ওসিলাহ !

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ০৯:১৭:১৭ রাত



---------

ওসিলাহ আরবী শব্দ যেটা নিয়ে বহু জল ঘোলা হয়েছে। আল-কুরআনের একটি আয়াত "হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তার কাছে ওসিলাহ চাও এবং তার পথে জিহাদ করো, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। "(সূরা মায়েদা, আয়াত ৩৫)

আরবী ভাষায় ওসিলাহ মানে হল নৈকট্য,উচ্চ আসন বা স্থান, সম্মানিত কোনো অবস্থান ইত্যাদী। আরবী এই শব্দটি বাংলায় প্রবেশ করে ভিন্ন আরেকটি অর্থ প্রদান করেছে,তা হল সুপারিশ,মাধ্যম,দয়া বা অনুগ্রহ ইত্যাদী। যেমন আমি অমুকের ওসিলায় চাকুরী পেয়েছি। অর্থাৎ আমি অমুকের দয়ায় বা সুপারিশে চাকুরী পেয়েছি। কিন্তু আরবী ওসিলাহ ও বাংলা ওসিলাহ এক নয়। দুটো ভিন্ন রকম বিষয়। কিন্তু এই আয়াতের বাংলা তরজমায় কিছু লোক বাংলার ওসিলাহ যুক্ত করে এটা বুঝানোর চেষ্টা করেছে যে, স্বয়ং আল্লাহ মানুষকে বলছেন- পীর নামক মাধ্যম বা ওসিলা ধরে তবে আল্লাহকে পাওয়ার চেষ্টা করো। পীর হল ওসিলাহ, যিনি মানুষকে আল্লাহর নিকট নিয়ে যাবেন এবং তিনি সুপারিশ করে তার কল্যান করবেন। মানুষ সরাসির আল্লাহর কাছে যেতে পারবে না, যেমন বিচারকের কাছে উকিলেরা মক্কেলের জন্যে সুপারিশ করে, পীরও তেমন কিছু।

কিন্তু আলোচ্য আয়াতের ভাবের দিকে লক্ষ্য রাখলেই বোঝা যায় ওসিলাহ শব্দটি কোনোভাবেই সে কথা বলেনা। বরং এটার অর্থ এই যে "হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য অনুসন্ধান কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।"

এখানে আল্লাহ মানুষকে তার নৈকট্য লাভের কথা বলছেন এবং সেই নৈকট্য লাভের জন্যে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়াকে সামনে আনা হয়েছে এবং জিহাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন কোনো মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারবেন। পুরো আয়াতের কোথাও অন্য কোনো মানুষের হাতে পায়ে ধরে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কথা বলা হয়নি। এটা আয়াতের ভাবের সাথে মোটেও খাপ খায় না।

ওসিলাহ শব্দটি আযানের দোয়ার ক্ষেত্রেও এসেছে। আল্লাহুম্মা রাব্বাহাযি.....আতি মুহাম্মাদানিল ওসিলাহ ওয়াল ফাজিলাহ.....'হে আল্লাহ মুহাম্মাদ(সাঃ)কে দান করুন ওসিলাহ,বরকত.....ইত্যাদী। ' এখানে তাকে(সাঃ) ওসিলাহ দান করতে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ওসিলাহ হল এমন একটি অবস্থান বা স্থান যা অতি মর্যাদাপূর্ণ। এটি একটি মর্যাদার নাম। বাংলায় যে ওসিহলাহ বলা হয়,তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু সংখ্যক লোক শব্দটিকে পীর,ফকির,বাবা,ওলী ইত্যাদীর সাথে জুড়ে দিয়ে ফায়দা তুলতে চায়, এটা অনধিকার চর্চা।

আরবী ভাষাবীদ ও প্রখ্যাত ইমাম ইবনে জরীর তাবারী(রহঃ) ওসীলা শব্দটির অর্থ করেছেন "নৈকট্য"। (তাবারী,তাফসীর জামিউল বায়ান ৬/২২৬)

