পুলিশ প্রধান জুম্মা পড়ল আজ

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১০:০৪:৫২ রাত



-----------------------------------

পূর্বেই পরিকল্পনা ছিলো মসজিদ পরিষ্কার কাজে অংশ নেব। সে উদ্দেশ্যে বিশেষ খুশবুদার ২ রকমের ক্লিনার কিনলাম। গতরাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি। চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছিলো নিউজিল্যান্ডের মসজিদের নৃশংস হত্যাকান্ড। ইচ্ছা করেই অনেক আগেভাগে মসজিদে গেলাম। গিয়ে দেখী তারও আগে ৪/৫জন এসে উপস্থিত। মনে হয় এসব ভায়েরাও এই পণ করেছে যে, তোরা যত মারবি, ততই আমরা আল্লাহর কাছাকাছি যাব, এটাই আমাদের প্রতিশোধ। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে এর আভ্যন্তরিণ সৌন্দর্য্যের কারনে। যদি শক্তি দিয়ে ইসলাম প্রচারিত হত, তবে মুসলিমদের শক্তি কমে গেলে নও-মুসলিমরা সব ইসলাম ত্যাগ করে কাফির হয়ে যেত। কিন্তু ঘটনা হল এই যে, যারা যেখানে যেখানে ইসলাম গ্রহন করেছিলো, তাদের বংশধারাও সেখানে সেখানে ইসলামের উপরে অটল রয়েছে দেড় হাজার বছর ধরে।

সকালে অনেকদিন পর এক ভায়ের সাথে কথা হল। খুব ভালো লাগলো। তার জন্যে দোয়া করলাম,নিজের জন্যেও দোয়া চাইলাম। কিছু মানুষের সাথে অদেখা মজবুত বন্ধন রয়েছে, সহসা সবকিছু উপলব্ধীতে আসেনা। মসজিদে পৌঁছে মনে পড়ল, শালা যে কারনে এত আগে আসলাম সেই কারনটাই তো পুরো লন্ডভন্ড হয়ে গেল, ভুল করে ক্লিনার বাসায় ফেলে রেখে এসেছি। কখনও কখনও আমাদের কিছু কাজে নিজেদের উপরই রাগ হয়, মনে হয় নিজেই নিজের চুল টেনে ছিড়ি। আমিও হয়ত ছিড়তাম, কিন্তু নাপিত বিটা এমনভাবে চুল কেটেছে, সহসা ধরে ছেড়া যাবেনা, রক্ষা পেলাম। মসজিদে প্রবেশ করে মনটা প্রশান্ত হল। দেখী অমুসলিম কমিউনিটি থেকে মসজিদের মুসল্লিদের সৌজন্যে ফুল পাঠানো হয়েছে। পুরো কমিউনিটি নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছে, সমবেদনা জানিয়েছে এবং পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। মনে পড়ছে, বহু পূর্বে এই মসজিদে একবার সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিলো। তখন লোকাল কমিউনিটি পাশে এসেছিলো, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্যে নামাজের ব্যবস্থাও করেছিলো। ভালো মন্দ মানুষ মিলেই পৃথিবী। সবখানেই এদের দেখা মিলবে।

ইমাম শায়লাকে বললাম আগামী সপ্তাহ থেকে মসজিদ পরিচ্ছন্নতার কাজে শরিক হব ইনশাআল্লাহ। উনি খুব খুশী হলেন এবং আমার হাতে একটা ডাস্টার ধরিয়ে দিয়ে বললেন লেগে পড়। যদিও একদল লোক পূর্বেই মসজিদ পরিষ্কার করেছে কিন্তু আমার আবার শকুনের চোখ, ঠিকই ধুলোবালি খুঁজে বের করেছি এবং তা বেশ খানিকটা। খুব যত্নের সাথে পরিষ্কার করলাম। ভেতরে আমার কেমন যেন জ্বলছিলো। পুরো মসিজদ সার্ভে করে দেখলাম কোথায় কোথায় পরিষ্কার করতে হবে। জীবনেও নিজের ঘর আমি পরিষ্কার করিনা, কিন্তু আল্লাহর ঘর পরিষ্কার করার কথা ভাবতেই ভেতরে প্রবল খুশীর জোয়ার বওয়া শুরু করলো।

আজ প্রথমবারের মত আমি জুম্মায় আযান দিলাম। ভাবছিলাম, তোরা যত ঘৃণা ছড়াবি ততই মানুষ ইসলাম জানতে চাইবে আর তাতে প্রবেশ করবে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর আমেরিকাতে ইসলাম পূর্বের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশী বেগবান হয়েছে। এভাবেই আল্লাহ কাফিরকে দিয়েও দ্বীনের কাজ করিয়ে নেন। দোয়া করলাম, ৬০ জন মুসলিমের বিনিময়ে আল্লাহ যেন পুরো নিউজিল্যান্ডের প্রত্যেকটা স্থানে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেয়।

