সাজিদের বন্ধু নাকিশো

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ জুলাই, ২০১৯, ০৯:৪৯:০৩ সকাল



সাজিদ জাপানে স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করছে। তার বন্ধুরা তাকে খুব পছন্দ করে। পড়াশুনায় ভালো শুধু তাই নয়, সে খুবই পরোপকারী আর পরিচ্ছন্ন। কোথাও বসে আড্ডা দিলে সে সকলের বিল দিতে চায়, বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ায়। যেখানে থাকে সেটা খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। সাজিদের বন্ধুরা বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন জানেনা, তবে এটুকু জানে ওটা গরিব অথবা উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু সাজিদের সাথে মিশে এতটুকু বুঝেছে বাঙ্গালীরা খুবই পরিচ্ছন্ন। এক সামারে সাজিদের বন্ধু 'নাকিশো কনে মুতি' বললো , এবার সামারের ছুটির ১ সপ্তাহ তোমাদের দেশে কাটাব তোমার সাথে, কি বলো ? সাজিদ ঢোক গিলে বললো, অবশ্যই....।

ঢাকা এয়ারপোর্টে এসে নাকিশো দেখলো তার লাগেজ আসেনি। সে বন্ধুর সাথে অভিযোগ করতে গেল বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নির্দিষ্ট কাউন্টারে। তাকে আরেক অফিসারের কাছে পাঠানো হল। সেই অফিসার আরেকজনের কাছে পাঠালো। সেই অফিসার বলল, এটা তো অভিযোগের স্থান না, প্রথমে যেখানে গিয়েছিলেন সেটাই ছিলো অভিযোগের স্থান। নাকিশো সাপ-লুডুর মত সাপের ছোবল খেয়ে আবার পেছনে চলে গেল। গিয়ে দ্যাখে সেই লোক নেই। তার খোঁজ কেউ জানেনা। কেউ বলে সে বাড়ি চলে গেছে, কেউ বলে সে টয়লেটে গেছে, কেউ বলে তার খবর জানিনা,কেউ বলে সে মরে কুত্তা হয়ে গেছে। ২ ঘন্টা পর একজন বলল, উনি চলে গেছেন, আগামী কাল আসবেন। তবে তার অভিযোগ গ্রহন করা হল এবং পরেরদিন রাত ১২টায় বিমানবন্দরে আসতে বললো।

নাকিশো বিমান বন্দরের বাইরে এসে ভয়ে আবার ভেতরে ঢুকলো। তার বন্ধু বলল, কি হল ? সে বলল, দাঙ্গা,মারামারি মনে হয়। সাজিদ বলল,কই, কিছুই তো দেখছি না। নাকিশো বললো হাজারে হাজারে লোক বাইরে ঠাসাঠাসি করে দাড়িয়ে আছে,উচ্চস্বরে চিৎকার করছে, তবে ওরা কারা ?

সাজিদ বললো, ওরা সাধারন মানুষ, স্বজনদের বিদায় দিতে অথবা গ্রহন করতে এসেছে। একজনকে এদেশে বিদায় দেয় দশ জনে, আর গ্রহনও করে দশ জনে। নাকিশোর এটা খুব ভালো লাগল, এরা বন্ধুবৎস্যলই হবে। একের প্রতি অপরের মায়া আছে, এটার অনেক দাম।

এবার নাকিশো আর সাজিদ ঢাকা শহর ঘুরে দেখছে। প্রচন্ড ভাপ ওঠা গরম আবহাওয়া আর ধুলোর পরশে নাকিশো ময়লা হয়ে গেল। রাস্তার ফুটপাশে হাটতে গিয়ে দেখলো লাখে লাখে বনি আদম একটার মাথার উপর আরেকটা। সাজিদ তাকে মোটামুটি পরিচ্ছন্ন স্থান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু এক খালের পাড়ে যেতেই সাজিদ বললো, বন্ধু চলো ওদিকে যাই, কিন্তু তার আগেই নাকিশো খালের চেহারা দেখে ফেলেছে। সে বললো, আচ্ছা এটা কি পচা বোতলের লেক ? জানো, আমি জেনেছি সমুদ্রে উন্নত বিশ্বের লোকেরা নানান বর্জ্য ফেলে আর সেটা অনেক গরিব দেশের সমুদ্র সৈকতে এসে পড়ে, উন্নত বিশ্বের বর্জ্যের দায় নেয় গরিব দেশগুলো। এর বিহীত হওয়া উচিৎ। সাজিদ বলল, হ্যা বন্ধু হ্যা, সেটাই সেটাই......সাজিদ যেন এ যাত্রায় যেন বেঁচে গেল..!

