প্রবাস জীবনে কর্ম ব্যাস্ততা/নামাজ না পড়ার পরিবেশই কি নামাজের প্রতি অলসতার কারণ!!!

লিখেছেন লিখেছেন সাইদ ২৯ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৩৫:১২ সকাল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।আসসালামুআলাইকুম।

এক ব্লগার ভাই লিখেছেন "আপনারা যেমন কাজের ফাঁকে অথবা ঘরে বসে স্বাচ্ছন্দ করে নামায পড়েন আমার সেটা হয় না কারণ আমি যেখানে কাজ করি এদের এখানে নিয়ম নাই কাজের ফাঁকে নামাজ আদায় করা--- "এই কথাগুলো প্রবাস জীবনে কোনো একজনের কথা নয়।অনেককেই আমি বলতে শুনেছি।আমি নিজেও একসময় বলতাম।প্রবাস জীবনে আমরা অনেকই নামাজ পড়ার প্রতি খুব অলসতা দেখাই।অনেকই আছি সময়ের নামাজ সময়ে না পড়ে একসাথে রাতে সব কাযা নামাজ পড়ি।আবার অনেকই আছেন যারা নামাজই পড়েন না।আমি নিজেও একসময় সময়মতো নামাজ পড়তাম না।(এখনও মাঝে মাঝে অলসতার কারণে দেরী করে ফেলি).সময়মতো নামাজ না পড়তে পারার ব্যাখ্যাটাও কিন্তু আমাদের দারুন।শানিত যুক্তি দিয়ে আমরা অনেককেই ঘায়েল করে ফেলি।আমি নিজেও অনেককে ঘায়েল করেছি।নামাজ না পড়ার যুক্তি হিসাবে মূলত ১।কর্মক্ষেত্রে নামাজ পড়ার জায়গা নেই ২।নামাজ পড়ার জন্য কর্মক্ষেত্রে বিরতি নেই ৩।বসের অনুমতি নেই।এই যুক্তিগুলোই আমরা সচারচর বেশি বলে থাকি।নামাজের জন্য উৎসাহদাতা ভাইকে আমাদর এইসব যুক্তি দিয়ে পরাজিত করে একধরনের তৃপ্তির ঢেকুর তুলি।আসলেই কি তাই?সত্যি কি আমরা আন্তরিকতার সাথে সময়মতো নামাজ পড়তে চেয়েও নামাজ পড়ার সুযোগ পায়নি? সর্বশক্তিমান আল্লাহ কি তাহলে আমাদের নামাজ পড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেন নাই?

উপরেরে যে তিনটি কারণের কথা বললাম তা প্রবাস জীবনের ক্ষেত্রে সত্য ঘটনা বলে ধরে নিলাম।এই তিনটা কারণ আমরা প্রবাস জীবনের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ দেখে ধারণা করেছি এবং নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কর্মক্ষেত্রে সময়মতো নামাজ পড়া সম্ভব না।এটাই যদি কারণ হয় তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে অনেকই তো ঠিকই কর্মক্ষেত্রে সময়মতো নামাজ পড়ছে।তারা কিভাবে পড়ছে? অফিসের কাজ ফাকি দিয়ে,বসের অনুমতি না নিয়ে বেজায়গায় নামাজ পড়তেছে।আসলেই কি তাই?আলহামদুলিল্লাহ দুই ধরণের মানুষদের সাথে আমার মেশার সুযোগ হয়েছে।কয়েকটা বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করবো।নিজেকেই জিজ্ঞাসা করবো আসলেই কি প্রবাস জীবনে সময়মতো নামাজ পড়ার পরিবেশ নেই?

এক ভাই বরাবরই ছোটকাল থেকে সময়মতো নামাজ পড়েন।ল্যাবে কোনো মুসলিম ছাত্র নেই।নামাজের সময় হলে উনি প্রফেসরকে মুসলিম হিসাবে নামাজের গুরত্ত্বের কথা বলেন।প্রফেসর তাকে সময়মতো নামাজ পড়ার অনুমতি দেন।একবার এক কনফারেন্সে নামাজের সময় হলে সেই প্রফেসর তাকে নামাজের কথা বলে।অনেক লোকের মধ্যে কিভাবে নামাজ পড়বে তা প্রফেসরই তাকে বলে দেয়।প্রফেসর তার সামনে দাড়িয়ে থাকে যেনো নামাজের জন্য অন্য কেউ তার সামনে দিয়ে হেটে না যায়।অথচ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য অনেকে সময়মতো নামাজ পড়ার সুযোগ পায়না।কারণ তাদের ভয় হয় প্রফেসরকে নামাজ পড়ার কথা বললে প্রফেসর তাদের অনুমতি দেবে না।উল্টো যদি ল্যাবের সময় নামাজ পড়ার কথা বললে মাইন্ড করে এই ভয় এদের তাড়িত করে।এদের একজনকে আমি বলেছিলাম "আপনি তো ফজরের নামাজেও মসজিদে আসেন না? ফজরের নামাজেও কি আপনার প্রফেসর নামাজ পড়তে আসতে দেয়না?" আমার প্রশ্নে একটু বিব্রতই বোধ করেন তিনি।নিজের আন্তরিকতার অভাব অন্যর ঘাড়ে দোষ চাপানো কি যৌক্তিক? একবারও আল্লহর ভয়ে সাহস করে প্রফেসরকে কি বলেছেন নামাজ পড়ার কথা?

