তাহসিনের পড়ালেখা

লিখেছেন লিখেছেন যারিন ফিরদেগার ১৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:২২:০০ রাত



‘বাবা, আমার হোমওয়ার্ক করা শেষ।‘

‘ঠিক আছে, তুমি এখন ঘুমাতে যাও। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।‘

তাহসিনের স্কুল শুরু হয় সকাল সাতটা থেকে। খুব ভোরে তাকে স্কুলে নেওয়ার জন্য একটা মাইক্রো আসে। তার সাথে আরো বেশ কয়েকজন বন্ধু ওই মাইক্রোতে করে স্কুলে যায়। তাহসিন এবার আইডিয়াল স্কুল বনশ্রি শাখায় তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। তাকে ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য একটি বছর কোচিং করতে হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা, প্রতি মাসে পরীক্ষা, মডেল টেস্ট ইত্যাদি ছিল সারা বছরের কাজ। অবশেষে সেই সফলতা। সবাই তার এই সফলতায় খুব খুশি।

তাহসিনের বাবা খন্দকার সাহেব শুয়ে শুয়ে ভাবছিল ছেলের কষ্টের কথা। পড়ালেখার জন্য এত কষ্ট তাকে কখনও করতে হয় নাই। গ্রামের একটি স্কুলে তার বাবা তাকে পাঠিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। অথচ তাকে আজ ছেলের পড়ালেখার জন্য কত কঠিন পেরেশানিতে থাকতে হয়। সারাক্ষণ একটা উৎকন্ঠার মধ্যে থাকতে হয়।

নামায পড়তে দাঁড়িয়েছে খন্দকার সাহেব। ফোনটা বেজেই চলেছে। নামাযের সময় ফোন বাজলে খন্দকার সাহেবের খুব বিরক্ত লাগে। মানুষের আজকাল কমনসেন্স একেবারে কমে গেছে। বার বার রিং করছে অথচ একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় এটা নামাযের সময়। অবশেষে সালাম ফিরিয়ে বিরক্তির সাথে ফোনটা ধরল খন্দকার সাহেব।

‘হ্যালো, স্লামালাইকুম। আপনি তাহসিনের কি হন?’

‘জ্বি, তাহসিন আমার ছেলে। কি হয়েছে তাহসিনের?’ খন্দকার সাহেবের কন্ঠে গভীর উৎকন্ঠা।

‘এখানে একটা মাইক্রো অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। ছেলেটির ডাইরীতে নাম লেখা তাহসিন। সেখানেই আপনার ফোন নম্বরটা পেয়েছি…’

আর শুনতে পারছিল না খন্দকার সাহেব। তার গা দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝড়ছে। দু’চোখ তার অন্ধকার হয়ে আসছে। তার একমাত্র ছেলে তাহসিন, তার প্রাণের মত। কি হয়েছে তার! নিজের সব শক্তি এক করেও তিনি প্রশ্নটি আর করতে পারছেন না। তার গলায় সব কথা আটকে আছে। বাকরুদ্ধ হয়েছেন খন্দকার সাহেব।

‘কি হয়েছে তোমার? ঘুমের মধ্যে এত ছটফট করছ কেন? তোমার জন্য একটু ঘুমাতেও পারবোনা?’ কন্ঠটি খুব পরিচিত মনে হলো খন্দকার সাহেবের।

আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানানোর জন্য উঠে পড়ল খন্দকার সাহেব।

বিষয়: সাহিত্য

১৫৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File