পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ। অনুবাদে: মুন্না ভাই(তার নিজস্ব স্টাইলে)

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৩১:২৬ সকাল



"........যখনই বিশ্বের কোথাও কোনো আত্মঘাতি হামলা হয়,তখনই তার সাথে একটা শব্দ উঠে আসে সেটা হল " ইসলামী সন্ত্রাসবাদ"। আর ভারত তো কিছু হলেই মন্ত্রপাঠের মত এ শব্দটি আওড়ায় এবং এসকল সমস্যার জন্যে পাকিস্থানকে দোষারোপ করে। অথচ ১লা সেপ্টেম্বর ২০০১ এর আগে এই শব্দটা শোনা যায়নি। ইসলামী সন্ত্রাসবাদ নামক শব্দটি পাশ্চাত্যে এত বেশী উচ্চারিত হয়েছে যে ,তাদের এই মার্কেটিংয়ের ফলে সৃষ্টি হয়েছে "ইসলামোফোবিয়া" বা মুসলিম ভীতি। .....মুসলিম নারীরা শরীর ঢেকে চলাচল করলে তারা ভয় পায়,,,কখনও আক্রমনও করে, অথচ ব্যক্তি স্বাধীনতার নিয়মানুসারে কেউ যদি শরীরের পোষাকের স্বল্পতা নিয়ে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে, তাহলে সে পূর্ণ অধিকার নিয়ে শরীর ঢেকেও চলতে পারবে।..............

নরেন্দ্র মোদী হলেন আর.এস.এস নামক সন্ত্রাসী ধর্মীয় সংস্থার আজীবন সদস্য। এই সংগঠন তৈরী হয়েছে জার্মানীর হিটলার,ইটালীর মুসোলিনীর আদর্শে। ভিন্ন ধর্ম, বিশেষ করে মুসলিমদের চিরতরে শেষ করে দেওয়ার নিয়তে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন। নরেন্দ্র মোদীর অনুপ্রেরনা ও নেতৃত্বে এই সংগঠন ২ হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছিলো এবং দেড় লাখ মুসলিমকে ভিটামাটি ছাড়া করেছিলো। এবং এই কারনে সে সময় নরেন্দ্র মোদীকে আমেরিকা ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। --------------------------

"নরেন্দ্র মোদীকে বললাম, আসুন আমরা আমাদের কমন সমস্যা নিয়ে একযোগে কাজ করি। দারিদ্র,জলবায়ুর প্ররিবর্তনে একসাথে কাজ করি। কিন্তু উনি প্রতিউত্তরে বললেন, পাকিস্থান সবসময় আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আমি বললাম, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পাকিস্থান করছে,করে এবং আমরাও এ সমস্যা মোবাবিলা করছি। কিন্তু আসুন আমরা সেসব বিরোধপূর্ণ বিষয় পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাই শান্তির জন্যে। কিন্তু মোদী তা মানল না। সে আমাদের সাথে সকল সংলাপ বাতিল করল।

ভারত নির্যাতিত কাশ্মীরে ২০ বছর বয়ষ্ক এক ছেলে আত্মঘাতি বোমা হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য হত্যা করল। মোদী সেই দোষ দিল পাকিস্থানের উপর। আমি বললাম, আপনি একটা প্রমান দেখান যে, পাকিস্থান এটায় জড়িত,তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করব। উনি দেখাতে পারলেন না, বরং পাকিস্থানের উপর বিমান হামলা চালালেন। আমরাও বদলা নিলাম এবং আমাদের শক্তি দেখিয়ে দিলাম। আমরা তাদের যুদ্ধ বিমানও ভূপাতিত করেছি এবং তাদের পাইলটকেও জীবিত আটক করেছি, কিন্তু সৌজন্যতা,উদারতার খাতিরে দ্রুত তাকে ভারতে ফেরত পাঠিয়েছি। এটা আমাদের উদারতা,দূর্বলতা নয়। আর মোদী আপনি বিমান হামলা চালিয়ে আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছেন। আপনি আমাদের ১০টি গাছ ধ্বংস করেছেন। আমরা আবহাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি,কাজ করছি, আপনি সেখানে আমাদের ১০টি গাছ বিনা কারনে বিমান থেকে বোমা বর্ষনে ধ্বংস করেছেন। এটা আমাদের একটা বিরাট ক্ষতি ! "-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

