হুড রিভার টু লস্ট লেক

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ জুলাই, ২০১৯, ০৮:৫২:৩৮ রাত



------------------------

১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই আমেরিকা বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায়। ব্রিটিশরা আমেরিকানদের প্রতি বিশেষ করে নেটিভ আমেরিকান(কলম্বাসের ভাষায় রেড ইন্ডিয়ান) বা বলতে পারেন কালোদের উপর মারাত্মক সব জুলুম করেছিলো। যদিও ব্রিটিশরাই আমেরিকানদেরকে ইংরেজীর সবক দিয়েছিলো তারপরও স্বাধীনপ্রাপ্তীর পর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমেরিকানরা ভাষার প্রয়োগের ব্যাপারে এবং অন্য প্রায় সবকিছুতে ব্রিটিশদের বিরোধীতা করে থাকে। থাক সে কথা, আমার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে বাংলাদেশ ও আমেরিকার, আমেরিকাও আমার দেশ। ফলে জাতীয় অনেককিছুর সাথেই একমত পোষণ করতে হয়। তবে যেসব বিষয়ের সাথে ইসলামের দ্বন্দ রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে আমার পক্ষ থেকে ছাড় নেই। আর আমেরিকার আইন ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কোনো রকম প্রতিবন্দকতা রাখেনি বরং নিশ্চিন্তে ধর্ম পালনে সহযোগীতা করে থাকে। বিশাল সংখ্যক মুসলিমের দেশ বাংলাদেশেও অনেক ক্ষেত্রে ইসলাম নির্বাসিত, অথচ সেসব ক্ষেত্রে বলা যায় আমেরিকা এগিয়ে। ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই তৎকালীন মজলুম আমেরিকার বিজয় হয়। ব্রিটিশরা বিনা কারনে এদের উপর নির্যানত করত। মজলুম যে ধর্মেরই হোক না কেন, আল্লাহ তার পক্ষে থাকেন এবং যালিমের যেই ধর্মীয় পরিচয়ই থাকুক না কেন, আল্লাহ তার বিরুদ্ধে থাকেন।

তবে এটা ঠিক বাইরের দেশ থেকে এসে নাগরিক হওয়া লোকদের ভেতর নতুন দেশের অনেক বিষয়ের প্রতি আবেগের ঘাটতি থাকে, কিন্তু শ্রদ্ধাবোধ থাকে। আমারও আছে। তবে আমি আসলে ছুটির দিনগুলো উপভোগ করি হালাল উপায়ে। এখানে যেকোনো দীবস সেলিব্রেট করার নিজ্স্ব কিছু নিয়ম আছে। অফিসিয়াল পার্টিও থাকে, কিন্তু আমি এসবে অংশ নেইনা। আমি ছুটির দিনসমূহ আমার স্টাইলে উপভোগ করি।

পূর্বেই পরিকল্পনা ছিলো লস্ট লেকে যাব। ভোর ৩.৪৫ এ ঘুম থেকে উঠে ফজর পড়ে রেডী হতে সময় গড়ালো ৪.১৫তে। এর ২/৩ মিনিট পর রওনা হলাম। সূর্য্য উঠতে ১ ঘন্টা বাকী কিন্তু আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। রাস্তায় গাড়িঘোড়া এ সময় খুব কম থাকে। আমি দূরের ভ্রমনে এই সময়টাই বেছে নেই। খুব ভোরের ড্রাইভটা খুব দারুন হয়। ভ্রমনে সঙ্গী হল চকলেট,কফি,চিপস,সফ্ট ড্রিংস, এটাসেটা। সাথে নিয়েছি বোট,লাইফ জ্যাকেট,ফিশিং পোল ও যাবতীয় মাছের জিনিস,একদিন থাকার কাপুড়চোপড় ইত্যাদী।

