শেরী====

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৯:২৩:৩৯ রাত

আজ যা শুনলাম তা শোনার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না। পাশ্চাত্যের সাংষ্কৃতিকে যারা আদর্শ বানিয়েছে তাদের জন্যে পাহাড় পরিমান দু:খ। লাঞ্চ টাইমে একই টেবিলের অন্যপাশে বসা ছিলো দুজন মেয়ে কলিগ। ২৪ বছর বয়ষ্কা সুন্দরী মেয়ে শেরী অন্য মেয়েটাকে বলছিলো, তার সাম্প্রতিক বয় ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে গেছে। তাদের দেখা হয়েছিলো হুটহাট করে। অত্যন্ত সুদর্শন হওয়াতে মেয়েটা তার প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়। খুব দ্রুত তারা লিভটুগেদার করতে থাকে।

চলছিলো ভালো, কিন্তু কিছুদিন পূর্বে মেয়েটার পেটে ব্যাথা হয় এবং ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার পরিক্ষা করে দেখতে পায় সে প্রেগন্যান্ট। এটা সে আশা করেনি,কারন সে জন্ম বিরতিকরণ পিল খেয়েছিলো। তবে তা যে কাজ করেনি,সেটা বুঝতে পারল। বিষয়টা সে তার বয় ফ্রেন্ডকে জানালো। বয়ফ্রেন্ড বলল, "এবরশন করে ফেলো। এখনও আমি সন্তানের ব্যাপারে প্রস্তুত নই।" বিষয়টা নিয়ে কিছু বাকবিতন্ডা হয় এবং ছেলেটা তাকে ছেড়ে চলে যায়।

আজ মেয়েটা বলছিলো, তার মা থাকে দূরে এবং তিনি অসুস্থ্য। এখন নিজের সন্তান হলে সেটার দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। চাকুরী করে একা এক মেয়ের পক্ষে কোনোভাবেই সন্তান লালন পালন করা সম্ভব নয়। ৭ বছরের আগে কোনো সন্তানকে বাড়িতে একা রেখে যাওয়া যায় না। এটা আইনের খেলাপ। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত সন্তান পালন একেবারেই অসম্ভব যদি সাহায্যকারী না থাকে। এটা সম্ভব বেবী সিটারের কাছে সন্তান দিয়ে। কিন্তু একজন বেবী সিটার সন্তান পালনের জন্যে যে পয়সা আশা করবে, সেটা প্রদান করে বাকী টাকায় এই মেয়ে জীবন চালাতে পারবে না। ভোগবাদী সমাজে কেউ কারো দায়িত্ব নিতে চায়না, কিন্তু মজা সবাই নিতে চায়। বয়ফ্রেন্ড পালিয়ে বেঁচে গেছে। নইলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে তাকে মোট খরচের অর্ধেক দিতে হত। অবশ্য এই সন্তানের ব্যাপারে মেয়েটা ওই ছেলের কাছে ভরনপোষন চাইতে পারে আইনীভাবে, কিন্তু আইনেরও অনেক ফাঁক আছে। তাছাড়া আইনী লড়াই করতেও পয়সা লাগে। আর এ মেয়ে এরকম নয় যে লড়াই করতে যাবে।

আমি খুব খেয়াল করে শুনছিলাম কারন সে প্রবল বিপদগ্রস্ত। মেয়েটা তারপর বলল, "আমি এবরশনই করব, কোনো উপাই নেই। আমার মাত্র ৮ সপ্তাহ চলছে, কিন্তু ডাক্তার বলেছে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত নিরাপদে এবরশন করা যায়। "

আমি খাওয়া বন্ধ করলাম। এবং দু:খ প্রকাশ করে তাদের কথার ভেতর প্রবেশ করলাম। যদিও আমেরিকাতে কেউ কারো কথার ভেতর প্রবেশ করেনা, কিন্তু আমি করলাম। কারন মনে হল, যে কথা আমার শোনার কথা নয়, সেটা আল্লাহ আমার কানে তুলেছেন, নিশ্চয়ই এর ভেতর কোনো রহস্য আছে ! শেরীকে বললাম, আমি শুনেছি তোমাদের কথা, আমি দু:খিত অংশ গ্রহনের জন্যে,কিন্তু আমার মনে হচ্ছিলো আমার কিছু কথা বলা উচিৎ, কারন তুমি আমার সহকর্মী, আমি চাই তোমার কল্যান হোক। আমি কি কিছু বলব ?