কিন্তু কিছুদূর যাবার পর নাকিশো এক খোলা ম্যানহোলের পাশে এসে দাড়ালো। পরক্ষনেই চমকে উঠলো কারন খালি গায়ে এক লোক ম্যানহোল থেকে দুনিয়ার বর্জ্য মেখে উপরে উঠছে। নাকিশো বিশ্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। লোকটা নাকিশোকে জিজ্ঞেস করলো , কি নাম ? বুঝতে পারছে না দেখে বললো....কি নেম ? এবার নকিশো বুঝতে পারলো তার নাম জানতে চাইছে,,সে বললো, আই এ্যাম নাকিশো কনে মুতি । ক্লিনার লোকটা বললো, কনে আর মুতবেন, আমি সরে যাচ্ছি এই ম্যানহোলেই মোতেন। লোকটা সরে গেল, সাজিদ এসে নাকিশোকে ছো মেরে আরেক স্থানে নিয়ে গেল।

নাকিশো বললো আচ্ছা তোমাদের বুড়িগঙ্গা নদী নাকি টেমস নদীর চাইতে সুন্দর শুনেছি, টেমস তো দেখিনি, চলো বুড়িগঙ্গা দেখে আসি। সাজিদ বললো, যাওয়ার দরকার নেই,, মানে নদী তো সুন্দরই,,,আসলে সব নদীই তো সুন্দর.....ওটা দেখার কি আছে !....আচ্ছা চলো বিমানবন্দরে যাই লাগেজ আনতে। পথে নাকিশো বললো, আচ্ছা সাগরের সাথে তোমাদের মাটির নীচের ড্রেনগুলোরও কি সরাসরি সংযোগ আছে ? সাজিদ বললো- না, তা কেন হবে ? সে বললো, না মানে ওই যে দেখলাম- ম্যানহোলের ভেতর দিয়ে পুরোনো প্লাস্টিকের বোতল, এটা সেটা তুলে এনেছে..। সাজিদ বললো, আমার ঠিক জানা নেই, হতেও পারে সাগরের সাথে কোনো হয়ত সংযোগ আছে...। নাকিশো বললো, কিন্তু ম্যাপে তো সেরকম কিছু দেখিনি...। সাজিদ বললো, ওরে বিটা,,,তুই একটু থামরে....কি আর কবোরে ভাই,,,,মানে বন্ধু....আচ্ছা থাক সে কথা,,, বোতল তো ওখানে .....আচ্ছা তুমি ফিরবে করে জাপানে ?..... সাজিদের মাথা আউলায় গেছে দেখে নাকিশো থামলো।

নাকিশো নির্দিষ্ট অভিযোগপত্র নিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হল কিন্তু তাকে জানালো তার লাগেজ আসেনি। তবে ২ দিন পর সে তার লাগেজ ফেরত পেল কিন্তু তালা ভাঙ্গা। তার মনেও নেই আসলে এর ভেতর কি কি ছিলো,আর কিছু খোয়া গেছে কিনা। ব্যাগটি পেয়েই সে খুশী হল, ভেতরে অন্তত তার দামী ক্যামেরাটা আছে । সে এটা দিয়ে ঢাকা শহরের ছবি তুলতে লাগল।

তবে সাজিদ তাকে এখনও বুড়িগঙ্গা দেখাতে নিয়ে যায়নি। সাজিদ তার বন্ধুর ঢাকার সমস্ত সময় নানাভাবে নষ্ট করে ফেললো কিন্তু বুড়িগঙ্গায় নিল না। কেন নিলনা, সাজিদ সেটাও পরিষ্কার বলেনি, কোথায় যেন তার খুব ভয় আর প্রবল লজ্জাবোধ কাজ করছে। সাজিদের মনে কোনো শান্তি নেই। বুক ফুলিয়ে হাটা ছেলেটা ভেজা ইঁদুরের মত চুপসে গেছে। নাকিশো মোটামুটি ফুরফুরে আমেজে থাকলেও সাজিদ প্রচন্ড চুপসে গেছে। নাকিশোর দেশে ফেরার সময় হয়ে গেছে, তবে তার দু:খ সে বুড়িগঙ্গা দেখতে পেলনা, লন্ডনের টেমস নদী কবে দেখবে তারও কোনো খবর নেই !!

বিষয়: বিবিধ

৬৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File