হাইওয়ে ৫ ধরে উডবার্ণের কাছে এসে দেখী সকালটা খুব সুন্দর। খুবই পরিচ্ছন্ন আর মোলায়েম। চারিপাশের ফসলের ক্ষেত,ঘাসের সবুজ ভূমীর উপরিভাগে সাদা কুয়াশা জমা হয়েছে। কুয়াশাগুলো শুধুমাত্র ক্ষেতের উপরিভারে অবস্থান করছে। এর উচ্চতা মাত্র কয়েক ফুট হবে, চারিদিক ও আকাশ পুরো পরিষ্কার। ওয়াল্লাহি সেই কুয়াশার সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। অসাধারণ সুন্দর কুয়াশা ক্ষেতগুলোকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আমি বার বার তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম সুবহান্নাহি ওয়া বিহামদিহি, আল্লাহ দুনিয়াতেই কত সৌন্দর্য্য রেখেছেন ! না জানি জান্নাত কত সুন্দর ! এজন্যেই বোধহয় আল্লাহ দুনিয়া ভ্রমন করতে বলেছেন, যাতে আল্লাহর প্রতি বেশী কৃতজ্ঞ হতে পারি।

পোর্টল্যান্ডের কাছে এসে মনে পড়ল, এই যাহ , এত দাম দিয়ে কোল্ড বক্স কিনলাম মাছ সংরক্ষনের জন্যে, আর সেটাই রেখে আসলাম ! এর ভেতর বরফ দিয়ে নিশ্চিন্তে মাছ/যেকোনো কিছু ২৪-৩০ ঘন্টা তাজা রাখা যায়। আবার মনে হল, আমি মাছ পেলে তো ! আগে মাছ পাই, পরে দেখা যাবে। চলতে থাকলাম। আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ। এবার সাথে মোটর হোম আনিনি,কারন হল এতে তেল খায় প্রচুর। আর এটা যেখানে সেখানে পার্ক করা যায় না, চলতে হয় ধীরে এবং বেশী জায়গা নিয়ে চলে বলে বেশী সতর্কতায় ড্রাইভ করতে হয়। কিন্তু ছোট গাড়িতে মজা বেশী। কম সময়ে হুড রিভার যাওয়ার জন্যে পোর্টল্যান্ডের ভেতর দিয়ে হাইওয়ে ৮৪ ধরলাম। এরপর কলাম্বিয়া নদীর পাশ ধরে ওরেগন সিটি হয়ে ক্যাসকেড লক পার হয়ে আরও অনেকক্ষন পর হুড রিভারে আসলাম। এখান থেকে রাস্তা উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। বিশাল সব পাহাড়ী ফল,ফসলের ক্ষেত খামার এদিকে। সৌন্দর্য্যের তুলনা হয়না। মাউন্ট হুড এখান থেকে খুব সুন্দর দেখায়। এ এলাকায় ধনীদের বাড়ি বেশী। পাহাড়ী সৌন্দর্য্যের এই লীলাভূমীতে ধনীরা দারুন সব বাড়ি তৈরী করেছে। জীবন খুবই মোহনীয়।

লস্টলেক ড্রাইভ ধরে এগিয়ে চললাম। শেষ প্রায় দশ মাইল রাস্তা খুব আঁকাবাঁকা। এসব রাস্তায় চলার সময় আমার অনেক সময় মোশন সিকনেস কাজ করে। এ ভ্রমনেও হালকা হল, তবে সমস্যা হয়নি। যেকোনো সাইজের মোটর হোমের ক্ষেত্রে দিনের বেলা এই ফরেস্ট এরিয়াতে অবস্থান করলে ৯ ডলার দিতে হয়, কিন্তু ছোট গাড়িতে পয়সা লাগেনা। একেবারে লেকের মূল অংশের কাছে পার্ক করলাম। এখানকার লজগুলো এবং সকল ক্যাম্পগ্রাউন্ড পরিপূর্ণ। শত শত লোক তাবু টাঙিয়ে লেকের নানান স্থানে অবস্থান করছে। বেশীরভাগই দল বেধে এসেছে। এরা খুব উপভোগ করে জীবনটাকে। ধনী গরিব ব্যাপার না, সকলেই চেষ্টা করে জীবনকে আনন্দঘন করতে। পুরোদমে কাজ এবং পুরোমাত্রায় উপভোগ, এটাই এদের জীবন। আর আমরা বাঙ্গালীরা আল্লাহর উপর মৌখিক আস্তা রেখে হা-হুতাশ করতে করতে জীবন পার করি। সমস্যা কম থাকলেও তা টেনে লম্বা করি, সমস্যা না থাকলে পয়দা করি এবং যেভাবেই হোক জীবনটাকে হাহুতাশময় করে বেঁচে থেকে জান্নাতের স্বপ্ন দেখী। অথচ আমরা যেভাবেই থাকি না কেন সেটার উপর সন্তোষ প্রকাশ করে হতাশাবিহীন জীবনযাপন করতে বলেছেন আল্লাহ তায়ালা। হতাশ হওয়ার আরেক মানে হল আল্লাহর উপর থেকে আস্থা উঠে যাওয়া বা কমে যাওয়া, এটা আমরা অনুভব করিনা।