মাননীয় প্রেসিডেন্ট এটা কোন ধরনের চিন্তা ধারা যে, কাশ্মীরে মাত্র ৮০ লাখ লোকের জন্যে সেখানে ভারত ৯ লাখ সৈন্য মোতায়েন রেখেছে। ভারত কি মনে করে যে, তাদের এই অত্যাচারের কারনে সেখানকার জনগণ তাদেরকে সাদরে সম্ভাষণ জানাবে,শোষন মেনে নেবে এবং তারা নতি স্বীকার করবে ? মাননীয় প্রেসিডেন্ট , ভারতীয় সৈন্য কাশ্মীরে গত ৩০ বছরে ১ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ১১ হাজার নারীকে সৈন্যরা ধর্ষণ করেছে, এবং গত কয়েক দিনে তারা ১৩ হাজার যুবককে তুলে নিয়ে গেছে। কেউ জানেনা তাদের পরিনতী কি হয়েছে। আমরা জানিনা তাদেরকে গুম করা হয়েছে কি না, কিন্তু তাদের কোনো খোঁজ নেই।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আমি আপনাকে বলছি সেখানে কি ঘটতে যাচ্ছে। সেখানে ভারত ৫৫দিন ধরে কারফিউ জারি রেখেছে। সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত করেছে। ওদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে, এরপর ওরা একযোগে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে আর তখন ৯ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য ওদের উপর গুলি চালাবে। ওখানে রক্তের সাগর বইবে। নরেন্দ্র মোদী বলছে, কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্যে নাকি ৯ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন রাখা হয়েছে ! কি আশ্চর্য্য ! সৈন্যরা কবে সেখান থেকে ফিরে আসবে ? মোদীর কি এ বিষয়ে কোনো ধারনা আছে যে সেখানে কি চলছে ? কারো কি কোনো ধারনা আছে যে, সেখানে আসলে কি ঘটতে চলেছে ? সেখানে মুসলিমদের রক্তের বন্যা বয়ে যাবে।............সেখানকার কেবল মুসলিমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, হিন্দুরা নয়। তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে....।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনার কি মনে হয়, ভারত কাশ্মীরের জনগনের সাথে যে পশুসূলভ আচরণ করছে তার প্রতিক্রিয়া কাশ্মীরের পক্ষ থেকে কেমন হবে ? কি মনে হয় সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ? তারা হাজারের উপর মুসলিম লিডারকে গ্রেফতার করেছে ,এমনকি যারা ভারতের পক্ষে ছিলো সবসময়,তাদেরকেও গ্রেফতার করেছে, ১৩ হাজার যুবককে তুলে নিয়ে গেছে, তাদের পরিনতী কেউ জানেনা। এসব অত্যাচারের জবাবে কাশ্মীরের জনগণ কি করতে পারে বলে আপনাদের মনে হয় ? যখন কারফিউ তুলে নেওয়া হবে তখন কি ঘটবে ? ওরা রাস্তায় নামবে, আর ওদেরকে গুলি করে মারা হবে। ইতিমধ্যেই সৈন্যরা নিষিদ্ধ মারনাস্ত্র ব্যবহার করেছে ওদের উপর। এরপর জনতা ক্ষেপে উঠে নিয়ন্ত্রন হারালে ভারত বলবে, এটা ইসলামী সন্ত্রাসবাদ। ইতিমধ্যে তাদের এক মন্ত্রী বলেছে পাকিস্থান ৫০০ জঙ্গী পাঠিয়েছে কাশ্মীরে,,, কি হাস্যকর ! ৯ লাখ সৈন্যের বিপরীতে ৫০০ লোক কি করবে !!