খুব দারুন একজন খতিব বক্তব্য পেশ করলেন। নিউজিল্যান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে নানান দিক নির্দেশনা দিতে থাকলেন। তবে খারাপ ইহুদী,মুশরিক, খ্রিষ্টানদেরকেও ধুয়ে ছেড়েছেন। তিনি বলছিলেন,,,রসূল(সাঃ)এমন একটা সময় আসবে যখন তোমরা ইহুদী নাসারাদের এমনভাবে অনুসরন করবে যে তারা যদি বেজীর গর্তে ঢুকে যায়,তোমরাও সেখানে ঢুকে পড়বে। .....আর বলছিলেন আয়াত,,,তারা তোমাদের ততক্ষন পর্যন্ত বন্ধু হবেনা, যতক্ষন না তোমরা পুরোপুরি তাদের মত হয়ে যাও...। ইতিহাস থেকেও কিছু বিষয় বললেন। তার ভেতর থেকে ক্ষোভ উঠে আসছিলো যা ছিলো খুবই স্বাভাবিক। কিন্ত দ্বিতীয় খুৎবায় তিনি করনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করলেন। আমরা যেন উত্তেজিত হয়ে অনুরূপ প্রতিশোধ না নেই, সেটাও বললেন। ধৈর্য্য,সহনশীলতা,ভালোবাসা আর অধ্যাবসায়,আত্মত্যাগের মাধ্যমে সাহাবীদের মত করে ইসলাম প্রচারে উৎসাহিত করলেন। সন্ত্রাসবাদের বিরোধীতা করলেন। আল্লাহ বলেন, 'অন্যায়ভাবে যে একটি মানুষকে হত্যা করলো,সে যেন গোটা মানব সম্প্রদায়কে হত্যা করলো।' নিউজিল্যান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিমদের জন্যে অনেক দোয়া করলেন খুৎবার ভেতর।

খুৎবা শুরুর আগ থেকেই মসজিদে কর্ভালিশ পুলিশ প্রধান উপস্থিত ছিলেন এবং আমেরিকার সকল মসজিদ কর্তৃপক্ষের সাথেই পুলিশ যোগাযোগ করেছে এবং সবসময় পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তিনি জামাতের সাথে ছিলেন কিন্তু নামাজ আদায় না করে বসে ছিলেন। নামাজ শেষে আবু বাহা ভাই বক্তব্য প্রদান করলেন। উনি জানালেন ঘটনার পরপরই ইউজিন,সেলাম,কর্ভালিশ এর এফ.বি.আই মসজিদের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং মেইল প্রদান করেছে। তারা ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন এবং যে কোনো সহযোগীতায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মসজিদের আশপাশে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। আমেরিকার এদিকটা খুবই প্রশংসিত যে, কোনো ঘটনার মাত্র ১ থেকে ২ মিনিটের ভেতর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এই মসজিদে ২৫ বছর নামাজ আদায় করেছেন এমন এক ভাই স্বপরিবারে নিউজিল্যান্ডে মাইগ্রেট করেছিলো। কিন্তু আবু বাহা ভাই বললেন, সম্ভবত: ঘটনার সময় ওই ভাই উক্ত মসিজদে ছিলেন। তার খবর পাওয়া যায়নি।

পুলিশ প্রধান তার বক্তব্যে বললেন, সেখানে যা ঘটেছে তা বর্ণনার ভাষাও নেই, এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগীতা করব এবং কিভাবে আমরা আরও সহযোগীতা করতে পারি, সে ব্যাপারে আপনাদের থেকে দিক নির্দেশনা চাই। তিনি বললেন, আমরা মানুষ,একই কমিউনিটিতে বসবাস করি, স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম চর্চার অধিকার সকলের আছে। আমরা যেকোনো মূল্যে এটা নিশ্চিত করব। তার বক্তব্যে আবেগ ঝরে পড়ছিলো। সকলে তাকে ধন্যবাদ জানালো এবং মোলাকাত করলো। এরপর ইমম সাহেব শান্তির স্বপক্ষে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরে কয়েক মিনিট বক্তব্য দিলেন। ভালো লাগলো।

ইসলামের দাওয়াহর সিস্টেম হল, আমি তোর ব্রেইনে এমন বীজ রোপন করব, যে তা যদি গাছে পরিনত হয়, তবে তুই যে অস্ত্র দিয়ে মানুষ মারছিস, ওই অস্ত্র দিয়েই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, এবং তোর বংশধারাও একই পথে চলবে। ওদিকে মরার পরেও আমি সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে নেকী গুনতে থাকব।

আজকের দিনটা ছিলো খুবই পবিত্র ! খুব ফিল করেছি ব্যাপারটা।

বিষয়: বিবিধ

৬২১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386568
১৭ মার্চ ২০১৯ দুপুর ০২:৩১
হতভাগা লিখেছেন : ভাই সাবাধানে থাকবেন। আপনাদের এখানেই টারান্টের মত লোক লুকিয়ে আছে। দেখবেন যখন ঘটনা ঘটাবে তখন ৯১১ চাপলেও পুলিশ আসবে না । ঠিক যেমন বাংলা সিনেমা।
386569
১৭ মার্চ ২০১৯ সন্ধ্যা ০৭:৩০
তীর্যক১০ লিখেছেন : অশ্রুশিক্ত হয়ে যা্চিছ ভাই ... আল্লাহ আমাদের রহম করুন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File