ক্যাম্পিংয়ে থাকা লোকেরা এখানে বারবিকিউ করে,এমনেই আগুন জ্বালিয়ে আনন্দ করে,পরষ্পর পরষ্পরের আরও ঘনিষ্ঠ হয়,সাতারকাটে,নৌকা চালায়,মাছ ধরে,দৌড়ায়, সাইকেল চালায়,হাটে.....বহুভাবে সময়টাকে আরও মূল্যবান করে তোলে। অনেকে অনেক করে বই নিয়ে আসে, তারা গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়ে। লস্ট লেক এরিয়াতে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই, ফলে সোশাল মিডিয়াতে টাইম পার করা হয়না কারো। মাউন্ট হুডের পাশে এই লেকটা। অসাধারণ সুন্দর এ লেক। লেকের চারিপাশে পাইন বা ফার জাতীয় বিশাল সব গাছের বন। অসাধারণ স্বচ্ছ টলমলে এর পানি এবং লেকের ৩ভাগের ২ ভাগ অংশের ঠিক পানির ধার ঘেসে পায়ে হাটা রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। কিছু কিছু অংশে সরু কাঠের পুল। কোথাও কোথাও কাঠ দিয়ে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে মাছ ধরতে পারার সুবিধার্তে। কয়েক স্থানে বোট রাম্প তৈরী করা হয়েছে নৌকা নিয়ে পানিতে নামার জন্যে।

আবহাওয়া অনেক দারুন। রৌদ্র ঝলমলে দিন কিন্তু বাতাশ প্রচুর। রোদের ভেতর থাকলে গরম লাগে, মনে হয় জামাকাপুড় খুলে ফেলি,আর বনের ভেতর গেলে মনে হয় কম্বল গায়ে দেই। অবশ্য দুপুরের দিকে বাতাসের বেগ একেবারে কমে গেল আর তখন সবস্থানেই উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল। বহু মানুষ এসেছে। অনেক মুসলিমও দেখলাম স্বপরিবারে এসেছে। আমার বরাবরই লোক দেখতে ভালো লাগে। মানুষ গিজগিজ করছে এরকম দৃশ্য আমি খুব উপভোগ করি। নানান মানুষের নানান আচরণ দেখতে ভালো লাগে।

লেকের পাড়ে ছিপ নিয়ে ঘোরার সময় বয়ষ্ক এক লোক জানতে চাইলো মাছ পেয়েছি কি না , বললাম আমার জীবনে কখনই মাছ পাইনি। সে হাসলো এবং বললো গুড লাক। এর কিছুক্ষন পর লেকের আরেক পাড় ধরে হেটে হেটে যখন দেখছি কোথায় দাড়িয়ে ছিপ ফেলা যায়, তখন এক স্থানে দেখলাম সেই লোকটা মাছ ধরছে এবং ইতিমধ্যেই ৭টা পেয়েছে। আরও ৩টা ধরার পর ইতি টানবে। খানিকক্ষন কথা বলে খালি জায়গা দেখতে থাকলাম। কিন্তু লেকের শেষ মাথায় চলে আসলেও কোনো খালি স্থান পেলাম না। স্থানে স্থানে সুন্দর করে গাছ কেটে মাছ ধরার স্থান তৈরী করা হয়েছে। কয়েক স্থানে সুন্দর কাঠের মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে কিন্তু সবগুলোই লোকের দখলে। তবে ওই লোকটা ছাড়া আর কোনো মানুষই কোনো মাছ পায়নি। লেকের এদিকটায় বাতাসের প্রকোপ নেই কিন্তু পানি অগভীর,ফলে এখানে ছিপ ফেলা যাবেনা। ফিরতি পথ ধরলাম।

