জামায়াত-যুবশিবিরের দ্বন্দ্বঃ জামায়াতের অবস্থান ও যুবশিবিরের কিছু ভুল POSTED BY মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক

লিখেছেন লিখেছেন স্বপন১ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:০০:১১ রাত



ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও যুবশিবিরের দ্বন্দ্ব এবং এতদপ্রেক্ষিতে আমার বর্তমান ব্যক্তিগত অবস্থানের ক্লারিফিকেশান

(১) সাংগঠনিক দিক থেকে জামায়াতের অবস্থান সঠিক ছিলো

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন হিসাবে ইসলামী ছাত্রশিবির গঠন করা হয়। শিবিরকে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন হিসাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। জিয়াউর রহমানের সময়কালে এক গণভোটে শিবির, জামায়াতের বিপক্ষে ভূমিকাপালন করে। জামায়াতের আদর্শ ও তত্ত্ব নিয়ে জামায়াতের সাংগঠনিক প্রভাবমুক্ত থেকে শিবির ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠে। একপর্যায়ে জামায়াত, শিবিরের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরিণতিতে জামায়াতের প্রভাবমুক্ত ছাত্রশিবিরের পক্ষে যারা ছিলো তারা আউট হয়ে যান। জামায়াতের সাংগঠনিক স্বার্থের নিরিখে তাদের এই অবস্থান সঠিক ছিলো। এ যেন বছর শেষে প্রাপ্ত লভ্যাংশে তুষ্ট না হয়ে বা পুজিঁ মার যাওয়ার আশংকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজের শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা নিজ হাতে নিয়ে নেয়া।

(২) আদর্শগত দিক থেকে জামায়াতের অবস্থান ভুল ছিলো

১৯৭১ সালে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য কোনঠাসা জামায়াতকে না নিয়ে শিবিরের মতো একটা আনকোরা এপ্রোচে ইসলামী মতাদর্শ বা রাজনীতিকে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের আপামর জনগণের মধ্যে এই নতুন ধারা, অর্থাৎ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শিবির জামায়াতের অংগসংগঠন হিসাবে ট্যাগড না হলে, আমার ধারণায়, অন্ততপক্ষে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিবির একাধিপত্য লাভ করতো। ইসলামী মতাদর্শের এই উদীয়মান সম্ভাবণাকে গিলোটিন করাটা আদর্শগত দিক থেকে জামায়াতের মোটেও ঠিক হয় নাই।

(৩) যুবশিবিরের যা কিছু ভুল

তৎকালীন পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্বেও স্বাধীন ও শক্তভাবে কিছু না করে জামায়াতের আমীরকে সালিশ মানা, সালিশের রায়কে মেনে নেয়া সত্বেও পরবর্তীতে একতরফাভাবে যুব শিবির গঠন করা, তারওপরে যুব শিবিরের অধীনে (পাল্টা) ছাত্র শিবির গঠন করা, জামায়াত বিরোধিতাকে কাজের মূল এপ্রোচ হিসাবে কার্যত: গ্রহণ করা ও সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া, ইরানপন্থী নীতি গ্রহণ করা – আমার দৃষ্টিতে যুব শিবিরের এসব কার্যক্রম ছিলো ভুল।

(৪) যুবশিবিরপন্থীদের যা করা উচিত ছিলো

যুবশিবিরপন্থীদের উচিত ছিলো যেকোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিকে এড়িয়ে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এবং ‘এখনি ডমিনেট করা’র (শিবিরসুলভ) মানসিকতাকে পরিহার করে ইসলামী মতাদর্শের ইতিবাচক সমন্বয়মূলক বক্তব্য নিয়ে ময়দানে টিকে থাকা। এবং বিপুল সংখ্যক মেধাবী ছাত্রদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিয়োজিত করা। তাতে করে এতদিনে বাংলাদেশে গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, বুদ্ধিবৃত্তি ও দ্বীনি মহলে ডমিন্যান্ট বাম-সেকুলার ধারার একটা শক্ত বিকল্প গড়ে উঠতো। তারা যদি ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বে নিরপক্ষে থাকতেন তাহলে অনেকটাই আন্তর্জাতিক চাপমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারতেন।

