জিম জনসনের সাথে সাক্ষাৎ

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১০:৪৪:১০ সকাল



--------------------------------------

আমেরিকার সামরিক বাহিনীর যত লোককে চিনি তাদের বেশীরভাগই কোনো না কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অবসরে গেছে। জিম জনসন এদের একজন। সামরিক অফিসার হিসেবে সে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেয়। অবসর নেওয়ার পর এইচ.পি(হিউলেট প্যাকার্ড) কোম্পানীতে জব করে এবং সেখানে ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়। এরপর থেকেই তার সাথে আমার দেখা। খুব পছন্দ করে লোকটা আমাকে। সম্প্রতি আরও বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে লেবাননের ভেটেরান্স হোমে স্থানান্তরিত হয়। এখানেই সে বাকী জীবন কাটাবে।

কম্পিউটারে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করা আর বাস্তবের যুদ্ধে অংশ নেওয়া এক কথা নয়। দুনিয়ার বহু দেশের আর্মী,বিশেষ করে পাশ্চাত্যের আর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নানান মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে। এর কারন এই যে, তারা দ্যাখে তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের আঘাতে নারী,শিশু,বয়োবৃদ্ধও মর্মান্তিক মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করে করুনভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অনেকে চীরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে। সুন্দর সুস্থ্য মানুষের বিকৃত লাশ দেখে বহু সৈন্য নিজেদেরকে দোষী মনে করে। এই ভাবনা তাদেরকে মারাত্মকভাবে যন্ত্রনাকাতর করে তোলে। অনেকে দ্রুত দেমে ফিরতে চায়, অনেকে চাকুরী ছেড়ে দেয়,অনেক সৈন্য আত্মহত্যাও করে। এ কারনে সৈন্যদের মানসিক শান্তনা বা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা সমাধানকল্পে সামরিক বাহিনীতে মনোরোগ চিকিস্যকদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয় অনেক।

আজ ছুটি ছিলো। সকালে ভাবলাম আজ জিমের সাথে দেখা করতেই হবে। তার স্ত্রীকে ফোন করলাম কিন্তু রিসিভ করল না। একটা ভয়েস মেসেজ দিয়ে অপেক্ষা করলাম কিন্তু তার কোনো খবর নেই। দুপুরে সানিসাইড পার্কে যাবার পথে ভেটেরান্স হোমসে গেলাম। খুবই সুন্দর একটা স্থানে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে এই নার্সিং হোমস তৈরী হয়েছে। এখানে আসলে প্রান জুড়িয়ে যায়। সামরিক বাহিনীর অকেজো সদস্যরা এখানে আসে জীবনের শেষ সময়গুলো পার করতে। বিনোদনের অনেক ব্যবস্থাই আছে কিন্তু এদের ভেতর সেই প্রাণ নেই তা উপভোগের।

দেখলাম বিশেষ ধরনের অটোমেটিক হুইল চেয়ারে বসে আছে জিম, পাশে তার স্ত্রী। আমাকে দেখে এতই খুশী হল যে,তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। বলল, কেমন আছো তুমি ? বললাম খুব ভালো, মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ, আসলেই আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন। সে দু:খ প্রকাশ করল যে গতবার এসে ফিরে গিয়েছি। আমরা বিশাল লিভিংরুমে বসলাম। জিমের বৃদ্ধা স্ত্রী বলল কোনো পানীয় খাব কি না ? বললাম, শুধু পানি।

এবার গল্পের পর গল্প চলল। আমার দেশ,সাংষ্কৃতি,খাবার নিয়ে কথা হল। জিমের স্ত্রীর বহু বিষয়েই জ্ঞান নেই কিন্তু জিমের দেখলাম বেশ জ্ঞান দুনিয়ার ব্যাপারে। তার দুটো হাত থরথর করে কাপে। শরীরের ওজন অনেক কমে গেছে। শরীরের বাম পাশটা পুরো অকেজো কিন্তু মেশিন দিয়ে তাকে কোনো রকমে কর্মক্ষম করে রেখেছে। বার বার বলছিলো আমার আগমনে সে কুবই খুশী হয়েছে। বললাম, আমি রান্না পারি বেশ, ওরা কি তোমাকে বাইরের খাবার খেতে দিবে ? সে বলল না, ডাক্তারের বিধি নিষেধ আছে তাছাড়া তার পেটে নানান ইনফেকশন আছে। বললাম আমাদের দেশের লোকেরা খাবার তৈরীর পেছনে প্রচুর সময় ব্যয় করে। তার স্ত্রী বলল, প্রায় ৪০ বছর আগে আমেরিকাও এমন ছিলো। পরে এরা ফাস্টফুডের দিকে চলে গেছে। বললাম, আমাদের দেশের লোকেরাও এখন ব্যপকভাবে ফাস্টফুডের দিকে ঝুকছে। জিম বলল, এর মত ভয়ানক আর কিছু নেই। এসব খাবার মানুষকে ভেতর থেকে মেরে ফেলে, শরীর থেকে প্রান কেড়েে নেয়।

আমি জিমকে একটা বড় চকলেট দিলাম,খুব খুশী হল সে। সবসময় আমার মাথায় যেটা ঘোরে তা হল এই যে, মানুষ আমার কিতাব পড়ে দ্বীন বুঝতে আসবে না, বরং মুসলিমের ব্যক্তিগত আকলাখ দেখে তারা ইসলাম জানার চেষ্টা করবে। ইসলাম নিয়ে কথা বললেই দাওয়াহ হয়না। দাওয়াহ এক ব্যপক অর্থবহ বৈধ কৌশলের নাম। যুগে যুগে অমুসলিমরা মুসলিমদের আচরণ দেখেই ইসলামে প্রবেশ করেছে। আল্লাহ আমার নিয়ত জানেন। আমি যা কিছু করি,তার প্রতিদান কেবল আল্লাহর থেকেই চাই। নিশ্চিতভাবেই মানুষ প্রতিদান দিতে সক্ষম নয়।

বিদায় নিয়ে সানিসাইড পার্কে গেলাম। আজ সাঁতরালাম বেশ।

বিষয়: বিবিধ

৮২২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386727
৩১ আগস্ট ২০১৯ রাত ১১:৩৫
ইমরান বিন আনোয়ার লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। গল্পটিও প্রাণ জুড়িয়েছে। যথার্থ বলেছেন! আমাদের আখলাক দেখে মানুষ ইসলামের পথে আকৃষ্ট হবে। বই পড়ে কজনই বা চেইঞ্জ হয়! সুন্দর লেখনীর জন্য অভিনন্দন।
২৮ নভেম্বর ২০১৯ রাত ০৯:২৬
318450
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File