এবার সেই লোকটার দেখা পেলাম। জানতে চাইলো মাছের খবর। বললাম, এটা হলনা, দাড়ানোর জায়গাও পাইনি।লোকটা আমার ফিশিংপোল দেখে বললো মাছ তো পাবা না, এসো তোমাকে মাছ ধরা শেখাই। ততক্ষনে তার ১০টা মাছ ধরা শেষ। দিনে ১০টার বেশী ধরার নিয়ম নেই। বললো তোমার যে বর্শী ওটা এই মাছ গিলবে না, আর পুরো সেটআপে ভুল আছে। এরপর সে নিজের ফিশিংপোলে খাবার গেথে ফেললো পানিতে। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের ভেতর মাছে ঠোকর দিল এবং সে একটা ঝাকি দিয়ে মাছ বাধালো এবং টেনে আনলো বিশেষ কায়দায়। খুবই দারুন দৃশ্য। এরপর মাছটা কিভাবে টুইস্টার(সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট যা দিয়ে ছোট কোনো কিছু সুন্দরভাবে ধরা যায়)দিয়ে বর্শীটা ধরে মুখ থেকে বের করতে হয় দেখালো। এরপর ধারালো ছুরি দিয়ে মাছের পেট কেটে বিশেষ কায়দায় নাড়িভুড়ি বের করে পানিতে ফেললো। দেখলাম কিছুক্ষন পর গুইসাপের মত দেখতে কিন্তু বড় টিকটিকি সাইজের প্রানী এসে টানাটানি করতে লাগলো। এবার মাথাটা আস্ত রেখে মাছ ধুয়ে আনলো এবং বললো এটা তোমার। যেহেতু একই বাস্কেটে মাছ রাখছি তা তোমারগুলোর মাথা কাটলাম না চেনার সুবিধার্তে।

সে আবারও ছিপ ফেললো এবং মাছ বাধিয়ে আমার হাতে দিল আমি সূতা গুছিয়ে মাছ তুলে আনলাম। মাছ খুব ছটফট করে, ওটা পালানোর চেষ্টা করে, তাই তীরের কাছে এনে মাটিতে ফেলতে হয়। মাছ বড় হলে নেটে করে তুলতে হয়,নইলে বর্শী ছিড়ে পালানোর চান্স থাকে। জীবনে প্রথমবার মাছ তোলার অনুভূতি হল। এভাবে ৫টা মাছ ধরার পর সে আমাকে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলল। ছিপ ফেলে সূতা টাইট করে ছিপের অগ্রভাগের সূতার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। তবে আমি এভাবে ববারস বা যে জিনিসটা বর্শীকে ভাসিয়ে রাখে সেটা ব্যবহার করছিলাম, কিন্তু সে বললো ববারস কাজ করবে না। মাছ খাবার খাবে পানির তলদেশে,তাই ববারস বাদ। আমি বর্শী ফেলে দাড়িয়ে থাকলাম। খানিকক্ষন পর বুঝলাম মাছে ঘা দিচ্ছে, আমি প্রবল জোরে টান দিলাম,সেই টানে মাছ ছিটকে গেল। সে বলল এত জোরে নয় ধীরে ঝাকি দিতে হয়। আমি তার সিস্টেম অনুসরণ করলাম এবং মাছ আটকালো। তখন সুন্দর করে টেনে আনলাম। মাছটা ধরার পর কি যে আনন্দ হল ! বিষয়টা শ্মরনীয় করতে সে আমার ছবি তুললো,ভিডিও করলো। খুব ভালো লাগলো। আমি মাছ ধরার কৌশল খুব ভালোভাবে শিখলাম। দিনটা ছিলো ৪ঠা জুলাই ২০১৯।

মাছ ধরার ফাঁকেফাঁকে আমরা নানান গল্প করছিলাম। লোকটার নাম মার্ক একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান। আলাস্কায় জন্মেছে এখন ওরেগনে থাকে। তার আছে ৯টা বাড়ি,যা সে ভাড়া দেয়। আরও আছে গাড়ির শো-রুম, ধনী লোক। দুনিয়ার বহু স্থানে ঘুরেছে এবং মানুষ সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা। আমি অরিজিন্যালী কোন দেশের তা জানতে চাইলো,শুনে বললো,তাহলে তুমি মুসলিম ? বললাম হ্যা। এরপর অনেক কথা হল। অনেক কিছু জানে মুসলিমদের সম্পর্কে। ফিলিপাইনের মুসলিমদের সান্নিধ্যে ছিলো অনেকদিন। এক দল মানুষ পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে আমাদের মাছ দেখছিলো। একজনকে মার্ক বললো তুমি কি ইউক্রেনের ? সে বললো হ্যা। বুঝলাম মানুষ সম্পর্কে তার ভালো অভিজ্ঞতা।