(৫) জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের ঐতিহাসিক দূর্দশা

জামায়াতের সংস্কারপন্থীদের বড় দূর্বলতা হচ্ছে, জামায়াতও এটি ভালো করে জানে, তারা সবাই মিলে is a big zero …! কথাটা খুব রূঢ় শোনালেও এটি বাস্তব। ইনাদের জামায়াত বিরোধিতার বেসিক ক্যারেকটার হলো বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছোট বোনের রাগ-গোস্বা বা অভিমানের মতো। দিনশেষে তারা সবাই জামায়াত। সংস্কারপন্থী শ্রদ্ধেয়দের সব যুক্তি-দাবী হলো কোরআন-হাদীস-সীরাতের বিভিন্ন রেফারেন্স, আদর্শবাদীতা, ক্ষেত্রবিশেষে বাস্তবতার দোহাই। জামায়াতকে দিয়েই তারা ইসলামের সবকাজ করাতে চান। এটিও প্রাকারান্তরালে [জামায়াতে ইসলাম = ইসলাম] – এই একদেশদর্শী সমীকরণের বহিঃপ্রকাশ। এজন্য সংস্কার ইত্যাদি সম্পর্কে টিপিক্যাল জামায়াত রেসপন্স হলো, “পারলে আপনারাও একট কিছু করে দেখান …।” এ যেন হুলো বিড়ালের বিরুদ্ধে সব (….) ইঁদুরের কারবার …!

(৬) কেন আমি জামায়াতের সমালোচনামূলক লেখা লিখি?

আমি কী করতে চাই? এটি একটা কমন প্রশ্ন। সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’র সাইটে, cscsbd.com , এ প্রশ্নের উত্তর পাবেন, বিস্তারিতভাবে। সংক্ষেপে বললে: বাংলাদেশ, ইসলাম ও বিশ্ব – এই তিনের মধ্যে নিজেকে সবসময়ে কল্পনা করি। এগুলোকে বাস্তবে অবিচ্ছেদ্য মনে করি। এই দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ইসলাম আমার তাত্ত্বিক আগ্রহ ও বাস্তব কর্মের বিষয়। জামায়াতে ইসলামী এর অন্যতম অনস্বীকার্য অনুষঙ্গ। স্বভাবত:ই জামায়াত নিয়ে from an outsiders view থেকে আমি লেখালেখি করি। আমিই প্রথম ব্যক্তি যিনি জামায়াতের (basic or sustainable) reform from within কে কখনো হওয়ার নয় হিসাবে বহু আগেই বলেছি।

(৭) বিকল্প সামাজিক আন্দোলনের লক্ষ্য কী?

আমার ধারণায় ক্বাওমী, তাবলীগি, সুন্নী, জামায়াতে ইসলামী, আহলে হাদীস, সালাফিপন্থী, হিযবুত তাওহীদ, একিউ – সব ধারার ইসলামই এ দেশে কনটিনিউ করবে। বরং ফ্লারিশ করবে। কারণ, লোকের ও লোকদের হুজুগের তো অভাব নাই। প্রত্যেককে প্রত্যেকের জায়গায় রেখে বা থাকতে দিয়ে দেশের আপাত নিরপেক্ষ, পর্যবেক্ষকের ভূমিকাতে থাকা গড়পরতা ১৫ ভাগ লোক হলো আমার target people। এই ১৫% এর মধ্যে ২০ থেকে অনূর্ধ ৩৫ বৎসর বয়সের ছেলে-মেয়েরাই আমার সকল বর্তমান ও ভবিষ্যত কর্মকাণ্ডের focus area বা সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দীষ্ট গ্রুপ অব পিপল।