যখন ৯ লাখ সৈন্য কাশ্মীরে তান্ডব চালাবে এবং জীবন বাচাতে কাশ্মীরীরা কোথাও কোথাও প্রতশোধ পরায়ন আচরণ করবে, তখন ভারত তার মুখস্ত মন্ত্র আওড়াতে থাকবে "ইসলামী সন্ত্রানবাদ"বলে। আর সারা বিশ্ব ওই শব্দেই বুদ হয়ে থাকবে। তারা ভুলে যাবে সেখানকার মানবাধীকার,জন মানুষের হাহাকার। ভারত নৃশংষতা চালাতেই থাকবে ওই "ইসলামী সন্ত্রাসবাদ" নামক শব্দটাকে পূঁজি করে।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়ত আরেকটি যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরী হবে ভারত ও পাকিস্থানের ভেতর। আর নরেন্দ্র মোদী কি দেখছেনা সেখানকার প্রতিক্রিয়া কি ঘটতে যাচ্ছে। আর আপনার কি মনে হয়, ভারতে বসবাসকারী ১৮ কোটি মুসলিম কি এটা দেখছে না ? তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা কি নরেন্দ্র মোদী ভেবে দেখেছে ? নরেন্দ্র মোদী সরকার কি ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের অন্তরে আঘাত দিয়ে তাদের ক্রোধকে বর্ধিত করছে না ? এরপর ওদের কেউ যদি ক্রুদ্ধ হয়ে ব্যক্তিগতভাবে হামলা করে বসে,তাহলে আবারও ভারত পাকিস্থানকেই দোষারোপ করবে। অথচ সমস্যা তারাই তৈরী করছে,দোষ দিচ্ছে পাকিস্থানকে।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনার কি মনে হয়, বিশ্বের ১৩০ কোটি মুসলিমের প্রতিক্রিয়া কি হবে এটা নিয়ে ? তারা দেখছে যে, কাশ্মীরের উপর অত্যাচার চলছে কেবল এই কারনে যে, তারা মুসলিম। আপনার কি মনে হয়, যদি ওখানে ৮০ লাখ মুসলিমের পরিবর্তে ৮০ লাখ ইহুদী নিগৃহিত অবস্থায় থাকত, তারা কি ভাবত ? তারা কি ব্যথীত হত না ? যদি ৮০ লাখ ইউরোপিয়ান ওখানে একই অবস্থায় থাকত,তাহলে ইউরোপের অন্য মানুষেরা কেমনভাবে চিন্তা করত ?? আমরা কি সকলে এক গডের তৈরী মানুষ নই ? আমাদের মনুষ্যত্ব এই পরিস্থিতিতে কি বলে ? এটা কি পুরো মানব জাতির জন্যে যন্ত্রনাদায়ক নয় ,যে মানব সমাজের কিছু অংশ চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছে সেখানে ?

আপনাদেরকে সতর্ক করছি এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কি ঘটতে পারে,তা নিয়ে। হতে পারে বিশ্বের ১৩০ কোটি মুসলিমের ভেতর কেউ না কেউ হাতে বোম্ব তুলে নিতে পারে। সেটা করবে এই কারনে যে, তারা কোথাও ন্যায় বিচার পাচ্ছেনা। আর এটা ভাবাই স্বাভাবিক। ইউরোপ,আমেরিকায় এমন অনেক সিনেমা তৈরী হয়, যেখানে একজন ন্যায় বিচার না পেয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এবং অপরাধীদের গুলি করতে থাকে। যদিও তার কাজটি আইন সমর্থিত নয়, কিন্তু পুরো দর্শক তার পক্ষই নেয়। ফলে এমন ধরনের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাস্তব জীবনেও কেউ আইন হাতে তুলে নেওয়ার চিন্তা করতে পারে এবং এটা অস্বাভাবিক নয়। আর সেটা কিন্তু ইসলামী মৌলবাদীতার কারনে নয়, বরং তারা যে অত্যাচার নির্যাতন দেখেছে, তার বিপরীতে একজন মানুষ হিসেবে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে হামলা চালাতে পারে,যদিও দোষ পড়বে ইসলামের উপর। কিন্তু এরকম প্রতিশোধের ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক।