লোকটা খুবই রসিক এবং জ্ঞানী। আমাকে নানান সব বিষয়ে সুন্দরভাবে জ্ঞান দিচ্ছিলো। আমরা দুজনে ২০টা মাছ ধরতে পারি কিন্তু গল্প করতে করতে ভুলে গেলাম মাছের সংখ্যা। দেখী ২৫টা ধরে ফেলেছি। সে নিল ১১টা,আমি নিলাম ১৪টা। মার্ক অত্যন্ত চমৎকার একজন মানুষ। সাধারণত মানুষ অন্যের ক্ষেত্রে এতটা যত্নবান হয়না। আমার সাথে সে অত্যন্ত মধুর আচরণ করেছে। খুবই হাস্যোজ্জ্বল মানুষ সে। আমরা পূণরায় দেখা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যার যার পথ ধরলাম। মার্ককে আমার মনে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আরও অন্তত দুই ঘন্টা সময় লেকে অবস্থান করে সৌন্দর্য্য উপভোগ করলাম। প্রচুর মানুষ এসেছে কারন এটা বন্ধের দিন। ফিরলাম হুড রিভার সিটিতে। এখানে এক মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে খেয়ে ডালাস সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এখান থেকে ১৮ মাইল দূরে সেটি। হাইওয়ে ৮৪ ধরে আগানোর সময় কলাম্বিয়া নদীর অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখলাম। কিন্তু ভয়াবহ সুন্দর জিনিসটি হল নদীর দুপাশের পর্বতসারী। এমনটা আর হয়না। খাড়া পাথরের পাহাড় এবং সেই পাথরের উপর হালকা সবুজ ঘাস। পাহাড়গুলো ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, না দেখলে ঠিক বোঝা যাবেনা। পাহাড়ী রাস্তায় এত সুন্দর রাস্তা তৈরী করা হয়েছে যা অসাধারণ, ঘন্টায় ১২৫ কি:মি: বেগে গাড়ি চালানো যায়। এর উপরেও চালানো যায়,তবে পুলিশ ধরে জরিমানা করবে। কলাম্বিয়া নদীর ভেতর অনেকগুলো দ্বীপ রয়েছে যা ছোট ছোট আর সেগুলোর কোনো কোনোটি নানান গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। নদীর দুধারে সমান্তরালে রয়েছে ট্রেনলাইন। নদীর ওপাশে ওয়াশিংটন স্টেট। সেই ট্রেনলাইনটি অনেক উঁচু করে তৈরী করা। অবাক হলাম এদের কারবার দেখে। এই ট্রেনলাইন চলে গেছে ওয়াশিংটন হয়ে অন্য স্টেটগুলোতে। একেকটা ট্রেনে বগী দেখলাম প্রায় দুই শতাধিক। বহু লম্বা এদের মালবাহী ট্রেনগুলো। ৪০ফুটের কন্টেইনার একটার উপর আরেকটা রাখা হয়,আবার আছে অয়েল ট্যাঙ্কার আরও অনেক ধরনের বগী। কখনও ২টা বা ৩টা ইঞ্জিন লাগানো হয়। এগুলো চলে অনেক গতি নিয়ে। তবে নদীর দুপাশের পাহাড়সারীর সৌন্দর্য্য ভোলার মত নয়। অনেকটা ন্যাড়া পাহাড় কিন্তু অদ্ভূত সুন্দর।

আমি ডালাস সিটিতে আসলাম। এখানেই আমার হোটেল। ভ্রমনে নামাজ কসর হওয়াতে খুব দারুন লাগে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা বিশেষ ছাড়। রাতে একটা পিৎজা অর্ডার করলাম। খেয়ে শান্তির ঘুম দিলাম।

বিষয়: বিবিধ

৫৬৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386670
১০ জুলাই ২০১৯ সকাল ০৮:৫৯
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File