(৮) wide garden model

সবাইকে এক ধারাতে অন্তর্ভূক্ত করার দৃশ্যমান নির্দোষ মানসিকতা ও চেষ্টাকে আমি বড়ধরনের বোকামী মনে করি। বটবৃক্ষের পরিবর্তে আমি বাগান তৈরীকে অধিকতর বাস্তবসম্মত মনে করি। যার ফলে জামায়াতকে হিরো বা জিরো মনে করার প্রান্তিকতা হতে আমি নিজেকে বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করি। আমি যা চাচ্ছি, তার সার কথা হলো, ইসলামকে একটা বেইজ বা ফাউন্ডেশান হিসাবে, একটা thought-paradigm হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই, unity within diversity কে আমি আন্তরিকভাবেই mean করি।

(৯) বুদ্ধিবৃত্তিক সংকটই মূল সমস্যা

আক্বীদাগত দিক থেকে ইসলামকে অনেকেই সঠিকভাবে জানে। কিন্তু ইসলামকে কীভাবে বর্তমান সমাজে incorporate করা হবে, বা যাবে, তা নিয়ে স্মার্ট ইসলামিস্টদেরও কোনো চিন্তাভাবনা নাই। ভাবখানা এমন, যেন সব সমস্যা মূলত: বাস্তবায়নের সমস্যা, implementation problem। ‘বর্তমান’এ বসবাস করে, এর সকল সুবিধা গ্রহণ করেও অনেকে চিন্তাচেতনায় খুবই গ্রস, অপরিপক্ক ও পশ্চাতপদ। blame game এবং conspiracy theory ই তাদের শেষ যুক্তি, সারকথা। সত্যি বলতে, ইসলামী আন্দোলনের ধারণাপন্থীদের মূল অংশটি এখনো স্বীয় চিন্তাগত শৈশবাবস্থা (adolescent stage) অতিক্রম করতে পারে নাই। আমার ধারণায়, বর্তমানের সমস্যা, বাস্তবায়নের সমস্যামাত্র নয়, সমস্যার শিকড় সর্বব্যাপী চিন্তার দীনতা ও যুক্তিবিমুখ ধর্মবাদিতায় নিহিত। তাই আমি চিন্তাগত সংকট ও বৈপরিত্যগুলোকে মিটানোর চেষ্টা করছি। আমার মতো করে। আমার অনতিক্রম্য সব সীমাবদ্ধতার মাঝে। পেশাগতভাবে একজন শিক্ষক হিসাবে, এই প্রায়-পঞ্চাশ বছর বয়সে এ ছাড়া আমার কী ই বা করার আছে?

বিষয়: বিবিধ

১২৪২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343309
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:২৫
রক্তলাল লিখেছেন : অকর্মণ্য অপদার্থ যারা তাগুতদের খুশী রাখতে চায় তাদের সস্থা রাস্তা হল জামাতের পাইকারী সমালোচনা। হুদাই আত্মতৃপ্তির জন্য।

আমি জামাত না। কিন্তু যারা সমালোচনা করে তাদের কোনো কার্যকরী কিছু দেখিনা। হুদাই খুবিশদের বাহবা পাওয়ার কসরৎ।


২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:১১
284592
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : @রক্তলাল ,ধৈর্য ধারন ক্ষমতা থাকা উচিৎ।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:৩৩
284596
রক্তলাল লিখেছেন : ভাইজান, বাংলাদেশে যা কিছু একটু ভাল বাকি আছে তার মধ্যে জামাত শিবির অন্যতম।

বাদ বাকি সমস্যা নিয়ে না বলে যারা অন্তত বাংলাদেশে অন্যান্য দল থেকে ভাল তাদের নিয়ে হুদাই কাসুন্দি ঘাটা দেখলে মানুষের শয়তানি নিয়্যত বুঝা যায়।

ধৈর্য্য অধৈর্য্যের কিছু না এখানে।
343330
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:২৩
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : শুরু থেকেই জামায়াত শিবির ভুলের মধ্যে আছে। কারণ তাদের রাজনীতিই একটি ভুল রাজনীতি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File