কর্মক্ষেত্রে অনেকই ভাবে অফিসে কাজের মাঝখানে নামাজ পড়ার সময় নেই তাই বাসায় গিয়ে সব নামাজ কাজা পড়ব।নিজের বসের কাছে নামাজ পড়ার কথা কেউ বলতেও চায়না।বস কিভাবে নেবে ব্যাপারটা।আমি নিজেও অনেকের কাছে এই ব্যাখ্যা করে তৃপ্তি পেতাম।কিন্তু বাস্তবতা হলো আমার মতো অনেকেই প্রকৃত পক্ষে অফিসে সময়মতো অথবা একটু দেরী করে কখনই নামাজ পড়ার তাগিদ অনুভুব করেনি।যারা প্রকৃতপক্ষে সময়মতো নামাজ পড়ার চেষ্টা করেছে তারা সফল হয়েছে।এমনকি তারা বিমানে,ট্রেনে, বাসে যে স্থানেই অবস্থান করুক না কেনো তারা ঠিকই সময়মতো নামাজ পড়ে।এটা সত্য,কাজ করার দরুন প্রবাসে কাজের সময়ে জাস্ট টাইমে নামাজ পড়া হয়তো সম্ভব না।তবে আমার জানা মতে অনেক অফিসে ২ঘন্টা পর পর ১০মিনিট মতো বিরতি থাকে।২ঘন্টা পর পর অনেক অফিসে বিরতি না থাকেলও ৬ঘন্টার মধ্যে একবার বাধ্যতামূলক ১০মিনিটের হলেও বিরতি থাকে।এটা শ্রমিকের আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি অধিকার।তাছাড়াও লাঞ্চ বিরতি তো থাকেই।এইগুলো কেই যদি ঠিকভাবে ম্যানেজ করে চলে তাহলে জোহর এবং আসর নামাজ অফিসেও সময়ের মধ্যে পড়া অসম্ভব কিছু না।এশার নামাজ মধ্যরাত পর্যন্তও পড়া যায়।সুতরাং মাগরিব বাদে সব নামাজই সময়মতো পড়া অসম্ভব কিছু না।এই চার ওয়াক্ত নামাজের জন্য কারোর মুখোপক্ষী হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কর্মক্ষেত্রে নামাজের জন্য আলাদা জায়গার তো কোনো দরকার নেই।অনেকই অফিসের সিড়িতে নামাজ পড়ে। সুতরাং উপরের তিনটি কারণ নিজেরাই আমরা নামাজ না পড়ার জন্য অজুহাত হিসাবে দাড় করিয়েছি মাত্র। যে চার ওয়াক্ত নামাজ আন্তরিকতার সাথে পড়ে তার পক্ষে মাগরিবের নামাজও ঠিকই পড়ে ফেলা সম্ভব।শুধু প্রয়োজন নামাজ পড়ার জন্য আন্তরিকতা।

আমি একবার এক এয়ারপোর্টের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম।নন মুসলিম দেশে নামাজ পড়ার কোনো জায়গা নেই।বাইরে এতো লোক যে কোথায় আমি নামাজ পড়ব জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।মনে মনে আল্লাহকে স্বরণ করছি আর বলছি "আল্লাহ আমি তো নামাজ পড়তে চাচ্ছি কিন্তু আমি তো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না " তারপর ইনফরমেশন ডেস্কে গিয়ে বললাম আমার ইচ্ছার কথাটা।তারা আমাকে যে অফারটা দিলো তাতে আমি আলহামদুলিল্লাহ বললাম।ইনফরমেশন ডেস্ক এর স্টাফ নিজেদের পোশাক চেঞ্জ করার রুমটি আমাকে নামাজ পড়ার জন্য ব্যাবহার করতে বললো। এর আগেও আমি ঐ এয়ারপোর্টে অনেকবার গিয়েছি। নামাজ পড়ার জায়গা নেই বলে কখনো নামাজ পড়ার কথা মনেও হতো না তাই নামাজ পড়াও হতোনা। নামাজ সময়মতো পড়তে চেয়েছে কিন্তু নামাজ পড়ার সুযোগ পায়নি এমন উদাহরণ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।দুই একটা খুঁজে পেলেও সেগুলো ব্যাতিক্রম।

প্রবাসে যারা অন্য ভাইদেরকে সময়মতো নামাজ পড়ার আহবান করেন তাদের মতো লোকদেরকে হয়তো অনেকই যুক্তির মারপ্যাচে বোঝাতে পারবেন যে তাদের সময়মতো নামাজ না পড়ার কারণ।কিন্তু কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহকে বোঝাতে পারবেন কি? আমাদের পরিচিত কেই একজন কিন্তু ঠিকই আমাদের মতো অবস্থার মধ্যেও সময়মতো নামাজ পড়তেছে। তাদেরকেই আল্লাহ যখন আমাদের সামনে স্বাক্ষী হিসাবে হাজির করবেন তখন জবাব দেওয়ার মতো যুক্তি কি আমাদের কাছে আছে?

আল্লাহ হাফেজ

বিষয়: বিবিধ

২৫৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File