুর সাথে একেক আচরন করে নিয়ন্ত্রন করতে হয় কারন তারা সকলে এক রকম নয়। আর একজন লিডারকে খুব দক্ষতার সাথে মানুষ চরাতে হয়,ফলে পশু চরানোর বিষয়টি তাদের জ্ঞানকে অনেক সমৃদ্ধ করে। এ কারনে নবীগনকে আল্লাহ মেষের রাখালও বানিয়েছেন একটা সময়ের জন্যে,তাদেরকে পরিনত করার জন্যে।

উল্লেখ্য: রসূল(সাঃ) মা খাদীজার মৃত্যুর পর আয়েশা(রাঃ)কে বিয়ে করেন। তখন রসূল(সাঃ) এর বয়স ছিলো ৫৪ বছর। বাকী বিয়েগুলোর রাজনৈতিক গুরুত্বই বেশী ছিলো। আর সবগুলো বিয়ে করেছেন ৫৪ বছরের পর থেকে। কাজেই ইসলাম বিরোধীরা বিয়ে নিয়ে যেসব কথা বলে,সেটা স্রেফ হিংসার কারনে বলে থাকে। মুহাম্মদ(সাঃ)হলেন মানব জাতির সবচেয়ে পবিত্র মানুষের চেয়েও পবিত্র। স্বয়ং আল্লাহর আদেশেই তিনি কোনো কিছু করেছেন অথবা কোনো কিছু করা থেকে বিরত থেকেছেন।

বিষয়: বিবিধ

৬৬৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386783
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ সকাল ১০:১৩
হতভাগা লিখেছেন : ইসলাম বিরোধিরা মুসলমানদের একাধিক বিয়ে নিয়ে কথা বলে। কিন্তু নিজেরা বিয়ে না করে একাধিক ফস্টি নস্টি করে সেটা নিয়ে তাদের সমস্যা পরিলক্ষিত হয় না। এসব লোকেরা আবার সমাজের চোখে আদৃতও হয়। তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে না করছে - তার সবকিছুরই আপডেট দেয়।
386784
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সকাল ০৯:১২
টাংসু ফকীর লিখেছেন : মাশাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File