শেষ কথা হল এই যে, আল্লাহ তার নৈকট্য চাইতে বলেছেন। তার থেকে পুরষ্কার নিতে বলেছেন। আর সেটা পাওয়ার জন্যে এই আয়াতে দুটো গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন তা হল তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি। অর্থাৎ কোনো কাজ আল্লাহর ভয়ে ও ভালোবাসায় করা, অথবা আল্লাহর জন্যেই কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহর জন্যেই ভালোবাসা, আল্লাহর জন্যেই ঘৃণা। আরেকটি উপায় বলেছেন জিহাদ করা। জিহাদ মানে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্যে বা প্রতষ্ঠিত করার জন্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। এটি মৌখিক হতে পারে,লেখনীর মাধ্যমে হতে পারে আবার শারিরীকভাবেও হতে পারে। এর একটি অংশ হল কিতাল,যা অস্ত্রের মাধ্যমে হয়। এটি প্রয়োজনের উপর নির্ভরশীল। আরও অনেক আয়াতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আরও অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু এই আয়াতে এই দুই বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই এই আয়াতের ভেতর কোনো পীর ফকিরে প্রবেশের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। স্রেফ দুনিয়াবী স্বার্থে কেউ এই আয়াতকে তাদের পক্ষে ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন !

আপনাদের কাছে প্রশ্ন:

----------------------

একজন বলছে এই পীর সেরা পীর,বড় পীর, উনি আল্লাহর কাছে তোমার ব্যাপারে সুপারিশ করবেন। এভাবেই পীরপন্থীরা কথা বলে।

আপনাদের জ্ঞানের কাছে প্রশ্ন এই যে, ওই লোকটি আল্লাহ কাছে সুপারিশ করবে বা অন্যকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে বা তাকে উদ্ধার করবে, এই তথ্য উনাকে কে দিল ? ফেরেশতা জীবরাঈল(আঃ) নিশ্চয়ই ওহী নিয়ে অবতীর্ণ হননি। তাহলে নিশ্চিত এই বিষয়টি তারা জানলো কিভাবে ?

আল্লাহ আখিরাতে তার প্রিয় ও ক্ষমা প্রাপ্ত বান্দাদেরকে অনুমতি দিবেন কিছু চাওয়ার। সে সময় মানুষেরা তাদের প্রিয় ব্যক্তিদের বিষয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ তা গ্রহন করবেন। এমনকি মুমিন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব থাকার কারনে জাহান্নামে যাওয়া কোনো পাপী যার ভেতর কিছুটা ভালো ছিলো, সেও উদ্ধার পাবে। কিন্তু কথা হল কেউ যদি দাবী করে আমিই সেই ব্যক্তি, যার সুপারিশ আখিরাতে আল্লাহ গ্রহন করবেন, তাহলে বলতে হবে সেই ভন্ড। কারন আমরা কেউ'ই জানিনা সেই ব্যক্তি কে। এই বিষয়টি নিশ্চিত হতে হলে আবারও ফেরেশতা জীবরাঈল(আঃ)কে ওহী নিয়ে আসতে হবে, যা সম্ভব নয়। বাহ্যিক আচরনে বাহ্যিক আচরনে তাকওয়া বোঝার কোনো উপায়ই নেই। তাকওয়া ভেতরের জিনিস,যা দেখা যায় না। ফলে কোনো পীর নিজের মহা গুনের কথা প্রকাশ করলে এবং আখিরাতে মানুষকে পার করিয়ে দিতে পারবে মনে করলে সে নিশ্চিত ভন্ড। কারন কারো কাছেই এই নিশ্চয়তা আসেনি। বরং আখিরাতে রসূল(সাঃ) আল্লাহর অনুমতিতে সুপারিশ করতে পারবেন, সেটা ভিন্ন বিষয়। আর জান্নাতিরাও তাদের আপনজনদের ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন, কিন্তু সেটা হাশরের মাঠ আসার আগে বোঝা সম্ভব নয়, কারা তারা। কাজেই ওসিলাহ নামক শব্দটি নিয়ে জড়িয়ে পেচিয়ে যুক্তি দিয়ে দুনিয়ায় পয়সা ও মর্যাদা ইনকামের হাতিয়ার বানানো থেকে বিরত থাকুন।

বিষয়: বিবিধ

৯১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386775
২৭ নভেম্বর ২০১৯ রাত ০৮:১০
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার
২৮ নভেম্বর ২০১৯ রাত ০৯:১৪
318442
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File