ওদিকে মায়ানমারও ১০ লাখের বেশী মুসলিমের উপর চরম নির্যাতন করে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তো আপনার কি মনে হয়, ১৩০ কোটি মুসলিমের প্রতিক্রিয়া কি হবে ? মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আমি আপনাকে বলছি আমার প্রতিক্রিয়া কি ।

আমি যদি কাশ্মীরের একজন সাধারন মানুষ হতাম, যদি ৫৫দিন যাবত আমি অবরুদ্ধ থাকতাম, যদি আমি দেখতাম আমার সামনে সৈন্যরা হত্যা আর ধর্ষন করছে, তাহলে আমার প্রতিক্রিয়া কি হত !! আমি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নিতাম এবং অত্যাচারী সৈন্যদের উপর গুলি ছুড়তাম। নরেন্দ্র মোদী, আপনি মুসলিমকে সেদিকে ধাবিত করছেন।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আমি আবারও বলছি, কাশ্মীরের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্থান ও ভারতের মত দুটি পারমানবিক ক্ষমতাধর দেশ মুখোমুখি হবে,যুদ্ধের জন্যে তৈরী হবে, যেমনটা পূর্বে তারা করেছিলো। কাজেই আমি চাইব, জাতিসংঘ এখানে ভূমিকা নিক। এটা ১৯৩৯ সাল নয়, এটা একাবিংশ শতাব্দী, জাতিসংঘ এখন সাফল্যের সাথে ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্বাস করি। আপনার এখানে সরাসরি ভূমিকা রাখুন।

আমি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে, যদিও পাকিস্থান ভারতের চেয়ে আয়তনে ৭গুন ছোট, কিন্তু তারপরও যদি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় , যখন আমাদেরকে হয় আত্মসমর্থন করতে হবে, নয়ত যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করতে হবে, তাহলে আমরা কি করব ? আমি নিজেকে এই প্রশ্ন করেছি। আমার উত্তর হল, আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি- " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা নেই। আমরা আল্লাহর নামে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। আর আপনাদেরকে সতর্ক করছি, যখন দুটো পারমানবিক শক্তিশালী দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হবে,তখন এর প্রতিক্রিয়া কেবল ওই দেশদুটোর বর্ডারে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটা ছড়িয়ে পড়বে বহুদূর পর্যন্ত। আমি আপনাদেরকে সতর্ক করছি। আর জাতিসংঘ একমাত্র সংস্থা,যারা এ মুহুর্তে কাশ্মীরের জনগনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। আর এক নাম্বার দায়িত্ব হল এই যে, ভারতকে অবশ্যই কারফিউ বন্ধ করতে হবে, ভারতকে অবশ্যই তাদের ৯ লাখ সৈন্য কাশ্মীর থেকে সরিয়ে আনতে হবে। অবশ্যই ভারতকে রাজনৈতিকভাবে বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। অবশ্যই ১৩হাজার যুবকদেরকে মুক্ত করে দিতে হবে। আর অবশ্যই কাশ্মীরীদেরকে তাদের সার্বিক অধিকার,নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ধন্যবাদ। "

বি:দ্র: খুবই সংক্ষিপ্তাকারে অনুবাদ করতে গিয়ে হালকা বড় হয়ে গেল। কারন বক্তব্যটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার বক্তব্যের শেষের দিকের অংশটাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছি।

বিষয়: বিবিধ

৬৬০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386744
০৮ অক্টোবর ২০১৯ সকাল ০৭:২৪
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File