সে অনুমতি দিল। বললাম, দ্যাখো, তোমরা দ্রুত একটা সম্পর্কে জড়িয়েছো এবং একে অপরকে বিশ্বাসও করেছো এবং তুমি প্রটেকশনও নিয়েছো কিন্তু সেটা কাজ করেনি। স্বাভাবিকভাবে এটা কাজ করারই কথা। আমার মনে হয়, গড চেয়েছিলেন তোমাকে সন্তান প্রদান করতে এবং তিনি তা দিয়েছন। পেটের সন্তানের বয়স ৪০ দিন হলে তার ভেতর জীবন আসে,সন্তানটি জীবন্ত মানুষ হয়ে বাড়তে থাকে। আমি তোমাদের এই বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক পছন্দ করিনা,আমি ভিন্ন সাংষ্কৃতির মানুষ, সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু তোমার ভেতর জীবন্ত একটি মানুষ দিয়েছেন স্রষ্টা এবং সে বেড়ে উঠছে তোমার ভেতর। তুমি এই সন্তানকে হত্যা করোনা। গড তোমাকে ক্ষমা করবেন না। আর যখন সেটা জীবন্ত ছিলোনা, তখন এবরশন করলে একটা কথা ছিলো, কিন্তু এখন তো সে জীবন্ত একটা মানুষ। তুমি খুন করতে পারোনা। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, এবরশন করলে চীরতরে সন্তানের মা হবার ক্ষমতাও চলে যায়। যে ছেলেটা তোমাকে ঠকিয়েছে তার উপর ক্ষোভের কারনে অথবা অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারনে একাজ করোনা। আর তুমি লালন পালনের কথা ভাবছ ! এখনও অনেকগুলো মাস আছে, নিশ্চয়ই একটা সমাধান পেয়ে যাবে। আর যদি সেটা নাও হয়, তুমি কাওকে দত্তক দিয়ে দিও,কোনো সংস্থাকে দিয়ে দিও , কিন্তু সন্তানটা হত্যা করোনা। আর এমনও হতে পারে, সন্তান তুমিই পালন করতে পারছো, পরে তো সেটা হতেও পারে। আর তা না হলে অপশনগুলো তো তোমার হাতেই আছে।

মেয়েটা গভীর দু:খের সাথে বলল- হ্যা গড এই সন্তান আমাকে দিয়েছে। এটা তো হওয়ারই কথা ছিলোনা। আমি একে হত্যা করব না। আমি একে দত্তক দেব ভাবছি। সন্তানটা খুব সুন্দর হবে। ওই লোকটা খুবই সুদর্শন আর আমরা দুজনেই সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী। যেই বাচ্চাটা পাবে, খুব খুশী হবে। বললাম, তোমরা আগে বিয়ে না করে কেন যে এসব করো ! সে বলল, আগে বিয়ে করবে এমন ছেলে পাওয়া খুবই কষ্টকর, এটাই প্রচলন।

উল্লেখ্য: বিয়ে করলে এদেশে নানান রকমরে বিধি বিধানের আওতায় চলে আসতে হয়। বেশ কিছু জটিলতা আছে, ফলে লোকেরা সহসা বিয়ের দিকে আগায়না। কিন্তু মজা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত লোকশান হয় মেয়েদের। একই বিষয় বাংলাদেশেও ঘটছে ইদানিং বেশ, কিন্তু বাংলাদেশে এই ঘটনা ভয়াবহ জটিল। এখানে তো বয়ফ্রেন্ড গার্ল ফ্রেন্ডরা স্বামী স্ত্রীর মতই অধিকার আদান প্রদান করে, আবার পরে বিয়েও করে। কিন্তু দেশে বয় ফ্রেন্ডরা নানানভাবে ফুসলিয়ে মজা করে পরে কেটে পড়ে। পরে বলে -মেয়ে চরিত্রহীন। মেয়ে উচ্চবাচ্য করলে টাকা পয়সা,প্রভাব দিয়ে থামানোর চেষ্টা করে। এবং সে কুমারী মেয়ে বিয়ে করার জন্যে নিয়ত করে বসে থাকে,করেও। লোকসান হয় মেয়েটার।

শেরীকে বললাম, তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো। মনে মনে আল্লাহর কাছে তার হেদায়াতের দোয়া করলাম। হাতে সময় ছিলোনা, উঠতে হল। সুমহান আল্লাহ তার ও সন্তানকে এমন পথের দিশা দিক, যে পথে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হওয়া যায়।

বিষয়: বিবিধ

৫৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File